এই শতকের শুরুটা হয়েছিল আলকায়েদা নামে ইসলামী ফেনমননের ঘটনা দিয়ে। চিন্তার এই ফেনমেনার গ্লোবাল প্রকাশটা ঘটেছিল সেসময় যদিও এর শুরু বা চিন্তার পথ পরিক্রমার দাগ কত পিছন থেকে তা খুঁজতে গেলে আমাদেরকে অনেক পিছনের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে তুরস্ক, বিশেষত মিসর ও পরে আলজেরিয়া, এভাবে এর উত্থান পর্বের বিভিন্ন পর্যায় দেখতে পাব। আমাদের সমাজ এই ফেনমেনন নিয়ে খোলা আলোচনা এড়িয়ে চলার পথ সাব্যস্ত করেছে। যদিও যার যার পরিচিত পরিসরে আলাপ আলোচনা থেমে নাই। কিন্তু কোনভাবেই সমর্থক, বিরোধী বা ক্রিটিকদের মধ্যে কোন গ্রুপ ক্রস করে একে অপরের সাথে খোলা আলোচনায় মিলিত হওয়ার মত পরিবেশ, পরিস্থিতি, পরিপক্কতা তৈরি হয়নি, হাজির নাই। ফলে সমাজ খোলা আলোচনা এড়িয়ে চলার পথ ধরে হাঁটবে এটাই সম্ভবত স্বাভাবিক। কারণ আলোচনা করতে গিয়ে চিন্তা বিরোধীর নাক ফাটিয়ে দিয়ে 'তর্কে' জেতার জন্য নিশপিস করা ইচ্ছা দমন করার ক্ষমতাসম্পন্ন পরিপক্ক মন আমদের যদি না হয়ে থাকে তবে সে বিপদজনক বেপথ ত্যাগ করে এড়িয়ে অপেক্ষা করাই আপাত বুদ্ধিমানের কাজ। এটা ঠিক যে একটা সামাজিক ফেনমেননকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে বুঝবার (মেনে নেবার না) সুযোগ এতে হারাচ্ছি, নাই থেকে যাচ্ছে -এটাই নীট ক্ষতি। তবুও এই রচনা আলকায়েদা রাজনীতির সঠিকতা/বেঠিকতা অথবা জায়েজ / না-জায়েজ তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতে বসা নয়।
আমরা কেউ পছন্দ করি বা না করি, ঘরোয়া বিচারে বসে ঘটনার ন্যায্য বা অন্যায্যতা নিয়ে তর্ক করতেও পারি কিন্তু ফ্যাক্টস হলো ঘটনাটা একটা গ্লোবাল ফেনমেনন; কোন স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভুগোলের লক্ষণ নয়। ফলে কেউই আমরা এর প্রতিক্রিয়া প্রভাবের বাইরে নই। সে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া প্রভাবকে ঘিরে এখানে আলোচনার বিষয়।
দেশের বাইরের প্রতিক্রিয়া যাই হোক বাংলাদেশের ভিতরের প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকালে আমরা দেখব, বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বললে যাদের বুঝি এরা এই ঘটনাকে সাংঘাতিক ভীতিকর নেতিবাচক বলে গ্রহণ করেছে। এরপরের ঘটনা বিস্তারে বলতে পারলে আমারও ভাল লাগতে কিন্তু কথার ফোকাস ছড়িয়ে যেতে পারে সে শঙ্কায় এখানে কথা-শিরোনামে ষ্টেটমেন্টের মত করে কথা বলব।
১। ভীতিকর বলে নেয়ার ঘটনাটা ঘটেছিল ৯/১১ ঘটার বেশ পরে এবং ধীরে ধীরে ততদিনে ২০০১ সালের আমাদের নির্বাচন ঘটে গিয়েছিল।
২। নির্বাচনের ফলাফল হিসাবে আগের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরাজয়টা ছিল তাৎপর্যপুর্ণ, যা আমাদেরকে আলোচ্য প্রসঙ্গ বুঝতে সাহায্য করবে।
