(১)
নীলিমা তাদের ধানমন্ডির আলিসান বাসার ছাদে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে । কেন যানি তার মুক্ত বিহঙ্গের মত উরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে । এখনো দিনের শুরুতে সূর্য উঠে ,দিনের শেষ অস্ত নামে । রাত শুরু হয় আবার শেষ হয় । এভাবেই চলতে থাকে । জীবনের বাস্তবতাই শুধু ধরা পরে । বার বার কড়া নাড়ে । মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয় । কিন্তু হয়ে উঠে না । দ্বায়িত্ব আর কর্তব্যের বেড়া জালে বন্দি ।
সব ই আছে শুধু নেই সুখ নামের সেই অদেখা পাখিটি । তাকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে সে সুখি নয় । কারন সে বাংলাদেশ একজন স্বনাম ধন্য ব্যবসায়ীর স্ত্রী । এত টাকা পয়সা , ধন সম্পদ কিছুই তাকে সুখি করতে পারেনি । সত্যি অদ্ভুত ।
(২)
অই কুদ্দুছ কই গেলি , হাক ছাড়েন রহিম মিয়া । অই কুদ্দুছ কইরে হারমজাদা ,নবাবের বাচ্চা । আবার ঢাকে রহিম মিয়া । কিন্তু কুদ্দুছের কোন খবর নাই । ওদিক থেকে তার বউ ফুলমতি বলে কুদ্দুছ তো বাড়িতে নাই । মনে হয় পোলাপানের লগে খেলতে গেছে । কি ?? কি কইলি !! খেলতে গেছে , ওর খেলা আমি বাইড় করতাছি । বলে ক্ষেপে উঠে রহিম মিয়া । আরে মর জ্বালা ,পোলাডা সব সময় ই তো কাম করে আজ নাইলে খেলতেই গেছে আপনে অমুন করেন ক্যান । ছুডু মানুষ শখ আহ্লাদ কি নাই নাকি । ফুলমতি বলে । হ হ , হইছে পোলার হইয়া আর উকালতি করতে হইব না সব জানি আমি । রহিম মিয়ার রাগত্ব স্বরে বলে । আইচ্ছা অহন যান তো , বাজার কইরা অনেন । হুনেন পোলাডা অনেক দিন ধইরা মাছ খাইতে চাইতাছে মাছ আইন্নেন । ফুলমতি বাজারের থলি হাতে ধরিয়ে দেয় । পারুম না । কাম শেষ হইতে দেরি হইব । বলে বেড়িয়ে যায় রহিম মিয়া । ফুলমতি কিছু বলে না শুধু মুচকি হাসে ।
রাতের খাবারে থাকে বড় মাছ সাথে আলু আর পাতলা ডাল ।
= বউ পোলাডারে ঢাক ভাত খাইব না ।
= কেন আপনে না খাওয়াইবেন না কইছেন ।
= তুই ও দেহি শুরু করসছ । যা পোলাডারে ঘুমথন ডাইকা আন ।
ফুলমতি ঘুম থেকে উঠিয়া আনে কুদ্দুছ কে । তারপর ফুলমতি আর রহিম মিয়া দুজনে মিলে কুদ্দুছ কে খাইয়ে দেয় । আর মুখে তাদের হাসি ।
(৩)
সাগর আর সন্ধ্যা ঢাকার এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে । একই সাথে একই ডিপার্টমেন্টে ।
= এই সাগর । সাগর ।
= কিরে কি হইছে ?? এত চেচাচ্ছি কেন ।
= তুই নাকি প্রেম করছিস ।
= কে বলল তোকে । মুটিটা নিশ্চই ।
= তুই বল সত্যি কিনা ।
= যদি সত্যি হয় ।
= না তুই প্রেম করতে পারবি না ।
= কেন ?? আমি কি তোর রেজিস্টার করা নাকি ।
= হ্যা । আমি তোকে ভালবাসি । তাও গত তিন বছর ধরে ।
= সত্যি । নাকি মিথ্যা । মজা করিস আমার সঙ্গে তাই না ।
= সত্যি , সত্যি এবং সত্যি । বললাম ।
এরপর দুজনের পথ চলা শুরু হয় । হয়ত ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হবে দুজনেই । আবার দুজনের দুটি পথ হয়ে যেতে পারে । কেই বা বলতে পারে । সব কিছু তো আগে থেকে অনুমান করা যায় না । কিছু কিছু বিষয় নিয়তির উপর ছেড়ে দিতে হয় ।
(৪)
দাদু ভাই গল্প বলেন । এক বাচ্চা বলে উঠে । দাদু ভাই তাড়াতাড়ি বলেন । আরেক বাচ্চা বলে । স্যার শুরু করেন । এক যুবক বলে উঠে । প্রায় ত্রিশ জন এর মত লোক আছে রহমান সাহেবের সামনে । এদের বাচ্চা আর যুকব ই বেশি । রহমান সাহেব পার্কে আসেন আর সবাইকে গল্প শোনান । স্বাধীনতার গল্প মুক্তিযুদ্ধের গল্প । বাংলাদেশের ইতিহাস ,ঐতিহ্য ,সংস্কৃতি সব কিছু বলেন গল্প আকারে । তাই তিনি এই পার্কে গল্প দাদু নামে পরিচিত । সবাই তাকে চেনে । তাকে সবাই ভালও বাসে । অনেকেই আসে তার কাছে ।
কিন্তু হঠাত এক দিন তিনি এলেন না । তারপর আর কোন দিন ই পার্কে এলেন না । হয়ত আর গল্প নেই । হয়ত তার গল্পের ঝুলি ফাকা হয়ে গেছে । কেউ খোজনি তাকে । হয়তবা খুজেছে দু এক জন তাও প্রয়োজনে ।
আসলে যান্ত্রিকতার এই শহরে অনেক কিছুই ঘটে । কিছু আমাদের জানা কিছু অজানা । কিছু জিনিস থেকে যায় আড়ালেই । সবাই ব্যস্ত আর বাস্তবতার বেড়াজালে আবব্ধ । শহরটা আমাদের কেও যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছে । সব কিছুই নিয়ম করা ।
এ যেন শুধু ই বেচে থাকা অথবা বাস্তবতা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৬