কবিতার ভাংগা-গড়া
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ ভোর ৫:৫
সাহিত্যের পাতায় কবিতার ছড়াছড়ি।কিন্তু সত্যি করে বলুনতো-কয়টি কবিতার লাইন,আমাদের হৃদয় পটে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করে।বিশেষ করে বর্তমান আধুনিক কবিতা।এসব কবিতার লাইন,হ্য়তোবা আমরা বুঝি, নতুবা না বুঝে বুঝার ভান করি।এক মহাসমুদ্রে ডুব দিয়ে একটি নুড়ি পাথরও তুলে আনতে পারিনা যা আমার হৃদয়ের মনিকোটায় দীপ্তিমান হতে পারে।
আমার এক শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক বন্ধু -আমাকে পরিহাস করে বলেন-এ তোমার ব্যর্থতা।বোর্ড স্ট্যান্ড করা,আর কবিতা বুঝা সমান না,তাহলেতো সবাই কাব্য বিশারদ হয়ে যেতো।আর শুধু তোমার হৃদয় না পুরো ড্রয়িং রুম নুড়ি-পাথরে ভরে যেতো।
আমি বলি তথাস্ত। কিন্তু শেষের কবিতা যে আমার মনে শীতল পরশ দেয়,জীবনানন্দ মনে দারুন প্রশান্তি আনে।
"যতদূরে যেতে চাই,পারিনা, চলে আসি কাছে,
তোমার গায়ের সাথে,আমার গায়ের গন্ধ লেগে আছে"।
"আকাশ ছড়িয়ে আছে আকাশে-আকাশে।"
"ভালোবাসার কাব্য শুনে কাশ জড়েছে যেই
দেখি আমার কাশের রাণী কাশ বনে আর নেই"
"অস্ট প্রহর কষ্ট করে নস্ট হলো যে রজনী,
সে কষ্টের সৃষ্টি কোথায় বুজলনা যে কোন সজনী"।
এসব ছন্দময় ম্যজিক লাইনতো আমি ভালো করেই বুজি। শুধু বুজিনা "তাপসও তীক্ষন সারমেয় নমস্য হুতাসন,
সৃষ্টির আগোয়ান, কেন উজ্জীবন।"
আমি মহাসমুদ্রে হারিয়ে যাই।
অভিধানের শব্দকোষ খুঁজে খুঁজে মরি।কবিতার বর্ম ভাঙতে গিয়ে
আমি ক্ষত-বিক্ষত হই।ঘামের লোনা জলে অবগাহন করেও হীমশীতল প্রশান্তির সুবাতাস পাইনা।
রবিঠাকুর যেমন বলতেন-শব্দ নিয়ে এতো জুরাজুরি কেনো করো বাপু।কবিতার পংক্তিকে ঝরণার সফটিক স্বচ্ছ জলের মতো ছেড়ে দাও,দেখবে সতত কেমন ফলগুধারার মতন বহমান হচ্ছে।
সত্যিই তাই। দীর্ঘ পথযাত্রী মরুর ক্লান্ত পথিক যখন বৃক্ষের নীচে এসে প্রাণ জুড়ায়,পাখী শিষ দিয়ে যায়,-কবিতার পংক্তিও তেমনি মনের অবসন্নতা,বিষাদ দূর করে দেয়।আল মাহমুদ যেমন -বলেন: "আমি সেই হতভাগা কবিদের একজন যারা একটি লাইনের জন্য সারারাত বিনিদ্র রজনী পার করে দেয়"
আর গদ্য কবিতার মুখোস পড়ে বর্তমান কবিতা হয়েছে "কাব্যন্ধ"
মানে অর্ধেক কবিতা আর অর্ধেক প্রবন্ধ। নিউইয়র্কের এক কবি বন্ধু মজা করে বলে-ভালো কবিতা লিখার টিপস হলো-একটি প্রবন্ধকে চার ভাগ করে চার পত্রিকায় পাঠিয়ে দেয়া। এবং তা যতবেশী দুর্ভেদ্য হবে, সম্পাদকের চোখে তা ততবেশী আদৃত।
(চলমান)
পাঠকের মতামতঃ
রাশেদ বলেছেন: বাপ রে! বেশি কঠিন পোস্ট! তেমন কিছুই বুঝি নাই!
মানবী বলেছেন: পোস্টের জন্য ধন্যবাদ বিহংগ।
আমি কবিতা খুব পছন্দ করি। বাংলা ভাষায় কাজী নজরুল ,রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত, জীবনানন্দ, সুনীলের পর হেলাল হাফিজের কবিতা প্রচন্ড ভালো লাগে। পড়ার বা পরীক্ষার স্ট্রেসের সময় 'যে জলে আগুন জ্বলে" বইটি আমার কাছে ছিলো সবচেয়ে প্রিয় বিনোদন বা রিলাক্সিং কিছু।
সামহোয়্যার-ইনে এসে চমৎকার কিছু কবিতা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মৃন্ময় আহমেদ, কালপুরুষ, বৃশ্চিকের মতো অনন্য সাধারন কবিদের অসাধারন লেখা পড়ে ভালো লেগেছে। শাপলা, জয়িতাদের কিছু কবিতাও ভালো লেগেছে। আরো অনেকেই আছেন চমৎকার লিখেন।
এতো কিছু বলার কারন, "সত্যি করে বলুনতো-কয়টি কবিতার লাইন,আমাদের হৃদয় পটে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করে" - এই বক্তব্যের সাথে ভালো কবিতার সম্পর্ক নেই। যে কবিতা পড়ে আমার ভালো লাগবে, তাই আমার কাছে ভালো কবিতা। "আজি এ প্রভাতে রবির কর", "কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও", "আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে", "ওমা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং", " আমার কাছে কষ্ট আছে, হরেক রকম কষ্ট", "ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দুলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা"....ইত্যাদি কিছু লাইন ছাড়া খুব বেশি লাইনহৃদয় পটে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করেনা। তার মানে এই নয়, সেই কবিতাগুলো মন ছুঁয়ে যাওয়া নয় বা ভালো কবিতা নয়
রাশেদ বলেছেন: আমি ৫ নাইলে ১ দেই সাধারনত। ১ দিতে ইচ্ছা করল না, তাই...
মানবী বলেছেন: "দীর্ঘ পথযাত্রী মরুর ক্লান্ত পথিক যখন বৃক্ষের নীচে এসে প্রাণ জুড়ায়,পাখী শিষ দিয়ে যায়,-কবিতার পংক্তিও তেমনি মনের অবসন্নতা,বিষাদ দূর করে দেয়।"- - সহম
সন্ধ্যাপ্রদীপ বলেছেন: বিহংগ, আমি অপেক্ষায়, কবে এর পরের কিস্তি লিখবে । অভিনন্দন আবারো ।
সন্ধ্যাপ্রদীপ বলেছেন: একটা সময় ছিল যখন কবিতার প্রেমে মজেছিলাম ।
পড়ালেখার ভীড়ে খেই হারিয়ে অনেকটাই হারিয়েছি তার । মনে হয়, বিহংগ, তুমি এবার ঘুম ভাংগাতে এসেছ ।
কালপুরুষ বলেছেন: আমার কাছে কবিতা মানেই নিজের হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে অপরের হৃদয়ের উষ্ণতা অনুভব করা। পাঠকের হৃদয় ছোঁবার সামান্যতম প্রয়াশ। বলতে না পারা অনেক কথাকেই অকপটে বলে ফেলা। যে কখনও ভালবাসার গোলাপ হাতে তুলে দিতে পারেনা তার জন্য অনায়াসে শতেক গোলাপ হাতে তুলে দেয়ার মতো। কবিতায় কবির মনের কথা বুঝেও কবিতার মতো নীরব ছন্দে নিজেকে হারিয়ে ফেলা।
জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
কালপুরুষ বলেছেন: @মানবী,
আমার কবিতা ভাল লাগে জেনে খুশী হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার লেখা আমার ভাল লাগে সেটা আপনাকে অনেক আগেই জানিয়েছি। সেটা গদ্য হলেও অনুভবে তা কবিতার চেয়ে বেশী আবেদন রাখে। মন ছুঁয়ে যায়।
পুতুল বলেছেন: অভিধানের শব্দকোষ খুঁজে খুঁজে মরি।কবিতার বর্ম ভাঙতে গিয়ে
আমি ক্ষত-বিক্ষত হই।ঘামের লোনা জলে অবগাহন করেও হীমশীতল প্রশান্তির সুবাতাস পাইনা। চৎকার ৫। আলোচনা চলুক।
মানবী বলেছেন: কালপুরুষ, ধন্যবাদ।
বিহংগ, মৃন্ময় আহমেদ, কালপুরুষ, বৃশ্চিকের পাশাপাশি আরো কয়েকজনের নাম উল্লখ করা হয়নি.. শেখ জলিল, তুমি রাত্রি হলে আমি হবো নিরবতা, নীলান্জনা।
মুশফিক, অবরজ, মানুষ.. সবাই চমৎকার লিখেন
বিহংগ বলেছেন: @মানবী।আপনার পর্যবেক্ষনের জন্য ধন্যবাদ।আসলে কবিতা গুলো নেয়া হয়েছিলো প্রথম থেকে ১০০ পাতার মধ্যে। আপনার সহযোগিতায় আরো সুন্দর ভাবে করার আশা করি।
(আপনাদের ভালো লাগলে চলতে পারে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৭:০৩