৩। এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে যতটা আশা ভরসা করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত আওয়ামী লীগকে প্রথম বারের মত ক্ষমতায় এনেছিল পাঁচ বছর শাসনের শেষে ঠিক এর বিপরীতে আশাভঙ্গের হতাশায় বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি প্রশ্নে এবং কাঙ্খিত নুন্যতম একটা সোসাল সিষ্টেম, আইন, নর্মস, সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদি গড়ে উঠার বদলে উলটা যে ছিল এর অবনতি দেখে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কাছে আওয়ামী লীগ হয়ে গেছিল স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক। আওয়ামী সমর্থকের বা ভোটদাতার ড্রয়িংরুমে কানপেতে শুনে যাবার অভিজ্ঞতা সুযোগ থেকে থাকলে স্মরণ করতে পারব ওদের মনকষ্ট, আশাভঙ্গের বেদনার কথা।
৩। কিন্তু ২০০৪ থেকেই ততদিনে ইরাক আফগানিস্তান ঘোরতর যুদ্ধক্ষেত্র, ওয়ার অন টেররের গল্প আর সেই সাথে "আমেরিকান সেকুলারিজম" এর ধারণা বাজারে হাজির হয়ে গেছিল। সম্ভবত শিক্ষিত মধ্যবিত্তের আলকায়েদা গ্লোবাল ফেনমেননকে ভীতিকর বলে গ্রহণে চুড়ান্ত মন বেঁধে ফেলার ঘটনাটা ঘটিয়েছিল জেএমবির সবজেলা জুড়ে একই সময়ে বোমা ফাটানো। যার বড় কারণ সেবার ঘটনাটা ইরাক আফগানিস্তানের মত টিভিতে দেখে অনুভব করা দুরের কোন ঘটনা নয়, একদম জানলার পাশে ঘটা ঘটনা।
৪। এটা একটা গুরুত্ত্বপুর্ণ মোড় বদলের ঘটনা। মানুষের জীবন বেশীর ভাগ সময়ে ঘটনা ঘটে সে কী চায় তা দিয়ে না; উপস্থিত সামনে হাজির হওয়া অপশনগুলো থেকে যাকে সে বেছে নেয় সে ঘটনার মধ্যে দিয়ে। ঘটনা কীভাবে ঘটুক সে চায় সেটা না, ঘটনার মধ্যে কী কী চয়েসের সুযোগ আছে তাই থেকে মন বেঁধে একটা তাকে বেছে নিতে হয়। আওয়ামী লীগ স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক, মনকষ্ট, আশাভঙ্গের বেদনার স্মৃতি এটা যেমন সত্য সে ভুলেনি, একই সঙ্গে আলকায়েদা গ্লোবাল ফেনমেননকে ভীতিকর বলে গ্রহণে চুড়ান্ত মন বাধার ঘটনাটাও সমান সত্য। আলকায়েদা গ্লোবাল ফেনমেননকে আর দুরের না। জেএমবির নিজেকে ঘরের কাছের সত্য বলে হাজির করার ঘটনায় যে ভীতি শঙ্কাটা আগে দুরের ভাবা যাচ্ছিল, এখনই শক্ত মন না বেধেও চলছিল এর আর সে আবছা জায়গায় থাকার সুযোগ থাকল না।
৫। ভয় পাওয়া মধ্যবিত্ত যেন হঠাৎ করেই নিজেকে নিরাপত্তাহীনতায় আবিস্কার করেছিল। অন্য সব সত্যের উপর এই বোধঘটিত সত্য, একমাত্র ও প্রধান সত্য হয়ে হাজির হয়েছিল। এটাই সেই চয়েজ, অপশন বেছে নেবার মুহুর্ত। আবার আওয়ামী লীগের দিকে ঝুকে পড়ার কথা ভাবা শুরু করেছিল সে। দুটো মন্দের মধ্য থেকে যেটাকে কম মন্দ মনে হয় সেটা বেছে নেবার মত। পরিত্যক্ত আওয়ামী জামাটা আবার সাফাসুতারা করে নেবার কথা তাঁর মনে পড়ে। যদিও স্পষ্ট জানে এটা আর সাফসুতারা হবার নয়। কিন্তু সেই সাথে একথাও জানে সে কথা ভুলে এখন ঐ জামাটাই আশ্রয় ভেবে গায়ে তুলতে হবে।
৬। কথাগুলো যত দ্রুত বলে ফেললাম এত দ্রুত দ্বিধাহীনতায় বাস্তবে তা ঘটেনি। দ্বিধা, সে তো থাকারই কথা। সেসব কাটাতে সাহায্যে বড় ভুমিকাটা পালন করেছে "সুশীল" রাজনীতি ও এদের ক্যাম্পেইন। একই সাথে ওয়ার অন টেররের গল্পের ভিতর হাসিনার নিজের নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার রাজনীতি ও তাঁর ক্যাম্পেইন। এই দুই ধারা আলাদা ফলে সমান্তরাল দুটো ক্যাম্পেইন। টার্গেট একই মধ্যবিত্ত।
