ইন্টারনেট সুবিধায় ভারতের মুম্বইয়ে চলছে রমরমা যৌন ব্যবসা। আগে রাস্তাঘাট, পথে-প্রান্তরে এমনকি আবাসিক হোটেলে দেখা মিলতো দেহপসারিণীদের। কিন্তু তাতে ঝক্কিঝামেলা অনেক। পুলিশ গিয়ে ধরে। আছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ধকল। এসব থেকে রেহাই পেতে দেহপসারিণীরা এখন ধরেছে অন্য পন্থা। তারা এখন ইন্টারনেটকে বেছে নিয়েছে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে । তারা এখন নিজেরাই ওয়েবসাইট খুলে বসেছে। তাতে যুক্ত করে দিচ্ছে নিজের ছবি ও রেট কার্ড। এ রেট পাত্রীভেদে হেরফের হয়। গড়পড়তায় ঘণ্টাপ্রতি চাওয়া হচ্ছে ১০ হাজার রুপি। আর সারাদিনের জন্য ৪ লাখ রুপি। এ হিসাবে এ খাত থেকে বছরে তারা কামিয়ে নিচ্ছে ১০০০ কোটি রুপি। এ খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতের একটি অনলাইন ট্যাবলয়েড পত্রিকায়। তাতে বলা হয়েছে, ধরুন ইশিকা কাপুরের নামই। তিনি নিজেকে বর্ণনা দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী টগবগে যুবতী হিসেবে। বলেছেন, তিনি শহরের উঁচু স্তরের দেহপসারিণী। তার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি একজন বিমানবালা। তবে ইচ্ছা করলেই যে কেউ তার সঙ্গ ভোগ করতে পারবে না। তিনি দেহ বিনিময় করবেন শুধুমাত্র উঁচু স্তরের খদ্দেরের কাছে। ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন- আমি ২৪ বছরের এক ফুটন্ত যুবতী। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। আমার রয়েছে আকর্ষণীয় দেহ যার পরিমাপ ৩৬সি-২৪-৩৬ ৯। আমি একজন বিমানবালা। মুম্বইয়ে আমি স্বাধীনভাবে দেহ ব্যবসা করে থাকি। আমি সেবা দিই ভিআইপি খদ্দের ও অভিজাত খদ্দেরদের। তাদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব আমি পরখ করে নিই। তারপর অতিগোপনীয়তা বজায় রেখে তাদের সঙ্গ দিই। আমি আকর্ষণীয়া। আমি ভালবাসতে পছন্দ করি। আরও পছন্দ করি ভ্রমণ করতে। মুম্বই, ভারত ও দেশের বাইরে আমার সার্ভিস সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা। আমার রেট শুরু ১৫০০০ রুপি থেকে। অন্য দেহপসারিণীর থেকে এ রেটটা একটু বেশি হতে পারে। কিন্ত আমি যে সার্ভিস দিই তার মান আরও অনেক বেশি মানসম্পন্ন। আপনি এতে সম্মত হলেই আমাকে কল করুন। এর পরই দিয়ে দেয়া হয়েছে তার কণ্টাক্ট নম্বর। ওই পত্রিকার এক সাংবাদিক সমপ্রতি এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালান। তিনি ইশিকা কাপুরকে ফোন করে সময় চান। জবাবে ইশিকা বলেন- তিনি সেদিন শুক্রবার কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকবেন। তার পর ইশিকা জানতে চান- আপনি কোথায় হোটেল বুক করেছেন? আমার ওয়েবসাইটে যেমনটি আমাকে দেখেছেন আমি সেরকমই। তবে আমার রেট আলোচনা করে সমঝোতায় আসা যেতে পারে। এরকম আরেকজন দেহপসারিণী দীক্ষা আরিয়া। সমাজের সম্পদশালী নাগরিকদের কাছে তার রয়েছে বেশ কদর। তিনি নিজের ওয়েবসাইটে দাবি করেছেন, তার বয়স ২৫ বছর। তিনি মুম্বইয়ের নাগরিক। উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। তার শারীরিক মাপ ৩৪-২৬-৩৬। তিনি লিখেছেন- আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। আছে ভাল বাচনভঙ্গি। আমি ভাল শিক্ষিতও। আমি আমাদের একান্ত সময়টাকে বিস্ময়কর উপভোগ্য করে তুলবো। আমার পছন্দ ভ্রমণ করা। এর অর্থ হলো আমি আপনার ব্যবসায়ী সফরের সময় সঙ্গী হতে পারব। রাতের খাবার অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক বা গোপন উপস্থিতিতেও আমি অদ্বিতীয়। আমার উচ্চ মানের এসকর্ট সার্ভিস আপনাকে দেবে অপার উৎসাহ ও উদ্দীপনা। আমি সব সময় প্রাণখোলা। হাসিখুশি। এর পরই তিনি ওয়েবসাইটে যোগ করে দিয়েছেন নিজের মোবাইল ফোন নাম্বার। তাতে ফোন করলেই অপর প্রান্ত থেকে দীক্ষা আরিয়া কথা বলে উঠবেন। তার ওয়েবসাইটে রয়েছে আড্ডা দেয়ার সুবিধা। তার সঙ্গে ওই সাংবাদিক যোগাযোগ করতেই তিনি বলেন- প্লিজ একটি হোটেল বুক করে তারপর আমাকে ডাকুন। এছাড়া আমার সম্পর্কে সবকিছুই বলে দেয়া আছে ওয়েবসাইটে। এটা আমার পার্টটাইম কাজ। এতে তিনি নিজের রেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে দুই ঘণ্টার জন্য তাকে দিতে হবে ২০,০০০ রুপি। ৪ ঘণ্টার জন্য দিতে হবে ৩০,০০০ রুপি। ৬ ঘণ্টার জন্য দিতে হবে ৪০,০০০ রুপি। ১২ ঘণ্টার জন্য দিতে হবে ৪৫,০০০ রুপি। ২৪ ঘণ্টার জন্য ৫০,০০০ রুপি। এসব কথা শোনার পর মুম্বই পুলিশের মুখপাত্র ডিসিপি রাজকুমার ভাটকার বলেন, এ ব্যবসা বন্ধ হওয়া উচিত। তবে অনলাইনে যোগাযোগ করে দেহ ব্যবসা করেন এমন এক দেহপসারিণী বলেন, এভাবে ব্যবসায় অনেকগুলো সুবিধা আছে। এতে নিজেই নিজের ব্যবসা করা যায়। কিন্তু এসকর্ট সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যবসা করতে গেলে তারা কমিশন কাটে। তাছাড়া বারবার ঘেরাও দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসা করলে তাতে কারও কাছে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কাও কম। কারণ, কখন আমরা খদ্দেরকে মনোরঞ্জন করি তা পুলিশের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
মানবজমিন