মস্তিষ্ক বলছে ভারত। হৃদয় বলছে অষ্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবারের ম্যাচ অল্প কথায় আমার কাছে এমনই দাঁড়াচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়া এখন পর্যন্ত যে ভাবে খেলছে, তেমন খেললে চলবে না। কারণ, ওরা কোয়ার্টার ফাইনালে যে ভাবে উঠল তাতে খুব ভরসা করা যাচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধটা ওদের সামনে বড় তাড়াতাড়ি চলে এল। যেটা গত বারের চ্যাম্পিয়নদের সমস্যায় ফেলতে পারে। কানাডা এবং কেনিয়ার বিরুদ্ধেও ওরা মোটামুটি ভাল ভাবে জিতলেও ঝলসে ওঠেনি। অষ্ট্রেলিয়ার এখন ওই ঝলসানিটা দরকার। বিশেষ করে ভারতকে টপকাতে ওটা লাগবে।
এই ম্যাচটায় খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু মুহূর্ত দেখতে পাব। ব্রেট লি-জনসন-শন টেট বনাম সহবাগ-সচিন-গম্ভীর, এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হতে যাচ্ছে। ’৯৯-এ আমরা ম্যাচের রং পাল্টে দিয়েছিলাম ভারতীয়দের শর্ট বলের জ্বলুনি দিয়ে। মনে হচ্ছে, মোতেরাতেও একই ষ্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করবে পন্টিং। যদি ভারতের প্রথম দিকের কয়েক জন ব্যাটসম্যানকে শর্ট পিচ বল করে তুলে ফেলে পেসাররা, তা হলে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে আতঙ্ক ঢুকে পড়বে। উল্টো দিকে যদি আবার ভারতীয়রা অষ্ট্রেলীয় পেসারদের আগুনের মোকাবিলা করে আগুন দিয়ে, কয়েকটা আপার কাট এবং পুল যদি বেরোয় সহবাগ-সচিনের ব্যাট থেকে, তা হলে ধোনির দল দারুণ ছন্দ পেয়ে যাবে।
আর এখানেই ব্রেট লি-র ভূমিকাটা প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। দুর্দান্ত বল করছে এখন। ম্যাকগ্রা যত দিন খেলেছে, ব্রেট লি-কে ওর ছায়ায় থাকতে হয়েছে। কিন্তু নিজেকে বোলিংয়ের নেতা হিসাবে প্রমাণ করার ওর এটাই সেরা সময়। সেই জায়গাতেও আছে। ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করছে এই টুর্নামেন্টে।
ভারতীয়দের জন্য আবার ম্যাচের মোড় ঘোরাচ্ছে যুবরাজ সিংহ। ওর ব্যাটিংকে যথেষ্ট ধারাবাহিক দেখাচ্ছে। সঙ্গে কাজে লাগছে ওর বাঁ-হাতি স্পিনও। তবে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কখনও নিজের প্রতিভার সুবিচার করেনি ও। যতটা ক্ষমতা আছে, ততটা বেরিয়ে আসেনি।
এবং সব শেষে রিকি পন্টিং প্রসঙ্গ। ব্যাটিং-ফর্ম তলানিতে এসে ঠেকেছে। ক্রিকেট-ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠে পড়ছে। যেগুলোর এই মুহূর্তে কোনও দরকার আছে বলে মনে করি না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, এক জন চ্যাম্পিয়নকে কখনও খাটো করে দেখা উচিত নয়। ভারত হয়তো আবিষ্কার করল, পন্টিং নিজের সেরাটা ওদের জন্যই তুলে রেখেছিল!
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বকাপে এই প্রথম দেখছি অষ্ট্রেলিয়াকে ‘আণ্ডারডগ’ ধরা হচ্ছে। ভারতের পক্ষে এটা সেরা সুযোগ নিজেদের তুলে ধরার। ২০০৩ ওয়াণ্ডারার্সের স্মৃতি মুছে ফেলার। ভারতের এই টিমেও কিছু ক্রিকেটার আছে যাদের ওই দিন বেধড়ক মার সহ্য করতে হয়েছিল। ভারতকে আসলে সমস্ত প্রত্যাশা, চাপ ঝেড়ে ফেলে ঠাণ্ডা মাথায় নামতে হবে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের ঠিক আট বছর এক দিন আগে ওই লাঞ্ছনা জুটেছিল ভারতীয়দের। কিন্তু প্রতিশোধ এমন একটা খাবার, যেটা ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা খেতেই ভাল লাগে!