(১)
মঞ্চে আবৃত্তি করি না দু মাস হলো প্রায়। অফিসে ব্যস্ততার জন্য আবৃত্তির গ্রুপেও যাওয়া হয়না, চর্চা করাও হয়না, যার জন্য বিগত জাতীয় দিবসগুলিসহ আরও যেসব আবৃত্তির অনুষ্ঠান ছিল সেসবে ডাক পাই নাই। এটা আমার জন্য কতখানি কষ্টের সে আমি লিখে বোঝাতে পারব না, মানুষ গুনগুন করে গান গায়, আমি কবিতার লাইন জপি! আবৃত্তির কবিতা যেহেতু বেশিরভাগই গদ্য ছন্দের এবং কিছু কিছু সংলাপ নির্ভর, সেহেতু রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাসার মধ্যেও লোকজন এমন দৃষ্টিতে তাকায় যেন সুন্দর পোশাক পরিধেয় কোন এক পাগলকে দেখছেন তারা! বাসায় চর্চা করলে তো প্রায়শই পাশের রুম থেকে চিৎকার শুনতে হয়; কীরে ভাই পাগল হয়ে গেলেন নাকি, একা একা কি বক বক করেন! এমন ও... ও... ও... আ... আ... আ... করতেছেন কেন, কিছু আটকে গেছে গলায়? আসলে আবৃত্তি চর্চার কিছু ব্যায়ামই এমন যে, যখন আপনি সেগুলি চর্চা করবেন তখন পাশে আপনার বন্ধুরা থাকলে হো হো করে হাসবে আর অপরিচিত কেউ থাকলে ঐ যে উপরে যা বললাম তেমন দৃষ্টিতে তাকাবে। সে জন্য ঢাকার বাইরে বাড়িতে থাকবার সময় আমি বেশীরভাগ সময়ই নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে চর্চা করতাম, চিৎকার করে করে দুরের নৌকার মাঝিদেরকে ডাকতাম, তারা শুনতে পেলে হাত উঁচু করত, আমিও হাত উঁচিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিতাম; না ভাই আসতে হবে না! বাড়ির মধ্যে চিৎকার করতে হবে না সেরকম ব্যায়ামগুলি করতাম, এই যেমন দমের ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম আর কি! আসনে বসলে যদি আব্বার চোখে পড়েছি তাহলে তিনি শুরু করতেন চিৎকার করার ব্যায়াম; এই টুনুর মা, আসেন, কোথায় আপনি, আসেন আসেন, দেখেন আপনার সাধু বাবাকে, পড়াশুনা নাই সন্ন্যাসী হবার সাধ জাগছে ব্যাটার!
(২)
ব্লগে আমার বয়স আজকে এক মাস এক দিন পূর্ণ হয়েছে। খুবই অল্প সময়। এই এতটুকুন সময়েই যতটুকুন সাড়া আমি পেয়েছি, যে উৎসাহ, ভাললাগা মন্দলাগা আপনারা জানিয়েছেন, আমি অভিভূত এবং অবশ্যই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সত্যিই ভীষণ কৃতজ্ঞ। এইটুকুন সময়ে ব্লগের প্রতি, আপনাদের সবার প্রতি অন্যরকম একটা টান আর ভালবাসা জন্ম নিয়েছে আমার ভেতর ক্রমশ! যার জন্য অন্য অনেকের মতন আমিও বেশ উৎফুল্ল ছিলাম ব্লগ দিবসের উদযাপন হচ্ছে এই ভেবে। ভীষণরকম ইচ্ছে ছিল অনুষ্ঠানে অংশ নেবার। ব্লগে আসবার বয়স কম, তারপরেও এত উৎসাহের পিছনের কটা কারন বলাই যায়; প্রথমত শুরু থেকেই সবার সাথে পরিচিত হবার লোভ, দ্বিতীয় কারনটা বলতে যেয়ে মোটামুটি একখানা গল্পই লিখে ফেলেছি একদম শুরুতেই, ইয়ে মানে দু মাস যাবত চলতি খরা কাটিয়ে উঠবার লোভ আর কি! আবৃত্তি করতে পারবার লোভ। এরপরের কারণগুলির মধ্যে হৈ হুল্লোর, আড্ডা, ছবি তোলাতুলি তো আছেই, সাথে চিরচেনা সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে তিন চার মাস পর যেতে পারার আলাদা একটা আনন্দ। ঐ কেন্দ্রের ছোট্ট ঝুপড়ি মঞ্চটায় বেশ কটা অনুষ্ঠানে অংশ নেবার সুযোগ হয়েছিল আমার, যে জন্য জায়গাটার প্রতি আলাদা একটা মায়াও আছে।
আর একটা বিশেষ কারন আছে, গতকাল ব্লগ দিবসের সাথে সাথে ব্লগে আমার এক মাস পূর্তিও হয়ে যেত। বাসা আর অফিস ছাড়া সপ্তাহে যে একটা দিন ছুটি মেলে সেটা কতোটা ব্যস্ততায় কাটে এটা সহজেই অনুমেয়, এরপরেও এই ব্যস্ততা আর একাকীত্বের ভেতর কারোর সঙ্গ পাওয়া, আড্ডা দেয়া, এসবের আনন্দ সত্যিই সীমাহিন।
(৩)
বৃহস্পতিবার ছিল ঘুমোবার রাত, পরের দিন ছুটি বলে কথা! ঘুমোবার আগে মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়েই ঘুমিয়েছিলাম যে আগামীকাল ব্লগ দিবসে সুযোগ পেলে এই কবিতা গুলি আবৃত্তি করব; নুরলদীনের সারাজীবন’র প্রস্তাবনা, লবণ, শপথ এবং হঠাৎ দেখা। কিছুটা দূর থেকে যেতে হবে সেজন্য সকালে না খেয়েই দৌড় দেব এমনটা ভেবে রেখেছিলাম। একা মানুষ, একা রাঁধতে হয় তাই এভাবেই খেয়ে না খেয়ে চলতে হয়, মন্দ যায় না। ভালই কাটে। আশার মুখে ছাই, ফজরের আযান শেষ হতেই ফোন এলো ছোট ভাইয়ের, সেও ঢাকাতেই থাকে, বাস থেকে নেমেছে আমার বাসার সামনে, ভার্সিটিতে পরীক্ষা শেষ বাড়ি যাবে, যাবার আগে আমার বাসায় দুদিন কাটাবে, ঘুরবে, আমার হাতের রান্না খাবে, বাঁশি শুনবে শালা! আসলে এগুলা মুখ্য নয়, আমি জানি মুখ্য কারন খানা হলো গিয়ে বাড়ি যাবার ৫৫০ টাকার বাস ভাড়াটা আমার ঝুলি থেকেই ঝেড়ে দেবে সে। এটা প্রথমবার নয়, আগেও কয়েকবার দিতে হয়ছে! চাচাত ভাই, ভীষণ ভালবাসে আমাকে, ওর আবদার গুলোও আমি রাখবার চেষ্টা করি। কি আর করা, অগত্যা ওকে রিসিভ করে ওকে সাথে নিয়েই বাজার সদাই করে ঘরে ফিরতে হলো, এরপর রান্না, খাই দাই……! কেটে গেলো সময় কিছু। বের হলাম ওকে নিয়ে, দু ভাই মিলে চুটিয়ে আড্ডা দেয়া হলো সংসদ ভবনের সামনে!
আর একটু এগুলেই বাংলামোটর অথচ আমি শালা গদ্ধবের মনেই আসে নাই যে, ছোট ভাইটাকে নিয়েও তো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া যেতে পারত। সে কথা মনে এলো বাসায় আসবার পর!
আফসোস আর রাখি কই!
চলতি খরাও চলতিই রয়ে গেলো!
ফের এক বছর, বাফুরে......!
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ আপনারা যারা আয়োজনটির সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আয়োজনটিকে সার্থক রুপদান করেছেন তাদের সবাইকে আমার তরফ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ। নানান ব্যস্ততার মধ্যে এমন একটি আয়োজন করা বা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারা বা দেয়াটা শুধুমাত্র ভালবাসা আর অকৃত্রিম বন্ধন ছাড়া আর কিছুতে সম্ভব নয় বলে মনে করি। আপনাদের মতন সকল ব্লগারদের ভেতরই এরকম অকৃত্রিম বন্ধন গড়ে উঠুক, ভালবাসা টিকে থাক। শুভকামনা সবার জন্য। আপনাদের এইযে উদ্যোগ, বন্ধন, ভালবাসা, এগুলি আমার মত সব নতুন ব্লগারদের ঝুলিতে পাথেয় হয়ে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
একটি আবেদনঃ আমি আপনাদের আমার আবৃত্তিও শোনাতে চাই। ব্লগে কীভাবে আবৃত্তি পোস্ট করা যায় আমি জানি না। সরাসরি ভিডিও/অডিও নাকি ইউটিউব লিংক/সাউন্ডক্লাউড, আমাকে কেউ জানিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। আপাত মুঠোফোনে ধারণকৃত দু একটা শুনাব। আপনাদের ভাল লাগলে, আসছে জানুয়ারীতে বেশ আয়োজন করে স্টুডিওতে অনেকগুলি কবিতার আবৃত্তি ধারণ করবার ইচ্ছে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১১