somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদী - বিমূর্ত ভালবাসা আর মূর্ত কলহ

১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষের জীবনে নদী, শুধু লোকগাথা, কবিতা, সাহিত্য, সঙ্গীত ও শিল্পকলার লীলা ক্ষেত্র নয়, নয় শুধু ভালবাসা - ইতিহাস জুড়ে সে মানুষের অনেক বিবাদ রেষারেষি ও প্রতারনার শিকার। স্রোতের যাত্রাপথে বাঁধ দিয়ে স্বার্থপর মানুষ জীবিকা আর ব্যসনে তার স্রোত রুদ্ধ করে। যার পূর্ণ মুল্য শোধ হয় বিনাশে । নদীর পার ধরে যেমন মানুষের বসতি বিস্তার তেমনি নদী শুকিয়ে গেলে তার দেশান্তর ।
আমার জানামতে পৃথিবীতে জল ভাগাভাগি নিয়ে প্রথম বিবাদ হয় প্রায় ২৬০০ বছর আগে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানে, যা বর্তমান নেপালে অবস্থিত । হিমালয় থেকে নেমে আসা রোহিণী নদীর দুই তীরে শাক্য এবং কোলিয় দুই স্বাধীন গন রাজ্য বিস্তার লাভ করেছিল। বলা বাহুল্য সিদ্ধার্থ গৌতম শাক্য বংশের রাজপুত্র ছিলেন। তাঁর বয়প্রাপ্তির পর থেকেই তিনি দেখে আসছিলেন চাষাবাদের জন্য রোহিণী নদীর জলের ভাগ নিয়ে শাক্য এবং কোলিয় দের মাঝে যুদ্ধাবস্থা । কথিত আছে, গৌতম নিজেই একবার সেই যুদ্ধাবস্থার মাঝখানে পক্ষপাতিত্ব হীন অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের অসারতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে জল সেচনের সমস্যা সমাধান করে দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটান । বুদ্ধের জীবনীকার রা মনে করেন রাজত্বের প্রতি তাঁর বিরাগের মুলে এই জল বিবাদ অন্যতম । এরপর দেখা যায়, ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান ইরাকের কারবালা যুদ্ধে জল কূটচাল । যুদ্ধের মূল কারন যদিও আধিপত্য নিয়ে, কিন্তু সেখানেও যুদ্ধকালীন সময়ে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর জল নিয়ে নিষ্টুর কৌশলের অবতারনা হয় । ইউফ্রেটিস আর টাইগ্রিসের উজানে তুরস্ক ,আর ভাটিতে ইরাক সিরিয়া। এখনো সেখানে রয়েছে দ্বন্ধ । নীলনদের জল নিয়ে সেই প্রাচীন কাল থেকে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলে আসছে তা এখন আরও ব্যাপক। নীল নদের উজানে ইথিওপিয়া,ইরিত্রিয়া,উগান্ডা, কঙ্গো, তাঞ্জানিয়া,দক্ষিন সুদান , রুয়ান্ডা এবং কেনিয়া, আর ভাটিতে মিশর এবং উত্তর সুদান। এই দুই পক্ষর মাঝেই নীল নদের জলের ভাগ নিয়ে দ্বন্ধ সংঘাত লেগেই আছে । দানিউব ইউরোপের বৃহত্তম নদী। ইউরোপের বুক চিরে অধিকাংশ দেশের পাশ দিয়ে বয়ে চলছে দানিউব । তাকে নিয়েও একে অপরের সাথে বোঝাপড়া এ পর্যন্ত কম হয়নি । তবে সবচেয়ে প্রখর পরিস্থিতি ভারতের । হিমালয় যদিও নেপাল, ভুটান বা তিব্বত সংলগ্ন, কিন্তু অধিকাংশ নদী ভারতের ভিতর দিয়েই প্রবাহিত । ২৯০০ কি মি দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র বিশ্ব ইতিহাসের এক প্রাচীনতম নদী যে তিব্বত থেকে আরুনাচল প্রদেশের মাঝ দিয়ে গঙ্গার সাথে মিশে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে নিজেকে সমর্পণ করেছে। মানবেতিহাসে ব্রহ্মপুত্র এক মহাপরাক্রম শালী নদী যে গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সভ্যতা, সংস্কৃতি অর্থনীতির সাথে আদিকাল থেকে জড়িত । ব্রহ্মপুত্র বন্দনা শিল্প সাহিত্য এবং ধর্মের ইতিহাসে অভুত পূর্ব। বৈদিক শ্লোক থেকে বিখ্যাত গায়ক ভুপেন হাজারিকা কন্ঠে নিয়েছেন ব্রম্মপুত্র স্তুতি । কয়েক দিন আগেই আসাম রাজ্যে অনুষ্ঠিত হল 'নমামী ব্রহ্মপুত্র' নামের আন্তর্জাতিক মহা সম্মেলন যেখানে বিশ্বের অনেকের সাথে উপস্থিত ছিলেন দালাই লামা। আসাম রাজ্যর কৃষি নির্ভরতা তার বিশাল লোক সংস্কৃতি সবটুকু , ব্রহ্মপুত্র তার হৃদয়ে ধারন করে । ভারতের নদী প্রবাহের আধিপত্য শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোকে পরান্মুখ করেছে তা নয়, এমন কি ভারতের ভিতরেই রাজ্য গুলোর মাঝে বিবাদ বিসম্বাদ জাগিয়ে রেখেছে । যেমন গোদাবরী এবং কৃষ্ণা নদীর জল নিয়ে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, কর্ণাটক এবং উড়িষ্যার দ্বন্ধ । নর্মদা র জল নিয়ে রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এর দ্বন্ধ । কাবেরী নদীর জল নিয়ে কর্ণাটক আর তামিল নাড়ু দ্বৈরথ তো একেবারে তরতাজা। ভারতবর্ষের রাজ্য গুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা্র মাঝে না থেকে আলাদা হয়ে যেত প্রাচীন গনরাজ্য গুলোর মতো, তাহলে জলের ভাগের জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী রক্তক্ষয় হতো ভারতবর্ষে র অভ্যন্তরে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×