কিস্তি-৫কিস্তি-৩ কিস্তি-২ কিস্তি-১
আগের কিস্তিগুলোতে ওয়ার্কআউট আর মাসল স্ফীতির কিছু নিয়ম ও সতর্কতা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছিল। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো আলোচনায় আসেনি। এগুলো বিবেচনায় না আনলে ওয়ার্কআউটের আসল যে ফায়দা সেটা হাসিল হবেনা, হিতে হবে বিপরীত । এক এক করে বাকি বিষয় গুলো দেখি। একটি হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম আরেকটা হচ্ছে ডায়েট।
ঘুম
ওয়ার্কআউট মানে এক অর্থে মাসলের ক্ষয়। যখন আমরা ওয়ার্ক আউট করি তখন মাসলের কিছু কিছু ফাইবার ছিঁড়ে যায়। গভীর ঘুমে আমরা যখন আচ্ছন্ন সিস্টেম তখন সেই মাসলের ফাইবার গুলো মোটা সুতায় বুনতে বসে। ফলাফল মাসলের স্ফীতি ( কিস্তি ৩)। তাই পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম না হলে এই ক্ষয়পূরনের কাজটা বাধা গ্রস্থ হবে। আমাদের আল্টিমেট লক্ষ্য হচ্ছে বৃদ্ধি সাধন, মোটা সুতোয় মাসলকে বুনে ফেলা। সিস্টেমকে তাই একান্তে তার কাজ করার পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে। আমাদের জাগ্রত অবস্থা আর সিস্টেমের একান্তে নির্বিঘ্নে কাজ করা, একসাথে সম্ভব না। সুতরাং গভীর ঘুমের বিকল্প নাই। খুব গুরুত্বপূর্ন। এই অংশে অবহেলা হলে শত ওয়ার্কআউটেও পেশির আশানুরূপ স্ফীতি সম্ভব হবে না। কষে ওয়ার্কআউট আছে কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম নাই, তার মানে কি? মানে ক্ষয় করার আগ্রহ শত ভাগ কিন্তু ক্ষয়পুরনের আগ্রহ নাই। ফলাফল? স্বস্থ্যের ক্ষতি। কতটুকু ঘুম দরকার? আসলে নিজেকে নিজের প্রয়োজনটা বুঝতে হবে। অন এভারেজ ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। সলিড ঘুম।
ডায়েট
প্রোটিন যেহেতু পেশী বা মাংশ তৈরীর আবশ্যকীয় উপাদান ,পারলে প্রতিদিনের খাদ্যে তালিকায় প্রোটিন বা মাছ মাংশের পরিমান একটু বাড়িয়ে দেন। না পারলেও সমস্যা নাই, এর একটা ফার্স্টক্লাস অল্টারনেটিভ আছে। কয়েক ধরনের ডাল বা বীজ, এই যেমন ছোলা, মসুর, মুগ, শিমের বীজ সহ বিভিন্ন ধরনের সিড একসাথে মিশিয়ে রান্না করেন। সিস্টেম এটা থেকে মাসল তৈরীর প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় এমিনো এসিড পেয়ে যাবে। ডিম খেতে পারেন, কুসুমটা ফেলে দিয়ে। কুসুম মানে ফ্যাট। এটা আপনার পেশীর জন্য আবশ্যকীয় নয়।
মনে রাখবেন, আমাদের শরীর হচ্ছে জগতের সব থেকে আশ্চর্যতম কেমিক্যাল ল্যাবরেটরী। অনেকের ধারনা, যেহেতু প্রোটিন মাসলের আবশ্যকীয় উপাদান তাই খাদ্যে যত প্রোটিন তত মাসল। সম্পূর্ন ভুল ধারনা। আসলে শরীর ততটুকুই প্রোটিন এবজর্ভ করবে যতটুকু প্রোটিন তার শরীরবৃত্ত্বীয় কর্মকান্ডের জন্য দরকার। গৃহীত প্রোটিনের একটা অংশ মাংশপেশীর বৃদ্ধির কাজে ব্যায় হবে, কিছু অংশ ফ্যাটে কনভার্ট হয়ে ফ্যাট সেলে জমা হবে, আর বাকিটুকু সিস্টেম ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিবে। তাহলে কি দাঁড়ায়? প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহন মানেই লিভারের অতিরিক্ত কাজ আর কিছু এক্সট্রা ফ্যাট। সিস্টেম কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রাখবেনা, বের করে দিবে। তাই সিস্টেমকে ততটুকুই দিবেন যতটুকু এর লাগবে। বরং কিছু কম পড়লে সমস্যা নাই, শরীর তখন খাদ্যের অন্য সব আবশ্যকীয় উপাদানকে ভেঙ্গে প্রোটিনে কনভার্ট করে নিবে। শরীর হচ্ছে জগতের সব থেকে জটিল ও এফিসিয়েন্ট কেমিক্যাল ফ্যাক্টরী। লক্ষ বছরের বিবর্তনের জ্ঞান এর মাঝে প্রোথিত। এর উপর আস্থা রাখেন। একে যখন তখন অযাচিত ভাবে হেল্প করা বন্ধ করতে হবে। সে জানে কি তার করনীয়। দরকার মনে পড়লে সেইই আপনাকে সিগন্যাল দিবে।
