somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই বাংলায় পৃথক নববর্ষ

১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা সংস্কৃতিই শুধু বৈচিত্র্যময় নয়, এমনকি তার নববর্ষও চরম বৈচিত্র্যময় । গতকাল ১৪ তারিখ সরকারী মতে বাংলাদেশে নতুন বছর পালিত হয়েছে। সেখানে সবাই উৎসবে শামিল হয়েছে, সেটাই বড় কথা। তারপরে এক অংশ নিজেদের মাঝে আজকে পালন করছে । অন্য একটি অংশ এই উৎসবে শামিল হয়নি । এর বিরুদ্ধে ছিল সরব। এদিকে কেউ কেউ বলছে আজকে ১৫ তারিখই সঠিক নববর্ষ । কাল হয়েছে উৎসব। আমি কোন সমালোচনায় যেতে চাইনা। শুধু বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরা। তবে বলতেই হয় - বিচিত্র রঙ্গে ভরা এই বঙ্গ দেশ !! এখানে আকবর, শশাঙ্ক, মুরশিদ কুলি খাঁ, আলিবর্দি খাঁ এবং রবীন্দ্রনাথ সহ আমাদের অতীত গ্রামীন প্রান্তিক জনগোষ্টি সবাই অবদান রেখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, দুই বাংলার মানচিত্র আলাদা হয়নি শুধু,তার আসল দিন টাই ই আলাদা হয়ে গেছে। এটা দুই বাংলার আবহমান বিতর্কের একটা বড় উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা একদিন পরে নববর্ষ উদযাপন করে। বাংলাদেশের একটি অংশ সেটাকেই সিঙ্গুলার হিসেবে ধরে নিয়েছে, যার পেছনে রয়েছে অতীত ধারাবাহিকতা,সেখান থেকে তারা সরে আসেননি। এটা সমালোচনার বিষয় নয়, এতে কারো ক্ষতি নেই ।তবে এর কারন অনুসন্ধানে যাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা স্রেফ উৎসব আর আচারের মাঝে দোলাচল । বাংলা সন-তারিখের এই অসামঞ্জস্যের ফলে একই ভাষাভাষী ও বঙ্গাব্দের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, বসন্ত, বৈশাখ উদযাপন হয় ভিন্ন ভিন্ন দিনে। যার কারণে এই অত্যাধুনিক যুগেও বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি। আমাদের সংস্কৃতি সর্বজনীন, কিন্তু তার নির্ঘণ্ট সংকীর্ণতায় আবদ্ধ। এর জন্যে আমাদের পণ্ডিতরা দায়ী, নাকি পশিম বঙ্গের পন্ডিত রা দায়ী ? এই বিচিত্র দৃশ্যপটের প্রসঙ্গ কি আবহমান কাল ধরে চলবে ? পূজা-পার্বণের সঙ্গে চান্দ্র মাসের বেশ সামঞ্জস্য রয়েছে। আর সৌর মাস ঋতুভিত্তিক চাষাবাদের জন্য সহায়ক।বাংলা বছর আরম্ভ হওয়ার বেশ কিছু দিন আগে থাকতেই নানা ধরনের পাঁজি এসে যায়। সাধারণভাবে জন্ম এবং মৃত্যু ছাড়া লোকজীবনের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান করতে গেলেই ধর্মপ্রাণ মানুষ পঞ্জিকার সাহায্য গ্রহণ করেন। অন্নপ্রাশন, পইতে, বিয়ে, সাধ শ্রাদ্ধ, ভিটেপুজো, গৃহপ্রবেশ, পুকুর খনন ইত্যাদির মতো যাবতীয় কাজের ‘সু-সময়’ খুঁজতে শরণ নিতে হয় ‘পঞ্জিকা’র। বারবেলা, কালবেলা , শুভ অশুভ বিজ্ঞানে নেই, আছে বিশ্বাসে। তাদের বৈরিতা চিরন্তন । বাংলাদেশে সরকারী সব কিছুতে বিশ্বাস প্রবল হলেও , নববর্ষ নিয়ে তারা মনে হয় বিশ্বাস কে পেছনে ফেলে এগিয়েছে। তবে এতে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছেন ভারতের এক বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী , যার কারনে পুরো বাংলাদেশ একদিন এগিয়ে এসেছে , কারন টা সহজে অনুমেয়। ১৯৫২ সালে জ্যোতিপদার্থ র্বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা সর্বভারতে পঞ্জিকা সংস্কারের প্রস্তাব করেন। আমাদের জানা দরকার মেঘনাদ সাহা বাংলাদেশের ঢাকার সাভারের সন্তান । তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে একটি তত্বের প্রতিষ্টাতা - যার জন্ম এই মাটিতেই । তার অধিগত বিষয় ছিল পরমানু বিজ্ঞান,আয়ন মন্ডল,বন্যা প্রতিরোধ, নদী পরিকাল্পনা ইত্যাদি। সত্যেন বোস ( বোস -আইনষ্টাইন) ও প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবীসের সহপাঠি । দুই মহান বাঙালী মনীষি আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের ছাত্র । ধর্মীয় মতাদর্শে নিরীশ্বরবাদী। ড.