পবিত্রতার সংজ্ঞা কি ?
দেহ কি পবিত্র ? সে তো পচন শীল। রিসাইকেল আইটেম। তার যা কিছু আছে রক্ত, কফ,মাংশ, মজ্জা, মল মুত্র- এমন কিছুই তো নেই যার মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ আছে ? যে কোন মুহূর্তে কোন জানান না দিয়েই কোন না কোন কোষ সমুহ বন্ধ করে দিতে পারে তার নিত্য কর্ম । ছন্দ পতন হতে পারে সেই অর্কেস্ট্রার কম্পোজিশনে । অযুত লক্ষ অনু পরমানু কোষের মাঝে যে সিনক্রনাইজেশন, একে অপরকে বলছে 'মে আই হেল্প ইউ' - পরক্ষনেই তারা বন্ধ দিয়ে পারে সে সৌজন্যতার আদান প্রধান। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে বলেছেন - 'আমার এ ঘর বহু যতন করে/ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে'। সেই দেহ, তাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করি। কিন্তু তার সাথে পবিত্রতার সম্পর্ক কি ?
মন কি পবিত্র ? তুমি মনের বাইরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতো ? প্রতি মুহূর্তে, প্রতি ক্ষনে তার মাঝে অবিরাম বিপুল ভাবনা, ঘটনাপঞ্জী, রাশি রাশি অতীত - অবয়ব নিচ্ছে। সেই সচিত্র অতীত আবার বিলুপ্ত হচ্ছে নিমিষেই। ছোট একটা দেহের ভিতর বিপুল তরঙ্গের জল রাশির মতো ভাবনার চিত্র গুলোর ফেনিল উচ্ছ্বাস । যার উপর তোমার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। তোমাকেই বরং নিয়ন্ত্রন করছে সেই ভাবনা রাশি । তারা তোমাকে অনুরক্ত করছে, ক্ষুদ্ধ করছে, আসক্ত করছে,অবশ করছে - তোমার বর্তমান থেকে তোমাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে হ্যালুসিনেশন বা অলীক প্রত্যক্ষ এর জগতে। পরাবাস্তবতার মাঝে কাটছে তোমার জীবনের অমুল্য সময় গুলো । যদি এর বিপরীত টা করো । তুমি সেই লক্ষ অযুত ক্রমাগত নিয়ন্ত্রনহীন ভাবনা, ছবিগুলো কে জাজ(বিচার) না করো। তুমি শুধু দূরে দাঁড়িয়ে দেখো। সেসব ভাবনার উদয় আর বিলয়ের মাঝখানে তুমি তুমি শুধু রেসপন্স করো, কোন রিয়েক্ট না করো । তাহলে দেখবে সেসব তোমাকে আর নিয়ন্ত্রন করছে না, তুমি তার পুতুল নও। তোমার নিয়ন্ত্রন তাদের হাতে নেই। দাসত্ব থেকে তোমার মুক্তি সুচিত তার সাথে সাথে। ফলে, সে ভাল মন্দ, সুন্দর কুৎসিত, পবিত্র অপবিত্র - এ রকম কোন ইমেজ(প্রতিরূপ) তৈরি করছে না। তাহলে মনও পবিত্র বা অপবিত্র কিছুই নয় । সে একটা মিরর(আয়না) । তার সব কিছুই ক্ষনস্থায়ী, ঘন অন্ধকার এভিন্যু তে বিদ্যুৎ চমকের মতো - মমেন্ট্যারী । অতীতেই তার বসবাস। সে যখন তোমাকে সেখানে সংযুক্ত করতে পারবে না - তার অর্থ দাঁড়াবে তোমার ভেতরটা সজাগ হয়েছে। তুমি তখন অবসার্ভার,তুমি তোমাকে চিনেছ । মনেও তাহলে পবিত্র বলে কিছুই নেই, তেমনি অপবিত্র বলেও কিছু নেই । এই 'পবিত্র' ভাবনার মুলে ধর্ম, তার পুরোহিত, তার পুরুষ । পবিত্র অপবিত্র না থাকলে ধর্ম গুরুর ব্যবসা থাকে না। সেটা তার একটা অনুপম হাতিয়ার । তার সাথে ফিউশন হয়েছে পাপবোধ । সেটাই পন্য । পুরোহিত বা প্রিষ্ট বা ধর্ম গুরুর কাজ সে পন্য বাজারজাত করা। তার কোম্পানিকে দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচানো । নারী সেখানে বড় একটা ফ্যক্টর । সে নারী সকল পাপের উৎস , সে ঋতুমতী হয়। সে অপবিত্র, তাই উপসনালয়ে সে নিষিদ্ধ । নারী নিজেই সেই অভিধাকে গ্রহন করেছে। নিজেই নিজের প্রকৃতিকে, সৌন্দর্য কে, সৃজন ক্ষমতার পাপবিদ্ধ করাকে , স্বাগত জানিয়েছে - সেই 'পবিত্র' বানী কে মেনে নিয়ে। পুরুষের ধর্মের অসদাচরণকে আলিঙ্গন করে । পুরুষের
ধর্ম তাকে করে তুলেছে নন-ফাংশনাল। গনিকালয় আর আপন শয্যা - সবখানেই একই পবিত্রতা বোধের অনুবাদ পুরুষের মাঝে। এই বোধের গ্রাসে অবরুদ্ধ মানুষের মাঝে জন্ম নিয়েছে, ভেতরের পরিচর্যার প্রতি অনীহা। বাইর কে নিয়েই সে সদা বিব্রত। তার বাইরের সাজ গোঁজ, তার দেখানো পনা, তারা আচার অনুষ্টান, তার প্রানান্তকর শো ডাউন । পরিচ্ছনতা বোধের সাথে 'পবিত্র'তা কে ট্যাগ । বিজ্ঞানের সাথে বিকারের সেতুবন্ধন। ফলে মানুষ হয়ে উঠেছে আচার নিষ্ট । বিপুল আচারের মাঝে তলিয়ে গেছে যা কিছু শুভ, যা কিছু সম্ভাবনাময়, অনুসন্ধান যোগ্য । তারই কন্সিকয়েন্স অপরিণামদর্শী জীবন । পরিনামে, মানুষ তার মনকে পরিচর্যা থেকে ক্রমে দূরে চলে এসে শরীর সর্বস্ব একটি জীবন কে শ্রেষ্ট বলে মনোনীত করেছে।
( ভাবনার সুত্রধার - গৌতম বুদ্ধ)
১০/০৫/২০১৭- ২৬৪০ বুদ্ধ জয়ন্তী