আমার মাস্টার্স এর পরীক্ষা চলছে । সেকেন্ড সেমিস্টার । অনেক ইচ্ছে ছিল কোন পাব্লিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার । জাহাঙ্গীরনগর এ ভর্তি হলাম । দারুন এক বিশ্ববিদ্যালয় । সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় এর সবুজ । প্রকৃতির জন্য সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে । যদি সুযোগ হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যাবো । তবে সেটা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয় । পূরন হবে না ।
বাংলাদেশে যত গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেয়া হয় তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর অন্যতম । সুনামের দিক থেকে প্রথম পাঁচ এর মধ্যেই থাকবে বলে আশা রাখি । এর সুনামের কারনে ই হয়ত প্রতি বছর এখানে ভর্তি যুদ্ধে ছেলে মেয়েরা চেষ্টা করে যায় । আমার খালাতো বোন দুবার চেষ্টা করেছে । তবে চান্স পায়নি ।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও চমৎকার । আমি রাজশাহীর আইবিএতে এমবিএ এর পরীক্ষা দিয়ে ছিলাম চান্স হয়ে ছিল শুধু তখন আমার বিবিএ এর সার্টিফিকেট বের হয়নি । তাই পড়তে পারিনি । তবে এতে দুঃখ নেই । হয়ত আল্লাহ যা করে ভালর জন্য ই করে । জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করতে গেলে শেষ হবে না ।
আমি আসলে অন্য কিছু নিয়ে বলতে চাচ্ছি । সেটা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে । আসলে মুল পয়েন্ট এ আসার আগে কিছু বলে নেয়া দরকার ।
আমি ছোট বেলা থেকে যেটা ঘৃণা করি সেটা হলো টাকা । যদিও টাকার পেছনেই ছুটছি । কারন সমাজের বাইরে যেতে পারিনি না । আমার বাবা কখনো আমাকে টাকার ব্যাপারটা চাপ নিতে বলেননি । তবে আমি পরিবারের বড় সন্তান তাই আমাকে বুঝতে হয় । শুধু বুঝি না এর বিপরীতে আমার দায়িত্ব গুলো পালন করার চেষ্টা করি । তবুও মাঝে মাঝে বাবার উপর চাপ পরে যায় ।
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন একটা কোচিং এ পড়তাম । এক বার স্যার আমাকে বাসায় পাঠিয়েছে কোচিং এর ফি নিয়ে আসার জন্য । প্রচন্ড অপমান বোধ নিয়ে বাসায় গেলাম । কারন যা আমাকে কোন দিন শুনতে হয়নি তাই শুনলাম । আত্মসম্মানে লাগল । আসলে তখন আমি মামা বাড়ি থেকে পড়াশুনা করতাম । তাই মামার দায়িত্ব ছিল কোভিং এর ফি দেয়া । কিন্তু তিনি তা করেননি । দু দিন কোচিং এ যাইনি ।
তারপর বাবা মামা কে প্রচন্ড ভাবে কথা শুনায় । তারপর মামা কোচিং এ গিয়ে স্যার আমার কাছে টাকা চাইতে নিষেধ করে । তারপর থেকে তারা আমার কাছে আর টাকা চায়নি । আমার বিবিএ এমবিএ সব এসবের ঝামেলা ছাড়াই শেষ করেছি । মাঝে মাঝে বাবা কে হেল্প করার জন্য ছোট খাট পার্ট টাইম জব করেছি । নিজের খরচটা যাতে চলে যায় সেটা যাতে বাবার উপর চাপ না দেয় সেটা করার চেষ্টা করেছি ।
