বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা অত্যন্ত প্রাচীন। তবে তা অবিচ্ছিন্ন নয়, কখনো গণতন্ত্রের স্বাদ এই ভূখণ্ডের মানুষ পেয়েছে, তারপর আবার সেই গণতন্ত্র অধরা থেকে গেছে, কিন্তু গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা এখানে চিরজীবী। সেই চিরঞ্জীব আকাঙ্খাই রাজনীতির মূল চালিকা-শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বার-বার।
বাংলায় গণতন্ত্রের সূচনা খ্রিষ্টীয় ৭৫০ সালে, পাল বংশের সূচনা-লগ্নে। তার প্রাক্কালে এখানে চলেছে দীর্ঘ মাৎস্যন্যায়। ইতিহাসে বর্ণিত আছে, “গৌড় বঙ্গ সমতটে তখন কোন রাজার আধিপত্য নাই। রাষ্ট্র ছিন্নভিন্ন, ক্ষত্রিয়, বণিক, ব্রাহ্মণ নাগরিক যে যার ঘরে সবাই রাজা। আজ যে রাজা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রভুত্ব দাবী করছে কাল তার কাটা মুণ্ডু ধূলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই নৈরাজ্যের নাম দেয়া হয়েছে 'মাৎস্যন্যায়'।”
প্রায় একশো বছর ধরে চললো এ-অরাজকতা। এমন গভীর অরাজকতা এর আগে কেউ দেখেনি। সকলেই রাজ-সিংহাসনে বসতে চায়। কেউ কাউকে মানে না। কোন রাজা নেই, রাজ্য নেই, শৃঙ্খলা নেই, ব্যবসা নেই, বাণিজ্য নেই, শিক্ষা-দীক্ষা কিছু নেই। বাহু-বলই একমাত্র বল। সমাজ ক্রমাগত ভূমি-নির্ভর হতে থাকলো। কৃষি নির্ভরতার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ হয়ে পড়লো গ্রাম কেন্দ্রিক। এ-দুর্ভাগা সময়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো।
এ-ই হচ্ছে সেই সময় যখন আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়লাম। একশ বছর কম সময় না। এই একশ বছরে সবাই যখন এগিয়ে গেলো, আমরা তখন হাজার বছর পিছিয়ে পড়লাম। আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। এই একশ বছরের উৎপীড়ন আর বিশৃঙ্খলায় ক্লান্ত হয়ে সবাই মিলে গোপালদেব নামে একজন প্রবীণ জ্ঞানী ব্যক্তিকে বাংলার সিংহাসনে বসালো। গোপালদেব কিন্তু রাজবংশীয় কেউ ছিলো না। নিতান্ত একজন সাধারন মানুষ, আমাদেরই মতো, কিন্তু বিচক্ষণ এবং দেশপ্রেমিক। তিনিই প্রতিষ্ঠা করলেন বিখ্যাত পাল বংশ। এই পাল বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় অষ্টম শতকের মধ্যভাগে এবং রাজত্ব করে একটানা প্রায় চারশো বছর।
পাল বংশের লোকেরা ছিলেন খাঁটি বাঙালি - তাঁদের আদি নিবাস ছিল বরেন্দ্র অঞ্চল। গোপালদেবের বিচক্ষণ শাসনে বাঙলায় শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হলো। এ-পালবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন গোপালের পুত্র ধর্মপাল। তাঁর সময়ে পৃথিবী জানতে পারে বাঙালি কী করতে পারে। তিনি প্রকৃত অর্থেই বাঙলা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন। আজকের জাতিরাষ্ট্রের যুগে সাম্রাজ্য খুব একটা ইতিবাচক শব্দ নয়, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা কথা বলছি অষ্টম শতাব্দীর। ধর্মপাল দিগ্ববিজয়ীর মতো রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। জয়পুর, পাঞ্জাব, আফগানিস্তানের কিছু অংশ এমনকি নেপালও জয় করেছিলেন। অর্থাৎ তখন গৌড় ছিলো বিশাল এক সাম্রাজ্যের কেন্দ্র। বিজিত রাজ্য বশ্যতা ও আনুগত্য স্বীকার করলে ধর্মপাল সেই রাজাকেই তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিতেন এবং সকলেই প্রায় স্বাধীন ভাবে রাজ্য চালনার অনুমতি পেতো। এখানে ধর্মপালের সূক্ষ্ম রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। কারণ গৌড়ে বসে নেপাল রাজ্য সামলানো সহজ কাজ নয়।