মেঘনাদ সাহা বাংলা পঞ্জিকার বিজ্ঞানসম্মত সংস্কার করেন যা বাংলাদেশে গৃহীত হয়। পরবর্তীকালে ভারত সরকার ড. সাহার প্রস্তাবের কিছু সংশোধন করে এস. পি. পাণ্ডে কমিটি ১৪ই এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ নির্দিষ্ট করে দেন। কিন্তু পশ্চিমবাংলায় এই জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্মত সংস্কার এখনও স্থির হয়নি ।ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত পাণ্ডে শীর্ষক কমিটির রিপোর্টে বলা হয় “The Year shall start with the month of vaisaka when the sun enters niranayana mesa rasi which will be 14th April of the Gregorian calendar. (Indian Journal of History of sciences 39.4(2004) 519-534) । ঢাকার বাংলা একাডেমী ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি পঞ্জিকা-সংস্কার কমিটি গঠন করে। এ কমিটি মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. সাহার সংস্কার প্রস্তাবের মর্মানুযায়ীই বাংলাদেশে বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারের প্রস্তাব করে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র প্রতি মাস ৩০ দিনে গণ্য করা হবে এবং যে বছরে লিপ-ইয়ার বা অধিবর্ষ হবে সে বছরে চৈত্র মাস হবে ৩১ দিনে। আশির দশকে বাংলা একাডেমী কর্তৃক একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারের আরো উন্নতি সাধন করা হয়। তাতে বলা হয়, মাসের দিন নির্ধারণের পূর্বোক্ত পদ্ধতি বলবৎ থাকবে। তবে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অধিবর্ষে যে বাংলা বছরে ফাল্গুন মাস পড়বে সেই বাংলার বছরকে অধিবর্ষ গণ্য করা হবে। অধিবর্ষে চৈত্র মাসের পরিবর্তে ফাল্গুন মাসে ৩১ দিন হবে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তন হবে। বাংলা একাডেমী প্রবর্তিত বাংলা সনের এ সংস্কার সব সরকার গ্রহণ করেছে এবং এখন তা সারাদেশে সরকারিভাবে চালু রয়েছে। ড সাহার এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা সন চালুর ওপর বঙ্গবন্ধুর সরকার গুরুত্ব দেন। অবশেষে ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে পূর্বোক্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির নির্দেশ জারি হয়। কিন্তু লিপইয়ারসহ অন্যান্য অস্পষ্টতা ও জটিলতা থাকায় ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমির ‘বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি’ দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বাংলা মাস ও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে গ্রামবাংলার মানুষের সম্পৃক্ততার কথা বিবেচনায় নিয়ে শহীদুল্লাহ কমিটির প্রস্তাবের অনুসমর্থনে গ্রেগরিয় ক্যালেন্ডারের ১৪ই এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৫৪ সালের ১৪ই এপ্রিল (১৩৬১ বঙ্গাব্দ) যুক্তফ্রন্ট সরকার নববর্ষ উদযাপনে প্রথম সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। যা বাংলাদেশে আজও বর্তমান।
মনে করা হয়, পশ্চিমবঙ্গে ৪-৫টি বৃহৎ পঞ্জিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্বার্থের কাছে জিম্মি পশ্চিমবঙ্গ সরকার আপোষ করায় সংস্কারকৃত পঞ্জিকাটি পশ্চিমবঙ্গে গৃহীত হতে পারেনি। সেই পঞ্জিকা এখনো প্রাচীন অবস্থায় আছে এবং দ্বৈবজ্ঞদের রহস্যময় ও গোপন পদ্ধতিতে নির্মিত পঞ্জিকাকেই ব্যবহার করে চলেছে।(সংকলিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×