somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমালোচনা ব্লগঃ লক্ষ্য ব্রিটিশ রাজ-বিবাহের স্তুতিকারীরা, উপলক্ষ্য শফিক রেহমান

১৬ ই মে, ২০১১ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
[এই লেখাটি কলামিস্ট জনাব শফিক রেহমানের 'বাস্তব পৃথিবীতে রূপকথার বিয়ে' নামক লেখার সাপেক্ষে লেখা, সাথে মিলিয়ে পড়ার জন্য লিঙ্ক



১)

মানবের কল্যানে মহৎ-কর্ম সাধনের পুরষ্কার হিসেবে হাততালি এবং ভালোবাসা উভয়ই কাম্য এবং নায্য। সেখানে বরং নিরস-নিরব থাকা সেই মহত-কর্মের মূল্যায়ণে ব্যর্থতার পরিচয়। এক্ষনে প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রিটেইনের রানির পৌত্র উইলিয়াম কী কী মহত-কর্মের স্বীকৃতি-স্বরূপ বিশ্বব্যাপী এই রকমের হাততালি অর্জন করলেন? এই সরল প্রশ্নের মীমাংসা না করে, ব্রিটিশ রাজ-বাড়ির বিবাহের দীর্ঘ ও আবেগ-বিগলিত বর্ণনা দান করে রেহমানবাবু পাঠকদের প্রতি অবিচার করেছেন। আশা করছি, এর একটি ব্যাখা তিনি হাজির করবেন এবং পাঠকদের আস্থা অর্জনে তার সৎ-প্রচেষ্টার প্রমাণ রাখবেন।

এক সময় এমন কথা প্রচলিত ছিল যে "ব্রিটিশ-রাজের সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না।"। এমন দাবীর কারণ ছিল পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ ভূমি ছিল তখন ব্রিটিশ-রাজের দখলে। দখলকৃত স্থানগুলির আরেক নাম উপনিবেশ। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি উপনিবেশ কাকে বলে। অন্তত উপনিবেশে বন্দী বাসিন্দাদের উত্তরসূরী হিসেবে তা ভুলে যাওয়াটা নিতান্ত অন্যায়ই বটে। তবুও দুয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিই। ১৮৫৭ সালে যখন বাংলা-বিহার-পাঞ্জাব-লক্ষ্ণৌসহ সমগ্র ভারত ব্রিটিশ-রাজের ঔপনিবেশিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় শুরু হয় ভারতের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ব্রিটিশ-রাজের প্রায় ২,০০০ সৈন্য-সামন্ত নিহত হয় তাতে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের সংগ্রাম পরাস্ত হয়। তারপর শুরু হয় ব্রিটিশ-রাজের প্রতিশোধ। কামানের মুখে বেঁধে তোপ দেগে, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে, কাতারবন্দী মানুষকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে - এভাবে আরো চমকপ্রদ নানা কায়দায় প্রায় ১ কোটি ভারতীয় মানুষ হত্যা করে ব্রিটিশ-রাজ।

রাশিয়ান চিত্রশিল্পী ভাসিলি ভেরেসচাগিন ভাশিলিভিচের আঁকা Blowing from Guns in British India

হত্যা করতে করতে ক্লান্ত অনেক ব্রিটিশ-সেনার বিবরণ ইতিহাসে এখনো পাওয়া যায়। বিদ্রোহের শাস্তি হিসেবে পাইকারী গণহত্যা 'জাস্টিফাই' করেছিল ব্রিটিশ-রাজ এভাবে যে, বিদ্রোহ করে ভারতীয়রা ইউরোপীয় মানুষের উপরে নির্যাতন করেছে। দেখুন কথা! পরদেশ দখল করে তার মানুষকেই কি-না বিদ্রোহের অভিযোগে নিধন! ব্রিটিশ-রাজের এই হচ্ছে জাস্টিফিকেশন।


এই প্রতিশোধের পটভূমিতে ইংরেজ কার্টুনিস্ট জন টেনিয়েলের আঁকা ছবি 'British Lion Attacks Bengal Tiger'

রেহমানবাবু কি ভুলে গেছেন ব্রিটিশ রাজ-পরিবারের সেই ইতিহাস?

