অন্যরকম: যে দেশে মৃত্যু আছে জন্ম নাই
মানুষ সৃষ্টির শুরুতে প্রথম পুরুষকে সৃষ্টি করা হলেও পুরুষের নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য সৃষ্টি করা হয় নারীকে। পৃথিবীতে নারী-পুরুষের আগমন একসাথে। তারপর একসাথে পথচলা। একসাথে জীবনগড়া। নারী-পুরুষ এখন একে অপরের উপর কোন কোন ক্ষেত্রে শতভাগ নির্ভরশীল। নারী কিংবা পুরুষ কেউই এককভাবে সমাজজীবন কিংবা সংসারজীবন পালন করা কল্পনাই করতে পারে না। এই সময়ও পৃথিবীতে নারীহীন জীবনযাপন করে একটা দেশের মানুষ। কোন ব্যক্তির জীবনে
নয়। গোটাদেশেই কোন নারী নাই। দেশেটার নাম হচ্ছে এ্যাথনাইট প্রজাতন্ত্র। এ্যাথনাইট প্রজাতন্ত্রের অবস্থান গ্রীসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর সালোনিক থেকে ৪০০ কিলোমিটার পূর্বে এজিয়ান সাগরের বুকে।
৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬ কিলোমিটার প্রশস্ত দ্বীপটির বুক জুড়ে রয়েছে বেশ উঁচু একটা পাহাড়। পাহাড়টির নাম মাউন্ট এ্যাথোস। এই পাহাড়ের ওপর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দু'হাজার মিটার উঁচুতেই এ্যাথনাইট প্রজাতন্ত্রের অবস্থান। ইউরোপসহ গোটা বিশ্বের খ্রীস্টান ধর্মের যাজকরা এই দেশে বসবাস করেন। যাজকশাসিত একমাত্র এই দেশটিতে কোন নারী নাই। এমনকি নারীদের প্রবেশ স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১০৬০ সালে এই আইন পাস করা। হয়। যে এদেশে কোন নারী বসবাস বা প্রবেশ করতে পারবে না। এর পর থেকে প্রায় এক হাজার বছর এই দেশে কোন মহিলার পায়ের ছাপ পড়েনি। শুধু মহিলা নয়। পুরুষ পর্যটকদের সাথে যদি কোন স্ত্রী কুকুর কিংবা বিড়াল থাকে তাহলে সে পর্যটকের এই দেশ সফরের অনুমতি মিলবে না। ঐ আইনের কারণে সে দেশে কোন গাভী বা ছাগী নেই। ফলে গবাদি পশুর দুধ খাওয়া সে দেশে আকাশ-কুসুম কল্পনা।
এদেশটি শুধু নারীবিহীন আজব দেশ নয়। এদেশে রেডিও টেলিভিশন টেলিফোন টেলিগ্রাফ এমন কি খবরের কাগজও নেই। সারাদেশে মোটর গাড়ি আছে মাত্র একখানা। গান গাওয়া গান শোনা কোনরকম বাজনা বাজানো নিষিদ্ধ। বাদ্যযন্ত্র বা রেকর্ড প্লেয়ার নিয়ে সে দেশে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এই দেশে কোন রাজনৈতিক দল ও নেতা নাই। দেশ পরিচালনার ভার ৯শ' পুরোহিতের হাতে। পণ্যসামগ্রীর নেই কোন কেনা-বেচা। তাই এখানে কোন দোকানপাটও নেই। গির্জাগুলো সরবরাহ করে বসবাসকারীদের প্রয়োজনীয় সবকিছু। এই দেশের বসবাসকারী সবাই গির্জাপ্রশাসনের অধীনে। বাসিন্দাদের এই রাষ্ট্রের প্রতি কার কি দায়িত্ব তা বণ্টন করে গির্জা। কারো উপর কৃষিকাজেরথ কারো উপর পোশাক তৈরি আবার কারোউপর মদ তৈরির। এখানকার বাসিন্দারা অধিকাংশই নিরামিষাশী। তবে মাছ শিকার নিষিদ্ধ নয়। এদেশে মৃত্যু আছে, কিন্তু কোন মনুষের জন্ম নাই। এদেশে মানুষের আগমন ঘটে গ্রীস কিংবা পাশের অন্যান্য দেশ থেকে। সেসব দেশ থেকে
শিশুদের নিয়ে আসা হয় গির্জার তত্ত্বাবধানের জন্য। পরবর্তীতে তারাই এখানকার বাসিন্দা হন। তাই এখানকার বাসিন্দাদের কেউ বুঝতে শেখার পর আর কোন নারীর মুখ দেখার সুযোগ পায় না। (লেখাটি দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:১৩