৭। "সুশীল" রাজনীতিটা ওয়ার অন টেররের গল্প আর সেই সাথে "আমেরিকান সেকুলারিজম" এর ধারণা - মুলত এর উপর দাঁড়ানো, তবে বাংলাদেশের উপযোগী করে নেয়া একটা বয়ান। ভয় পেয়ে আশ্রয় খোঁজা মধ্যবিত্তের সামনে আওয়ামী লীগকে অল্টারনেটিভ হিসাবে হাজির করার ব্রত, লক্ষ্য উদ্দেশ্য বিদেশী "সুশীল" রাজনীতি ওর আবির্ভাবের শুরুতেও ছিল না, এখনো নাই। কারণ, ২০০১ সালের পর থেকে বিএনপি আমেরিকান যুদ্ধনীতিকে মানে ওয়ার অন টেররের গল্প আর সেই সাথে "আমেরিকান সেকুলারিজম" এর ধারণার প্রয়োজনকে গুরুত্ত্ব দিয়ে দেখছিল না। প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজাই "শুশীল রাজনীতির" বড়ি খাওয়া প্রথম ব্যক্তি, যাকে বিএনপি সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বড়াইয়ে বদরুদ্দোজার হাত ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। ওদিকে হাসিনার নিজেকে অল্টারনেটিভ হিসাবে হাজিরের অফারও আস্থাবাচক মনে করেনি। এর চেয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মধ্যবিত্তকে খেপিয়ে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার সুশীল রাজনীতি হাজির করা মার্কিন স্বার্থের জন্য ভাল সম্ভাবনাময় বিকল্প মনে করেছিল। তাই "সুশীল রাজনীতির" আবির্ভাব দেখেছিলাম আমরা। কিন্তু এই রাজনীতির নিজেকে ছড়িয়ে মেলে ধরার ঝামেলাটা হলো, এরও টার্গেট কনষ্টিটুয়েন্সী মানে যাদের নেতা প্রতিনিধি হিসাবে "সুশীল" রাজনীতির নিজেকে হাজির করার টার্গেট, সেই কনষ্টিটুয়েন্সী হলো ঐ একই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। ফলে ঐ মধ্যবিত্তকে ভজাতে, তাতাতে গিয়ে "সুশীল" রাজনীতি বা প্রথম আলোকে এমন কিছু ব্যাখ্যা হাজির করতে হয়েছিল যা আওয়ামী সমর্থক হতেও কাজে লেগে যায়, কিন্তু কিছু করার নাই।
৮। যেমন, আমেরিকার ওয়ার অন টেররের গল্প বয়ানটা "সুশীল" রাজনীতিকে বাংলাদেশে প্রপাগান্ডা করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সে গল্পটা নিজের কাজে লাগে, নিজের ভাবনা স্বার্থ ওর মধ্যে আছে - এভেবে আগ্রহী হয়ে গ্রহণ করবে কেন? আগ্রহী করানোর এই দায়িত্ত্বটা নেয় প্রথম আলো ষ্টার গ্রুপের। প্রথম কাজ আমেরিকার টেররিজম সংজ্ঞার টেররিষ্ট শব্দকে বাংলায় ট্যাগ শব্দ হিসাবে চালু করা হয় "জঙ্গী"। এরপর "জঙ্গী" শব্দের উপর যতদুর সম্ভব কামান দেগে ওটা পচাঁনোর ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রথম ধাপের পরও সমস্যা হলো, টার্গেট পাঠক না হয় "জঙ্গী" বুঝল। কিন্তু আমেরিকার শত্রু টেররিষ্ট জঙ্গী বুঝা গেলেও বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের তাতে কী আসল গেল? জেএমবিকে "জঙ্গী" বলে ট্যাগ পরিচিতি লাগিয়েও আমেরিকান ওয়ার অন টেররের রাজনীতির সাথে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তকে একই নৌকায় তুলে নেবার যুতসই রাজনৈতিক এলায়েন্স জমে উঠছিল না। ভাবসাবের দিক থেকে আমাদের শত্রু একই বলে তেমন পপুলার হিসাবে তা হাজির