somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শেরজা তপন

১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় এবং অপ্রিয় ব্লগারগন, আশা করি ভাল আছেন। প্রতি মাসের মত এই মাসেও হাজির হয়ে গেলাম আরেকটি ব্লগার'স ইন্টারভিউ নিয়ে। আজকে আমাদের সাথে হাজির আছেন সবার পছন্দের এবং কারো কারো অপছন্দের ব্লগার শেরজা তপন ভাই । অপছন্দের শব্দটা বললাম বলে তপন ভাই আশা করি রাগ করবেন না । আমাদের সবাইকেই কেউ না কেউ ঠিকই অপছন্দ করে । কিন্তু একই ভাবে আমাদের অনেকেই পছন্দও করে । যাই হোক কথা বার্তা কম বলে আসল কাজ শুরু করা যাক ।


অপুঃ কেমন আছেন, আগে সেটা বলেন?

শেরজা তপনঃ আমার পাশাপাশি বেড়ে ওঠা সমবয়্সী বন্ধু প্রতিবেশী স্বজন সহ অনেকের তুলনায় ভালই আছি।

অপুঃ আপনার নাম ব্লগের নিক ‘শেরজা তপন’। শেরজা নামের অর্থ কী? তপন না হয় বুঝলাম শেরজা কি আপনার আসল নাম?
শেরজা তপনঃ ব্লগের পুরনো অনেকেই জানেন এই নামের অর্থ! শেরজা তপন অনেকটা হু ম এরশাদ কিংবা সাকা চৌধুরীর মত, মুল নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে একটা নাম। আমার মুল নামটা একটু অপ্রচলিত, কোথাও বললে প্রথমে বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে। সেজন্যই আমি লেখালেখির শুরু থেকেই এ নাম দিয়ে শুরু করি। এখনো চলছে এভাবে। যারা আমার লেখালেখির সাথে পরিচিত তারা সবাই আমার এই নামটা জানে।

অপুঃ আপনি ব্লগের পুরানোদের একজন । সেই সময়ে প্রথমে ব্লগের সন্ধান কিভাবে বা কোথা থেকে পেয়েছিলেন?
শেরজা তপনঃ সামুর খোঁজ পেয়েছিলাম সম্ভবত প্রথম আলো ব্লগ থেকে।

অপুঃ কী মনে করে নিক খুলেছিলেন এখানে? এই সামু ব্লগ ছাড়া আর অন্য কোন কোন ব্লগে লেখালেখি করেছেন? এছাড়া নেট দুনিয়া ছাড়া বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে লেখালেখির কোন ইতিহাস ছিল কি?
শেরজা তপনঃ সামুর আগে আমি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখি করতাম। প্রথম আলো ব্লগের খোঁজ পেয়েছিলাম ওদের পত্রিকা থেকে। প্রথম আলো ব্লগ ছিল সামু ব্লগারদের দু চোখের শত্রু। ওই ব্লগকে আলু ব্লগ ও ব্লগারদের আলু ব্লগার হিসেবে সন্মোধন করত। ওই ব্লগের মামো( মাহবুব মোর্শেদ-মডু), ত্রিভুজ সহ অসংখ্য ব্লগার এই ব্লগে এসে ভয়ঙ্কর র‍্যাগিং এর স্বীকার হয়ে পালিয়ে গেছে। অনেকে নাম পরিচয় ভাড়িয়ে এসেও টিকতে পারেনি, কেমনে যেন টের পেয়ে যেত সামুর ঘাড় ত্যড়া ব্লগারেরা। তবে ‘মেঘনা পারের ছেলে’ ‘সাদা মনের মানুষে’র মত টিকে গেছে কেউ কেউ। আমি সৌভাগ্যবান যে, প্রথম আলো ব্লগে খুব সরব থাকলেও সামুতে কেউ কখনো আমাকে র‍্যাগ করেনি। আমি ‘নাগরিক ব্লগ’ ‘আমাদের ব্লগ’ সহ অনেকগুলো ব্লগে লিখেছি- সবখানেই বেশ সমাদর পেয়েছি। আমি সবখানেই ছিলাম অনেকটা ছোটবেলার খেলায় ‘দুধভাতের’ মত।
আমি ছাপার জন্য কোনদিন কোন লেখা পাঠাইনি। ২০১৩ সালে একদিন বিখ্যাত প্রয়াত ব্লগার মাহমুদ ভাই ( সামুতে সম্ভবত ‘এফেয়ার্স’ ছদ্মনামে লিখতেন) ফোন করে বললেন, যায়যায়দিনের মৌচাকের ঢিলের বিশেষ সংখ্যায় আপনার একটা লেখা প্রকাশ হয়েছে, দেইখেন। আমি তো অবাক- কেননা আমি কোন লেখা পাঠাইনি।
সত্যিই ‘যায়যায়দিন’ কিনে দেখি ব্লগে প্রকাশিত ‘সাবাকা জো’ নামে আমার একটা লেখা ছেপেছে। সেটা কে পাঠিয়েছিল ওদের তা আমি আজও জানি না।

