যাক বাবা আপাতত । বাচা গেল । বাসে সিট পেতে ঝামেলা হয়নি । এখন যেহেতু অফ সিজন তাই সিট পেতে ঝামেলা হয়নি । এসি বাসে একটু ঠান্ডা লাগছে । তবে এই ঠান্ডা ভাল । সুপারভাইজার আবার একটা কম্বল দিয়ে গিয়েছে । আহা । কি শান্তি । এখন পাশে কেউ থাকলে তো বলত । এভাবে কেন বসছো? কম্বল এভাবে গায়ে দিছো কেন? ঠিক ভাবে বসো? আরো কত কি । এই জন্যই বিয়ে করতে নাই । সামনের সিটে নতুন কাপলদের এসব দেখে আর ভাল লাগছে না । তাদের রোমান্স এখনও সীমা অতিক্রম করেনি এটাই বেশি ।
যাই হোক বাস চলছে । আমার সারারাত ওই আন্টির সাথে গল্প করে ঘুম হয়নি । এখন ঘুমাই । বাসে গান চলছে । এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো । উত্তম আর সুচিত্রা দুজনেই রোমান্সে ভাসছে । আমার সামনে তারাও গলা মেলেচ্ছে । আমি পিছন থেকে বললাম, ভাই শেষ না হলে টয়লেটে যাব কিভাবে? লোকটা আমার কথা শুনে হাসবে না কাদবে বুঝতে পারল না । তার সাথে নতুন বউ । এরপর বলল, ভাই কি যে বলেন । আমি জ্বী ভাই , ইহা অতি গুরুত্বপূর্ন । এই কাজ ছাড়া মানুষ থাকতে পারে না ।
লোকটি নতুন বিয়ে করে হানিমুনে যাচ্ছে । আর আমি তাকে টয়েলেট এর গুরুত্ব বুজ্জাচ্ছি । ব্যাপারটা আমি ইনজয় করেলেও তিনি করছেন না । পাশে নতুন বউ । তিনি আমাকে কিছু বলতেও পারছেন না । আমি বললাম, ভাই রাস্তার সাইডে না হয় ছোট কাজ করা যায় কিন্তু বড় কাজ কই সারবেন । তাছাড়া পানি কই পাবেন ।
লোকটি বিরক্ত হচ্ছে । আমি মজা পাচ্ছি । ভাবী কে বললাম, ভাবী এই পথ কিন্তু শেষ না হলে আপনাদের হানিমুন এই বাসেই করতে হবে । সেটা কি ভাল হবে । ভাবী বিস্ফোরিত চোখে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এই ধরনের কথা তিনি আগে শোনেননি । যাই হোক, ভাই এই পথ কিন্তু কক্সবাজার গিয়ে শেষ হবে । দেখা হবে সেখানে । বলে আমি চোখ বুঝলাম । এখন বেশি কথা বললে তারা বাস থেকে নেমে যেতে পারে । নয়ত আমাকে পাবনার বাসে উঠিয়ে দিতে পারে । কে জানে হানিমুন ক্যান্সেল করে বাড়িও চলে যেতে পারে । আমি বিয়ে করব না বলে কারো হানিমুনে বাধা দেয়ার অধিকার নেই । তারাও চুপ হয়ে গেল । আপাতত আমার মত উটক লোকের কথা শুনে হানিমুন নষ্ট করার মানে হয় না । রোমান্সের টাইমে ভায়োলেন্স ঠিক না ।
বাস কতখন চলেছে জানি না । কতখন ঘুমিয়েছি জানি না । আহা । দেখি একটা ফুড ভিলেজের সামনে দড়িয়ে আছে । সুপারভাইজার তাড়া দিচ্ছে । তাড়াতাড়ি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে বাসে উঠতে । আমি বললাম ভাই এত তাড়াহুড়া কইরেন না । সুপারভাইজার বলল, ভাই দেরি হইয়া গেছে । রাস্তায় জ্যাম ছিল । আমি বললাম, খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করতে নাই । বিশ মিনিট টাইম দেন । উনি বলল আচ্ছা ভাই যান ।
আমি ধীরে ধীরে ফ্রেশ হয়ে এলাম । কাপলরা একজন আর একজন কে খাইয়ে দিচ্ছে । বাহ বাহ । রোমান্সের শুরু কিন্তু পরে সেটা ভায়োলেন্স দিয়ে শেষ হবে । কেউ বুঝে নারে । আমার কাছে দীক্ষা নিলে এই অবস্থা হবে না । যাই হোক পরোটা আর ডাল খাচ্ছি সাথে ডিম । হঠাত হতদন্ত হয়ে আমার টেবিলে এক মেয়ে বসে পরল । মুখ ঢাকা । মনে হচ্ছে কারো কাছ থেকে পালাচ্ছে । বয়সে তো তরুনী । তাহলে বিয়ে না করার জন্য ই পালাচ্ছে । যাক একজন সঙ্গী জুটে গেল ।
বিয়ে না করা বা বিয়ের বিপক্ষে প্রতিটি মানুষ ই আমার ভাল লাগে । তবে আমি চুপচাপ খাচ্ছি । তার দিকে খেয়াল দিলে ডিম পরোটা কষ্ট পাবে । হঠাত মেয়েটি বলল, একটু পানি খাব । আমি আসে পাশে তাকিয়ে ভাবলাম কাকে বলল । আমার দিকে আঙুল তুলে বলল এই যে মিস্টার আপনার বোতল দিন । আমি বললাম, ছিঃ ছিঃ !! এসব কি বলেন । আমার বোতল দিব মানে কি । আমি আপনার পানির বোতল চেয়েছি, মেয়েটি বলল । ও আচ্ছা, সরি !! বুঝতে পারিনি । বলে তাকে বোতল দিলাম । তবে উনি পানি খেলেন তাও স্ট্র দিয়ে । মজার ঘটনা ।
আমি তাকিয়ে তার পানি খাওয়া দেখছি । সে বুঝতে পেরে বলল, কি আগে কখনও পানি খাওয়া দেখন নাই । এই কন্ঠ তো চেনা চেনা মনে হচ্ছে । আগে খেয়াল করিনি ।
আমি বললাম দেখেছি । তবে এভাবে ক্লাউন টাইপ দেখিনি । বলে সোজা বাসে উঠে বসলাম । এখন এক লম্বা ঘুম দিতে হবে । কক্সবাজার আমাকে ঢাকছে ।
- এই যে মিস্টার !!!
