অ্যান্টিকুইটিজ অব ঢাকা ঢাকার ইতিহাস চর্চার জন্য চার্লস ডয়লীর ‘অ্যান্টিকুইটিজ অব ঢাকা’ গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এটি ঢাকা বিষয়ক ছবির ফোলিয়ো। কিন্তু এতে আছে ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কিত একটি নাতিদীর্ঘ বিবরণ। এ কারণে, অ্যান্টিকুইটিজকে (Antiquities of Dacca) অনেকে বই হিসেবেও উল্লেখ করেন।
১৮০৮ থেকে ১৮১১ পর্যন্ত ডয়লি ছিলেন ঢাকার কালেক্টর। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি বেশকিছু ড্রইং করেন এবং তা ফোলিয়ো আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। এক হিসেবে ‘অ্যান্টিকুইটিজ’ চারজনের পরিশ্রমের ফল। মূল ছবি ডয়লীর। ঢাকা বিষয়ক বিবরণ জেমস অ্যাটকিনসনের ও ভিগনেট চিনারির, আর এনগ্রেভার ল্যান্ডসিয়ার।
প্রথম ফোলিয়োটি প্রকাশিত হয় ১৮১৪ সালে, পরবর্তীগুলি ১৮১৭, ১৮২৬ ও ১৮২৭ সালে। প্রসপেক্টাসে যদিও উল্লেখ করা হয়েছিল ছয়টি ফোলিয়ো প্রকাশিত হবে কিন্তু, এখন পর্যন্ত উপর্যুক্ত চারটি ফোলিয়োরই সন্ধান পাওয়া গেছে। হয়ত, প্রস্তাবিত বাকি দুটি ফোলিয়ো প্রকাশিত হয় নি।
আসুন, প্রায় ২০০ বছর আগে ঢাকা শহরের কিরুপ অবস্থা ছিলো তা ডয়লীর আকা কিছু ছবির মাধ্যমে দেখে আসি।
Title: View of a Mosque on the Booragunga branch of the Ganges (Satgumbuz Masjid) ডঃ জেমস অ্যাটকিনসনকে এই ছবিটি ভেনিসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। তিনি এর গঠনের নিপুণতা, স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য, আভিজাত্য এবং সহজতার সমন্বয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন কাল, আগ্রাসী জঙ্গল এবং বিরুদ্ধ প্রকৃতি যদিও স্থাপনাটির যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে, তথাপি একটি আধ্যাত্তিক স্নিগ্ধ গাম্ভীর্য এটাকে ঘিরে রয়েছে।
Title: Mosque of Syuff Khan এটি প্রথমে একটি হিন্দু মন্দির হিসেবে নকশা করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটাকে মসজিদ হিসেবে তৈরী এবং ব্যবহার করা হয়। মসজিদটির তিনটি গম্বুজ ছিল; ১৮১১ সালে বর্ষা মৌসুমে এটার ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। অ্যাটকিনসনের পর্যবেক্ষণ অনুসারে ঢাকার জলবায়ু ঝাড়-জঙ্গল বৃদ্ধির দ্রুত সহায়ক; তিনি বলেছেন এরই ফলশ্রুতিতে পরিত্যক্ত মসজিদটি দ্রুত পর্ণরাজিতে আবৃত হয়ে গিয়েছে।
Title: Remains of a Bridge near the Tantee Bazarএই ব্রীজটি তাঁতী পাড়ার কাছে একটি খালের উপর ছিল। অ্যাটকিনসন লিখেছেন যে অনুকূল পরিবেশে খালটি জলজ আগাছায় এতটাই পূর্ণ হয়ে গিয়েছে যে এমনকি ছোট নৌকাকেও খালটি পাড় হতে বেগ পেতে হয়। ঢাকার এই অঞ্চলটি নৌকা তৈরী এবং কাঠের কাজের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল।
Title: Paugla Pool with Part of Dacca in the Extreme Distance ১৭শ সালের দিকে ঢাকা-নারায়নগঞ্জের মাঝামাঝি কদমতলীর কাছে নির্মিত পাগলা পুল ছিল একটি বিখ্যাত স্থাপনা, কিন্তু ডি’ওয়লি এবং অ্যাটকিনসন যখন দেখেছেন তখন এটা ধ্বংসপ্রাপ্ত। অ্যাটকিনসন বর্ণনা করেছেন হাল্কা আলো-আধারীর মাঝে দূর থেকে ঢাকা শহর দৃষ্টিগোচর হয়। সূর্যালোকের আংশিক কিরণ যখন উদ্দীপ্ত,বিস্তৃত প্রান্তর এবং পুরোভাগের অন্ধকারময় বৃক্ষ-পত্ররাজি এবং সেতু এর রোমান্টিক ধ্বংসাবশেষ বিপরীতে ইউরোপীয় অধিবাসীদের সাদা ঘরগুলো সুদূরে জ্বলজ্বলে ভাবে দীপ্তমান।
Title: The Great Kuttra (Bara Katra) বড় কাটরা বুড়িগঙ্গার পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। আবুল-কাসিম ১৬৬৪ সালে ভ্রমণকারী এবং ব্যবসায়ীদের বিনামূল্যে আশ্রয় অথবা সরাইখানার সুবিধা প্রদানের জন্য এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। কাটরা শব্দটি সম্ভবত আরবী থেকে উদ্ভূত, যা গম্বুজ হিসেবে ব্যবহৃত; ফার্সী এবং সংস্কৃতেও অনুরূপ শব্দ আছে।
স্থাপনাটির সম্মুখে বালিতে অর্ধেক ঢেকে থাকা একটি বিশাল কামান ছিল যা বর্ষায় পানিতে ডুবে যেত। অ্যাটকিনসন বড় কাটরা সম্বন্ধে বলেছেন, এটি জমকালো এবং সুন্দর স্থাপত্যের একটি বিস্ময়কর নিদর্শন।
Tittle: Small Kutra with enclosed tomb'ছোট কাটারা শায়েস্তা খানের আমলে তৈরি একটি ইমারত। আনুমানিক ১৬৬৩ - ১৬৬৪ সালের দিকে এ ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং তা ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল। এটির অবস্থান ছিল বড় কাটারার পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ইমারতটি দেখতে অনেকটা বড় কাটারার মত হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটারার চেয়ে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নাম হয়েছিল ছোট কাটারা।
Tittle: Ruined north gateway of the Great Kutra অ্যাটকিনসন লিখেছেন দুর্গাভ্যন্তরে একসময় অনেক দালান ছিল, কিন্তু এখন সেখানে দূর্গপ্রাচীরের অবশিষ্টাংশই শুধুমাত্র বিদ্যমান। প্রাচীরগাত্রে প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত ছিদ্রগুলো তখনও ছিল। শহরের কারাগারটি এখানেই অবস্থিত। মুঘল আমলে দুর্গাভ্যন্তরে টাকশাল ছিল যেটি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করেছে; পরবর্তীতে তা বিলুপ্ত হয়। বামেই মুঘল স্থাপত্যের অসাধারণ নিদর্শন বড় কাটারার প্রবেশ পথ যা সরাইখানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। ডান দিকে চকের হুসেইনি দালান মসজিদ দৃশ্যমান।
Title: Bastion of the Lal Bagh ১৬৭৭ সালে সম্রাট আওরংজেবের পুত্র মুহাম্মাদ আযম এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন; কিন্তু এর নির্মাণ শেষ করতে পারেননি। এটি তিন তলা বিশিষ্ট স্থাপনা; এছাড়াও এখানে আছে পরী বিবির সমাধি এবং একটি মসজিদ।
Title: Ruins of Tungy Bridge উনিশ শতকে ঢাকায় বসবাসকারী ইংরেজদের কাছে শিকারের স্থান হিসেবে টংগী ব্রিজের আলাদা আবেদন ছিল। অ্যাটকিনসনের ভাষায়, যদিও ব্রীজটির ভগ্নদশা তথাপি এর সুস্পষ্ট নান্দনিক আকর্ষণ ঢাকার পুরাকীর্তির সঙ্কলণে আমাদের বিবেচনার জোর দাবীদার। এর বিশাল আকৃতি বটের শিকড় আর পত্র-পল্লবে চমৎকারভাবে মিশে গেছে।
Mosque in the Suburbs of Daccaঅ্যাটকিনসন বলেছেন, যদিও মসজিদটি চিত্রকর, স্থপতি এবং রুচিশীল ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিতে পড়ার অত্যন্ত উপযুক্ত, কিন্তু এটি সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে কিছুই জানা যায় না। ঢাকা থেকে টঙ্গী যাবার পথে এই মসজিদটি অবস্থিত। স্থাপনাটি বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালায় ঢেকে গেছে, শিকড়গুলো মসজিদটিকে যেন গভীরভাবে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে রেখেছে।
Part of Dacca from the Douillac Nulla ধোলাই খালের (Douillac Nulla) পশ্চিম তীর থেকে ঢাকার একটি সাধারণ ছবি। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে নগর রক্ষার পরিখা নির্মাণ ও জলপথ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ঢাকার প্রথম সুবেদার ইসলাম খান ধোলাই খাল খনন করিয়েছিলেন।
Title: Mosque on the Mug-Bazar road, Dacca অ্যাটকিনসন এটাকে একটি সাম্প্রতিক স্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন এর বিশাল অথচ সাধারণ আকৃতির বিপরীতে কারুকার্যময় প্রান্ত এবং কৃশ মিনারগুলো খুবই রুচিশীলভাবে মানানসই।
Title: Part of the Interior of the City of Dacca
ছবিটির বর্ণনায় লেখা আছে যে স্থাপত্যটি বর্ষায় বন্যার পানির উচ্চতা পরিমাপের জন্য নির্মিত হয়েছিল; অ্যাটকিনসন অবশ্য এ ব্যাপারে সন্ধিহান ছিলেন।
পোস্ট পড়তে মন না চাইলে এই ভিডিওটা দেখে নিন।
তথ্যসুত্রঃ click this link
click this link
click this link
click this link
বেশির ভাগ বর্ননা শ্রদ্ধেয় আসফি আজাদ ভাইয়ের পোস্ট থেকে কপি করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৫