গল্পের শিরোনামে অথবা যোগ করে আত্মহত্যা আর খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত করতে চাইনি, কারণ অবশ্যই এর মাঝে একটা যোগসূত্র আছে, সে গল্পটাই আজ বলবো। তার আগে এই গল্পের নায়ক সম্পর্কে একটু আধটু বলে নিই। নায়ক আমি নিজেই, মানে প্রচেত্য। প্রচেত্য কাজ করে, খাই, দাই, ঘুমাই, সবই করে; তবে প্রচেত্য'র একটা বিশেষ খারাপ গুণও আছে। গুণের কি আবার খারাপ হয় না কি ? হবে হয়তো কারণ প্রচেত্যর আজ মাথা এলোমেলো, তাই তার স্বাধীনতা আছে ওলট পালট বলবার। পাঠক মশাইয়েরা এ নিয়ে অভিযোগ তুলবেননা অনুরোধ করে। যা হোক, পেছনের লাইনে ফিরে আসি "বিশেষ খারাপ গুণ" তার নতুন নতুন সব কিছু ভাবতে ভাল লাগে, ভাল লাগে সুমধুর কল্পনা করতে .. ইত্যাদি ইত্যাদি । ও হ্যা "বিশেষ খারাপ গুণ"; ধরুন আপনার কোন পরামর্শ প্রয়োজন পড়ল, আপনি কোথায় যাবেন, সে রাত হোক বিরেত হোক কিংবা দিন - রজনী যাই হোক না কেন, আপনাকে বলি সোজা প্রচেত্যর দরবারে হাজির হয়ে যাবেন, সে আপনাকে নিশ্চয় নিরাশ করবেন না।
সকালটায় অফিসে পৌছেছি খানিকটা দেরীতে, এম্নিতেই মেজাজ চরম তীরিক্ষে হয়ে ছিল গতকাল থেকেই; পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক আরো কত কি ঝুট ঝামেলা, কোনটা থুয়ে কোনটা রাখি। যাকগে, অফিসের চেয়ারটায় হেলান দিয়ে সাত সকালেই কাজের বদলে গান জুড়ে দিলাম কম্পিউটারে। আমার পাশে আমার কলিগ শিবলী ভাই বসেন; হুজুর এবং খুবই ভাল একজন মানুষ। চেয়ারে পা দুলাতে দুলাতে ওনাকে দেখছি, তিনি তখন কি একটা কাজ করছিলেন, হাঠাত করেই ...
আচ্ছা শিবলী ভাই জানেন, আমি আজ কি করতে চলেছি ?
মুখ না ঘুরিয়ে তিনি কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলেন "কোথায় যাচ্ছেন ভাই"
I am going to kill myself... today
ধপাস করে চোখ দুটো বড় বড় করে, দম নিতে নিতে আমার দিকে ফিরলেন "কি বলছেন ভাই?"
আমি বললাম "হ্যা, বিশ্বাস হচ্ছেনা তো, এই দেখেন suicide note"যদিও ওটা একটা সাদা কাগজ ছিল, তিনি দেখে কিছুই বুঝলেন না, শুধু বিষ্ময়ে বললেনে "এতো সাদা কাগজ !"
আমি বললাম "হ্যা, ওটাতে লিখিনি এখনও, ভাবছি এখনই কম্পোজ করে ফেলবো"
শিবলী ভাইয়ের হাতে থাকা কাজ বন্ধ করে আমার দিকে ফিরেই কথা বলছিলেন, অামার অফিস রুমে আরো দুজন কর্মকর্তা বসেন কিন্তু ততক্ষনে শুধু একজন এসেছিলেন আরেকজন আসেননি, আমি কথাগুলো বলছিলাম আস্তে আস্তে যাতে অন্য কেউ শুনতে না পায়।
"আচ্ছা শিবলী ভাই suicide note - এ আপনার নাম'টা দিয়ে দেই ?"
কি বলবো আর, বেচারার চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছিল তখনই কোটার থেকে বেরিয়ে আমার হাতে উপহার স্বরুপ এসে পৌছবে, দরকার হলে জান দিতে সে প্রস্তুত তবুও যেন suicide note - এ নাম লেখা না হয়।
শিবলী ভাইয়ের অবস্থা তখন আমার থেকে আরও করুন, কোন মতে বললো "ভাই এসব কি বলেন ? suicide note এ আমার নাম কেন ? ভাই প্লিজ মাফ করে দেন ? ভাই প্লিজ "
বেশ গম্ভীর আর ভারিক্কী সুর তুলে বললাম "হুমম, রেহাই দিতে পারি তবে এক শর্ত, আজ দুপুরে লাঞ্চ করাতে হবে; রাজী ?"
তিনি কোন চিন্তা ছাড়াই উত্তর দিলেন "অবশ্যই"
এতো গেল শুধু শিবলী ভাইয়ের গল্প, ঠিক একইভাবে আজ এই suicide আর suicide note- এর গল্প ফেঁদে একেক জনকে ধরে দুপুরের লাঞ্চ, বিকেলের স্নাকস আবার রাতের ডিনারেরও আয়োজন করে ফেলেছিলাম। সবাই যে suicide note কে এত্তো এত্তো ভয় পাই, এই গল্প'টা না ফাঁদলে জানাই হতো না। অবশেষে যখন বাড়ী ফিরছি, একটা কথাই শুধু ভাবছিলাম, মানুষ suicide note - কে কতটা ভয় পায় ! তাই না ? ভয় তো পাবেই, যদি সেই note এ তার নাম থাকে।
ওহো, বলাই তো হয়নি, "বিশেষ খারাপ গুণ" প্রচেত্য'র সেই বিশেষ খারাপ গুণ'টি কি জানেন ? সে আত্মহত্যার টেকনিকে ওস্তাদ ! নতুন, পুরাতন, সিঙ্গেল, মাল্টিপল, ভিজিয়েবল, ইনভিজিয়েবল, থ্রী জি, ফোর জি আরো কত রকমের suicide techniques যে তার জানা আছে তার ইয়াত্তা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৭