somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি ...

১১ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। পাখিদের ঘরে ফেরার পালা। কিন্তু পাখিরা আজ যেন অনেক স্থির। যেন কোথাও কিছু হতে চলেছে! আকাশের কোণে এক খন্ড মেঘ ও ভাসছে।
সময় টা আজ থেকে একশত দুই বছর আগে। এপ্রিলের শেষ সন্ধ্যা। আঠারো বছরের হাত তুলে কপালের উপর লেপ্টে থাকা মাটি আর ঘাম সরাতে গিয়েও সরায় না। এই মাটিইতো মা। আর এই ঘামই মায়ের চরণ ধোয়ার জল।
কিশোর চোখ তুলে তাকায় পাশে। একটু দূরে মাটি তে চুপচাপ শুয়ে আরেকজন। কিশোর ভালো করে তাকায়। পাথরের মত মুখ। গ্রাফাইটের চোখে এক খন্ড হীরক। ওখানে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। কিশোর মনে মনে হীরক চোখে সালাম ঠুকে। তারপর সামনে তাকায়। মোজাফফরপুরের ইউরোপিয়ান ক্লাবের বিশাল গেটের ভেতরে আলোর রোশনাই। কোন প্রহরী দেখা যায় না। কিন্তু জানে, আড়ালে সশস্ত্র অবস্থান তাদের।
কিশোরের মন উদাস হয় হয়ত! মনে পড়ে, সেই কোমল হাসি আর কঠোর চোখ।বাবু সত্যেন্দ্রনাথ বসু। যার চোখে কিশোর বিপ্লব দেখেছে। বিপ্লব শিখেছে। সাথে চারপাশের সব চিত্র। যেখানে অহরহ রচিত হয়েছে নির্যাতনের নির্মমতা। ব্রিটিশ অপশাসন আর শোষণে জর্জরিত ভূ-মায়ের চিৎকার। কিশোর মায়ের জল মুছে দিতে চায়। শকুন তাড়িয়ে মুক্ত করতে চায় আকাশ।
বিদ্রোহ করতে থাকে ক্রমাগত কিশোর মন। কেবল চাই স্বাধীনতা। স্বাধীনতা পেতে চাই সশস্ত্র সংগ্রাম। কিশোর সেই পথই বেছে নেয়। জড়িয়ে যায় মুক্তিকামী সংগঠন যুগান্তরের সাথে। ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠে স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা।

কিশোর বাস্তবে ফিরে আসে। ক্লাব গেট আর রোশনাই আগের মতই স্থির। ভেতরে বিলেতি মদের স্রোত।
মৃদু ডাকে সাড়া দিয়ে পাশে তাকায়। চোখ রাখে হীরক আগুন চোখে। ইশারায় জানিয়ে দেয় সদা প্রস্তুত। থাকবেইনা বা কেন! তিন বছর ধরে পুলিশ স্টেশন আর সরকারি অফিস গুলোয় সফল হামলা চালিয়ে চালিয়ে হাত পেকে গেছে তার।
সময় হয়ে এসেছে।আঁধার ঘনিয়ে রাত নেমে আসছে। এখনই হয়তো বেরিয়ে আসবে কলকাতা প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। এই অপারেশান মূলত তাদের দুজনের। প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটকে মিশিয়ে দিতে হবে ধূলার সাথে।
হঠাৎ শব্দ করে উঠে হীরক আগুন চোখ। চমকে সামনে তাকায় কিশোর। গেটটা খুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তারপর বেরিয়ে আসে সেই গাড়িটা। যার জন্য অপেক্ষা। কিশোর হুংকার ছাড়ে। সাথে সাথে দুইজন যোদ্ধার হাত থেকে ছুঁড়ে যায় বোমা। বিস্ফোরিত হয় গাড়ি। ভাঙা কাঁচ ও ধাতব শব্দের সাথে মিশে যায় মৃতদের রেখে যাওয়া চিৎকার।

