পাচ
একরাশ বিরক্তি নিয়ে লামিয়াকে নিয়ে বাসে উঠলাম।এখন আল্লাহই জানে ওর মা আবার আমাকে সন্দেহ করা শুরু করে নাকি....!!!!এত কিছু আমার সাথেই কেন হয়....!!!!
লামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভীষন খুশি।জানালার পাশের সিটে বসল।আমি ওর পাশে।আমি টিচার অথচ আমার সাথে গা ঘেষে বসছে।কি ফাজিল মেয়ে..!!!!
-তুমি তোমার আম্মুর সাথে কেন গেলে না....!!!!
-আরে গেলে কি আপনার সাথে যেতে পারতাম নাকি!!!!!
-আমার সাথেই যেতে হবে কেন....!!!!
-ধ্যাত....আপনি না কিছুই বুঝেন না।
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।বেশ কিছুক্ষন ভাল থাকলো হঠাৎ করেই ওর চোখমুখ যেন কেমন হয়ে উঠল।
-কি হইছে লামিয়া.....?
-ভাইয়া...মাথা ঘুরাচ্ছে।বমি আসবে মনে হয়।
-কিহ.!!!!!!
আমি ড্রাইভার বলে বাস থামালাম।ঠান্ডা পানি খাওয়ালাম।বাসে উঠলে ওর আবার সমস্যা হতে পারে এই ভেবে বাসের ড্রাইভারকে চলে যেতে বল্লাম।একটা রিক্সায় উঠলাম।লামিয়াকে দেখলাম খুবই নিস্তেজ হয়ে গেছে।
-ভাইয়া....?
-হুম...
-একটা কথা বলি...?
-কত কথাই তো বল্লা...আর কি বাকি আছে....
-আমি আপনাকে ভালবাসি......
আমার মনে হল আমি ভুল শুনলাম বা ও ভুল বল্ল
-কি.....!!!???
-আমি আপনাকে ভালবাসি।
-এই তোমার মাথা কি ঠিক আছে....কি বলতাছো....
-আপনার এন্সার বলেন।
-একটা থাপ্পর দিব।টিচার কে প্রপোজ কর.. হ্যা......?
-আমি সত্যি আপনাকে অনেক........
-চুপ.... আর একটা কথাও না.....
সারা রাস্তায় আর কথা বলেনি।ভাবলাম ওকে আর পড়ানো যাবে না।
-আমি আর তোমাকে পড়াতে পারবো না।
-না ভাইয়া...প্লিজ.....এই কথা বলবেন না।
বলতে বলতে কেদেই দিল।সেই কি কান্না...একদম বাচ্চাদের মত তবে চিৎকার করে না....নীরবে।ওর কান্না দেখে আমার মনটাও গলে গেল
-তাহলে কি আরর কখনো এইসব কথা বলবে...
মাথা এপাশ ওপাশ করল।যাক..!!!!আমারো ছাড়ার ইচ্ছা নাই।এটা দিয়েই আমাকে চলতে হচ্ছে।
-ঠিক আছে।বাসায় যাও।আমি কাল আসবো।
-আচ্ছা ভাইয়া।
মেয়েটা যেমন নরম তেমনই আবেগী।বাবা মার একমাত্র সন্তান বলে কথা।কখনো কষ্ট পায় নাই।আমার জন্য ফাও কষ্ট পাচ্ছে
ছয়
বাড়িয়ালা ইদানিং বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিতাছে।কেমনে যে টাকা টা যোগার হইব!!!!!সামনে আবার ফারিয়ার এক্সাম।ওর জন্যও টাকা দরকার।কোথায় পাই আমি এত টাকা....!!!!
-দোস্ত....তোরে যে বল্লাম কাজ টা কি হইছে....?
-নারে মামা....চাকরি পাওয়া কি আজকাল এতই সহজ!!!!!তুই তো ঘুষও দিতে পারবি না।নাহলে একটা ব্যবস্থা করা যেত।
-আমার জন্য একটু কষ্ট কর মামা।অনেক প্যারায় আছি।
-আমি চেষ্টা করছি
নাহ...!!!কোনো কিছুই হচ্ছে না।জীবন টা এত কঠিন হবে জানলে আরো অনেক আগেই সুইসাইড করতাম।বাট মে বি এটা আল্লাহর পরীক্ষা।
-ভাইয়া....চা....?
কখন যে লামিয়া এসে বসছে খেয়াল ও করি নাই।আজকাল এতই চিন্তায় থাকি যে আশেপাশের দুনিয়া থেকে হারিয়ে যাই
-ভাইয়া...কোনো সমস্যা হইছে....?
-সমস্যা তো আমার বন্ধু।আমারে ছাড়া কি ওর একদিনও চলে....!!!!বাদ দাও..বই বের কর।
সেইদিনের পর আর কখনই লামিয়া ভালবাসার কথা বলেনি।আমি জানি ও আমাকে এখনো ভালবাসে।আমার জন্য নিত্যদিন কষ্ট পাচ্ছে।বাট আমি কি করতে পারি...!!!ওকে কি এই জীবনের সাথে জড়ানো সম্ভব..!!!!