অপুঃ সামুতে শেরজা তপন ছাড়া আর কোন নিক আছে কি? অথবা মোট কয়টা মাল্টি নিক আপনার?
শেরজা তপনঃ না ব্লগে আমি ১৬ বছর ধরে একটাই নিকে লিখে আসছি। আমার কোন ছদ্ম নাম বা মাল্টি নিক নেই। এসব চিন্তা মাথাতেই আসে না। আমি নিজেকে যথেষ্ঠ আড়ালেই রাখি এরপরে যদি ছদ্ম নামে লিখি তাহলে ব্যাপারটা ‘ভৌতিক’ হয়ে যাবে।

অপুঃ সামু ব্লগ আপনার জীবনের উপরে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে আপনার মনে হয়? আদৌও কি কোণ পরিবর্তন এসেছে?
শেরজা তপনঃ অবশ্যই ফেলেছে। প্রথম আলোর মত ব্লগ এতবড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর ছায়াতলে থেকে হাওয়া হয়ে গেল। অথচ সাড়ম্বরে সবাইকে ডেকে নিয়ে চা পানি খাইয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে ‘মতি ভাই’ কত গালভরা কথা বলেছিলেন।শেষমেষ সচলায়তন হারিয়ে গেল, কিন্তু টিম টিম করে সামু টিকে আছে। এত ঝড় ঝঞ্ঝা সহ্য করে চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে সামু যে এখনো টিকে আছে এ বড় আশ্চর্যের। এ দেশের মন মানসিকতা নীতি নৈতিকতা ভাল মন্দের পার্থক্যগুলো বড্ড ভয়ঙ্করভাবে সুইং করে! আমরা মোটেই সহজ সরল স্বাভাবিক নই- আমরা ভয়ঙ্কর এক জাতি। এই জাতির সাথে দীর্ঘ সময় ধরে তাল মিলিয়ে চলা বা মানিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব!
সামু আমার ব্যক্তি সামাজিক পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আমার ভাবনার জগতের কিছু ভাগ, আমার অবসরের বড় একটা অংশ সামু দখল করে আছে। আমি জানি লেখালেখি করে গুষ্টি দেশ জাতি কিছুই উদ্ধার করতে পারব না। আমিতো লিখতে লিখতে লিখিয়ে হয়েছি-সামুর মত প্লার্টফর্ম না থাকলে আমার যে চরিত্র তাতে বহু আগেই লেখালেখির জগত থেকে আমি অবসর নিতাম। কিন্তু মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ থেকে যেত।
তবে লেখালেখি অনেক কষ্টের- ভাবনার সাথে মেলানো যায় না শব্দের। মানুষ নিজের গল্প বলতে চায়, অন্যের মনের গহীনের খোঁজ নিতে চায়। কিন্তু আমরা এত বেশী ভুল ধরি যে, একজনের স্বভাবিক শিল্প সৃষ্টি সৃজনশীলতা হারিয়ে যায়- ধীরে ধীরে সে পুরোপুরি মেকি হয়ে ওঠে।

অপুঃ যখন ব্লগিং শুরু করেছিলেন সেই সময় এবং এখনকার এই সময়ের ভেতরে কী পার্থক্য লক্ষ্য করছেন?
শেরজা তপনঃ অবশ্যই। পুরনো ব্লগারেরা অনেক বেশী পরিণত হয়েছেন এরা ব্লগার মায়া ছেড়ে যেতে পারেন নি- তারা নিজের না হয় ব্লগের শেষ দিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে থাকবেন। নতুন ব্লগাররা যারা প্রথম পাতায় খুব সহজেই ঠাই পেয়ে যাচ্ছে+