কতটুকু আহার করবো? যারা এই ব্যাপারে সত্যিই সিরিয়াস তারা দিনে তিনবার না খেয়ে ঐ একই পরিমান খাদ্য ৫ থেকে ৭ বারে খেতে পারেন। সেই পরিমান খান যেটুকু আপনার সিস্টেম দাবি করে। মনে রাখবেন অতিরিক্ত খাদ্যের একটা অংশ ফ্যাটে কনভার্ট হয়ে ফ্যাট সেলে জমা হবে। ফ্যাট আপনার উদ্দেশ্যে বা সাধনার পরিপন্থী। আপনি নিশ্চয় চাননা যে আপনার বিল্ডকৃত মাসল চামড়ার নীচে ফ্যাটের পাতলা আস্তরনে ঢাকা পড়ুক। বরং যে পরিমান মাসলই থাকুক না কেন, তার ভাঁজ গুলো যেন চামড়ার নীচে দৃশ্যমান হয়ে উঠে এটাই আপনার উদ্দেশ্য। কমনীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জন্য আপনি ওয়ার্ক আউট করছেননা এটা সুনিশ্চত। তবে ফ্যাট আপনার চরম শত্রু এরকমটা ভেবে দিন রাত ফ্যাটের সঙ্গে অবিরাম লড়ায়ে লিপ্ত হবার দরকার আছে বলে মনে করিনা। ফ্যাট শরীরের আবশ্যকীয় উপাদান গুলির একটি, তবে তাকে রাখতে হবে সীমার মধ্যে। আর শরীরে যখন পেশীর পরিমান বেড়ে যাবে তখন দেখবেন আগে যে পরিমান খাদ্যে ফ্যাট জমতো এখন সেই একই পরিমান খাদ্যে কোন ফ্যাট জমছেনা। শরীরের মেটাবোলিক রেট বেড়ে গেছে। দেহে ফ্যাট জমছে কিনা তার ভাল একটা ইন্ডিকটের হচ্ছে পেট ও গাল। শরীরের অন্য অঙ্গের তুলনায় এখানে প্রচুর ফ্যাটসেল থাকে। তাই শরীরে ফ্যাট ডিপোজিশন শুরু হলেই তার এফেক্টটা এখানে সহজে দৃষ্টিগোচর হয়। আসলে একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখলেই চলবে, সব সময় ফ্যাট ফোবিয়াতে ভোগার দরকার নাই।
এই হলো মোটামুটি পেশী স্ফীতকরনের মূল কথা। তিনটা মূল জিনিস - ওয়ার্কআউট, ঘুম আর ডায়েট। তিনটার সঠিক সমন্বয় দরকার। এর যে কোন একটার ঘাটতি বা বাড়াবাড়ি পেশীর স্ফীতি রেটকে বাধাগ্রস্ত করবে। ওয়ার্কআউটে খেয়াল রাখবেন যেন একই পেশীর উপর প্রতিদিন কসরৎ না হয়। সব চেয়ে বড় কথা সময় দিতে হবে।বায়োলজিক্যাল সিস্টেম মানেই ধীর, দ্রুত বিল্ডআপের ন্যাচারাল ও হার্মলেস কোন পথ খোলা নাই। আপনি নিশ্চয় চাননা আপনার লিভার, কিডনি ,হার্ট পচে গলে নষ্ট হয়ে যাক। ১৯৬০ বা তার আগের সময়ের বডিবিল্ডার আর ১৯৮০ পরের বিল্ডারদের তফাতটা খেয়াল করবেন। ৭০ ৮০ এর পরে যারা মিস্টার ইউনিভার্স বা মিস্টার আমেরিকা তাদের এক কথায় বলা যায় মাস-মনস্টার (mass-monoster)। কোন রহস্য নাই, জাস্ট ডোপিং। স্টেরয়েড আর বিভিন্ন গ্রোথ হরমোন। একটাই উদ্দেশ্য গেট বিগার। লগ্নী পুঁজির কায় কারবার। বিশাল একটা পুঁজি এদের পিছনে খাটছে। এই শো আর গ্লামারস বিজনেস থেকে সর্বোচ্চ লাভ তুলে নিতে হবে। করতে হবে এই শো কে আরো বেশী আকর্ষনীয়। কিভাবে? গেট বিগার। সেটা কতবড়? জানা নাই, তবে আগের বারের চেয়ে অনেক বড় । তাই আরো বেশী ডোপিং, আরো বেশী হরমোন। স্টেজে আপনি মিস্টার ইউনিভার্সের গর্বিত কসরত দেখেছেন একদিন, কিন্তু তারপরে খবর নিয়েছেন কেমন থাকে এরা? কতো করুন আর হৃদয় বিদারক হয় এদের মৃত্যু? কিভাবে একে একে এদের থায়রয়েড গ্লান্ড, লিভার, হার্ট , কিডনি পচে গলে অকেজো হয়ে গেছে জানা আছে আমাদের? না জানা নাই, কারন ততদিনে স্টেজে চলে এসেছে নুতন মিস্টার আমেরিকা। তাই সাবধান। নো ডোপিং, নো হরমোন, নো স্টেরয়েড। আপনি লগ্নী পুঁজির শো পিস নন। যেটা ন্যাচারাল ও স্বাস্থ্য সম্মত সেটাই কাম্য।
বডিবিল্ডিং আর ফিটনেস নিয়ে একই সঙ্গে বললে কনফিউশন তৈরী হবে তাই পরের পোস্টে জাস্ট ফিটনেস নিয়ে কথা পাড়বো। সঙ্গে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৫