পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এই শহরেই সবচেয়ে বেশি, এক বছরের বেশি, রইলাম । তাই ভাবলাম এই শহর সম্পর্কে কিছু লিখি। শহরটি তদানীন্তন বিহার, অধুনা ঝাড়খন্ড নামক ভারতীয় রাজ্যেরএকটি শিল্পাঞ্চল। প্রধান শিল্প ইস্পাত। ভারতের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠি টাটাদের ইস্পাত শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। গোটা শহরের আর্থ-সামাজিক ভিত্তি হলএই ইস্পাত কারখানা, যা শহরের কেন্দ্রস্থলেএক বিরাট জায়গা নিয়ে স্বমহিমায় অবস্থিত। প্রসঙ্গত বলে রাখিএটি আমার দেখা বৃহত্তম কারখানা। প্রথম যখন শুনি, যে আমায় জামশেদপুর আসতে হবে খানিকটা দমেই গিয়েছিলাম। আমার এই চাকরিতে এটাই প্রথম কাজ। তাই "বিহারের মত এঁদো জায়গা"তেও যেতেই হল। সেটা ছিল গেল বছর জানুয়ারী মাসের এক শনিবার। প্রথম ধাক্কা; স্টেশনে নেমেই চমকে গেলাম। এত পরিস্কার -পরিচ্ছন্ন স্টেশন শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ল না। স্টেশন থেকে আমার সংস্থার অতিথিনিবাস অটোতে চেপে যাবার সময় আরএকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে,এখানকার রাস্তা গুলো বেশ চওড়া এবং একটুও ভাঙাচোরা নয়। ভাবলাম এ কোন দেশেএসে হাজির হলাম,এ তো ভারত নয়! সর্বোপরিএ তো "বিহার" হতে পারে না! পরে জেনেছি, ভারতেএকমাত্র জামশেদপুরেই কোনো পৌরসভা নেই। এখানের নাগরিক সুবিধা দেয় একটি টাটা সংস্থা - "জুসকো" (জামশেদপুর ইউটিলিটি সার্ভিসেস কোম্পানী)। শুধু তাই নয়এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে "টাটা পাওয়ার"। তাই জঞ্জাল সাফ করা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই পেশাদারী দক্ষতার ছাপ সুস্পষ্ট। পার্থক্যটা চোখে লাগে যদি জুসকোএলাকার বাইরের মানগো বা আদিত্যপুরে যাওয়া যায়। সেখানে ছবিটা পুরোপুরি "বিহারের"। ভাঙা রাস্তা, জল ও বিদ্যুৎ অপ্রতুল - পরিচিত দৃশ্য।
জামশেদপুরের দ্রষ্টব্য স্থান গুলি হল দলমা পাহাড়, ডিমনা লেক ও জুবিলি উদ্যান। দলমা পাহাড় বিখ্যাত হল তার "দামাল" হাতিদের জন্য। এই হাতি গুলো বিহার, ঝাড়খন্ড ও পশ্চিম বাংলার এক বিরাট এলাকা জুড়ে প্রচুর দৌরাত্ম্য করে। এই শৈলশ্রেনীতে ভারতের সর্ববৃহৎ হস্তি অভয়ারণ্য অবস্থিত।
ডিমনা লেক এই শৈলশ্রেনীর দক্ষিন প্রান্তে তিনটি ছোট পাহাড়ের মাঝে কৃত্রিম জলাশয় - সৌজন্যে TISCO। এই জলাধার পুরো শহরের TISCOএলাকার জল সরবরাহ করে। এখানে মূলত বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয়।এছাড়া সুবর্ণরেখা ও খড়কাই নদীর জলও খাল কেটে নিয়ে আসা হয়। লেকটি শহর থেকে একটু দুরে শহরের উত্তর - পশ্চিম কোণে অবস্থিত। তাই বেশ নিরিবিলি। পিকনিক ও প্রেমের আদর্শ জায়গা
। জুবিলি উদ্যান শহরের কেন্দ্রস্থলে বিরাজমান। এটি জামশেটজি টাটার জন্ম শতবর্ষে বানানো হয়েছিল। কারা বানিয়েছিল তা আন্দাজ করার জন্য কোনো পুরষ্কার নেই।
শহরের তিনদিক ঘিরে আছে সুবর্ণরেখা ও খড়কাই নদী। সুবর্ণরেখা উত্তর ও পূর্বদিক এবং পশ্চিম দিকের দায়িত্বে আছে খড়কাই। খড়কাই ভারতের দূর্লভ নদীগুলির মধ্যে একটি । এর দূর্লভ হবার কারণ হল এটি দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০০৬ সকাল ৯:১৪