যে মানুষটা আজীবন ভালবেসেছেন বাংলার মাটি বাংলার জল, পদ্মার জল বিধৌত সিক্ত মাটির কাছে কান পেতেছিলেন, ভালবেসেছিলেন সেই মাটি মানুষকে, শুধু কবিতা আর গান দিয়ে নয় এমনকি আপন পুত্রকে বিদেশে কৃষি কাজ শিখিয়ে এনে - গরীব কৃষকের চাষাবাদে যাতে অজ্ঞতা মুক্তি ঘটে । তাঁর সে সব কল্যানকামিতা , তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় গোঁড়ামীর প্রতি যার ছিল উত্থিত তর্জনী, মানুষের শুভ বোধ জাগানোর জন্যে যার ছিল আজীবন সাধনা - তাঁর কবিতায়, গানে,প্রবন্ধে, চিত্রকলায় - বহুধা বিস্তৃত সৃষ্টি সম্ভারে । আজ সেই মানুষটার জন্মদিন । পঁচিশে বৈশাখ । সংগত কারনেই বহু পুরনো অভিপ্রায় বার বার প্রকাশ করার প্রয়োজন আসে। হয়তো বলতে হবে বার বার ।
তাঁর গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত না হলে কিছুই আসতো যেতো না তাঁর, কনা মাত্র ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না সেই বিশাল সৃষ্টি সম্ভারের - সমগ্র বিশ্বের অনুরাগীদের কাছে। যারা তাঁকে চিনেছে, বিশ্বব্যাপী, যারা তাঁর গানে কবিতায় এখনও বিশ্রাম খোঁজে, তাঁরা তাঁকে এ মতই রেখে দেবে। সেই বিচিত্রগামী মানুষটার আজ জন্ম দিন। যার সত্যিকার অর্থে কোন ধর্ম ছিল না, ছিল না দেশ কালের প্রতি ক্ষুদ্রতম মোহ । তাঁকে এখনও হিন্দু বানিয়ে চলছে এক শ্রেনীর রাজনীতির কীটদষ্ট মানুষ । নানান অভিধায় চলছে তাদের স্বেচ্ছায়জিত মুখাগ্নি । সেখানেই প্রমাণিত হয়, শত বর্ষ পরেও ফুলে ফলে পাতায় সজীব এই বিশাল বিটপী ।
পূর্ব বঙ্গের প্রতি তাঁর শুধু রক্তের টান ছিল না, শুধু কর্মের টান ছিল না, ছিল তার শ্যামলিমার প্রতি শিশুর মতো মুগ্ধতা । তাই এখানেই রচিত হয়েছিল সকল উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি সম্ভার।
তিনি কখনো এই মাটি ও মানুষের অকল্যান হবে সে চিন্তা করেন নি তাঁর কোন কথায়,চিন্তায়, লেখায় । তাই তিনি চান নি বাংলা দ্বিধাবিভক্ত হোক , ,তিনি চান নি ইংরেজ দের কূট কৌশলের কাছে বাঙালী পরাজিত হোক । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার লগ্নে সে সময়ের বিরুধিতাকারী দের সাথে তিনি কখনো একীভুত হন নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুচনার অব্যবহিত পরে ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে তিনি ঢাকা আসেন এবং কার্জন হলে ১০ ফেব্রুয়ারি দি মিনিং অফ আর্ট এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি দি বিগ এ্যান্ড দি কমপ্লেক্স বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিনটি হল থেকে তাঁকে সংবর্ধণা জানানোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কেবল মুসলিম হলের সংবর্ধণা সভায় যোগদান করতে পেরেছিলেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা তথা বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা মুসলিম হল থেকেই এবং তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই। কিন্তু তাঁর নামে সেই পুরনো মিথ্যাচার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সেই ৪৭ এর প্রেতাত্মা দের স্বেচ্ছাকৃত প্রনোধনায় । পাকিস্থান আমলে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের প্রতি, বাঙ্গালীর প্রতি ঋণ শোধে তাঁর পক্ষ হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আজ দৃশ্য পটের পরিবর্তন হলেও সে সময়কার মানুষদের একাংশের মানসিক সীমাবদ্ধতার কারনে এখনও চলছে একই ঘুনে ধরা ভাষায়, একই পয়ারে রবীন্দ্র বিরুধীতা । তিন তিনটা দেশের জাতীয় সঙ্গীত তাঁর লেখা থেকে উঠে এসেছে । কিন্তু বিশ্বের সচেতন মানুষ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত কে প্রশংসায় ধন্য করে, তার প্রধান কারন সেখানে উগ্র জাতিয়তাবাদ আব জিঙ্গো ইজমের ছিটে ফোঁটাও নেই, আছে শুধু ভালবাসা,মাটির প্রতি , প্রকৃতির প্রতি গভীর মমত্ব বোধ ।
শৈশব কাল থেকেই, যার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি সকল রকমের ক্ষুদ্রতাকে অতিক্রম করার প্রান শক্তি, সবার অধম, দীনের হতে দীন এর প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা, ধর্ম, গোত্র, বর্ণ জাত পাত ভুলে অন্তরের সব দরজা জানালা খুলে দেবার অপরিসীম প্রানশক্তি, তাঁর জন্মদিনে সেই কৃতজ্ঞতা'র ঋণটুকু স্মরণ করছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:২২