তাদের মধ্যে মাল্টি নিক বাদে সবাই প্রায় খুব বেশী অপরিণত- সেজন্য পুরনো বিজ্ঞ ঋদ্ধ ব্লগারদের আফসোসের অন্ত নেই।

অপুঃ আপনার কি মনে বর্তমান সামুতে ব্লগিং যারা করছে তারা আগের ব্লগার থেকে গুণে মানে ভাল ? গুণ মান বিচারে তাদের লেখা পোস্টের সঠিকতা, বিচক্ষণতা, মন্তব্য প্রতি মন্তব্যের পারদর্শীতা ইত্যাদি দিয়ে বিচার করতে পারেন।
শেরজা তপনঃ কিছু কিছু লেখা তো অবশ্যই ভাল। ১২/১৪/১৫ বছর আগের আমি এমন অনেক পোস্টের রেফারেন্স দিতে পারব যার মান অতি নিন্ম ছিল ও রুচিহীন। তবুও অনেক হেভিওয়েট ব্লগারদের ভালমন্দ মন্তব্য এসেছে ওখানে। ব্লগে অতিরিক্ত মানহীন কবিতা আসে- নিয়মিত, অপ্রয়োজনীয়। বেশীরভাগ কবিতা থেকে শিক্ষনীয় প্রায় কিছুই থাকে না। একটা বিশ্লেষনধর্মী নিবন্ধ লেখার জন্য যে পরিমান সময় ধৈর্য ও অধ্যাবসয়ের প্রয়োজন, তাঁর কিছুই এই ধরণের (!) কবিতাতে প্রয়োজন নেই। সবসময়য়েই ব্লগারদের দাবী ছিল যে কবিতার জন্য আলাদা একটা ‘বিভাগ’ করার জন্য- যারা চায় তারা সেখানে গিয়ে সারাদিন কাব্যের মাঝে ডুবে থাকবে সমস্যা কি। পাঠকেরা কি গদ্য লেখা কবিতার জন্য পড়ে নাকি কবিতা গদ্য লেখার জন্য পড়ে- এটা কিন্তু একটা প্রশ্ন বটে। কিন্তু কবিরা কখনোই এই দাবী তোলেনি যে কবিতাকে গদ্যের থকে আলাদা করা হোক!

অপুঃ আপনার কি মনে হয় যে ব্লগ লিখে আরও ভাল করে বললে, সামুতে ব্লগিং করে সমাজের কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব? যদি উত্তর হয় হ্যা সম্ভব তাহলে আপনার এই ১৫ বছরের ব্লগিং জীবনে কী কী পরিবর্তন আপনি পর্যবেক্ষণ করেছেন যা এই সামু ব্লগের কারণে হয়েছে?
শেরজা তপনঃ একসময় সম্ভব ছিল- এখন ব্লগ সেই সুদিন হারিয়েছে। এক কথায় অনলাইন মিডিয়াকেই মানুষ চোখ বন্ধ করে আর বিশ্বাস করতে চায় না। ফেসবুক, ইউটুবের কল্যাণে মানুষ অনলাইন মিডিয়ার প্রতি পুরোপুরি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। এরপরে বিভিন্ন ফেক মিডিয়া এমন কি আমাদের প্রথম সারির মিডিয়াও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য গুজব অহরহ গুজব ছড়াচ্ছে। ২০০৮ এর নির্বাচনে ইয়াং শিক্ষিত সাহিত্যমনা মানুষদের মধ্যে ব্লগ একটা আলোডন সৃষ্টি করে ছিল। আর রাজাকার বিরোধী আন্দোলন বিশেষ করে শাহাবাগ আন্দোলনে ব্লগের ভুমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কিন্তু এটাই বাঙলা ব্লগের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একদল ভাবল ব্লগারেরা ধর্মোবিদ্বেষী আরেকদল ভাবল ব্লগারেরা যে কোন সরকারীদলের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাঙলা ব্লগ বা ব্লগারদের দেশের জন্য দেবার অনেক কিছু ছিল- সরকার এদের মুল্যায়ন করলে, এদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে দিলে, অযথা দেশদ্রোহী, ধর্মবিদ্বেষী ট্যাগ না দিলে দেশ গঠনে ব্লগারদের ভুমিকা ছিল অসীম। এখানে ব্লগারদেরও নিজেদের কিছু সমস্যা আছে বা ছিল। সিন্ডিকেট, দলাদলি, পরমত সহিষ্ণুতার অভাব, বিভিন্ন ব্লগে আলাদা গ্রুপিং, ধর্ম নিয়ে অতিমাত্রায় নোংরা ভাষায় উগ্র আক্রমণ, স্বাধীনভাবে লেখার ক্ষমতা পেয়ে যথেচ্ছা ব্যাবহার, সমাজের কিছু সম্মানিত ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উগ্র ভাষায় আক্রমনের ফলে একবারে সবশ্রেণীর মানুষের কোপানলে পড়েছিল। ব্লগারদের প্রতি তখন কেউ সহানুভূতি দেখায় নি। ভাল ও বুদ্ধিমান ব্লগারেরা তখন সুকৌশলে ব্লগ ছেড়ে কেটে পড়েছিল বা ব্লগিং বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের অনেকেই তাদের জীবন জীবিকা অন্য পেশা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ফিরে আসতে গিয়ে ব্লগের কোন ট্রেস পাননি। অনেকে জানেনও না সামু ব্লগ আদৌ টিকে আছে কি নেই। কিছু ব্লগার অন্য মিডিয়াতে ভীষন ব্যস্ত- তাদের শুরুটা এখানেই, তারা কিন্তু এখন মিডিয়া কাঁপাচ্ছে। কিছু ব্লগার ফিরে এসে দেখে কেউ তাদের ভাল মন্দ তেমন করে জিগায় না- গোস্যা করে ফিরে যায়। আমি এখনো বিশ্বাস করি এই ব্লগ অনেক জমজমাট হতে পারে- এখনো এদেশের মিডিয়া জগতে বড় ধরণের ঝাঁকি দেয়ার ক্ষমতা রাখে সামু ব্লগের ব্লগারেরা। কেন ব্লগের এ দশা এ নিয়ে বহুবার কথা হয়েছে , সেটা আপনি আমি ভাল করেই জানি।

অপুঃ ব্লগে গ্রুপিং বা সিন্ডিকেট এই শব্দ গুলো এখন শোনা যাচ্ছে খুব । কিন্তু জানেন এই গ্রুপিং সেই শুরু থেকেই ছিল আছে এবং সামনেও থাকবে! এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
শেরজা তপনঃ সমমনা কিছু মানুষ পাশাপাশি থাকলে তাদের মধ্যে একধরনের বন্ধুত্ব হতে পারে, সেটা গ্রুপিং এর পর্যায়ে যেতে পারে। কিন্তু সিণ্ডিকেট শব্দের মধ্যেই কেন যেন একটা নোংরামির ব্যাপার আছে। সিন্ডিকেটের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য থাকে, বিশেষ কোন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মানুষ সিণ্ডিকেট গঠন করে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই উদ্দেশ্য সৎ থাকে না।
আমাদের ব্লগে কিন্তু নারী ব্লগারদের মধ্যে একদম ব্লগের শুরু থেকেই অদৃশ্য একটা গ্রুপিং ছিল যা এখনো চলমান। বিষয়টা খারাপ না। কবিদের মধ্যে এক ধরণের গ্রুপিং আছে। আমি সবসময় সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেছি- কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও সবসময় সেটা সম্ভবপর হয় না। । আসলে পাশাপাশি থেকেও আপনার পরিবারের সবার সাথে যেমন একই রকম সম্পর্ক হবে না, তেমন ক্লাসের সমবয়সী সবার সাথেও আপনার বন্ধুত্ব হবে না। ব্লগের ব্যাপারটাও আপনি এমনি ভাবেন। আমি গ্রুপিং ব্যাপারটা ভাল চোখেই দেখি। কিন্তু সিণ্ডিকেটটা পছন্দ নয়।

অপুঃ একজন ভাল ব্লগার হওয়ার জন্য কি ভাল মানুষ হওয়া পূর্ব শর্ত? এই বিষয়ে আপনার মত কী?
শেরজা তপনঃ আমি বিশ্বাস করি ব্লগে সত্যিকারে কিছু ভাল মানুষ আছেন, যাদের সাথে না মিশেও বলে দেয়া যায় যে এরা ভাল মানুষ। তবে ‘তোমার নায়কের সাথে সাক্ষাৎ না হওয়াই উত্তম!’ একথা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি। আপনি কাউকে পরিপূর্ণ ভালমানুষ হিসেবে পাবেন না কিংবা আপনার কাছে যেটা ভাল মানুষের মানদণ্ড তাঁর সাথে হয়তো অন্য ভাল মানুষ ভাল লেখকের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গীর হয়তো মিল নেই। ধরুন; একজন বিবাহবহির্ভুত নারীসঙ্গ ( দু’জন পরিপক্ক মানুষের পরস্পর সম্মতিতে) খুব স্বাভাবিকভাবে নেয়, কিন্তু আর একজনের কাছে মনে হয় এটা গর্হিত অপরাধ; তাঁর দৃষ্টিতে এধরনের মানুষ কখনোই ভাল মানুষ হতে পারে না। আসলে সবার দৃষ্টিতে আমরা কেউ পরিপূর্ণ ভাল মানুষ নই। তবে বেসিক সৎ, ব্যক্তিত্ত্ববান, আত্মমর্যাদাশীল, নিজেকে সবসময় ছোটভাবে, অন্যকে মুল্যায়ন করে, মোটামুটি রুচিশীল, আড্ডাবাজ, জানার বা শেখার অদম্য ইচ্ছা আছে, বিপরিত লিঙ্গকে সম্মান করে, জাত পাত ধর্ম কোন কিছুকে অবমুল্যায়ন করে না, নিজের পরিবারকে ভালবাসে, স্বাবলম্বী; এই ধরণের মানুষকে ভাল ব্লগার হবার জন্য এই গুণ গুলোই যথেষ্ঠ মনে হয়।তবে ভাল মানুষ হবার জন্য আরো অনেক গুণ লাগে।

