প্রথমে দুটো কথা বলে নিই -
প্রথমত, গতকাল হয়ে গেল বাংলাদেশ - ভারত এশিয়া কাপ২০১৬ টি টোয়েন্টি'র ফাইনাল খেলা।
দ্বিতীয়ত, আমি কোন সাইকোলজিস্ট নই, স্রেফ দর্শক আর বাংলার সাধারণ একজন জনগণ।
গল্প ১ -
গল্পটা আমার নিজেরই। সাধারণত যা হয় এবং স্বভাবতই জয় হবে নিজের দেশের এমন ফলাফল তো স্বাভাবিক প্রত্যাশাতেই থাকে। সে অনুযায়ী খেলা দেখতে বসি। কিন্তু দেখা যায় যতক্ষণ আমি টিভির স্ক্রীনের সামনে বসে আছি, ততক্ষণ কোন ব্যটসম্যান না পারছে একটা বাউন্ডারী না কোন চার - ছক্কা। নিজের উপর দোষ ঝাড়ি। সম্ভবত সামনে বসে তাই ওরা পেটাতে পারছেনা। উঠে যাই, নয়তোবা চ্যানেল ঘুরিয়ে দেই। ঠিক তার পরেই পাড়ার ছেলেদের হৈ হৈ চিৎকার, হয় চার মেরেছে নয় ছক্কা।
--- এই গল্পটা প্রায় অনেকের সাথে মিলে যায়। সবাই যারা গল্পটা তাদের নিজেদের জীবনে প্রতিফলিত হতে দেখেন তারা দোষটা নিজের ঘাড়ে দিয়ে দেন। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে ? বাস্তবতা হচ্ছে ক্রিকেট মাঠে যারা খেলছেন তারাই সবচাইতে ভাল বলতে পারবেন, কোন বলে চার মারবেন আর কোন বলে ছক্কা মারবেন। খেলা তো আর আপনি খেলছেন না, আপনি শুধু দর্শক মাত্র, তাও আবার মাঠে বসে খেলা দেখছেন না, টিভির সামনে, চিল্লায় যদি ঘর চুরমারও করে ফেলেন সে শব্দ ওই খেলোয়ারের কানে যাবেনা। তাহলে নিজেকে দোষ দেয়া আর নয়। সাহস নিয়ে টিভির সামনের সুপার গ্লু লাগিয়ে বসে থাকুন, খেলাটা উপভোগ করুন।
গল্প ২ -
'আমি মাঠে গেলেই বাংলাদেশ হারে', আমি মাঠে থাকলেই বাংলাদেশ টসে হারে', 'আমি গ্যালারীতে থাকলেই বাংলাদেশ রান পায়না' - হরহামেশা শুনতে পাওয়া কতগুলো উদাহরণ দিলাম। এক পাগলা ভক্তের সর্বশেষ সংস্করণ গল্প শুনুন - এই ফাইনাল খেলা সে দেখবেই, তার জন্য চাই টিকেট। কিন্তু টিকেট কোথায় পাবে। খুব ভোরে স্টেডিয়ামে চলে গেল। ব্যাংকের সামনের লাইন দেখে তো তার মাথা এক চক্কর ঘুরে আরেক চক্কর দেবার অপেক্ষায়। বুদ্ধি করলো, অন্যভাবে টিকেট ম্যানেজ করবে। টাকার শ্রাদ্ধ করে ১৫০ টাকার টিকেট কিনলো ২৫০০ টাকা দিয়ে। সবকিছুই ঠিক ছিল। খেলার দিন বিকেলের মধ্যেই স্টেডিয়াম এরিয়াতে হাজির। হঠাৎ তার পুরোনো ইতিহাস মাথায় ভর করলো। সে যতদিন স্টেডিয়ামে বাংলার খেলা দেখেছে ততদিন বাংলাদেশ হেরেছে। আগেই বলেছি পাগলা ভক্ত। সে ঠিক করলো স্টেডিয়ামে আর ঢুকবেনা। কিন্তু টিকেটের কি হবে। দিয়ে দিল আরেক বন্ধুকে এত দামের শখের টিকেট।
