#আমি_ও_মা
সাল টা ছিল ২০০৬, আমার ইন্টার পরিক্ষার সময় আমি অসুস্থ হয়ে যাই।
আমার আম্মু তখন ঢাকা চলে আসেন।
তপন ভাইয়া দের বাসায় বসে দিন আর রাত নেই চলে আমার সেবা।
আম্মুর সাথে তখন লিটন খালাও ছিলেন।
জন্ডিস খুব ভালভাবেই আমাকে ভুগিয়েছিল।
এর পরেও আমি মাদারিপুর গিয়ে ভয়াবহ জ্বরে পরি।
একটা সময় হাই পাওয়ার এর এন্টিবায়েটিক দেয়া হয় আমাকে।
গরুকে বোধ হয় ওত বড় ইঞ্জেকশন দেয়না।
আম্মু সারারাত আর ঘুমাতেন না।
আমার পাশে বসেই থাকতেন।
একবার ঘুম ভেঙ্গে দেখি আম্মু আমাকে বলছে "কি হয়েছে বাবা! আমি পাশে আছি তো"।
আমি নাকি ঘুমের মাঝেই আবোল তাবোল কি কি বলছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম কয়টা বাজে?
আব্বু বললো প্রায় ৩ টা।
আব্বুও আমার পাশেই। শোয়া কিন্তু ঘুমাননি।
সেই সময় এন্টিবায়েটিক শেষ করে যখন ডাক্তার দেখাতে যাই, আমার চোখ লাল দেখে ডাক্তার ভয় পেয়ে যায়। যত দ্রুত ঢাকা যেতে বলেন।
এই রাতে টাকা কোথায় পাওয়া যায়!
আম্মু তার সোনা রেখে টাকা নিয়ে আমাকে ঢাকা নিয়ে আসে।
আমি আব্বু আর আম্মু।
যদিও ঢাকা এসে কোন সমস্যা হয়নি।
মামাদের দোকানে যে ডাক্তার ছিলেন তিনি অনেক ভাল ডাক্তার। তিনি সব রিপোর্ট আর প্রেস্ক্রিপশন দেখে বললেন, কোন সমস্যা নেই। তোমার চিকিৎসা হয়ে গেছে। হাই পাওয়ারের ঔষধ এর কারনে চোখ লাল হয়েছিল।
তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
আমার তেমন সমস্যা ছিল না, কয়েকটা পয়েন্টে হাল্কা ব্যাথা, সামান্য জ্বড় আর দুর্বল লাগে বললাম। টেট্রাসাইক্লিন বা কিছু একটা সাথে নাপা দিয়েছিলেন। আর বেশি বেশি খেলে দুর্বলতা কমে যাবে।
সব ঠিক ছিল, আমার সমস্যা হল পরের দিন। আমার জ্বর ছেরে দিল। শরীর ঘেমে ঠান্ডা হয়ে গেল।
আম্মু আমাকে ধরে আমার দেহ ঠান্ডা দেখেই ঘাবড়ে গেলেন।
আমাকে ডাকছেন, কাদছেন।
আমার যখন ঘুম ভাঙলো দেখি আম্মুর চোখে পানি। মামা মামী আর বাসার সবাই আমাকে ঘিরে রেখেছে। সবার চেহারায় উৎকন্ঠা।
আম্মু আমাদের মিডিয়া ছিলেন। আব্বুর কাছে কিছু চাইতে পারতাম না কেন যেন।
আম্মু সব আব্বু পর্যন্ত নিয়ে যেতেন।
আমি যখন ঢাকা আসতাম প্রায় সময় আম্মু কে দেখতাম কাদছে।
বিয়ে করেছি বউ হয়েছে,
আমি এখনো বাসায় গেলে আম্মু কে ধরে ঘুমাই। আমি, আম্মু, আব্বু, আর লতা দুপুরে ঘুমিয়েছি এইতো এপ্রিল মাসে।
আম্মুর এখন হাটতে অনেক সমস্যা, হাটতে পারেন না বললেই ভাল।
ওয়াশরুমে যান অনেক কষ্ট করে। সাধারনত খাটে বসেই খান। টেবিলে মাঝে মাঝে আসেন।
আব্বু যেন আম্মুর সব দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নিয়েছেন। আম্মুর ঔষধ কখন কি আছে নিজ দায়িত্বে খাওয়ান।
বাসায় কেউ না থাকলে খাবার গরম করে বা আম্মুকে খাওয়ানো আব্বুই করেন। বাসার কাজ করা যে পুরুষ নারী সবার দায়িত্ব তা আব্বু কে দেখেই শিখেছি।
আম্মু কে মুখ ফুটে কেন যেন ভালবাসি বলতে পারিনা। কিসের বাধা জানিনা।
কিন্তু আম্মুকে আমরা সবাই অনেক ভালবাসি।
ভালবাসি মা তোমায়।
অনেক অনেক বেশি।