বত্রিশটি বছর পেরিয়ে এসেছি
পাড়িয়ে এসেছি অজস্র চোরাপথ, গলিপথ, রাজপথ, বুকের উদ্যান।
সহস্র না পাওয়ার মাঝে, হারিয়েছি শতাধিক
শখের লাটাই, ঘুড়ি, লাটিম
প্রিয় কানামাছি, ভৌ-দৌড়, খেলার মাঠ,
সহপাঠী, স্কুল মোড়ের চালতা গাছ
বিদেশী বাড়ির বাগান- লিচু চুরি
করোতোয়ায় আস্ত দুপুর ঝাপাঝাপি।
কানা বগার ঠাং খোড়া করে দেওয়া থেকে
তালপট্টির সাথে রোজ মারামারি,
এক আজন্ম দুরন্ত শৈশব।
হারিয়েছি কৈশরের উদ্দিপনা
উদ্দামতা, উদ্দেশ্য।
বেহায়া পাড়ার গলিপথ প্রথম চিনেছি
লাজ-শরমহীন পাড়ায় আমার রোজ আনাগোনা
ও পাড়ায় থাকতো আমার প্রেয়সি
লোকে তাকে লজ্জাহীন বলে ডাকে।
নিষিদ্ধ গন্ধমে অভিসিক্ত হতে হতে হয়েছি অভিশপ্ত
আঁকড়ে রাখতে পারিনি কিছুই,
ছেঁড়ে এসেছি মায়ের আঁচল, বাবার কাঁধ, দুধভাত।
যৌবনের বিষাক্ততায় হারিয়েছি ঠোঁট, শাড়ির ভাঁজ, নিষাক্ত প্রেম।
হারিয়েছি অনেক কিছুই
প্রথম সিগারেট, বাবার পকেট চুরি
মধুবনে সিনেমা, ইয়াকুবের সুন্দরী, ভিএমের রুপসী
হারিয়েছি বেড়ে ওঠা হাত
বন্ধুর কাঁধ, উৎসৃঙ্খলায় ভেসে যাওয়া।
হারিয়েছি মায়ের অনুযোগ, বাবার অভিযোগ
এখন আর কেউ কিছু বলে না
তবুও বাঁশ ঝাড় তলা যাওয়া মানা
ফুলবাড়ি মাঠ, শ্মশান ঘাট।
বত্রিশটি বছর পেরিয়ে এসেছি
কাঠাল তলা, ইছায়দহ ছাড়িয়ে এসেছি
সাবগ্রাম, বনানী, মাটিডালি
ছেলেমানুষী ভোলানো বাঁদুর তলা
শুরার আসর সুইপার পট্টি।
অজস্র চেনামুখ হারিয়েছি অচেনা বাঁকে
বুকের উপর ছুড়ি বসিয়েছে কেউ
কেউ লুকিয়ে পিঠের ভাজে,
এক একটি মুখের সৃতি বয়ে নিয়ে এসেছি
বুকের ওজন এখন বড্ড ভারী।
বত্রিশটি ঋতু পেরিয়ে এসেছি
চিনেছি ঋতুশ্রাবের রঙ,
সেই প্রথম ভুল, অজানা কুল
নিষিদ্ধ পাড়ায় জানাশোনা।
সাতমাথায় থেকেছি দিশাহীন
যেন উদ্ভ্রান্ত এক পথিক,
বউ বাজারের পথ ধরে
তোমার বাড়ির রাস্তায় হেঁটেছি বহুদিন
জেলখানার মোড়ে ও ফেলে এসেছি অনেকটা সময়,
জন্মস্থান চেলো পাড়ার প্রতিটি চোরা গলিতে
ফেলে এসেছি গায়ের গন্ধ।
বিত্রিসটি বসন্ত পেরিয়ে এসেছি,
এক জনমে হারিয়েছি সহস্র জন্ম
অজস্র না পাওয়া কে হারিয়েও থেকেছি অনড়।
তবু সবকিছু ছাপিয়ে কেবল তোমাকেই
হারানোর বেদনায় আর্তনাদ করছি।
এক জীবনে পরাজিত আমি
তবু সবকিছু ছাপিয়ে
কেবল তোমার কাছে পরাজয়ে হা-হুতাশ করছি।
এখন সামনে কেবল অজানা আকাঙ্খা
যেন কিছুই জানি না আমি
হারাতে হারাতে এভাবে হারিয়ে যাব আমিও একদিন
"তবু আজ আমার শুভ জন্মদিন। "
(১৫-ই ফেব্রুয়ারী)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২০