নভো সামনে মৃন্ময়ী পিছনে । হঠাৎ মৃন লক্ষ্য করে ঢাকা মেডিকেলের দিক থেকে একটি প্রাইভেট কার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। গাড়ীটিকে অস্বাভাবিক গতিতে কাছাকাছি আসতে দেখেই মৃন আতঙ্কে চিৎকার করে ডেকে উঠে নননভো…. কিন্তু না কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি মেডিকেলের দিক থেকে তীব্র গতি নিয়ে গাড়ীটা এলেও টু-ওয়ের কারনে গাড়ীটি বাঁ দিক দিয়ে চলে যায় নভো তখন মাত্র মধ্যের ডিভাইডারে পা রেখেছে।
মৃনের ডাক শুনে ডিভাইডার পার না হয়ে ওর’জন্য অপেক্ষা করলো তারপর একসাথে বাকী রাস্তাটুকু পার হলো।ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই মূক হয়ে গেছে বাকী পথটুকু কেউ কারো দিকে সহজ ভাবে তাকাতে না পেরে নীরবেই বাকী পথটুকু পার হয়ে এসে ক্লাশে ঢুকে পড়লো।
কিন্তু ক্লাশে ঢুকেও দুজনের কেউই স্যারের দিকে বিশেষ মনযোগ দিতে পারছিলো না।
নভো ভাবছে আমি আমার স্বভাব সুলভ গাম্ভির্যের আর্গল ভেঙ্গে কিভাবে আজ এত বাচাল হয়ে উঠলাম? এটা কি মৃনের সঙ্গ প্রভাব? দূর্ঘটনার আশংকায় মৃনের আর্ত চিৎকার কেন আমার হৃদয়ে কেউ একজন আমার কথা ভাবছে আমার ভালমন্দের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে এমন ভাবনার উদয় হচ্ছে? নাকি আসলে তেমন কিছুই নয় শুধুই মানবিক আবেদনের কারনে মৃন চেচিয়ে উঠেছিল। কিন্তু একটা মিল কি করে ঘটলো মৃনও আমার মত হাতা কেটে ছোট করা পোষাক পড়ে?? একই ভাবনা কি করে ওর মাঝেও কাজ করলো এও কি
কাকতালীয়?
মৃন ভাবছে আজ নভো শামুকের খোলস ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসার মত করে বেরিয়ে এসে হঠাৎ এমন প্রগলভ হয়ে উঠলো কি করে? এদিকে আমিও তো কথায় কথায় সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম এমন বিহ্বলতার হেতু কি? তাইতো এমন তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পেড়ুতে গিয়ে বিপদ ঘাঢ়ে এসে চড়ছিলো প্রায়। আমার আর্ত চিৎকারে এমন হৃদয়ের এমন করুন আবেদন কোথা থেকে এমন ভীড় করে চলে এলো! যার ফলে রক্তে রাঙ্গা মুখ নিয়ে আর নভোর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। নভোর তীর্যক উজ্জ্বল চোখের অদ্ভুদ আকর্ষন কিছুতেই অস্বীকার করতে বা এড়াতে পারছিনা কেন? এমন আত্মবিশ্লেষনের মধ্যে দিয়েই কখন যেন ক্লাশটা শেষ হয়ে গেল।
ক্লাশ শেষে ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। নভো তার পরিবেশ উদ্ধার প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার মানসে মাঠের দিকে রওনা দিল আর মৃন কমন রুমের দিকে হাটা দিল। অনুতপূর্ব কেমন লজ্জার দেওয়ালই যেন ওদের মাঝখানে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে গেল। ঠোঙ্গা কুড়াতে কুড়াতে নভো ভাবছে,' মেয়েদের পাত্তা না দেওয়া আমি কিভাবে মৃনের কথা ভাবছি?'
এখন শরৎকাল নীল আকাশের মাঝে সাদা সাদা মেঘ পুঞ্জাকারে ভেসে যাচ্ছে, কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি, এমনই এক বৃষ্টির কবলে পড়ে নভোর ঠোঙ্গা কুড়ানো শিকেয় উঠলো। দৌড়ে গিয়ে বিল্ডিং এর নীচে আশ্রয় নিলো।
ওখানে গিয়ে দেখলো যায়গায় যায়গায় ছেলেরা জটলা করে কি যেন আলোচনা করছে । কাছে গিয়ে জানতে পারলো আজ ঢাকা তেজগাঁও কলেজের ছেলেরা প্রায় ৬টা বাস ভাঙ্গচুর করেছে এবং বেশ কিছু ভার্সিটির নিরীহ সাধারন ছাত্রকে পিটিয়েছে।
সম্পদ ক্ষয় এবং ভার্সিটির ছাত্রদের গায়ে হাত তোলার অপমানের একটা বিহীত না করে কোন ক্লাশে কেউ এটেন্ড করবেনা এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নভো খেলাধুলা সাইক্লিং এ চৌকশ হলেও ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতি বিমুখ। জানতে পারলো তেজগাঁও কলেজের একটি প্রভাবশালী রাজনেতিক দলের নেতারা ভার্সিটির একই দলের নেতাদের সাথে আপোষ প্রস্তাব দিয়ে মিটিং এর আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু বড়ভাইদের গায়ে ছোটভাইদের হাত তোলার বিষয়টি এত সহজে কেউ মেনে নিতে পারছিলনা।
এখান থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে গুন্ডামী করা তেজগাঁও কলেজের ছাত্রদের বিচার করার জন্য মধুর ক্যান্টিনে নিয়ে আসতে হবে, কিন্তু তেজগাঁও কলেজের ছাত্ররা তা মানতে রাজী নয়, ফলে এই টানাপোড়নের যাতাকলে পড়ে পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
ইতিমধ্যেই লাঠিসোঠা হকিষ্টিক নিয়ে হল থেকে দলে দলে অতি উৎসাহী কিছু ছাত্র বেরিয়ে এসে তেজগাঁও কলেজ অভিমুখী রওয়ানা দিয়েছে।
ফার্মগেট,মনিপুরী পাড়া তেজতুরী বাজার, তেজকুনী পাড়া নভোথিয়েটার, হোন্ড গলি, ইন্দিরা রোড,মানিক মিঞা চত্বর, শাহবাগের দোকানপাট গুলি ঝটপট বন্ধ হতে শুরু করেছে ।
রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে এই এলাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাতে তেজগাঁও কলেজের ছাত্ররা আটকা পড়ে।
কঠিন পরিস্থিতি। নভো গা বাচিঁয়ে শাহবাগের দিকে রওয়ানা দিলো, উদ্দেশ্য রমনার ওদিক থেকে কাকরাইল হয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকা দিয়ে চলা উত্তরার বাস ধরবে।
চলতে চলতে মৃনের কথা ভাবছিলো, ওর মনে হয়েছে মৃন একটু ডেয়ারিং টাইপের ডাকাবুকো জেদী টাইপের মেয়ে, ঠিকই কোন ফাঁক গলে বেড়িয়ে যাবে, আর এদিকে এমনই ভাগ্য যে এইদিনেই কিনা ওর ড্রাইভার ছুটি নিয়েছে !
বাঘের ভয়ের সাথে সন্ধে হওয়ার একটা জটিল সমীকরনের বাস্তব নমুনা যেন প্রকট হয়ে উঠেছে।
ভাবতে ভাবতে পথ চলছিলো হঠাৎ নভো বলে একটা ডাক শুনে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল----।
(কখনো গল্প লিখিনি খায়রুল ভাইয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাহস করে লিখেই ফেললুম! ভাবছি পরীক্ষামূলক দুয়েকটা গল্প লিখবো কিনা )
নভোনীল -১ রিম সাবরিনা জাহান সরকার।
নভোনীল-২ পদ্ম পুকুর।
নভোনীল-৩ মেঘশুভ্রনীল।
নভোনীল-৪ খায়রুল আহসান।
নভোনীল-৫ আখেনাটেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:১৯