পাল আমলে বাঙলা ভাষা আর সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার ধর্মপালের সময়েই তৈরি হয়। এই সময় লেখা হয় প্রথম বাঙলা কাব্য - চর্যাপদ। ধর্মপালের মৃত্যুর পরে তাঁর সুযোগ্য পুত্র দেবপাল সিংহাসনে বসেন। দেবপালের সুশাসনে বাঙলা নতুন প্রান ফিরে পায়। দেবপালের ছিলো দুই সুযোগ্য মন্ত্রী - দর্ভপাণি আর কেদার মিশ্র। এ-তিন জনের বোঝাপড়া খুব ভালো ছিল। সাম্রাজ্য সম্প্রসারন আর অর্থনৈতিক উন্নতি চলতে থাকে হাতে-হাত ধরে। বাঙালী ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা দীক্ষায় ক্রমাগত অগ্রসর হতে থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ঘটতে থাকে। কূপমণ্ডূকতা কিংবা ভাগ্য নির্ভরতা থেকে বাঙালী বেরিয়ে আসে। বহু দূর দেশের সংস্পর্শ, বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং দুঃসাহসিক অভিযানের রোমাঞ্চ বাঙালী জীবনে এনে দেয় শক্তি, উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস।
খলিমপুরে তাম্রলিপির একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, “মাৎস্যন্যায় অবস্থার অবসানের জন্য 'প্রকৃতিপুঞ্জ' গোপালকে রাজক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল।” 'প্রকৃতিগণ' বলতে 'জনগন' বোঝায়। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, “এই চরম দুর্দশা হইতে মুক্তি লাভের জন্য বাঙালি জাতি যে রাজনৈতিক বিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়াছিল ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে।” জনগনের সার্বভৌমত্ব যদি গণতন্ত্রের মর্মবস্তু হয় তবে সম্ভবতঃ এশিয়ার ইতিহাসে জনগনের ক্ষমতার সূচনা ঘটে এ-পালবংশের উদ্ভবে।
বাংলার সুলতানি আমল থেকেও এমন আরও একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। ১৪৮৬ থেকে ১৪৯৩ পর্যন্ত চারজন হাবশি সুলতান বাংলায় রাজত্ব করে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ষড়যন্ত্র, হত্যা ও প্রজা-পীড়ন ছিলো হাবশি শাসনের বৈশিষ্ট্য। এই অরাজক পরিস্থিতিতে জনসমর্থন পুষ্ট হয়ে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ও ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। তাঁর জীবন শুরু হয় এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে রাখাল হিসাবে। এই আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রভুত উন্নতি হয়।
সুতরাং যতো সীমাবদ্ধই হোক না কেনো, আমাদের ইতিহাসে জনগনের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগের দৃষ্টান্ত আছে যা ব্যাপক অর্থে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটা সূচকও বটে। আমাদের জন্য গণতন্ত্র কোন অভিনব এবং দুর্লভ সম্পদ নয় যার একমাত্র উৎস পশ্চিমা দুনিয়া। কাজেই গনতন্ত্রের লক্ষ্যে আমাদের যে প্রয়াস এবং সংগ্রাম, তা শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নয়, বরং আমাদের গণতান্ত্রিক উৎসমূলে ফিরে যাবারও সংগ্রাম। প্রাচীন বাংলাতেও দেখা যাচ্ছে গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে-সাথে সমাজের সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নটাও যুক্ত হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক চর্চার সময়টাতেই জাতি আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়েছে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শিক ভিত্তি ছিল গণতন্ত্র। নতুন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে তার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অর্থাৎ সংবিধানের চার মূলনীতির একটি হিসেবে ঘোষণা করা হয় গণতন্ত্রকে। সে-অঙ্গীকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো টেকেনি বেশিদিন। মুক্তিযুদ্ধের মূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ গণতন্ত্রকে স্বীকৃতদায়ী সংবিধান পেয়েছিলো, আবার তাঁরই নেতৃত্বে গণতন্ত্র হারানোর আঘাত সইতে হয়েছে এদেশকে। বাহাত্তরের বিমুগ্ধ জনগন তিয়াত্তরেই বিপন্ন হতে শুরু করেছে। তিয়াত্তরের সংবিধানে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক অধিকার সীমিত করা হয়েছিলো। তারপরে এলো চুয়াত্তরের বিশেষ ক্ষমতা আইন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির বদলে পাকিস্তানি ভূত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতিকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপক্ষে যত অজুহাতই দেখানো করানো হোক না কেনো তা ছিল প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অ্যান্টি-থিসিস। যে কিংবদন্তীর মত সংক্ষিপ্ত সময়ে এই সংশোধনী পাশ করানো হয়েছিলো, তা সংসদকে একটি প্রহসনমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলো। রাষ্ট্র কাঠামোতে এই অবাঞ্ছিত পরিবর্তন সূচিত করার নেতৃত্ব এসেছিলো এমন একজন বড় মাপের ব্যক্তির কাছ থেকে, ইতিহাসে যাঁর স্থানটি নির্ধারিত হবার কথা ছিল গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসাবে।
এই গণতন্ত্র হরণের ধারা অব্যাহত থাকে '৯০ এর গণ-অভ্যুথান পর্যন্ত। এটা সত্যি যে জিয়াউইর রহমান বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন কিন্তু সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার পরিপন্থী ধারার পুনর্বাসনও শুরু করেছিলেন তিনি। এছাড়াও পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়ার চার বছরের সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছিলো। তারপর জেনারেল এরশাদও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে নিজের সাড়ে চার বছরের সামরিক শাসনকে বৈধ করে নিয়েছিলেন। এরশাদ আমলের অষ্টম সংশোধনী পর্যন্ত সংশোধনীগুলো শুধু গণতন্ত্র-বৈরীই নয়, এগুলো ছিল সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের যে-ইতিহাস, তার মূখ্য উপাদান রাজনৈতিক আদর্শ নয় (স্বভাবতঃই রাজনৈতিক দলও নয়), বরং সামন্ততান্ত্রিক ব্যক্তিবাদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বলতে বোঝায় শেখ মুজিব, জিয়া আর এরশাদ। ব্যক্তিতন্ত্রের কারণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান গড়েই উঠতে পারেনি। স্বাধীনতার পর আমাদের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের খাতায় কোন যোগ নেই, আছে কেবল বিয়োগ। আমাদের জমার খাতায় তো কিছু জমা পড়েইনি বরং সামান্য যেটুকু পুঁজি ছিলো সেটাও হয়েছে নিঃশেষিত। গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য যে-সকল প্রতিষ্ঠান অত্যাবশ্যক, যেমন গণতান্ত্রিক দল, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা ও পদ্ধতি, কার্যকর সংসদ, বলিষ্ঠ বিরোধীদল - কোনো কিছুই গড়ে ওঠেনি। উপরন্ত ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণীর প্রয়োজনে সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সবগুলোই হয়েছে দলিত ও মথিত।
৯০ এর গণ অভ্যুত্থান ছিলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার সংগঠিত প্রকাশ যা মূলতঃ ছাত্রদের লড়াইয়ের মাঝে মূর্ত হয়ে উঠেছিলো। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের বিপ্লবাত্মক 'দশ দফা' ছিল বিদ্যমান বিকৃত রাষ্ট্র কাঠামোকে একটা অধিকতর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক কাঠামো দিয়ে প্রতিস্থাপনের লড়াইয়ের ইশ্তেহার। চার নম্বর ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছিলো গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রনয়নের দাবী। দশ দফা শুধু ছাত্রদেরই দাবী ছিল না, বরং ছাত্ররাই হয়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর। তাই ছাত্রদের নেতৃত্ব দেশবাসী মেনে নিয়েছিলো।