কিন্তু বড় ভুল হয়ে যায়। প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট নয়, সেই গাড়ির আরোহী ছিলো ব্রিটিশ ব্যারিস্টার প্রিঙলে কেনেডি'র স্ত্রী ও মেয়ে।
কিছু করার নেই আর। দুই জন ঊর্ধ্বশ্বাসে পালায়। সমাস্তিপুর রেলস্টেশনের কাছে ধরা পড়ে হীরক আগুন চোখ। কিন্তু ধরা দেয় না। দাঁতের ফাঁকে গুঁজে রাখা পিলে কামড় দেয়। নির্জীব হয়ে যায় চোখের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন। চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় বীরযোদ্ধা প্রফুল্ল চাকী।
আর সেই কিশোর? সে ও ধরা পড়ে যায়। গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় অদম্য অকুতোভয় এই বীর কিশোর কে।

কলকাতার আদালত বোমানিক্ষেপ, ব্যারিস্টার প্রিঙলে কেনেডি'র স্ত্রী ও মেয়ে হত্যা, পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ ও রোজদ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যদন্ড ঘোষণা করে প্রহসনমূলক এক বিচারে।

মাত্র আঠারো বছর আট মাস বয়সে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট হাসতে হাসতে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে পড়েন মেদিনীপুর জেলার দাসপুর গ্রামের ত্রিলক্ষ্যনাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী'র সেই বাউন্ডুলে মুক্তিকামী ছেলে টা। ক্ষুদিরাম বসু।

ক্ষুদিরাম বসু মাতৃভূমির স্বাধীনতাপ্রেমী অখন্ডতায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক একটি নাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন অন্যতম প্রেরণা। বিপ্লবী কবি সুকান্তের সেই অমর কবিতা,আঠারো বছর বয়সের জ্বলন্ত উদাহরণ এই বীরযোদ্ধা।

আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস।এই দিনে তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ লাল সালাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভালো কাজের মন্ত্রণালয়: এক অলৌকিক ভাবনার বাস্তব সম্ভাবনা?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৪



গতকাল রাতে গুগলে বিশ্বজুড়ে অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করছিলাম। হঠাৎই মাথায় এলো—“ভালো কাজের পরিসংখ্যান কি আছে?” যেমন, প্রতি বছর কত মানুষ রাস্তার ময়লা নিজের হাতে তুলে ফেলেছে? কতজন নিজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখন আমি....

লিখেছেন নুর আমিন লেবু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আমি নরম ছিলাম, ভাঙতে পারা যেতো।
তুমি ভাঙলে, গড়ার আশা রাখলে না।
তাই আমি নিজেকেই আগুন বানিয়ে নিলাম—
যার ছোঁয়ায় তুমিও পুড়ে যাবে, একদিন… চুপচাপ।

আমার দুঃখ আজ আর কান্না নয়,
আমার রাগ আজ আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নানী-নাতির প্রেম ( ১৮+)

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৬


প্রেম ও ভালবাসা প্রায় কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করলেও এদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে বাংলা ভাষায়। সাধারণত আমরা প্রেম শব্দটি ব্যবহার করি সবচেয়ে বেশি যখন কোনো সম্পর্কের মধ্যে জৈবিক চাহিদা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং আমার ভাব্না...

লিখেছেন মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১০

সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ জন

১৮ থেকে ২৯ বছরের ভোটারঃ ৩ কোটি ৪ লাখ ৭ হাজার (২৪.৪২%), এদের জন্ম হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

”ঈশ্বরের ভুল ছায়া” - যখন ঈশ্বরও মেনে নেন, তিনি নিখুঁত ছিলেন না।

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৩


"আলো সবসময় সত্য নয়। কখনো কখনো ছায়াই বলে দেয়—কী ভুল ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনায়।"

ধরুন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি হঠাৎ দেখলেন—আপনার প্রতিবিম্ব মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
অথবা, নদীর জল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×