--- আবেগের গল্প ঠিক বলা যাবেনা, আবার এড়ানোও যাবেনা। তবে আবেগ আর যাই তাই বলুন অবস্থাবতা থেকে যে মানুষ কতটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে এটা তার একটা উদাহরণ। আরে আমার আপনার কি অলৌকিক ক্ষমতা আছে যে একটা দলকে জেতাতে পারে বা হারাতে পারে। নিশ্চয়, স্বপ্নে পাওয়া কোন শক্তি যদি থেকে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা, কিন্তু তা থাকার অস্তিত্ব যেহেতু নেই সেহেতু কেন নিজেকে অন্ধকারে ঠেলে দিবেনে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী এই যে, আমি আপনি খেলায় কোন পরিবর্তন আনতে পারবোনা এটা যেমন ঠিক তেমনি খেলার ফলাফল একটা না একটা হবে হয় হার নয়তোবা জিত। সেটা নির্ধারণ হবে খেলোয়ারদের খেলার দক্ষতার উপর। আমার - আপনার উপস্থিতির - অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করেনা।
গল্প ৩ -
সাদমান আর আরিফ দুজন পাশাপাশি বসেছে। স্টেডিয়ামের পশ্চিত গ্যালারীতে ওরা বসেছে। দুজন পরষ্পরের কাছে পুরোপুরি অপরিচিত। সাদমান আজ সকালের পত্রিকায় জানতে পেরেছিল আজ তার জন্য খুশীর খবর আছে। সে সেটাকে কনভার্ট করে খেলার রেজাল্টের সাথে মিল করেছে, মানে খেলায় আজ বাংলাদেশ জিতবে আর সেটাই তার কাছে খুশীর সংবাদ। আর আরিফ দেখেছে তার রাশিতে খারাপ বা দু:সংবাদ থাকতে পারে। সেও একই ভাবে কনভার্ট করেছে খেলার রেজাল্টের সাথে। যাই হোক খেলা শুরু হলো, চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে একটা রেজাল্ট হলো। বাংলাদেশ হারলো। পুরোপুরি রাশি রেজাল্টের উপর বিশ্বস্ত সাদমান তো মহা ক্ষ্যাপা রাশিফলের উপর, ভূয়া, বদমাশ বলে গালাগাল করতে করতে বের হয়ে গেল। আর আরিফেরও মেজাজ খারাপ, রাশিফল কি আজকের দিনের জন্য ভাল হতে পারলোনা, তাহলেই তো ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততো।
--- খেলা খেললো মুশকিফ, মাশরাফিরা। আর পুরো খেলাটাই কন্ট্রোল করলো এই সাদমান আর আরিফ। তাই নয় কি ? তা না হলে এই রাশি বিশ্বাসী দর্শকরা পুরো রেজাল্টটর জন্যই রাশির উপর দোষ চাপালো বা আফসোস করলো। রাশি কি করতে পারে ? রশির মতন টেনে-টুনে আপনার সরল-সুন্দর মনটাকে, মনের বিশ্বাসটাকে একটা জায়গায় আটকে রাখতে পারে। যার কোন ভিত্তি নেই।
গল্পগুলো বললাম এ কারণে, বংলাদেশ ক্রিকেটে যত এগুচ্ছে আমরাও তত এ ধরনের মিথ্যা যুক্তি, বিশ্বাসের উপর ভর করে ততটাই বাস্তবতা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। অগ্রহণযোগ্য, যুক্তিবিহীন, তথ্যবিহীন, অবাস্তব কিছুতে আটকে না থাকি। আমাদের ভালবাসা যেমন থাকবে অটুট তেমনি আমাদের খেলোয়াররা তাদের শক্তি দিয়েই দেশের জন্য ভাল ফলাফল বয়ে আনবে, সেটাই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