অপুঃ বিশ্বের এতো জায়গা রেখে আপনি কী মনে রাশিয়াতে পড়তে গিয়েছিলেন?
শেরজা তপনঃ প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর বেশী বড় হয়ে যাচ্ছে। এই উত্তরটা অনেক বেশি বড় হয়ে যাবে- আসলে এটা নিয়ে পুরো একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছে ছিল।
আমার রাশিয়া যাবার কথা শুনে আমার এক দুলাভাই বলেছিল; দুনিয়ার এত দেশ থাকতে তুমি এই বন জঙ্গলে কেন পড়াশুনা করতে যাচ্ছ?
আমি বলতে গেলে প্রায় লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন বিক্ষিপ্ত চিন্তা ও অস্থির চিত্তের একজন মানুষ। যেটা আমার লেখাতেই প্রকাশ পায়। নব্বুই সালে আমি এখনো যে এলাকায় বাস করি সেখানকার উঠতি বয়সী একঝাঁক তরুণদের সাথে সখ্যতা হয়ে যায়।
আমি তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আর ওরা ইন্টার পরিক্ষা দিয়ে ছূটি কাটাচ্ছে। পাইকপাড়া, আগারগাঁও, মিরপুর ১ থেকে ৬ নম্বর , রূপনগর থেকে ফার্মগেট হয়ে হাজারিবাগ থেকে পর্যন্ত ছেলেরা এখানে আসত নিয়মিত আড্ডা দিতে। উফ্ সে কি আড্ডা!! (এই আড্ডা নিয়ে বিশাল পরিসরে গল্প লেখা আছে)
সকাল দশটায় শুরু হয়ে রাত এগারোটার পরেও কারো কারো বন্ধ হয়ে যাওয়া গেটের ফাঁক দিয়ে চলত, ‘’দোস্ত যাইগা খোদা হাফেজ, কাইল দেখা হবে’’। এই শুনে; ‘’একখান কথা কইতে ভুইল্যা গেছি...’’ রাত তামাম হয়ে যায় তবু ভুলে যাওয়া কথা শেষ হয় না। ওই আড্ডায় সবার প্রিয় শুকনা পটকা দুর্দান্ত রসবোধের আবুল হাসান যে ছিল আড্ডায় শুধু আবুল্যা যা কিংবা ঘটি আবুল। ইন্টারে ভালো রেজাল্ট সত্বেও নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাপের চাপে বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেলে পরিক্ষা দিয়ে চান্স না পেয়ে বাসায় গঞ্জনা থেকে বাঁচতে পড়ালেখার উদ্দেশ্যেই যে কোন উপায়ে দেশ থেকে পালানোর প্লান করল। তখন পড়াশুনার জন্য ইউরোপ ঘেঁষা সহজে যাবার অপশন ছিল দুটো; এও হল সাইপ্রাস আর সদ্য সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়া রাশিয়া, উক্রাইন, উজবেকিস্তান, জর্জিয়া সহ কিছু দেশে।
হাসান যেহেতু বাম ঘেঁষা কিংবা কমিউনিস্ট ভাবধারার যুবক ছিল সেহেতু তাঁর ‘অটো চয়েজ’ ছিল রাশিয়া। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে; বয়স কম দেখে একা একা নতুন অজানা দেশে যেতে ভয় পাচ্ছিল।আড্ডার সবাই ও সায় দিচ্ছে না।
আমি ছিলাম উরাধুরা মানুষ। মনে যা চায় তাই করি; পরিবার থেকে কখনোই কোন কিছুতে বাঁধা দেয় নি। ওরা বকরি হিসেবে কতল করল আমাকে, তপন ভাই, হাসানের সাথে আপনি যান। ও আপনার সাথে সবচেয়ে কমফোর্ট ফিল করে। আর আপনি যাচ্ছেন শুনলে ওর বাপ আর না করবে না।
বন্ধু অন্তঃপ্রান ছিলাম আমি- আগপিছু না ভেবে রাজী হয়ে গেলাম। বড় ভাই জাপানে ছিল তখন; তাঁকে বললাম, সেও টাকা পয়সা দিতে রাজী হল। (মাঝে অনেক গল্প স্কিপ করি)
পাসপোর্ট করলাম। তখন নুর আলীর ‘বোরাক স্টুডেন্ট ভিসায় দেদারসে ছাত্র পাঠাচ্ছে রাশিয়া ও তাঁর পার্শ্ববর্তী দেশে। এজেন্সীর মাধ্যমে ওখানকার একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে ভিসা টিসা করার পরে – হঠাত একদিন ভীষণ কাঁদো কাঁদো হয়েনহাসান বলল তাদের যেই জমি বিক্রি করে তাঁকে টাকা দেবার কথা ছিল সেটা বিক্রি হয়নি। এই মূহুর্তে সে যেতে পারছে না। ভিসা যেহেতু হয়ে গেছে ফ্লাইটের ডেট ও কনফার্ম করেছে- সেহেতু আপনি চলে যান আমি টাকা যোগাড় হলে দুয়েক সপ্তাহ পরে আসছি। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম!! হাসানের বাবার সাথে কথা বললাম, বড় ভাই টাকা লোন দিতে চাইল কিন্তু তিনি ইগোজনিত কারনে লোন নিলেন না।
সে এক ঐতিহাসিক বিদায় সম্বর্ধনা ছিল। যাবার আগে দশ –বারোদিন আড্ডায় সে কি উত্তেজনা!!
আমি যখন এরোফ্লোতের সিড়ির শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরে হাত নাড়তে গেলাম তখন দেখি দুরে পুরো রেলিং জুড়ে ৩০/৩৫ জন সদ্য যুবক ছেলে উদ্ভ্রান্তের মত চিৎকার করছে কেউ কেউ কাঁদছে আর সবেগে হাত নাড়ছে!
আমি রাশিয়া যাবার পরে আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা চিঠি লিখেছিল- আমার ধারনা; বন্ধুকে লেখা বন্ধুদের সর্বশ্রেষ্ঠ চিটি ছিল সেটা।
রাশিয়ায় যোগাযোগের ব্যাপক সমস্যার জন্য আমাদের আবুল্যা মানে আবুল হাসান আর পরে যায়নি বা যেতে পারে নি। পরবর্তীতে ম্যানচেস্টারে এম এস করে, সিডিনি ইউনিভার্সিটিতে মাইক্রো ক্রেডিটে ডক্টরেট করে বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি ইউনিভার্সিটিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছে। (ওর জীবন দেখে মনে হয়েছে ভবিষ্যতের স্বপ্নে বাবা মাকে তাদের পছন্দের কিছু ছেলে মেয়েদের উপরে চাপিয়ে দেয়া উচিৎ নয়- প্রত্যকেই তার নিজের পথ খুঁজে নেয়)
তাঁর সাথে এখনো আমার বন্ধুত্ব আগের মতই আছে। সে দুর্দান্ত পড়ুয়া ও দারুণ লেখক। লেখালেখিতে আমাকে ভীষন উতসাহিত করে।
তবে সে মাঝে মধ্যে আফসোস করে বলে আমার জীবন নাকি অনেক রঙ্গীন আর ঘটনাবহুল- আর তাঁর জীবনটা একেবারেই সাদামাটা ও ম্যাড়ম্যাড়ে। এখনো নাকি তাঁর ব্যাপক মন খারাপ হয় রাশিয়া যেতে না পারার জন্য।

