আজ সারা দেশে ভুমিকম্প অনুভূত হয়েছে । খুব ভালভাবেই টের পাওয়া গেছে । আর একটু জোর থাকলে হয়ত খারাপ কিছু ঘটতে পারত । ঘটেনি আলহামদুল্লিলাহ ।
আসুন দেখি ভূমিকম্পের কারন গুলো -----
ভুমিকম্প কেন হয়ে থাকে?
বিশেষজ্ঞদের মতে গোটা ভূপৃষ্ঠই কয়েকটি স্তরে বিভক্ত৷ আবার প্রতিটি স্তর একাধিক প্লেটে বিভক্ত৷ এসব বিশাল আকারের টেকটোনিক প্লেটগুলো যখন একের সঙ্গে অপরে ধাক্কা খায় তখন কেঁপে ওঠে মাটির নীচের তলদেশ৷ আর আমরা ভূপৃষ্ঠের ওপর ভূকম্পন অনুভুত করি৷ ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের উপরের স্তরে অনেকগুলো প্লেট আছে এগুলো আবার অনেকগুলো সাবপ্লেটে বিভক্ত৷ এগুলো সবসময় নড়াচড়া করছে৷ একটার সঙ্গে আরেকটার ঘর্ষণে এই ভুকম্পনের সৃষ্টি হয়৷ আবার আগ্নেয়গিরির কারণে ভূ অভ্যন্তরের ভেতর
থেকেও ভুকম্পনের সৃষ্টি হয়ে থাকে৷ আবার কোন কোন এলাকায় ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে অতিরিক্ত পানি কিংবা তেল ওঠানোর ফলে ভূপৃষ্ঠের অবস্থানের তারতম্য ঘটে৷'
আগে থেকে বোঝার উপায় নেই অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেলায় আগে থেকে বোঝা গেলেও ভূমিকম্প এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে যায় এই বিশাল
দুর্যোগ, যার ফলে পুর্ব সতর্কতা নেয়া সম্ভব হয়
না৷ এর ফলে ক্ষয়ক্ষতিও হয়ে থাকে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে বেশি৷
কেনএমনটি হয়ে থাকে?
ভু তাত্ত্বিক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে প্লেটগুলো সবসময়ই ছয় থেকে নয় সেন্টিমিটার করে নড়াচড়া করছে এবং এর ফলে ভূত্বকের ভেতরে প্রবল
শক্তি জমা হচ্ছে৷ এই শক্তি যখন ভূত্বকের ভেতরের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন হঠাৎ করে এর বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে আগে থেকে পুর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব হয় না৷
পূর্ব সতর্কতা কি সম্ভব?
বিজ্ঞানীদের মতে ভূমিকম্প যখন সৃষ্ট হয় তখন ভূত্বকের ভেতর তিন ধরণের ওয়েভ বা ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়৷ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে যে কম্পনের ঢেউ সৃষ্টি হয় তাকে বলে প্রাইমারি ওয়েভ বা পি ওয়েভ৷ এটি সবচেয়ে দ্রুত গতিতে yছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে৷ এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে আরেকটি ওয়েভ বা ঢেউ সৃষ্টি হয়, সর্বশেষ সারফেস ওয়েভটি গিয়ে আঘাত হানে ভূপৃষ্ঠে৷ এবং এটিই আমরা বুঝতে পারি যাকে আমরা ভুমিকম্প বলে থাকি৷ উৎপত্তিস্থল থেকে ভূপৃষ্ঠে আসতে ভূমিকম্পের সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মত৷ বিশেষজ্ঞরা এই মাঝখানের সময়টাকেই চিহ্নিত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে করে আগে থেকেই ভুমিকম্পের পুর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব হয়, জানালেন ড. হুমায়ুন আখতার৷ রিখটার স্কেল বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিনই ভূপৃষ্ঠের ভেতরে কোথাও না কোথাও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হচ্ছে৷ তবে সবগুলো অত জোরালো নয়৷ ভূমিকম্পের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে জমে থাকা শক্তি নির্গত হয়৷ এই শক্তিকে মাপা হয় রিখটার স্কেলের মাধ্যমে৷ সাধারণত ভূমিকম্পকে ১ থেকে ১২ মাত্রা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়৷ ৩ থেকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প বোঝা গেলেও ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয় না৷ তবে ৫ কিংবা ৬ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেই সেগুলোকে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়৷ রিখটার স্কেলের এক মাত্রা পার্থক্যের অর্থ হচ্ছে আগেরটির চেয়ে পরেরটি ভূত্বকের ভেতর ৩২ গুন বেশি শক্তিশালী৷ তবে ভূপৃষ্ঠে এই তীব্রতার পরিমাণ হয় ১০গুন বেশি৷
ঝুঁকির মধ্যে বাংলাদেশ
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে৷ বাংলাদেশের একাংশের নীচে দিয়ে টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল গিয়েছে৷ এই প্লেটের নড়াচড়ার কারণে প্রতি এক হাজার বছরে বাংলাদেশ তিন থেকে ১৫ মিটার করে সংকুচিত হচ্ছে৷ এই সংকোচনের ফলে ভূঅভ্যন্তরে প্রবল শক্তি জমা হচ্ছে৷ জমে থাকা এই শক্তি যে কোন সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বের হয়ে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন৷ ঘনবসতি দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ভুমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি হবে বলে তাদের আশংকা৷
আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ন অনেকাংশেই দায়ী । যে যেভাবে পারছে বাড়ি বানাচ্ছে , শপিংমল তৈরি করছে । কোন নির্দিষ্ট দিক নেই । আর এসব দেখার ও কেউ নেই । যারা আছে তারা কি করছে তা আমার বোধগম্য হয় না ।
আসলে এদেশে আইন আর নীতি মালা শুধু কাগজে কলমে হয় । বাস্তবে এর প্রয়োগ আর অশ্বডিম্ব সমান কথা ।