নুহ নবীর নৌকা আর সেই মহাপ্লাবনের কথা আমরা সবাই জানি। মহাপ্লাবন এলো। নুহ নবী তাঁর সহচরদের নিয়ে নৌকায় উঠলেন। বেশ কিছুদিন পরে বৃষ্টি/বন্যা কমলে তারা মাটিতে পদার্পণ করলেন। পৃথিবীর বর্তমান মানুষেরা সব নৌকার যাত্রীদের বংশধর। অনেকের মতে এই নৌকাটি এখনো সংরক্ষিত আছে। কেউ কেউ এমন দাবীও করছেন তা পাওয়া গেছে তুরস্কের পাহাড়ের পাদদেশে। শুধু কয়েকটা গ্রন্থের গল্প হলে হেঁসে উড়িয়ে দেয়া যেত। কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও, পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্ম/গোত্রে এই কাহিনীটি এসেছে। এমনকি হিন্দু ধর্মের মৎসপুরাণ গ্রন্থে আর্যপিতা মনু মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেন।
এখন কোটি টাকার প্রশ্ন গুলো হচ্ছেঃ
১। বাইবেল অনুসারে তুরস্কের আরারাত পর্বতমালায় কি আসলেই নৌকাটা রয়েছে?
২। কোরআনের জুদি পাহাড় কি বাইবেলে বলা একই জায়গা?
৩। বিজ্ঞান অনুসারে কে বেশি সঠিক? বাইবেল নাকি কোরআন? নাকি দুটোই ভুল? নাকি দুটোই সঠিক?
আসুন সন্ধান করি সত্যের।
বাইবেলে বলা আরারাত পর্বতমালা
আদিপুস্তক ৮ঃ৪ - সপ্তম চান্দ্র মাসের সতেরো দিনের দিন জাহাজটি এসে আরারাত পর্বতের উপরে থামল।
খ্রিস্টানরা দাবী করেন তুরস্কের আরারাত পর্বতমালায় রয়েছে নূহ নবীর নৌকাটি। পরিব্রাজক মার্কো পোলো আটশত বছর আগে তাঁর বইয়ে তুরস্কের আরারাত পাহাড়ের বর্ণনা লিখেছিলেন।
কোরআনের জুদি পাহাড়
সুরা হুদ ১১:৪৪ - আর নির্দেশ দেয়া হল-হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, ক্ষান্ত হও। আর পানি হ্রাস করা হল এবং কাজ শেষ হয়ে গেল, আর জুদী পর্বতে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষনা করা হল, দুরাত্না কাফেররা নিপাত যাক।
মুসলিম স্কলারদের দাবী অনুযায়ী জুদি পাহাড়ও তুরস্কেে। খ্রিস্টানদের আরারাত পাহাড় থেকে বড় জোর ২০০ কিলো হবে।
এখন খ্রিস্টান এবং মুসলিমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে আরারাত এবং জুদি একই জায়গা।
তাই ১৯৪৯ সাল থেকে এখনো তুরস্কের তথাকথিত আরারাত পাহাড়ে এবং জুদি পাহাড়ে খোঁজা হচ্ছে এই নৌকা। মাঝে কিছুদিন পাওয়া গেছে পাওয়া গেছে বলে শোরগোল তুললে আদতে বিশ্বাস যোগ্য কিছুই মেলেনি। এবং মেলার সম্ভাবনা নেই।
চলুন দেখি বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কি বলে।
তথ্য ১ - প্রতিটি জীবের জিনগত তথ্য (জিনোম সংকেত) তার ডিএনএ তে সংরক্ষিত থাকে এবং তা বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষের ডিএনএ আমাদের দেহে বিদ্যমান এবং আমাদের উত্তরসূরিদের ডিএনএতেও তা বিদ্যমান থাকবে। জেনেটিক সায়েন্স মিউটেশন মার্কার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বলে দিতে পারে যে কে কার সন্তান। জেনেটিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত যে বর্তমান পৃথিবীর মানুষদের আদি আবাসস্থল ছিল আফ্রিকা। ককেশীয়, চৈনিক, অষ্ট্রলয়েড কিংবা রেড ইন্ডিয়ান - যে জাতের মানুষই হোক না কেন সবই এসেছে আফ্রিকার বুশম্যানদের থেকে।
তথ্য ২ - মানুষের সবচে পুরনো দুই লাখ বছরকার আগের ফসিল পাওয়া গেছে আফ্রিকাতে। আফ্রিকার বাইরের সবচেয়ে পুরনো এশিয়ান ফসিলের বয়স একেবারে শিশু। চল্লিশ হাজার বছর মাত্র।
তো কাহিনী এবার উলটো! মহাপ্লাবনের কাহিনী যদি সত্য হয়, বিজ্ঞান অনুযায়ী নৌকার অবতরণ নিশ্চিত ভাবেই আফ্রিকায় হয়েছিল। কারণ আমাদের সবার আদিপুরুষরা সেই নৌকায় ছিলেন। অনেকে বলতে পারেন যে, নৌকা থেকে তুরস্কে নেমে হেঁটে হেঁটে আফ্রিকায় চলে যায়নি সে প্রমাণ কৈ? বলি দাদা তারও প্রমাণ আছে। মানুষের পক্ষে হেঁটে হেঁটে এত বড় সাহারা মরুভূমি পাড়ি দেয়া অসম্ভব। আর সবাই দৌড়ে আফ্রিকায় যাবে কেন? কেউ কেউ তো ইউরোপ কিংবা এশিয়ার দিকেও আসত!
তাহলে এই কথাই সই যে, প্লাবনের কাহিনী সত্য হলে, নূহ নবীর নৌকা আফ্রিকাই নোঙর করেছিল। তো এবার আমাদের স্কলার এবং বাইবেল-কোরআনে ফিরে আসি। বাইবেল-কোরআন কি মিথ্যা বলছে?
কোটি টাকার উত্তর গুলো হচ্ছেঃ
১। বাইবেল আরারাত পর্বতমালার কথা বলেছে। একবারও বলেনি এটা তুরস্কের পর্বত। তাহলে বাইবেল মিথ্যে বলছে না।
২। কোরআন একবারও বলেনি জুদি পাহাড় তুরস্কে আছে। কোরআন শুধু পাহাড়ের নাম বলেছে। সরাসরি অবস্থান বলেনি। অতএব কোরআন মোটেও মিথ্যে বলছে না।
৩। নৌকা অবতরণের যায়গা হল আফ্রিকা মহাদেশ। এবং এ ব্যাপারে বাইবেল কোরআন মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। তাই সেই নৌকা খুঁজতে হবে আফ্রিকায়। শুরু করা যেতে পারে সাউথ-আফ্রিকার জোহানসবার্গে। এখানে পাহাড় আছে। এখানেই গুহায় পাউয়া গেছে প্রাচীন মানুষের কবরস্থান।
নূহ নবী এবং তৎকালীন মানুষরা কিছুটা শ্যামলাই ছিলেন। অনেকটা বুশম্যানদের মত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