somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পহেলা বৈশাখ যেভাবে আমাদের হল ...

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতেহত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন।এক্ষেত্রে হিজরী ১ তারিখকে বাংলা সনের প্রথম দিন উল্লেখ করা হয়। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় ১৫৫৬ থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয় ।

আমরা সবাই প্রতি বছরে ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখের এই দিনটি পালন করে থাকি। কিন্তু আমরা সবাই কি জানি বা কেউ জানার চেষ্টাও করেছি কি এই পহেলা বৈশাখের ইতিহাস? এদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার চেষ্টা করেছে বৈশাখের ঐতিহ্যকে রুখে দিতে, তারা ইতিহাসকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, তারা “হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি” বলে প্রচার করেছে । সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এ প্রজন্মের একজন বাঙালীকে বৈশাখ যা শেখায় তা হলো সংগ্রাম করার সংকল্প। বাংলা সংস্কৃতির ওপর কালো থাবা বিস্তারে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

পাকিস্তান সরকারের এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতেই “ছায়ানট” ১৯৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ, বাংলা ১৩৭২ সন) রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু করে। বস্তুত এই দিনটি থেকেই “পহেলা বৈশাখ” বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম এক পরিচায়ক রূপ ধারণ করে। ১৯৭২ সালে (বাংলা ১৩৭৯ সন) ‘পহেলা বৈশাখ’ বাংলাদেশের জাতীয় পার্বন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ২১এ ফেব্রুয়ারীর মতোই থামিয়ে দিতে চেয়েছে বৈশাখের উদযাপন । ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু মঙ্গল শোভাযাত্রা ।

ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বসর সৌর বসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।

শামসুজ্জামান খান এর মতে ,
“ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নবজাগৃতির উৎসমুখ খুলে যাওয়ায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ৯২-ক ধারা জারি করে স্বৈরশাসন চালু এবং রাজনৈতিক কর্মী, এমনকি সংস্কৃতিক্ষেত্রের প্রগতিশীল সক্রিয়বাদীদের বিপুলহারে গ্রেপ্তার করায় সংস্কৃতির মুক্তধারার যে উৎসমুখটি খুলে গিয়েছিল তা আবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৫৮-এ আইয়ুবের সামরিক শাসন জারি হওয়ায় মুক্তবুদ্ধির চর্চা, গণমুখী সংস্কৃতির অনুশীলন একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু জনতার সংগ্রাম থেমে থাকতে পারে না। ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগ বের করে গোপন লিফলেট ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’। ১৯৬২ সালে চার ছাত্রনেতার নেতৃত্বে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠন, এই বছরেই ‘দেশ ও কৃষ্টি’ বইয়ে বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী প্রপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও ছাত্রদের শিক্ষা আন্দোলন সামরিক স্বৈরতন্ত্রের ওপর তীব্র আঘাত হানতে থাকে এবং বাঙালির এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার আন্দোলন তার রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদী ও স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নেয়। এই সময়ের ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’ এক নতুন ও নব দিকনির্দেশক স্লোগান হিসেবে আবির্ভূত হয়। বাঙালিত্বের চেতনার তীব্র চাপে সে বছর (১৯৬৪) প্রাদেশিক সরকার বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে। সেদিন ঢাকার বিভিন্ন নববর্ষ অনুষ্ঠানে অভূতপূর্ব জনসমাগম হয়। বাংলা একাডেমী, পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ, ছায়ানট (প্রতিষ্ঠা ১৯৬১), পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ, নিক্বণ ললিতকলা কেন্দ্র, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, সমাজকল্যাণ কলেজ ছাত্র সংসদ, গীতিকলা সংসদ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাঙ্গামার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও বাংলা একাডেমীর বটতলায় ‘ঐক্যতানের’ অনুষ্ঠানে এত দর্শক-শ্রোতার সমাগম হয় যে, ভিড়ের চাপে কয়েকজন আহত হয়। বাঙালির নববর্ষ অনুষ্ঠানে এত বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখে দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার বিস্ময় প্রকাশ করে।এরপর বাংলা নববর্ষকে জাতীয় উৎসবে রূপ দিয়ে রমনার অশ্বত্থমূলে অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করে ১৯৬৭ সালে। ১৯৬৬ সারে বঙ্গবন্ধুর ‘ছয় দফা’ আন্দোলন শুরু করার পর এই আয়োজন এক নতুন রাজনৈতিক তাৎপর্য লাভ করে। সেই থেকে বাংলা নববর্ষ সকল বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।”

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন নামে অবহিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ইরানের নববর্ষের উৎসবকে নওরোজ, ভিয়েতনামীরা তেত, তিব্বতীরা লোগসর, থাইল্যান্ডে এতে, খ্রিস্টানেরা খ্রিস্টমাস, মুসলমানেরা আসুরা ইত্যাদি। তবে মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরাই আরবি নববর্ষের এই আশুরা উৎসব পালন করে থাকে। অবশ্য এ কথা সত্য যে এটি মুসলসানদের ধর্ম সম্পৃক্ত উৎসব ।

মানে এই যে , পহেলা বৈশাখ হল আমাদের জাতীয়তাবাদের অংশ । উগ্রতা পরিহার করুন আর নিজেকে জানুন ।

সুত্র ঃ উইকিপিডিয়া , ব্লগ ও ওহিদুজ্জামানের রসাতল ।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×