তো এবার মুল কথায় আসা যাক,
আমার মাস্টার্স এর এবার সেকেন্ড সেমিস্টার শেষ হবে । তো টাকা জমা দিতে হবে । বাবার কাছে পুরো টাকা নেই । তাই আমি ভাবলাম কো-অর্ডিনেটর এর কাছে গিয়ে একটা হেল্প চাই । তিন ভাগের দুই ভাল তো এখন দিব আর বাকিটা পরের সেমিস্টারে ম্যাচ করে দিব ।
তো গেলাম অনেক আশা নিয়ে । স্যার রুমের সামনে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে চিন্তা করলাম । তারপর বাবার কথা ভেবে ঢুকে পরলাম । বললাম স্যার আমি তো পুরো টাকাটা এখন দিতে পারব না । আমি কিছু টাকা ডিউ রাখতে চাচ্ছি । এক্সামের পর দিয়ে দেব । মনে হলো স্যার যেন কিছু শুনে নাই । আমাকে অনেক কিছু বললেন । নিয়মের বুলি দিলেন । কোন টাকা বাকি রাখা যাবে না । সব পেইড করে তারপর এক্সাম দিতে হবে । একাউন্টস এ ঝামেলা হবে । নতুন নিয়ম হয়েছে । আমাকে অনেক কথা শোনালেন । কিন্তু অনুমতি দিলেন না ।
মন ভার করে চলে আসলাম । জানতাম যে গত সেমিস্টারে অনেকেই টাকা ডিউ রেখে পরীক্ষা দিয়েছে । তাই এবার ও হয়ত দিবে । যখন তিনি ম্যানেজম্যান্ট আর নিয়ম এর কথা বললেন তখন খারাপ লাগল । এত এত চ্যারিটি করি মানূষের জন্য আজ নিজের জন্য কোন চ্যারিটি পাই না ।
তারপর অফিসের বসে কে বলতেই আমাকে বাকি টাকা দিয়ে বললেন যাও সব টাকা পে করে আসো । একটাও বাকি রাখবা না । বসের কাছ থেকে ধার নিলাম । টাকা পে করলাম । এডমিট কার্ড নিলাম । গতকাল প্রথম পরীক্ষা দিলাম । আজও দিলাম । তারপর জানলাম যে অনেকেই পুরো টাকা ডিউ রেখে পরীক্ষা দিচ্ছে । তাদের বলা হয়েছে এপ্লিকেশন দিতে । কবে নাগাদ টাকা পরিশোধ করবে ।
আমি শুনে চুপ করে রইলাম । কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম । কি বলব কিছু বলার ছিল না । একবার ভেবেছি স্যার কে যেয়ে বলি স্যার অনেকে তো পুরোটা ডিউ রাখছে । তাহলে আমাকে কেন নিয়ম আর ম্যানেজমেন্ট দেখালেন । তারপর ভাবলাম আমি তো বেয়াদপ না । তিনি আমাকে বেয়াদপ ভেবে বসতে পারেন । কিন্তু এটা তো আমার অধিকার । তাও স্যারের রুমে যায়নি । রুমের সামনে দিয়ে কয়েক বার হেটে গিয়েছি । ভেবেছি ঢুকে আমার মনের ভেতর থাকা কথা গুলো বলে দেই । তারপর ভাবলাম কি দরকার । চুপ করে চলে এসেছি ।
পরীক্ষা দিয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছি । তারপর ভেবেছি, যদি বিদায় সংবর্ধনা হয় তখন স্যার কে কিছু কথা বলে আসব । না হলেও স্যারের রুমে যেয়ে বলে আসব । বলব ই ।
একটা কথা শুধু মাথায় ঢুকছে না, আমার ক্ষেত্রেই তার এত নিয়ম বের হলো । বাকিরা কি সালমান এফ রহমানের সন্তান নাকি । আমি জানি না । জানতেও চাই না । উনি সমতা নিয়ে অনেক লেকচার দেন । তাহলে কোথায় সমতা করছেন । জানি না ।
তবে কবি হয়ত এজন্য ই বলেছেন,
" শক্তের ভক্ত, নরমের যম"
ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । বই পড়ূন । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩০