আমাদের জেনারেশন বলিউডের চুলবুল পান্ডে কিংবা বাজিরাও সিংহম দেখে পুলিশের প্রেমে পড়ে । তাদের সাহসিকতা আর চাল-চলনও এখন ইয়ং ট্রেন্ডে চলে গেছে । কিন্তু ড্যুড জেনারেশন জানে কি আমাদের একজন পুলিশ অফিসার আছেন যিনি ওই বাজিরাও সিংহম থেকে দুর্ধর্ষ এবং সৎ । মিডিয়ায় তার কাজ খুব কমই এসেছে , যেগুলো এসেছে সেগুলো দেখেও আমরা বলতে পারি উনি একজন সত্যিকারের পুলিশ অফিসার ।
উনার জীবন টা এখন সিনেমার মতই হয়ে গেছে । সিনেমাটিক স্টাইলে যেমন একের পর এক সাহসী কাজ করেছেন , জংগী আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছেন , অভিযান চালিয়েছেন ঠিক তেমনি সিনেমাটিক স্টাইলে আজ তার সকল কাজের অনুপ্রেরনা তার ওয়াইফ কে দিনে-দুপুরে লোক ভর্তি রাস্তায় কুপিয়ে ও গুলি করে মেরেছে কিছু নরপিশাচ । অপরাধ তিনি ছিলেন সৎ, দায়িত্ববান ও সাহসী পুলিশ অফিসার ।
ছোট বেলা থেকে অনেক কিছু হতে চেয়েছি কিন্তু কখনও পুলিশ অফিসার হতে চাই নি । কারন এদেশের সকল সাধারন মানুষের মত একসময় আমারও ধারনা ছিল পুলিশ নামান্তেই খারাপ । এরপর দেখা পেলাম এসপি বাবুল আক্তার আর Mashroof Hossain ভাইয়ের।ফলাফল পুলিশ অফিসার হওয়ার ইচ্ছা আমার মাথায় জেঁকে বসেছে । ধারনা হয়ে গেছে ডাক্তারের পর একমাত্র পুলিশই পারে সাধারন মানুষ কে বাঁচাতে ।
এই এসপি বাবুল আক্তার সম্পর্কে কিছু জেনে নিন , তাকে সিনেমার নায়কই মনে হবে । বাবুল অক্তার ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ।২০০৭ সালে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিলেন ‘ভয়ংকর’ ছয় খুনের রহস্য উন্মোচনের দায়। নরসিংদীর ভেলানগরে সে বছরের ১৮ মে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে। একই পরিবারের ছয় সদস্যকে খুন করে ঘরের ভেতরেই লাশগুলো বস্তাভর্তি করে রাখা হয়েছিল চার দিন। ঘটনার তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চান র্যাব অফিসার বাবুল। অনুমতি পাওয়ার পর শুরু হয় বাবুলের অভিযান। ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ঘুরে গ্রেপ্তার করেন বীরুকে। তার সূত্র ধরে পুরো হত্যারহস্য উন্মোচন করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। মামলার বিচার শেষে আসামিদের ফাঁসির রায় দেন আদালত।
সিএমপিতে যোগ দিয়েই সর্বশেষ পুলিশ মার্ডার মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও খুনের কাজে ব্যবহৃত ‘কাটনি’ উদ্ধার করে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। আর এসব সাফল্যের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পেয়েছেন স্বীকৃতি- রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা) (২০০৮), ২০০৯ পিপিএম (সাহসিকতা), ২০১০ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১১ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসিকতা)। সর্বশেষ বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা) পুরস্কার লাভ করেছেন বাবুল আক্তার। আর এর মধ্যে চার-চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।
‘আইকন’ বাবুল আক্তারকে নিয়ে গর্ব করে বাংলাদেশ পুলিশ। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগ মুহূর্তে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বাবুল আক্তারকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এই বলে, ‘বাবুল আমাদের সবচেয়ে সাহসী অফিসার।’ শুনে প্রধানমন্ত্রী বাহবা দিলেন। বাবুল আক্তার দ্বিতীয় দফা স্যালুট দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী বাবুলের বুকে পরিয়ে দিলেন ‘বিপিএম’ মেডেল।
পুরান ঢাকা থেকে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার জাল সনদ, সনদ তৈরির কারখানা এবং এই অপকর্মের দুই হোতাকে আটক করেন।
কোনো এক বছরের ৭ ডিসেম্বরের ঘটনা। চট্টগ্রাম ইপিজেড থানা এলাকা থেকে অপহৃত হন চাকরিজীবী আবুল কালাম। বাবা বেলায়েত বিশ্বাসের কাছে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। স্থানীয়দের পরামর্শে ভাই শহীদুল ইসলাম ছুটে আসেন বাবুল আক্তারের কাছে। অপহরণের পুরো বৃত্তান্ত শুনে সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়লেন বাবুল। অপহরণকারীদের দেওয়া ‘বিকাশ’ নম্বর নিয়ে জেনে নিলেন সেটি কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আরো কিছু তথ্য উদ্ধারের পর ফোন করলেন সেই নম্বরে, ‘আমি বাবুল আক্তার বলছি, তোমার নম্বরে … টাকা পাঠাতে বলা হয়েছে। আমি তোমার অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। তুমি ওদের বলো কামালকে ছেড়ে দিতে। না হলে আমি আসছি। ওদের সঙ্গে তুমিও জেলে যাবে।’ অপহরণকারীরা এ কথা শুনে কালামকে ছেড়ে দেয়। ঝুটঝামেলা ছাড়াই ভাইকে ফিরে পায় ভাই, ছেলেকে ফিরে পান বাবা।
২০১৪ সালের ১১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো…
‘হাটহাজারী সার্কেলের দায়িত্ব পালনের সময় একবার শহরে এলাম মোবাইল ফোন মেরামতের জন্য। দোকানদার জানতে চাইলেন, ‘আপনি কি পুলিশে চাকরি করেন?’ ‘হ্যাঁ।’ ‘কর্মস্থল?’ ‘হাটহাজারী।’ ‘বাবুল আক্তারকে চেনেন?’ ‘হ্যাঁ।’ কিছুক্ষণ পর বিল তৈরির সময় দোকানি নাম জানতে চাইলেন। ‘বাবুল আক্তার।’ বিশ্বাস করতে পারলেন না। আবার জিজ্ঞেস করলেন। নিশ্চিত হওয়ার পর দোকানদার বললেন, ‘স্যার, আমি টাকা নেব না, আপনি ভালো মানুষ। আমার এক আত্মীয়ের উপকার করেছিলেন।’
তাকে বলা হয় বাংলাদেশ পুলিশের আইকন । অসাধুদের ত্রাস , জংগীদের যম । মাফ করবেন এসপি বাবুল স্যার ।