২)

ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। ভারতের বিদ্রোহের প্রায় ১৫৪ বছর পরে, গত কয়েক মাস ধরে লিবিয়া নামক আফ্রিকার একটি রাষ্ট্রের কিছু মানুষ অস্ত্র নিয়ে বিদ্রোহ করছে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে। এই বিদ্রোহের কারণ, ধরণ, ন্যায্যতা ইত্যাদি নিয়ে কথা হতে পারে, কিন্তু চলুন আমরা বরং এক ঝলক দেখে আসি ব্রিটিশরা কি করছে এ নিয়ে। ব্রিটিশরা শুরু থেকেই সেই সশস্ত্র-বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়েছেন। বিদ্রোহীদের যেহেতু যুদ্ধ-বিমান নেই, তাই তাদেরকে সাহায্য করার জন্য জাতিসঙ্ঘের রাবার-স্ট্যাম্পের ছাপের জোড়ে ন্যাটোকে সাথে নিয়ে লিবিয়ার উপরে বিমান হামালায় ঝাপিয়ে পড়েছে। তাদের মিলিটারি এডভাইসাররা লিবিয়ায় বিদ্রোহীদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তাদেরকে অস্ত্র দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে। কি আশ্চর্য! যে ব্রিটিশরা নিজের উপনিবেশের বিদ্রোহে ২০০০ সৈন্য নিহত হবার প্রতিশোধ হিসেবে ১ কোটি মানুষ হত্যা করে তারা আজকে পরদেশের বিদ্রোহীদের পক্ষে লড়াই করে?

তারচেয়েও আশ্চর্য বিষয়, যেদিন ব্রিটিশ-রাজবাড়িতে বিবাহ-উৎসব, আর তার নিমিত্তে গোটা পৃথিবীজুড়ে মিডিয়া-সুনামি বয়ে গেল, তার পরদিনই, ন্যাটো তথা ব্রিটিশবাহিনী-যুক্ত বিমানবাহিনী মিসাইল আক্রমণে হত্যা করলো লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফীর এক পুত্র ও তার তিন শিশুকে। ব্রিটিশ-রাজ চুপ। রাজপৌত্র উইলিয়ামের মত গাদ্দাফী-পুত্রেরও বয়স ২৯। তার তিন শিশু জানতো না কেন তাদের ঘরে মিসাইল এসে পড়লো।

জনাব রেহমান দাবী করেছেন একমাত্র ব্রিটিশ রাজ-পরিবারই বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ দাবী করতে পারে, কারণ তারা বাঁচিয়ে রেখেছেন রূপকথা। শিশুর জন্য রূপকথাই বটে। কিন্তু তিনি ভুলে থেকেছেন ব্রিটিশ-রাজাক্রান্ত সেইসব শিশুদেরকে যারা তাদের রক্তের দামে ব্রিটিশ-রাজের রূপকথার গল্প যুগিয়ে চলেছে শতের পর শতক ধরে।

৩)

লিখার সময় সঠিকভাবে না লিখলেও রেহমানবাবু বাঙলায়ই লিখেন এবং যতদূর জানি বাঙলায়ই কথা বলেন, সে হিসেবে তিনি আমাদেরই একজন। আমরা মানে এই আমরা যারা প্রায় দু'শো বছর ধরে একটু একটু করে জেনেছি ব্রিটিশ-রাজের রূপকথার পেছনের প্রাণ-নাশী রূঢ় বাস্তবতা। তাঁর নির্লজ্জ তোষামোদি আমাকে লজ্জিত করেছে। ব্রিটিশ-রাজবাড়ির বিবাহের উল্লাসে দিগম্বর হয়ে যে সকল বিবেকহীন মূর্খ পথে নেমেছে, তাদের সকলের পক্ষ থেকে ক্ষুদিরামের কাছে, তিতুমীরের কাছে, প্রীতিলতার কাছে, সকল বাঙালির কাছে, ভারতীদের কাছে, আমেরিকার রেড-ইন্ডিয়ানদের কাছে, আফ্রিকার কালো দাসদের কাছে, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে, ব্রিটিশ-রাজের হাতে নির্যাতিত সমগ্র মানব-জাতের কাছে আমি লজ্জিত।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১১ রাত ১১:১৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×