আমারো মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ওর ডাকে সাড়া দেই।জীবনের এই শুন্যতা দুর করি।হাহ!!!বাট আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না....
-ভাইয়া একটা কথা বলি...!?
-হুম...
-আমার এক ফ্রেন্ডের বড়ভাই এক কম্পানির এরিয়া ম্যানেজার।আপনি যদি চান তাহলে সেলসম্যান এক্সিকিউটিব হিসেবে জয়িন করতে পারেন....!!!
আমি অবাক....আমার জন্য অগোচরে ও চাকরির ব্যবস্থাও করে ফেলেছে।ওয়েল...বড়লোকদের দ্বারা সবই সম্ভব।কিন্তু কেন যেন ওর অফারটা আমি নিতে চাই নি।
-নাহ....!!!কোনো প্রয়োজন নাই।
-কেন ভাইয়া...কোনো সমস্যা...!!?
-কোনো সমস্যা নাই।এমনেই।
কেন যে এমন করি মাঝে মাঝে..নিজেই জানি না।চাকরিটা খুব দরকার।এখন আবার মুখের উপর না করে দিলাম।
-ওই তোর এত ভাব কিসের রে.....!!!!
মাথায় একবোঝা টেনশন নিয়ে ক্যাম্পাসে বসে আছি।ক্লাস করতে ইচ্ছা করছিল না।তাই এসে বসলাম।এখন আবার এই তিয়ানা কানের সামনে ঘ্যানর ঘ্যানর করবে
-ভাবের কি দেখলি....?
-তোকে যে ওই মেয়েটা কি পরিমান ভালবাসে তা কি তুই জানিস.....?
-কিচ্ছু করার নাই...
-এই ঠিকানায় কাল চলে যাবি।মেয়েটা তোর জন্য চাকরি ঠিক করে দেয় আর তুই কিনা মুখের উপর না করে দেছ....
সাত
অবশেষে চাকরিটা করা শুরু করলাম।সত্যি বলতে একরকম লামিয়ার জোরাজুরিতে রাজী হলাম।১৫০০০ টাকার এত ভাল চাকরি আমি.....ওয়েল আশা করি নি।
মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে টাকাটাও হাতে পেলাম।কি যে আনন্দ লেগেছিল সেদিন।আমার খুশি হওয়া দেখে লামিয়াও সেদিন খুব খুশি হয়েছিল।লামিয়া সেদিন আবদার করল ওর সাথে ঘুরতে যেতে আর আমিও না করতে পারলাম না।
-তা ভাইয়াকে অনেক খুশি খুশি লাগছে.....!!!?
-কিছুটা।
-কেন..পুরোপুরি খুশি হন নি....?
-বাদ দাও।এখানে আনার মানে কি!!!!
-কেন খারাপ লাগছে...!!!!?
ওর চোখটা মুহুতেই ছলছল করে উঠল।যেন আবার কিছু বলতে চায়।
-বাসায় আমার বিয়ের কথা চলতেছে.....
-ও আচ্ছা....
-শুধু আচ্ছা.....!!!!?
-তো আর কি!!!!?
-তোমার খারাপ লাগবে না......?
এতক্ষন অন্যদিকে তাকালেও ওর মুখে তুমি ডাক শুনে ওর দিকে ফিরে তাকালাম।চোখ দিয়ে অবিরাম পানি ঝরছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে পানি মুছে দিলাম
-কারো জন্য এমন কিছু সত্য থাকে যা কখনো পরিবতন করা যায় না।ধরে নাও তোমার আর আমারর ব্যাপারটাও সেইম
-চাইলেই কিন্তু পরিবতন করা যায়...
-তুমি যেটাকে সহজ মনে করছো,আমার জন্য ততটাই কঠিন।
আট
ইদানিং কেমন যেন মাথার একসাইডে প্রচুর পেইন হয়।হাতের কিছু জায়গায় গোল গোল কিছু চোখ এড়ালো না।বিষয়টা অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও আমি হাল্কা করে নিলাম।কারন এটাই হয়তো আমার শেষ পাওয়া ছিল।
মার অসুখটা অনেকটা সেরেছে।ফারিয়ার জন্য ছেলে দেখাও শুরু করলাম।সব কিছু দ্রুত করছি কারন I am already out of time....
এর মাঝে শুনলাম লামিয়ার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।ছেলে আমেরিকান প্রবাসী।বিয়ের পর ছেলের সাথে লামিয়া চলে যাবে।তাই এখন আর পড়াতে যাই না।আমার চাকরি দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ চলে যায়।
ফারিয়ারও বিয়ে দিয়ে দিলাম।ছেলে আমার খুবই পচ্ছন্দ হয়েছে।এখন মা আমার বিয়ের কথা বলতেছে।কিন্তু আমার জোরের কাছে মা আর কিছু বলে না।কারন আমার সময় খুব কম।
লামিয়ার বিয়ের কাডও আমার হাতে এসে পোছায়।সেদিন লামিয়া কোন কান্নাকাটি করে নি।হয়তো এই সত্য মেনে নিয়েছে।
-কেমন আছো নিল....?