তিন জোটের রূপরেখাতেও মূর্ত হয়েছিলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। সে-রূপরেখার প্রধান বক্তব্যগুলো ছিলোঃ সার্বভৌম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো, সিভিল সোসাইটি বিনির্মাণের পূর্বশর্ত যেমন স্বাধীন গণ মাধ্যম, জনগণের সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক সংবিধান অনুসারে প্রশাসন, অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখল নিষিদ্ধ করা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী সব কালাকানুন বাতিল করা ইত্যাদি।
কিন্তু আকাঙ্খিত গণতন্ত্রিক ব্যবস্থার কিছুই অর্জিত হয়নি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে একই ব্যবস্থা বহাল থেকেছে। শুধু জেনারেল এরশাদ চলে গিয়েছে আর যা যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। সরকার যে-রাষ্ট্রের ঘাড়ে চেপে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, সে-রাষ্ট্রের চরিত্রের কারণে যে কোনো শাসক জনগনের ইচ্ছা আর জবাবাদিহিতার বাইরে থেকে স্বৈরাচারী হবার রসদ পেয়ে যায়। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে রাষ্ট্রের প্রশ্ন তাই মুখ্য। এ-নিপীড়ক রাষ্ট্র কাঠামো আমরা টিকিয়ে রাখবো কিনা সেটাই হচ্ছে রাজনীতির বিবেচ্য বিষয়। সেকারনেই দশ দফার খুব সুস্পষ্ট ভাবে বিদ্যমান কাঠামোর ধ্বংস দাবী করা হয়েছিলো। এক শ্রেণী চায় পুরনো ব্যবস্থাটাই টিকে থাকুক, সে-ব্যবস্থার কাঠামোতেই কেবল ক্ষমতার হাত-বদল ঘটুক। নিপীড়ক রাষ্ট্র কাঠামো যেমন আছে তেমন রেখে, একটা নির্বাচন দিলেই বুঝি আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!
গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং সর্বপ্রধান কর্তব্য হওয়া উচিৎ ছিলো অবিলম্বে একটি সংবিধান সভা ডেকে রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক ভিত্তি ও কাঠামোর খোলনলচে বদলে দিয়ে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো প্রনয়ণ করা। আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনৈতিক ফয়সালার মৌলিক প্রশ্নকে দ্রুত ভোটের প্রশ্নে রুপান্তরিত করে ফেলা হলো। প্রশ্ন তোলা হলো সংবিধানিক ধারাবাহিকতার। আমরা ভুলে গেলাম যে, আমরা একটা গণ-অভ্যুত্থান করেছি!
আন্দোলনের শক্তিগুলো নিয়মতান্ত্রিক বৈধতা অর্জন করেছে জনগণের সমর্থনের মধ্যে দিয়ে। এরশাদ উৎখাতের মধ্য দিয়ে জনগণের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা আন্দোলনের শক্তিগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা ব্যক্তির সার্বভৌমত্বের বিজয়। আমরা তা বিস্মৃত হলাম। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে সুচতুর ভাবে নিপীড়ক কাঠামো অক্ষুন্ন রাখা হলো। শহীদের রক্তের দাগ না শুকাতেই নির্বাচনী হাওয়ায় ভাসতে শুরু করলো সবাই। গণ-অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক পরিণতি লাভ করতে দেয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে রাষ্ট্র-ক্ষমতার হাত বদল ঘটিয়ে বিজয়ী জনতার হাতে ক্ষমতা আসতে দেয়া হল না। রাজপথের অসামান্য বিজয়ের সাফল্য হাতছাড়া হয়ে গেল দ্রুতই। বেহাত হয়ে গেল আমাদের বিপ্লব। আমাদের আকাঙ্খিত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব।
(লেখাটি ইউ কে বেঙ্গলি তে ৮ নভেম্বর ২০১৩ প্রকাশিত। মুল লেখার লিঙ্ক ঃ Click This Link )