হচ্ছিল না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামাত রাজাকার নেতিবাচক শব্দ, আধুনিক মধ্যবিত্তের কাছে ঘৃণিত শব্দ। কাজেই জেএমবিকে জামাত রাজাকারেরই রাজনীতি বলে প্রচারের টার্গেট নিল প্রথম আলো। যাতে সহজেই আমেরিকান ওয়ার অন টেররের রাজনীতির নৌকায় বাংলাদেশের মধ্যবিত্তকে তুলে নিয়ে একটা গ্লোবাল রাজনৈতিক এলায়েন্স খাড়া করা যায়; আমেরিকা রাষ্ট্রের শত্রু সারা দুনিয়ারও শত্রু বলে দাবি করা যায়।
৯। জামাত রাজনীতিটা আসলে কী বলে বুঝবঃ এখানে বিস্তারে যাব না, মোটা দাগে কথা বলব। মোটামুটিভাবে ১৯৭৫ সালের আশেপাশের সময় থেকে জামাত মুলত সৌদি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বার্থ ও রাজনীতি বাংলাদেশে প্রচার প্রতিনিধিত্ত্ব করা শুরু করে। এতে বাংলাদেশে সৌদি পুঁজি ওর রাষ্ট্রস্বার্থ যত পোক্ত হয়েছে জামাতের মধ্যে মওদুদী চিন্তা ততই এর এক কোণে ক্ষীণ হয়ে কোনমতে থেকে গেছে। ফলে বাংলাদেশে সৌদি পুঁজি, রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতিনিধি জামাত - এটাই ওর মুখ্য পরিচয়। এটা আরও জোরদার ভিত্তি পায় ১৯৭৯ সালে ইরানী বিপ্লবের পালটা সৌদি প্রতিক্রিয়ায়। ভীত সৌদি বাদশা ঐ বিপ্লবের প্রভাব, চিন্তার জোয়ার ঠেকানোর জন্য মুসলমান প্রধান দেশগুলোতে সৌদি-কর্মসুচী চালু করেছিল, যার বাংলাদেশে পুরা বাস্তবায়নটা ঘটেছিল জামাতের হাত দিয়ে। "ইরানী বিপ্লব একটা শিয়া বিপ্লব মাত্র ওনিয়ে সুন্নীদের আগ্রহী হবার কিছু নাই" - শিয়া সুন্নী বলে ভাগ করে, ইরানী বিপ্লবকে খাটো করে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলে মধ্যপ্রাচ্যে এই বিপ্লবের আছর সহজেই ঠেকানো যাবে - এই ছিল ঐ সৌদি-কর্মসুচীর মুল বয়ান। খেপ মারার এই দায়িত্ত্ব নেবার প্রতিবাদে কিছু নেতা কর্মী দলত্যাগ করেছিল। আমরা বেচে গেছি, বাংলাদেশে শিয়া জনসংখ্যা তেমন নয় ফলে দাঙ্গাহাঙ্গামার মত ঘটনা আমাদের দেখতে হয়নি। মসজিদের খুতবা বয়ানে এক ধরণের কানে কানে বলা প্রচারণা (হুইস্পারিং ক্যাম্পেইন) হয়েই তা থেকে গেছিল। যেমন কেঊ কী লক্ষ্য করেছেন খোদা হাফেজ থেকে আমরা কী ভাবে হঠাৎ আল্লাহ হাফেজ বলা শুরু করলাম? মোগল শাসনের প্রভাবে আরবির পাশাপাশি আমরা বেশ কিছু ফার্সী শব্দ আমাদের ভাষায় ব্যবহার করি; বিশেষত আদালত বিষয়ক শব্দের বেলায় ফার্সী শব্দ ব্যবহার, গ্রহণ একচেটিয়া। এর কারণ মোগলদের হাতেই এদেশে প্রথম আদালত ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এটা ইসলাম প্রীতি অথবা আরবি ছেড়ে ফার্সী প্রীতির কোন ঘটনাই নয়। সেরকমই এক বিদায় সূচক শব্দ খোদা হাফেজ শব্দ আমাদের ভুগোলে চালু হয়েছিল। আমাদের বয়স্ক জেনারেশন এখনও খোদা হাফেজ এ অভ্যস্থ। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন তরুণদের মধ্যে খামোখা আরবি শব্দে একে খতনা করে চালু করা হয়েছে আল্লাহ হাফেজ। আমাদেরও সুন্নি পরিচয় পোক্ত হয়েছে। এভাবেই সৌদি ক্যাম্পেইনের টাকা হালাল হয়েছে। অল্পের উপর দিয়ে গেছি আমরা। নইলে পাকিস্তানের মত হয়ত দেখতাম শিয়া-সুন্নীতে ভাগ হয়ে পরস্পর পরস্পরের মসজিদে আগুন দিচ্ছি নাহলে বোমা মারছি। এই রাজনৈতিক ঘটনাবলী গ্লোবাল রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন আর এক ফেনমেনন। সৌদি-কর্মসুচীর নতুন করে সুন্নি-খতনার সিল মোহর মেরে দেবার রাজনীতির সাথে জামাতের ৭১ সালের রাজনীতির কোনই সম্পর্ক নাই। তবে ৭১ সালের সেই জামাতই এই নতুন রাজনীতির এজেন্ট - এটুকুই যা মিল। এখন সৌদি রাজতন্ত্রের রাজনীতি, স্বার্থ অস্তিত্ব নিশ্চয় আলকায়েদা নয়, বরং বিরোধী। ফলে জামাতেরও আলকায়েদা রাজনীতি চাইলেও বহন করা সম্ভব না। ফলে এখন কেউ যদি দাবি করে আমেরিকান ওয়ার অন টেররের নৌকায় উঠা সৌদি বাদশা আল কায়েদা রাজনীতি করে আর, নিজের পুঁজি সাম্রাজ্যের উপর নিজেই বোমা মেরে বেড়াচ্ছে - এর মানসিক সুস্থতা নিয়ে কিছু বলার দরকার আছে বলেও মনে হয় না। প্রথম আলো এই কাজটাই করেছে। কোন জেএমবির কোন কর্মী ধরা পড়লে প্রথম আলো ঐ কর্মীর পারিবারিক ইতিহাস ঘেঁটে প্রমাণ হাজির করেছে, নিজের পত্রিকার পাতায় ক্যাম্পেইনমুলক রিপোর্ট ছেপেছে, তাঁর বাবা যেহেতু জামাত করে অতএব জেএমবি মানেই জামাত। এটা ঘটা মোটেও অসম্ভব না বরং স্বাভাবিক যে, জামাত নেতার সন্তান জেএমবির কর্মী। সিরিয়াস ষ্টাডি করলে হয়ত এটাই বেরিয়ে আসবে যে জেএমবির বেশির ভাগ নেতা কর্মী আগে জামাত করত। এরকম হবার কারণ, জামাত নতুন ও তরুণ প্রজন্মকে নিজে ইসলামী বিপ্লব করবে বলে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু বাস্তবে সংসদীয় নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি আর ব্যাবসা বাণিজ্যে আকন্ঠ মনযোগ দিয়ে করে কতদিন তাঁদের ধরে রাখা সম্ভব। বিশেষত গ্লোবাল প্রভাবের আল কায়েদা রাজনীতি যখন হাজির, হাতের কাছের জেএমবির একশনের রাজনীতিও যখন হাজির। জেএমবির রাজনীতি্র ভবিষ্যত যাই থাক ওর পদক্ষেপ একশনের। ফলে ওর তো মনে হবেই জামাতের ফালতু ইসলামী বিপ্লব সত্যি করে হাজির করার আসল সংগঠন জেএমবিই।
জামাতকে আলকায়েদা রাজনীতির ক্যারিয়ার বলে প্রচারের প্রথম আলোর চেষ্টাটা অনেকটা বাকশালের সমাজতন্ত্রকে নকশালী রাজনীতির সমাজতন্ত্র বলে চালিয়ে দেবার মতলবী-চেষ্টা।
১০। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ইসলামকে অখন্ড রাখতে আর, মুসলমানদের ভাগ করে ফেলা ঠেকানোর কাজটাকে জামাত এতই নিজের জানকবচ রাজনীতি মনে করেছিল যে এতে সারা পুর্ব পাকিস্তানের 'মুসলমান' হত্যা করে সাফা করতে হলেও তাই করতে হবে; এটাই ইয়াহিয়ার ২৫ মার্চের গণহত্যার পরও পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে থাকার পক্ষে জামাতের সাফাই। জামাতের এই রাজনীতির সাথে আলকায়েদা বা জেএমবির রাজনীতির কোন সম্পর্ক, মিল না থাকলেও প্রথম আলোর একে এক করে দেখানোর উদ্দেশ্য ৭১ সালের গণহত্যার বিরুদ্ধে জনগণের মনের ক্ষত, আবেগ সেন্টিমেন্টকে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের স্বার্থের কাছে বিক্রি করে দেয়া। বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের ভীতি সন্ত্রস্ততাকে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের নৌকায় তুলে নেয়া।
