ব্যক্তিগত ভাবে আমি পাখি খাঁচাতে বন্দী করার বিপক্ষে । অনেক ছোট বেলাতে একবার আমার বাবা আমাকে একটা টিয়া পাখি কিনে এনে দিয়েছিলো । পাখিটা কোন আওয়াজ করতো না । সারাদিন চুপচাপ খাঁচার ভেতরে বসে থাকতো । আমি কয়েকবার সেটাকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু সেটা কেন জানি উড়তে পারতো না । বাড়ির ভেতরে হাটাহাটি করতো ! আমি তার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতাম । আমার দেখতে ভাল লাগতো না । তারপর পাখিটা আমার এক কাজিনকে দিয়ে দিলাম । পরে শুনেছিলাম সেটা নাকি মারা গিয়েছিলো । মন খারাপ হয়েছিলো বেশ । তারপর থেকে পাখি খাঁচায় বন্দী করে পোষার ব্যাপারটা মাথায় আসে নি ।
অনেক দিন পরে, একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরছি । মোহাম্মাদপুর গ্রাফিক্স আর্ট কলেজের সামনে এসে হঠাৎ এক পাখিওয়ালার সাথে দেখা । সে আমাকে কেমন করুন সুরে বলল যে আমি কোন পাখি কিনবো কিনা ! সারা দিনে কোন পাখি বিক্রি হয় নি ! কি যে মনে হল আমি নিজেও জানি না । এক জোড়া কিনে ফেললাম । বাসায় নিয়ে এলাম, নতুন খাঁচা কিনলাম । পাখি দুটো খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল । খুব বেশি উড়াউড়ি করতো না । খাওয়ার সময় খেত আর সব সময় ডালের উপরে বসে থাকতো । আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম । মাস খানেক পরে মনে হল আর বন্দী করে রেখে লাভ নেই । ছেড়ে দিই। একদিন দুপুর বেলা খাঁচার দরজা খুলে নিচে গেলাম । ফিরে এসে দেখি যে ওরা তখনও বসেই আছে । বের হয় নি । পরে খাঁচাটা একটু ঝাকি দিয়ে বের করে দিলাম । জানলা দিয়ে দেখলাম দুজনে উড়ে চলে গেল !
এরপর আরও কিছুদিন পার হয়ে গেছে । যে পরিবারটির সাথে আমি থাকি সাবলেট আকারে, তারা পাখি কিনে নিয়ে এল এই বছর খানেক আগে । লকডাউনের ভেতরে । ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পাখির খাঁচা গুলো থাকে । অনেক গুলো পাখি ! সবার নিচে আছে এক জোড়া ঘুঘু । উপরে আরও দুটো খাঁচা । আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ মুখে নিয়ে তাদের সামনে যাই । পাখি গুলোকে দেখি । ওরা কিচির মিচির করে । শুনতে ভাল লাগে! খাবার দেই । এর ভেতরে দিদিরা প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকে । সাভারে তাদের বাসা আছে সেখানে যায় প্রায় । পুরো বাসায় তখন আমি একা । আমিই পাখি গুলোর দেখা শুনা করি । নিজের হলে ছেড়ে দিতাম তবে অন্যের পাখি ছাড়বো কিভাবে !
এরমাঝে একজোড়া পাখির ডিম দিল । তাদের খাঁচা আলাদা করা হল । আমি প্রতিদিন উকি ঝুকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম যে পাখির ডিমের কি অবস্থা । মোট ৫ ডিম । গুনতে পারলাম । আমি যতদুর জানতাম এরা জোর সংখ্যাতে বাচ্চা দেয় । বিজোর সংখ্যাতে দেয় কিভাবে কে জানে ! যাই হোক একদিন ঘটলো ঘটনা ।
দাদা সকালে বেলা আমাকে জানালো যে কে জানি পাখির খাঁচার দরজাটা খুলে রেখেছে । পুরুষ পাখিটি উড়ে চলে গেছে । কিন্তু মেয়ে পাখিটি তখনই বসে আছে । ডিমে তা দিচ্ছে । এর পরের কয়েকদিন দেখতাম খাঁচাতে পাখিটা একাই বসে আছে । ডিমে তা দিচ্ছে । খাবার খাচ্ছে । পরে দাদা নতুন আরেকটা পুরুষ পাখি নিয়ে এসে খাঁচাতে দিয়েছিলো কিন্তু মেয়ে পাখিটি গা করে নি । তার দিকে কোন খেয়ালই দেয় নি । এরপর একদিন সকালে ব্রাশ করতে গিয়ে পাখির ডাকের সাথে সাথে আরও একটা সুক্ষ ডাক শুনতে পেলাম ।
বাচ্চা ফুটেছে ।
কি যে আনন্দ লাগছিলো । হাড়ির ভেতরে কেমন সুক্ষ আর ছোট ছোট পাখনা ছাড়া বাচ্চা !
আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
এরপর দেখতাম মা পাখিটি কিভাবে তাদের বাচ্চা গুলোতে খাওয়াচ্ছে ।
মোট তিন টা বাচ্চা ফুটেছিলো । দুইটা ফুটে নিই ।
কিন্তু গতকালকে একটা কষ্টের ঘটনা ঘটলো । আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে যথারীতি দেখলাম পাখি গুলোতে । দেখলাম পাখির বাচ্চা গুলো কেমন পড়ে আছে । মনে হল যেন ঘুমিয়ে আছে । কিছু চিন্তা করলাম না । পরে ডাকা আমাকে জানালো যে কোন কারণে পাখির বাচ্চা গুলো মারা গেছে । এতো মন খারাপ লাগলো । এমন করে কিভাবে মরে গেল কে জানে !
দাদা জানালো যে একা মায়ের পক্ষে নাকি বাচ্চ মানুষ করা সম্ভব না । বাবা পাখি আর মা মাখি মিলে খাওয়ানো লাগে তবেই বাঁচে । কে জানে কেন মরলো?
কয়েকদিন তো ভালই বেঁচে ছিল । কিঁচির মিচির করতো !
আমার কেবল জানতে ইচ্ছে করছিলো মা পাখিটার মনে কেমন অনুভব হচ্ছিলো !
মানুষের জীবনও এমন ! কখন যে শেষ হয়ে যাবে কোন ঠিক নেই ।
এই নিকটা অনেক দিন আগে খোলা হয়েছে । কেন যে খুলেছিলাম নিজেও জানি না । ভাবছি এখানে এই রকম খুচরো ব্লগিং করবো । পাইকারি ব্লগিং তো আর করতে পারি না । এখানে এই খুচরো ব্লগিংই চলবে ! প
হ্যাপি ব্লগিং !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩২