somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মতিউর রহমান মল্লিকঃ একজন ব্যতিক্রমী বিপ্লবীর নাম

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ এমন এক বিপ্লবীর গল্প বলব যাকে আপনারা অনেকেই চিনেন না । তিনি সিরাজ শিকদারের মত ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা কিনা সেটা আমার বিচার্য নয় ।আমি শুধু বিচার করছি একজন মানুষকে । হাজারো অমানুষের ভীড়ে একজন সত্যিকারের মানুষকে ।

সেই বিপ্লবীর পথ থেকে দুরে সরে এসেছি বহু আগেই ।কিন্তু সেই যে কৈশোরের প্রথম প্রেমের মতই তার গান আর সুরের ঝংকার আমার হৃদয়-মনে করে নিয়েছে আলাদা জায়গা তা দখল করার মত এতদিনেও কিছু পাইনি আমি ।

সুরের অনেক যাদুতে মুগ্ধ হয়েছি আমি । তবু কবি মতিউর রহমান মল্লিকের জন্য একটা আলাদা যায়গা আমার মনে সব সময়ই থেকে গেছে । তার পথ থেকে সরে গেলেও তার গান আছে আগের যায়গাতেই ।নজরুলের পরেই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ভাবধারার গানে কবি মতিউর রহমান মল্লিকের স্থান ।

প্রথম তার যে গানটি শুনেছিলাম সেটা ছিল একটি হামদ ।গানটার কয়েকটা লাইন এরকম-

“তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর
না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর
সেই কথা ভেবে ভেবে কেটে যায় লগ্ন
ভরে যায় তৃষিত অন্তর ॥
————————-
যে মানুষ মানুষের বেদনায়
কেঁদেছিলেন আজীবন মদিনায়
সেই মানুষ হয় যদি এত সুন্দর
না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর ।।”

তিনি বাংলাদেশের মাটিতে হেরার রাজ বুননের স্বপ্ন দেখেন । তার জীবনের পরতে পরতে লেগে আছে সেই আকাংখা বাস্তবায়নের চেষ্টা ।তার গানেও দেখতে পাই-

“আমার গানের ভাষা জীবনের সাথে যেন মিলে মিশে হয় একাকার
নিস্ক্রীয় হয়ে গেছি বলতে না পারে কেউ ব্যাথা ভরা কথাগুলো তার
———————————–
যে পথে চলার নেশা ধরেছিল একদা আমাকে
সে পথের মঞ্জিল আমরণ যেন মোরে ডাকে
নতুন দিনের সেই স্বপ্নলগন মন সবপ্রিয় থাকে অনিবার ।”

৮১/৮২ সালের দিকে যখন শিবিরে ভাঙ্গন হয় সে সময় পুরো খুলনা অঞ্চল চষে বেড়িয়েছিলেন তিনি । তার প্রচেষ্টাতেই আবার ধীরে ধীরে শিবির ঐসব অঞ্চলে আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠে । একটি মাত্র পাজামা আর পাঞ্জাবী ছিল সে সময় তার । সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে রুমে ফিরে লুঙ্গি পরে পাজামা পাঞ্জাবী ধুয়ে দিতেন- পরদিন আবার বেরিয়ে পড়তেন দ্বীনের কাজে ।জামাতের মত একটি সংগঠন যে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে তার কারণ বোধ হয় মল্লিকদের মত কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ।তার সে সময়ের একটি গানে ফুটে উঠেছে তার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা-

“একজন মুজাহিদ কখনো বসে থাকেনা
অর্থ-বিত্ত নাইবা থাকলো তার
নাইবা থাকলো সাজানো সম্ভার
তবুও সে হয়না হতাশ মুষড়ে পড়েনা ।”

আমার ধারনা ছিল তার কবিতা-গানে শুধু ইসলাম প্রেমের বিষয়ই স্থান পেয়েছে । সেখানে দেশপ্রেম অনুপস্থিত ।কিন্তু আমার সে ধারনা ভেঙ্গে যায় তার কিছু কবিতা পড়ে । একটি কবিতায় তিনি বলছেন-

“সিডর দিয়েছে ডর
বিপন্ন অন্তর
সিডর দিয়েছে স্বজন-হারানো গুমরিত প্রান্তর
দিয়েছে করুণ মৃত্যুর হাহাকার
দিয়ে গেছে খুলে ভয়াল সিডর
বেদনার যত অশ্রুসিক্ত দ্বার
আর দিয়ে গেছে বুকফাটা চিৎকার
ধস্ত বিরান বিবর্ণ সংসার।
———————-
দু-হাজার সাত তছনছ-করা
এলো উদ্মাদা ডর
ভয়ের চেয়েও ভয়ানক ভয়
সিডর ভয়ংকর।”

এমনি আরো অনেক কবিতায় তার দেশপ্রেমের বিষয়টি ফুটে উঠেছে । আল্লাহওয়ালা মানুষ, যিনি রাসুলের তুলনা খুঁজতে গিয়ে সা’দীর কাছে ‘সমতটী নাবালকে’র খেতাব পান, প্রেমেও পিছিয়ে নেই ।

“একটি হৃদয় কলির মত, ওলীর মত,
মেঘনা নদীর পলির মত।
পাখ-পাখালীর উধাও উধাও ক্লান্ত প্রহর,
উথাল পাথাল ধান সিঁড়ি ঢেউ নিটোল নহর
সবুজ খামার হাওয়ার খেলায় সুরের বহর
একটি হৃদয় লতার মত, লজ্জাবতীর পাতার মত
অনেক কথকতার মত ।

ঝুমুর ঝুমুর ঝাউয়ের নূপুর দুপুর বেলা
সুদূর প্রদেশ আলোর ঝালর সাগর বেলা
ঝোপ ঝাড় ও ঝিল জোনাক জোনাক তারার মেলা
একটি হৃদয় ফুলের মত, সুরমা নদীর কূলের মত,
বট পাকুড়ের মূলের মত ।”

বাগেরহাটের ছেলে মল্লিক । তার কবিতা গানে সুযোগ পেলেই সুরুৎ করে ঢুকে গেছে বাগেরহাটের বিস্তীর্ণ প্রকৃতি ।

“দাঁড়াতে দাঁড়াতে আমার আর দাঁড়ানোই হলো না
শ্বাস নিতে পারলাম না স্বপ্নের দোরগোড়ায়ও
ষাটগম্বুজের মেঘমালায় না
ঘোড়াদীঘির অতলতায় না
অন্ধকারেও না, রদ্দুরেও না
অমাবশ্যায়ও না, পূর্ণিমায়ও না
শোকেও না, সুখেও না।
বস্তুত: খানজাহান আলীর বারান্দায় কিংবা
উঠোনেও আমি আর উদাত্ত হলাম না
উদীর্ণ হলাম না।
তবুও ভালোবেসে যাই বাগেরহাটের সারাবেলা।”

কবি মল্লিক অসুস্থ । হাসপাতালের বেডে শুয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে । দুটো কিডনীই নষ্ট । আছে ডায়াবেটিস ।জীর্ণ শরীর নিয়ে আর কত লড়বেন অসুস্থতার বিরুদ্ধে !তবু তার সাংগঠনিক কাজ শেষ হয়না । তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়েই ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কাজ করে যান ।

ভুল মত কিংবা পথ নয় আমার কাছে বিচার্য মানুষ ।যে মানুষ মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে যান, তার বেছে নেয়া পথটি ভুল হলেও আমি তাকে স্যালুট জানাই ।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:৪৬

Click This Link
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×