বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রথম আলো সর্বপ্রথম ফান ম্যাগাজিনের ধারণা আমদানী করে। সবার নিশ্চয় মনে আছে ‘আলপিন’র কথা। উদ্দিনদের আমলে ধর্ম নিয়ে এক সিলি ফান করার দন্ড হিসেবে বায়তুল মোকাররমের সে সময়ের খতিবের কাছে নাকে খত দিয়ে মাফ পায় প্রথম আলোর সম্পাদক। কিন্তু, আলপিন ঠিকই বন্ধ হয়ে যায়। বিভাগীয় সম্পাদকের চাকরিও যায়।
যাউকগা সে কথা। আলপিনে ‘ছিঃনেমা’ নামে মুভি রিভিউয়ের একটা বিভাগ ছিল, যেখানে অনিন্দ্য জাফরী নামে কেউ একজন ঢাকাইয়া বাংলা মুভি রিভিউ করতো। এই মুভি রিভিউ পড়তে পড়তে প্রায়ই অনিন্দ্য জাফরীর উপর মায়া জন্মে যেত, আহারে বেচারা! চাকুরির দায়ে তাকে এই অখাদ্য কুখাদ্য গিলতে হয় নিয়মিত বিরতিতে.... পরে একদিন আনাস বলল, অনিন্দ্য জাফরী আসলে কেউ না, একটা ব্র্যান্ড নেম। যে সপ্তাহে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সে-ই মুভি দেখে রিভিউ করে অনিন্দ্য জাফরীর নামে লিখে দেয়। আনাস নিজেও কয়েক সপ্তাহে লিখেছে।
ইদানিং ব্লগে ‘চাঁদগাজী’ নামে একটা নিক দেখি। মোটামুটি ৭x৪ ঘন্টাই তিনি ব্লগে অ্যাকটিভ থাকেন। ২ বছর ৩ মাস ব্লগ জীবনে ৬৪২টি পোস্ট দিয়েছেন এবং ২৬২৮১টি মন্তব্য করেছেন। সে হিসেবে গড়ে দেড় দিনেরও কম সময়ে একটা পোস্ট এবং দিনে সাড়ে বত্রিশটা করে মন্তব্য করেছেন।
উনাকে দেখলেই আমার অনিন্দ্য জাফরীর কথা মনে পরে যায়। চাঁদগাজীও কি ওই রকম কিছু? নাকি আসলেই একজন স্বতন্ত্র মানুষ? সামু ব্লগের পুরনোরা ‘এ-টিম’ বা ‘নোবেলজয়ী’র কথা মনে করতে পারবেন নিশ্চয়। সেগুলোও যৌথ নিক ছিল। তবে এগুলোর নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য ছিল এবং তাদের পোস্টগুলো মোটামুটি একই লক্ষ্যে থাকত।
কিন্তু আমাদের ‘চাঁদগাজী’ নিকের পেছনের জন যেভাবে দেশ ও বিদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, হাইটেক, ননটেক, সংগ্রাম, ইতিহাস, সাহিত্য, ধর্মসহ দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে লিখেন এবং মতপ্রকাশ করেন, তাতে করে সামু ব্লগে উনি একটা ট্রেন্ড সেট করে যাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। যেহেতু ৭x২৪ ঘন্টাই তিনি ব্লগে অ্যাকটিভ থাকেন এবং মন্তব্যসহ পোস্টান, উনার পোস্টগুলো তাই প্রতিনিয়ত অটোমেটিক্যালি টপচার্টে চলে আসে। দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করে।
এখন, ফেসবুকের কল্যাণে নার্সিসিজমে আক্রান্ত আমাদের অনুৎপাদনশীল প্রজন্ম যদি টপচার্টে থাকার তীব্র আকাঙ্খায় চাঁদগাজী সিনড্রোমে ভুগতে থাকে তাহলেই কেল্লা ফতে হয় আর কি!
কিছুদিন আগে এই ব্লগের সবচেয়ে পুরোনোদের একজন, ‘ত্রিভূজ’ এর ব্লগে গিয়ে দেখি লেখা “ব্লগিং করে সমাজ পরিবর্তনের ফ্যান্টাসি আর নাই”। আসলেই তাই। অথচ এই ত্রিভুজসহ প্রথম দিককার ব্লগারগণ এত ভালো ভালো লেখা পোস্ট করেছেন, যেগুলো যে কোন বিচারেই মানোত্তীর্ণ কালোত্তীর্ণ ছিল। প্রসঙ্গক্রমে আরিফ জেবতিকের একটা পোস্টের কথা বলতে হয়, যে পোস্টকে ভিত্তি করে ২০০৭-০৮ সালের দিকে এ দেশে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং শেষ পর্যন্ত সে আন্দোলন সফলও হয়েছিল।
আজ মনে হয়, হায় কোথায় সে রকম পোস্ট? তার বদলে সবাই কেবলই চাঁদগাজী হতে চায়। আলোচিত হতে চায়।
কিন্তু দোহায় সুলতান সুলেমানের! নিজের সৃষ্টিশীলতা রক্ষার স্বার্থেই চাঁদগাজী সিনড্রোম সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২১ রাত ১১:০১