১১। ১/১১ এর সরকারের প্রথম বছর "সুশীল" রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিয়েই চলতে পেরেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বছরে এসে এক পটপরিবর্তনে "সুশীল"দের বদলে নিগোশিয়েশন ঘটে হাসিনার সাথে। ভারতের চালের রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশের হাত মুচড়ানোর ক্ষমতা সবার উপরে জায়গা দখল করে নেয়। সে সময়ে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন এন্ড গং- চার সাথী দের বিদায় "সুশীল রাজনীতির" ধারার বিদায় নির্দেশক মাইলষ্টোন।
গত ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা হারার পর একই সময়ে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের রাজনীতির উত্থানের ভিতর নিজের নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনা দেখেন তিনি তখন থেকেই। সেটার ফল ফলতে অনেক সময় লেগে যায়। বাইরে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের রাজনীতির নৌকায় উঠবেন আর দেশের ভিতরে সেই আকামকে জায়েজ করার জন্য জামাত, যুদ্ধাপরাধের বিচারের তাগিদে সেটা করছেন বলে চালিয়ে দিবেন। জামাত, যুদ্ধাপরাধ বিচার এমনকি মানবাধিকারের অপরাধের বিচার বলেও হয়ত বাংলাদেশের একেবারেই স্থানীয় রাজনৈতিক ইস্যু, এক অমীমাংসিত অধ্যায়ের মীমাংসা হিসাবে একটা রাজনীতি উঠতেই পারত। কিন্তু কোনভাবেই তা আমেরিকার আকাম ওয়ার অন টেররের রাজনীতির দায় দেশের কান্ধে নিবার বিনিময়ে নিজে ক্ষমতাসীন করার কাজকে আড়ালের হীন কাজে ব্যবহার করা হতে পারে না। হাসিনা সেটাই করেছেন।
১২। শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু আমরা বিক্রি হয়েছি আরও নিকৃষ্টভাবে। আমেরিকা চীন ঠেকানোর স্বার্থে ভারতের কাছে আমাদেরকে পুনঃবিক্রি করে দেয়। আমেরিকার ওয়ার অন টেররের পক্ষে হাসিনার সেবা বলতে সে নতুন মানে করে, ভারতকে সেবা দিলেই আমেরিকাকে সেবা দেয়া হবে। ভারতের চাহিদা ভারত যেভাবে পুরণ করতে চায় হাসিনাকে তা পুরণের দায়িত্ত্ব অর্পন করেছিল । কারণ, এশিয়ায় চীন ঠেকানোর আমেরিকান স্বার্থ সে ইতোমধ্যে ভারতকে অছি করেছিল।
বাংলাদেশের "আধুনিক" মধ্যবিত্তের ভীতি, অনিরাপদ বোধে তাড়িত ছিল একথা সত্য। কিন্তু একে আমেরিকার কাছে কার্যত ভারতের কাছে বিক্রি করেছে হাসিনা; এক জানু নত করা ক্ষমতা হাসিল করেছিল হাসিনা। আর এর ভিতর দিয়ে মধ্যবিত্তের ভীতি "আমেরিকান সেকুলারিজম" মধ্যে আশ্রয় খুঁজা শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশে। অথচ ওবামার হাতের খোদ আমেরিকা সব যুদ্ধতত্ত্ব ফেলে ছুড়ে এখন কোথায় আশ্রয় নেয়া যায় তাই খুজছে। একটা ভাল তালেবানের বিষম খোঁজে আছে তারা। ওদিকে মধ্যবিত্তের ভয়কে পুঁজি করে কীসের বিনিময়ে হাসিনা জানু নত ক্ষমতা হাসিল করেছে সেদিকে নজর করার অবস্থায় মধ্যবিত্ত এখনো পৌছে নাই।
১৩। এই তের নম্বর পয়েন্টে ব্যখ্যা করব কী কথা মাথায় রেখে এই পোষ্ট লিখতে বসেছিলাম।
সদ্য সমাপ্ত সীমান্ত সম্মেলন নিয়ে আমার ঠিক এর আগের পোষ্টের Click This Link পাঠক "পৃথিবী আমারে চাই না" নিক নামের একজন আমাকে মন্তব্যে লিখে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। হুবহু সে মন্তব্য নীচে তুলে দিচ্ছি নিচে, বলেছেনঃ
"আমার বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দু ঠিক ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের সমালোচনা নয়। ভারত তার নিজের স্বার্থে তো যা কিছু প্রয়োজন তা তো করবেই বা করতে চাইবেই। আমার পয়েন্ট অব ভিউ হলো একটা পুরা জাতি যারা কিনা মাত্র ৩৯ বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তারা মাত্র ৩৯ বছরের ব্যবধানে অন্য একটি দেশের সেবাদাসে পরিনত হয়ে গেল কিভাবে? কোন জিনিসটা এখানে প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছে ? রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি সেক্টরে ক্ষমতাবান মানুষেরা ভারতের হাতের পুতুল হয়ে গেল কিভাবে ? প্রত্যেকটি মিডিয়াতে খোলেআম ভারত বন্দনা !!! এতটা আত্বঘাতি জাতিতে কিভাবে আমরা পরিণত হলাম ? কেন আমরা আমাদের আত্মমর্যাদাবোধটা হারিয়ে ফেললাম? "
আসলে উনার প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে এই পোষ্ট লিখেছি। এখানে কিছু অংশ বোল্ড দেখা যাচ্ছে তা আমার দেয়া।
উপরের আমার ১২টা পয়েন্ট হলো, আমার জবাবের পটভুমি। এখানে দাড়িয়ে এক এক করে এখন দুই চার লাইনে সিরিয়াস সেই পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করব।
অন্য একটি দেশের সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেল কিভাবে?
অন্য একটি দেশের সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেল বলে যেটা দেখতে পাচ্ছেন এটা সাময়িক ও সেই অর্থে তা আপতিক বলে আমি বিশ্বাস করি। ভীত সন্ত্রস্ত "আধুনিক" শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ঘটনা বুঝে উঠার আগেই সব কিছু বেচাবিক্রি শেষ হয়ে গেছিল। ফলে ঘটনার পিছু পিছু হেটে হলেও এসব বুঝতে মধ্যবিত্তের সময় লাগছে বেশী। ওদিকে ইতোমধ্যেই সে সেকুলার আর ইসলামী বলে বিপদজনক ভাগাভাগিতে জড়িয়ে গেছে। একটা নুন্যতম ভেদমুক্তি ঘটে গেলে বিদ্রোহ অনিবার্য, যার সামনে কেঊ দাড়াতে পারবে না। কারণ, গণমানুষ সে যেই হোক সেকুলার অথবা ইসলামী - কখনো সে সেবাদাস হতেই পারে না।
কোন জিনিসটা এখানে প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছে ?
প্রধান প্রভাবক আলকায়েদা নামের গ্লোবাল ফেনমেনন; ওর গ্লোবাল রাজনৈতিক প্রভাব, তাৎপর্য, ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া।
সামাজিকভাবে ওর প্রভাবের ভিতরে বাংলাদেশে আমরা একেবারেই অপ্রস্তুত, চিন্তার হোমওয়ার্ক না করে ক্লাসে আসা ছাত্রের মত। ফলে যে যার মত আমাদের ভীতি, অনিরাপদবোধ, আশা আকাঙ্খাকে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে বেচাবিক্রি, ব্যবহার করার সুযোগ নিচ্ছে ।
রাস্ট্রের প্রত্যেকটি সেক্টরে ক্ষমতাবান মানুষেরা ভারতের হাতের পুতুল হয়ে গেল কিভাবে ?