- আবার আপনি ।
- জ্বী । এভাবে কেউ ঘুমায় ।
- তো কিভাবে ঘুমাব । আপনার কোলে মাথা রেখে ।
- ছিঃ কি বলেন এইসব । আমার কোলে কেন মাথা রাখবেন । বলছি এভাবে দুই সিট নিয়ে বসেছেন কেন ।
- আমি তিন সিটের ভাড়া দিয়েছি তাই ।
- ওমা তাই । তাহলে তো আপনার পাশে বসাই যায় ।
এই মেয়ের মতি গতি সুবিধার না । অপু সাবধান । ঘাপলা আছে । তোকে ফাসিয়ে দিতে পারে । এখন চেহারাই তো দেখলাম না । খালি চোখ দেখা যাচ্ছে । আমার এত এত কিছু থাকা সত্ত্বেও এই জিনিশ টাই কম আছে খালি চোখ দেখে চিনতে পারি না । শালা এই বিষয়টা রপ্ত করতে হবে । কিন্তু এই মেয়ে কে আগে জানতে হবে । আমার সমুদ্র বিলাসে দূর্যোগের ঘনঘটা । কে আমাকে আশা দেবে । কে আমাকে ভরসা দেবে । দুরর আমি কি নবাব সিরাজউদ্দৌলা ।
- কি হলো কিভাবছেন ?
- আমি ভাবছি । আপনি অতি বোকা না হলে অতি চালাক । দুইটার একটা ।
- তাহলে কোনটা?
- অতি বোকা ।
- কেন ?
- কারন আপনি আমাকে না চিনেই । আমার সাথে কথা বলতে এসছেন । আপনার বাবা মা কি শিখায়নি যে অপরিচিত মানুষের সাথে এত মিশতে নেই । মুহাহাহাহাহাহা ।
- হ্যা । কেন ।
- ভয় পেয়েছে । এটাই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে । এখন ই একে ভাগাতে হবে ।
- আমি কে আপনি জানেন?
- না । কে আপনি?
আমি মোস্ট ওয়ান্টেড সিরিয়াল কিলার লাল্টু । নাম শুনেছেন ।
চোখ একদম স্থির হয়ে গিয়েছে । আমার দিকে অতি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে । আমি আমার ক্যাটস আই দিয়ে শীতল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি । সে উঠবে না বসে থাকবে ভাবছে । মজা পাচ্ছি ।
আরে বসেন আপনার সাথে কথা বলে মজা পাচ্ছি । কক্সবাজার যাচ্ছি । একটা মার্ডার করতে । লোকটার নাম আরিফ রায়হান অপু ।
- আপনি বসুন । আমি পিছনের সিটে চলে যাচ্ছি । আর প্লিজ আপনাকে অনেক কথা বলেছি । কিছু মনে করবেন না ।
- ঠিক আছে । সমস্যা নেই ।
এবার শান্তিতে ঘুমাই । ঝামেলা । এসব কই থেকে যে আসে । মেহেদীদের একটা ফোন দেই । বেটা কি এক এনজিওতে জব করে । ভাল ই আছে । দিন কাল ভালই যায় । কিন্তু বেটা বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে । এবার একে টাইট দিতে । বিয়ের ঝামেলা ও তার পরবর্তি যেসব অসুবিধা আছে সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে হবে ।
- হ্যালো ।
- হ্যা । কিরে হালা কি খবর । কক্সবাজারে তো ভাল ই দিন কাটাইতাছো ।
- তুই ফোন দিছোস ক্যান বল । নিশ্চয়ই ঝামেলা করসোস । বল কি কাজ ।
- আরে তুই আমার বন্ধু । কিযে বলস ।
- পাম কম দে । আমি ফুলমু না ।
- আমি কক্সবাজার আসচতেছি । বাসে আছি ।
- আমার সাথে থাকার জায়গা নাই ।
- তোর সাথে আমি থাকব না । আমি কি তোর মত নাকি ।
- দেখ উলটা পালটা কথা বলবি না । আচ্ছা আয় আগে ।
ফোন রেখে দিলাম এক ঘুম । আর কোন ঝামেলা নাই । এখন শুধু কক্সবাজারের অপেক্ষা । হঠাত ঘুম ভাংগল এক মিষ্টি কন্ঠ শুনে । দেখলাম সেই মেয়েটি ।
উঠুন কক্সবাজার চলে এসছি । আপনার ভাগ্য ভাল । আমি আপনাকে ডেকে তুলেছি । সবাই বলে আমার কন্ঠ নাকি অনেক সুন্দর ।
আসলে সবাই আপনাকে পাম দেয় । আপনার আর কাকের কন্ঠের মাঝে কোন পার্থক্য দেখি না । এই কন্ঠের জন্য আদালতে আপনার মামলা করা উচিত । আমার বাবা উকিল । তাকে বলব । ফ্রীতে আপনার জন্য মামলা লড়বে ।
- আপনি তো মানুষ ভাল না । এখন জাগিয়ে না দিলে তো বাস উলটা আপনাকে নিয়ে ঢাকা চলে যেত ।
- যেত না । সুপারভাইজার আমাকে চেনে ।
- ঠিক আছে । আপনি থাকুন ।
বলেই মেয়েটি নেমে গেল । ধুরর । এই ঝামেলার জন্য আসলাম কক্সবাজার আর সেই ঝামেলা আমার পিছনেই । আল্লাহ ।
বাস থেকে নেমে হোটেলে গেলাম । ফ্রেশ হলাম । তারপর পেট পুজো করলাম । আহা রূপচাদা, লইট্যা শুটকি, মুরগীর রোস্ট, গরুর কালা ভুনা, খাসির লেগ রোস্ট সাথে পোলাও সবশেষে ফালুদা । এই বিশাল খানাপিনার পর একটু হাটাচলা দরকার । এই সন্ধ্যায় সমুদ্র অনেক সুন্দর হয় । যাই একটু হেটে আসি ।
বিচ এ হাটতে ভালই লাগছে । আহা এই না হলে শান্তি । বাসের কাপলদের দেখা যাচ্ছে । তারা একে অন্যের হাত ধরে হাটছে । নতুন নতুন সবই ভাল । যাই ওনাদের সাথে একটু কথা বলে আসি ।
- এই যে হানিমুন কাপল । কি অবস্থা ।
- আপনি এখানে । ছেলেটি বলল ।
- ওমা বাস তো কক্সবাজার আসার কথা । নাকি আপনারা সিঙ্গাপুরের টিকেট কেটে ছিলেন ভুলে কক্সবাজার চলে এসেছেন । হাহাহাহা ।
- ভাই আপনি কেন এসছেন । আমাদের একটু প্রাইভেসি দিন ।
- ভাই এখন তো নতুন নতুন তাই । জানেন এরপর বড় কিছু অপেক্ষা করছে । বাচতে হলে পালান ।
এর মধ্যে বাসের সেই তরুনী হাজির । যাহ শালা ।
এই যে সিরিয়াল কিলার । আপনি ওনাদের কি সব উলটা পালটা বলছেন । আপনার কি এসব ছাড়া আর কোন কাজ নেই ।
কাপলদের বিদায় দিয়ে দিলাম ।
- আপনার কি সমস্যা? আমি তাদের কি বললাম না বললাম তাতে আপনার কি?
- অনেক সমস্যা? এমন হলে আপনার বিয়ে হবে না ।
- আমি বিয়ে বিরোধী । আমি সারা জীবন একা থাকব ।
- আপনার কপালে অতি শীঘ্রই বিয়ে আছে ।
- জ্বী না ম্যাডাম । বাড়ি থেকে পালিয়েছি তো এই জন্য । এখন ঘুরে বেড়াব । আপনি যান তো ।
- আজ যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না লাল্টু । আবার দেখা হবে ।
বাপরে বলে কি । কই এই সমুদ্রে এসে বিলাস করব । তা না । এখানে ও শান্তি নেই । সব খানে বিয়ে বিয়ে বিয়ে । যেন পৃথিবীতে বিয়েই সব । ধুরর ।
এই সুন্দর বাতাস ও সমুদ্র আর পাহাড় এসব দেখার জন্য হলেও বিয়ে করা উচিত না । আপাতত এই সৌন্দর্য উপভোগ করা যাক ।
(এই সিরিজিটা আসলে ঈদের সময় লেখা শুরু করি । কিন্তু কিছু জায়গা মিসিং আছে । আশা রাখি আপনাদের মতামত আমাকে হেল্প করবে )
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৭