এই ফাস্ট টাইম আমার নাম ধরে ডাকলো।
-আছি আগের মতই।তোমার খবর কি...!!!!
-ভাল থাকার চেষ্টা করছি।
-ভেরি গুড।বিয়ে কবে...?
-সামনের সপ্তাহে....
-ও...চিন্তা কর না।চলে আসবো।আচ্ছা যাই তাহলে।কাজ আছে....
আমি চলে যেতেই আবার ডাক দিল...
-নিল...আরেকটা কথা....
-হুম বলো...?
-আমার প্রশ্নের জবাব টা কি আজ দেবে....?
আমি বুঝতে পারলাম কিসের এন্সার শুনতে চায়
-সময়ঈ বলে দেবে....
-তোমাকে একটু জরিয়ে ধরি....?
আমি কিছু বল্লাম না।আমি কিছু না বলায় ও আস্তে আস্তে আমার সামনে আসল এবং আমাকে জড়িয়ে ধরল।খুব করে হলেও পাচমিনিট আমাকে এভাবেই ধরে রাখলো।আমিও স্টাচুর মত দাড়িয়ে রইলাম।তারপর হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।আমার এইসবে অনুভুতি না হলেও আমি বুঝতে পারলাম বুকের বামপাশটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা।
নয়
লামিয়ার বিয়েতে যেতে পারলাম না।তার আগেই আমাকে হাসপাতালে আসতে হল।এক জীবনে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে ফেলেছি।যার কারনে শরীর তিক্ত হয়ে বিশ্রাম চাচ্ছে।
আমার নাকি ব্রেইন টিউমার হইছে।শুনেই আমি কতক্ষন হাসলাম যেন মনে হল অনেকদিন পর জোকস শুনলাম।তাহলে আমার কাজ শেষ।
মার কাছে শুনলাম লামিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে।দুদিন আগে নাকি আমেরিকায়ও চলে গেছে।শুনে খুব ভাল লাগলো।ওকে ফিরিয়ে দিয়ে খুব ভাল কাজ করেছি।নাহলে আজীবন আমার মত কষ্ট পেয়ে যেত সাথে সাথে আমার নেক্সট জেনারেশনও।
দশ
২০ দিন পর নাকি কোমা থেকে উঠলাম।শরিরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই।তাই লিখতে গিয়েও হাত কাপছে।তাকানোর পর দেখি মা অনবরত কাদছে।ফারিয়া কাদছে না।হয়তো শোকে পাথর হয়ে গেছে।আমি আস্তে করে ফারিয়াকে ডাক দিলাম
-ফারিয়া...
-বল ভাইয়া....
-সবাইকে চলে যেতে বল
ফারিয়া সবাইকে চলে যেতে বল্ল
-লামিয়া কি জানে....?
-না...(চোখে পানি)
-থাক।জানানোর দরকার নেই।আমি যাওয়ার পর জানাবি....
-আচ্ছা ভাইয়া।
-আমার খুব ভাল লাগছে,কেন জানিস....?
-কেন..?
-তোমার ধৈয শক্তি দেখে....
-তোর কাছ থেকেই শিখেছি....
-আমার এই ডায়রিটা লামিয়াকে দিবি।যদি ও কখনো আমার খোজ করে।কিন্তু ভুলেও যেন ২য় কোন ব্যক্তি ডাররির সন্ধান না পায়।
-আচ্ছা।তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি...?
-কর....?
-তুই কি লামিয়াকে ভালবাসিস....?
আমি আবার হাসলাম
-কিছু কথা কখনো প্রকাশ করতে নাই
আর লিখতে পারছি না।মাথাটা কেবলই ঘুরছে।শুধু এতটুকু মনে হচ্ছে আমার এই জীবনের কাজ শেষ.........................
.
-আপু,কাদবেন না।
-নীল কবে মারা গেছে....?
-এইতো পাচ বছর হয়ে গেছে...?
-পাচ বছর...!!!
-আপনার বাবুটা কোথায়...?
-বাসায়।ওর কবর টা দেখাতে পারবে....?
-চলেন
ভাইয়ার শেষ ইচ্ছার কথা কিছু বলে নাই।সবসময়ই সে নিজের সিক্রেট নিজের কাছে রাখত।এমন কি আমাকেও বলতো না।
-আচ্ছা তুমি যাও।
"আমি জানি,কোন একদিন তুমি আমার কাছে আসবে।আমার কথা মনে করবে।কিন্তু আমি থাকবো না।আর হ্যা....একটা কথা জেনে নাও....
"আমিও তোমাকে ভালবাসি"......"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৩২