মুল ফ্যাক্টর, আমাদের ভীতি, অনিরাপদবোধ যেটা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে আমরা আশ্রয় খুঁজছি এক অদ্ভুত ধারণার মধ্যে - ধারণাটার নাম সেকুলারিজম।
সেকুলারিজমের একটা ধারণা আমাদের ৭২ সালের দিকে ছিল। কোল্ড ওয়ারের সেই দুনিয়ায় ওর একটা ইতিবাচক অর্থ ছিল যখন ইসলামকে ব্যবহার করা হত আমেরিকার নীতির পক্ষে। ধর্ম, বর্ণ, পাহাড়ি-সমতলী ইত্যাদি মানুষের মধ্যকার যত রকমের বিভেদ চিহ্ন আছে তা নির্বিশেষে সকল নাগরিককে রাষ্ট্র সমান চোখে দেখবে, এটাই ছিল ওর মুল কথা। রাষ্ট্রের চোখে সবাই স্রেফ নাগরিক, এটাই মুখ্য পরিচয়। এই মুখ্য পরিচয়ের মধ্যে শ্রেণীমুলক লড়াইগুলো চলতে দেয়া, ধারণ করা।
ওর সবচেয়ে গুরুত্ত্বপুর্ণ দিক হলো, কোন বিশেষ ধর্মের বিদ্বেষী না হওয়া, রাষ্ট্রকে ইসলামের বিপক্ষে খাড়া করা কোন প্রয়োজন যার নাই।
এর সাথে আমরা গুলিয়ে ফেলেছি "আমেরিকান সেকুলারিজম", বা বিশেষ করে বলা ভাল "বুশের সেকুলারিজম" ধারণাকে। সারা পশ্চিম বিশেষত ইউরোপ যে ধারণা নিয়ে খাবি খাচ্ছে, খপ্পরে পড়েছে। ইসলাম বিদ্বেষী এই ধারণা নিজেই সাম্প্রদায়িক। বুশের হাতে পড়ে দুনিয়া আত্মঘাতি বেকুবি ক্রুসেডের মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল প্রায়। আজ ওবামাকে গলা ফাটিয়ে দাবি করতে হচ্ছে, আমেরিকা কখনই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই, ভবিষ্যতেও করবে না।
এখন খোদ আমেরিকার মরণ দশা। ওয়ার অন টেরর বা সেকুলারিজমের বুলি নিজেই মুখে আনে না, সব বেমালুম গিলে খেয়ে ফেলেছে চুপচাপ।
অথচ আমাদের ভীতি, অনিরাপদবোধকে পুঁজি করে সংকীর্ণ স্বার্থে পড়ে আমেরিকান-ভারতের হাত থেকে ন্ত জানুতে নেয়া নিগোশিয়েটেড ক্ষমতা হাসিনা এখনো আরো কাফফারা দিতে "আমেরিকান সেকুলারিজম" দিয়ে এখনো ১৯৭২ কে বয়ানে রত আছে। যেন ১৯৭২ সালে আমরা ইসলাম বিদ্বেষী ছিলাম। হাসিনার এখনও হুশ নাই আমেরিকান সেকুলারিজম মানে, ইসলাম বিদ্বেষী যুদ্ধের নীতি বুশের ক্ষমতা ছাড়ার পর মৃত অকেজো, ওবামা ঐ শব্দাবলীর ধারেকাছে নাই। সারা পশ্চিমে যুদ্ধের এই বয়ান, দায়দায়িত্ত্ব, শত্রুসৃষ্টি আকাম কুকামের দায় আমরা কোন দুঃখে নিজের কাঁধে নিব, যখন খোদ আমেরিকাও নিজেই নিজের পাপের দায় বইতে রাজি নয়।
আফগানিস্তানে আমেরিকান পাপ বইবার জন্য আমাদেরকে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাবের প্রতিক্তিয়ায় দেখা যাচ্ছে আমাদের "আমেরিকান সেকুলারিষ্টরা" সবার আগে না বলার জন্য যুক্তি শানাচ্ছে। অথচ ধর্মকে কোতল করার এই মহাসুযোগ কেন তাঁরা হেলা করছে তা বোঝা ভার।
রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি সেক্টরে বলতে আপনি সম্ভবত আদালত, প্রশাসন, সংসদ ইত্যাদি বুঝাতে চেয়েছেন। এরা সবাই এখনো "আমেরিকান সেকুলারিজম" দিয়ে ১৯৭২ কে বয়ান করার ঘোরের মধ্যে আছে, তাই এমন দেখতে পাচ্ছেন।
প্রত্যেকটি মিডিয়াতে খোলেআম ভারত বন্দনা !!! এতটা আত্বঘাতি জাতিতে কিভাবে আমরা পরিনত হলাম ? কেন আমরা আমাদের আত্বমর্যাদাবোধটা হারিয়ে ফেললাম?
আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠানোর ইস্যুতে "আমেরিকান সেকুলারিষ্ট" পলায়নপর বীরপুঙ্গবদের দেখে উত্তর খুঁজে নিন। পাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:২৬