somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর দিবস, নারী-দিবসের নারী

০৯ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কার জন্য নারী দিবস? শহুরে নারীর? গ্রাম্য নারীর? গৃহবধূ নারীর? শ্রমিক নারীর? কিষাণী নারীর? হিন্দু নারীর? মুসলমান নারীর? বাঙালি নারীর? ইংরেজ নারীর? ভেবে কূল পাই না কোন সে নারী, যার মুক্তির জন্য বিশ্বের দিবস নির্ধারকরা একটা দিন আলাদা করে ছেড়ে দিয়েছেন - কেবল নারীর জন্যই? কেনই বা দিয়েছেন? প্রশ্নটাতো সহজ আর উত্তরও আমাদের জানা - সকল নারীর জন্যই নারী দিবস! দিনরাত মিডিয়া আমাদের এ-ই তো জানিয়ে আসছে।

আসলেই কি তাই? নরসিংদী জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে যে নারী আজ সারাটা দিন তাঁত বুনেছে তাঁর জীবনে এই নারী দিবসের ভূমিকা কী? ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের তালাকপ্রাপ্তা মেজ মেয়েটির কোন কাজে এসেছে আজকের নারী দিবসের র‌্যালি? কিংবা গাড়ো পাহাড়ের পাদদেশে যে আদিবাসী নারীটি আজ পেটের জ্বালা নেভাতে মিশনারীদের কুঠিতে গিয়ে মুহুর্তেই খৃষ্টান হয়ে গেল তার অন্তর্দহনের আঁচ কি একটুকুও লেগেছে নারী দিবসের লম্বা শোভাযাত্রার গায়ে?

ভালো করে দেখুন, ঐ শোভাযাত্রার শোভা হয়ে আজ বহুদূর হেঁটেছেন আমাদের এই চেনা শহরের চেনা কোন প্রগতিশীলা নারী! নারীমুক্তির শ্লোগানে শ্লোগানে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেই হয়তো ঝাপিয়ে পড়েছেন তাঁর গৃহের ১২ বছর বয়েসী পরিচারিকার উপরে! সবাই হয়তো তেমন নন, কেউ হয়তো পরিচারিকাকে পেটান না, বরং স্বামীর হাতে প্রায়ই আহত হন, আর সেকারণেই নারী-মুক্তির মিছিলে যোগ দেন। তারপর জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। ফিরে এসে ভাবেন মুক্তি চাই। এই স্বামীর সাথে এক ছাদের নীচে আর নয়। মনে মনে হিসেব কষেন, দেনমোহরের টাকাটা কীভাবে কাজে লাগাবেন। নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। হ্যাঁ, তার দেনমোহর আসলে বেশ অনেকগুলো টাকা। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হবার সময় তাঁর বড়মামা মূলামূলি করে দেনমোহরের অংকটা বেশ বড়ই বাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রায় সব বিবাহিত বান্ধবীরই এ নিয়ে ঈর্ষা ছিল।

এভাবে কেটে যায় নারী মুক্তির দিনটি। তারপর আসে আবার আটপৌরে দিন-রাত-সকাল-বিকাল। আবার আগের মতই একটা একটা দিন চলা। সকলে ভুলে যান বিশেষ এই দিনটির কথা। ভুলেন না কেবল ফেয়ার এ্যন্ড লাভলী আর পন্ডস্ এর মত কোম্পানির মার্কেটিং এক্সেকিউটিভরা। কেন? কারণ নারীদিবসটি আসলে ওনাদেরও! কেমন করে? তারাও কী নারীমুক্তির জন্য চিন্তিত? না, তা নয়। বরং নারীকে বন্দী করে রাখতে পারলে তাদের লাভ বেশি।

এবার পাঠক বিরক্ত হবেন নিঃসন্দেহে! বিউটি প্রোডাক্টসের ফেরিওয়ালারা কেমন করে কেনই বা নারীকে বন্দি করে রাখতে চাইবেন! তারাই তো বরং নারীকে মুক্তি দেন কালো রঙের যন্ত্রণা থেকে, ফর্সা করে দিয়ে, কুঁচকানো ত্বক মসৃন করে দিয়ে, পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে! তাঁদের দোষ দেয়া কেন মিছিমিছি! তা বটে! ওঁরা মুক্তি দিচ্ছেন নারীকে গায়ের রঙের হীনমন্যতা থেকে। সাহায্য করছেন পুরুষের সামনে নারীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে! দেশে দেশে আবার এই সাহায্যের ধরণ আর মাত্রা ভিন্ন। যেমন আমাদের মত দেশে যেখানে মানুষের গায়ের রঙ য়ুরোপীয়দের মত অতটা শাদা নয়, বরং কালোর দিকে - তাদের কানের কাছে সারাদিন ওরা চেচাচ্ছেন কালো রঙ খারাপ কালো, রঙ বিশ্রী, কালো মেয়ে তুমি। এই কালো মেয়ে, তোমাকে হীনমন্যতায় ভুগতে হবে। আর ওদিকে য়ুরোপে এই এঁদের মুখেই আবার অন্য কথা! এই মেয়ে তুমি এত ফ্যাকফ্যাকা শাদা কেন! ইশ তোমার চামড়া দেখছি একেবারে ফ্যাকাশে! এসো আমার কাছে এসো, গোপন দাওয়াই আছে! এর নাম ট্যানিং! আরো একটু কড়া হোক তোমার ত্বকের রঙ! দেখো কি সেক্সি দেখাচ্ছে তোমাকে!

আহ নারী-মুক্তি! নারী তোমার মুক্তি হবে কোথায়, কোন মহাদেশে গেলে!
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×