নিপীড়ক মূসলমান শাসক কে উৎখাত প্রশ্নে ইসলাম ঃ
সুন্নি মতানুসারে সাধারণ বিধান হচ্ছে ''মুসলমান শাসকেররে বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ( মুসলামনদের জন্য) হারাম যত কখন পর্যন্ত না সে প্রকাশ্যে অবিশ্বাসী ( কাফর) রূপে প্রমানতি হয়। সুন্নী মত সম্পূর্ণ রূপে রাজদ্রোহরে গ্রহণ যোগ্যতা কে প্রত্যাখান করে। এবং এ মত মনে করে , ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য মুসলমানদরে জন্য অপরিহার্য।
এপ্রসঙ্গে IslamOnline.net বলেছে...................
''এক কথা সকলে জানে যে, ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নিপীড়ণ ও অবিচারকে পরিহার করতে বলেছে, বিশেষে করে সে সকল মানুষে প্রতি যাদের দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত।সুতরাং, একজন শাসকের কর্তব্য তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাঁর নিজ ছায়ার নিচে যে সাত জনকে আশ্রয় দিবেন তাদের মাঝে 'ন্যায়বান শাসক' একজন। অপরদিকে, যে সকল মুসলিম শাসক তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন , অধিকিন্তু মুসলমানদের (?) প্রতি নিপীড়ণ করবেন তাদেন নিশ্চিৎ গন্তব্য জাহান্নাম।
যাহোক, একজন অন্যায়কারী শাসকের নিপীড়ণ ও ক্ষতি থেকে মুক্তির জন্য তাঁকে উৎখাতের প্রশ্নে সতর্ক থাকতে হবে যেন এই অবাকাশে বৃহত্তর ক্ষতিকর ও দূর্নীতি পরায়ন কিছুর আবির্ভাবের সুযোগ না ঘটে।সুতরাং , এজন দুৎশাসককে উৎখাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে শরিয়তের আলোক ভবিষৎ সুবধি ও ঝুকি গভীর ভাবে বিশ্রেষণ করত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে , যাতে বৃহত্তর ক্ষতিকর কিছু আবির্ভাবের সুয়োগ না ঘটে।
জর্ডান বিম্ববিদ্যারয়ের ইসলামি আইন বিভাগের প্রফেসর Dr. Ahmad Sa`eed Hawwa এ প্রসঙ্গে বলেছেন.............
'' শরিয়ার বিধিমালার সঠিক বিশ্লেণের পরই শূধু একজন দুশাসককে উৎখাত করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে।পূর্ববর্তী মুসলিম চিন্তাবিদগণ এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যখন নিপীড়ক মুষলমান শাসকের উৎখাত বৃহত্তর ক্ষতির সম্ভাব্যতা কারণ না হয়ে দাড়াবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপণতি হওয়া যাবে , তখনই একজন দুশাসককে তউৎখাত করা যাবে । এ কথা ভীতি ইসলামের প্রতিষ্ঠতি বিধান '' ক্ষুদ্র ক্ষতি হতে মুক্তির প্রয়াস বৃহৎ ক্ষতির কারণ হবে না''।একই ভাবে বিধান আছে যে, '' কম ক্ষতিকারকে প্রতিষ্ঠা করা।'' শুধু মাত্র যদি এই শর্তসমূহ পূর্ণ করা হয় ও বিধান অনুসৃত হয় এবং সতর্কতা সমূহ বিবেচনায় রাখা হয় , তখন দুশাসক ও তার অনুচরদের উৎখাতে প্রবৃত হওয়া বাধ্যতামূলক। নচেৎ, মুসলমানদের ধৈর্যশীল হতে হবে এবং প্রচেষ্টা চলাতে হবে কিভাবে তাঁর নিপীড়ন ও ক্ষতির প্রভাব কে কমানো যায়।''
সিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Dr. Mahmoud `Akkam বলেছেন...............
'' একজন মুসলমান কর্তৃক একজন দুঃশাসকের বিরুদ্ধে বেদ্রোহ কে শুধু মাত্র একটি ক্ষেত্রে গ্রহণ যোগ্য যখন সে শাসক করে মাঝে 'অবিশ্বাসী'মূলক ( কাফের সুলভ) আচরণ লক্ষ্য করেছে। কেননা, একজন 'অবিশ্বাসী' কখন্ও মুসলমানদের নেতা হিসাবে আনুগত্যের শপথ অর্জণ করতে পারে না ।এটই ইসলামের স্বীকৃত বিধান এবং এ বিষয়ে মুসলমান কোন চিন্তাবিদের দ্বিমত নাই। সরা আল-ইমরানের ৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে The believers never ally themselves with the disbelievers, instead of the believers. Whoever does this is exiled from GOD. আল্লাহ সুরা আল -নিসায় আর্ও ইরশাদ করেছেন “…and Allah will not give the disbelievers any way (of success) against the believers.”
সহি বুখারী ও সহি মুসলিমে হযরত ইবনে আব্বাস থেকে উদ্বৃত আছে যে,
'' যদি কেউ একজন মুসলমান শাসকের মাঝে এমন কিছু লক্ষ্য করে থাকে যা সে মেনে নিতে পারছে না , তবে তাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। যদি তা না করে সে মুসলিম উম্মা থেকে সামান্য সময়ের জন্য মুখ ফিরিয়ে ন্যায় এবং সে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তবে তার মৃত্যু হবে প্রাক-ইসলামস কালে অজ্হতার মাঝে মৃত্যুবরণকারীদের মত হবে।''
হযরত আবহ আলাহ/ Abd Allah (র) মহানবী (সাঃ) থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে
'' এজন মুসলমান ততক্ষণ তার শাসকের কথা শুনবে ও পালন করবে ( তা তার পছন্দ হোক বা না হোক) , যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকে কোন অন্যায়করার নির্দেশ দেয়। যদি সে ( শাসক) আল্লাহ কে অমান্য করতে বলে , তবেই তার কথা শুনবে না ও অমান্য করবে।''
(সহি বুখারী ৬৭২৫ ও সহি মুসলিম ১৮৩৯)
দেখা যাচ্ছে যে,অমুসলিম বা অবিশ্বাসী শাসক নিপীড়নকারী বা ন্যায় বিচারক যাই হোক না কেন তাকে উৎখাত প্রশ্নে ইসলামী চিন্তাবিদদের কোন দ্বিমত নেই । তবে, যদি মুসলমান শাসক যদি নিপীড়ন কারী হন তবে তাঁকে উৎখাতের বিষয়ে দুইটি মত রয়েছে বা ফিতনা রয়েছে।
এক, সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান চিন্তাবিদের মতামত হচ্ছে যে , মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অন্যায় সঙ্গত এবং তাঁর নিপীড়ন কে ধৈর্য্যে সাথে মেনে নিতে হবে । কেননা , এই উৎখাত প্রচেষ্টা বৃহত্তর ক্ষতির কারণ হতে পারে। শুধু মাত্র Ahl al-Hall wal-`Aqd ( একদল সৎ, জ্ঞানী , অভিজ্ঞ ও সম্ভান্ত ব্যক্তি) রা পরেন একজন নিপীড়ক শাসক কে অপরণ করতে , যদি তা নিশ্চিৎ হন যে এর মাধ্রমে বৃহত্তর কোন ক্ষতির আবির্ভাবের হওয়ার কোন সুয়োগ নাই।
দুই' সংখ্যা লঘু অংশ মনে করেন যে , নিপীড়ক শাসক মুসলামন হলেও উৎখাত করা যায়। তাঁদের বক্তবের পক্ষে কোরআন-হাদিস থেকে সরাসরি কোন রেফারেন্স পাওয়া যায় না।তবে, দুশাসন-নিপীড়ক শাসক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে প্রারম্ভিক পর্যায় থেকে মুসলমানরা বারংবার সজাতিয় শাসককে উৎখাত করেছে। তাঁনা মনে করেন দুশাসন-নিপীড়নের মাধ্যমে মুসলমান শাসক আল্রাহর বিধান লঙ্ঘন করে 'অবিশ্বাসী'তে পরিনত হয়, ষুতরাং তাকে উৎখাত মুসলমানদের কর্তব্য। প্রসঙ্গে এই মতানুসারীরা হযরত ইমাম হোসাইন-এর আত্মত্যাগ করে সামনে নিয়ে আসনে। যদিও হযরত ইমাম গাজ্জালী(র) মত দার্শনিকও ইয়াজিদকে হযরত ইমাম হোসনের হতন্তারক হিসাবে অভিশাপ্ত করতে চান না।
এ প্রসঙ্গে পড়ুনঃ
১।www.islamonline.net/servlet/Satellite?pagename=IslamOnline-English-Ask_Scholar/FatwaE/FatwaE&cid=1119503544554
২।[1] The Ruling on Rebelling Against a Caliph
Click This Link
৩।www.sunniforum.com/forum/archive/index.php/t-11770.html
৪।REBELLION AND VIOLENCE IN ISLAMIC LAW
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:৪০