অপুঃ এই পর্যন্ত কয়জন রাশিয়ান প্রেমিকা হয়েছে আপনার?
শেরজা তপনঃ এখানেই সবাই ভুল ভাবে। রাশিয়ায় আমার বেশ ক’জনা মেয়ে বন্ধু ছিল কিন্তু প্রেমিকা একজনও ছিল না। আমি বেশি বিশদে যাব না, নাহলে আমার লেখার চরিত্রের সাথে আমাকে মেলাতে কষ্ট হবে।
আমি যে ক’টা প্রেম করেছি সবগুলো স্বদেশে। ওদের কারো গল্প কিন্তু করা হয়নি।

অপুঃ যদি পুতিন সাহেব আপনাকে রাশিয়াতে স্থায়ী ভাবে থাকার সুযোগ দেয়, আপনি কি সেটা গ্রহন করবেন?
শেরজা তপনঃ রাশিয়া অবশ্যই আমার খুব পছন্দের জায়গা। আমি গরম দেশ একদম অপছন্দ করি, তবুও বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না।

অপুঃ ব্লগের মডারেশন সম্পর্কে আপনার একেবারে নিজেস্ব মতামত দিন দেখি ! আরও ভাল করে বললে সামুর মডু প্যানেল তাদের দায়িত্ব পালনে কতটুকু সফল বলে আপনি মনে করেন?
শেরজা তপনঃ জাদিদ ভাই হয়তো গোস্যা করবেন তবুও বলি, আমার কেন যেন মনে হয় উনি ব্লগ থেকে ফেসবুকে একটু বেশী একটিভ ( যদিও এখানে তেমন কোন কাজ নেই সারাক্ষন)। তবে তিনি মডারেটর হিসেবে বেশ দক্ষ। সম্ভবত তাঁর পরিবার জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় ব্লগ নিয়ে ভাববার তেমন সময় পান না। ব্লগ নিয়ে আরো সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। আমি জানিনা এই ব্লগের পেছনে কে বা কাহারা কাজ করেন; তবে কেন যেন মনে হয় সামু ব্লগের বিশ্বব্যাপী বাঙ্গালীদের কাছে যে পরিচিতি, একটু চেষ্টা করলেই অনেক বেশী একটিভ করা যায়।

অপুঃ আমাদের পুরানো ব্লগাদেরদের প্রায় সবাই ব্লগ ছেড়েছেন । কিন্তু এদের অনেকেই কিন্তু লেখালেখি ছাড়েন নি । নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল বা নিজেস্ব ব্লগে কিন্তু ঠিকই লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন । সামু ছেড়ে চলে যাওয়ার পেছনে তাদের কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
শেরজা তপনঃ এই কারনটা আগেই বলেছি। যাদের আগ্রহ ইচ্ছা আছে তারা ফিরে আসবেন। তবে ২০১৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত অনেকবার ব্লগ বন্ধ থাকায়, বিভিন্ন নেটোয়ার্ক থেকে এখনো ব্লগে ঢুকতে না পারায় অনেকে ভেবেই নিয়েছে সামু ব্লগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কোন মিডিয়াতে সামু ব্লগ নিয়ে তেমন কিছু লেখাও হয় না, এমনকি সামু নিজেও প্রচার প্রচারনায় একেবারেই উৎসাহী নয়। অনেকে হাল ছাড়েনি, লেগেছিল দেখে ব্লগে টিকে আছে। কেউ কেউ ভিপিএন দিয়ে ব্লগ চালিয়েছে। ব্লগিং করা অনেক ঝক্কি ঝামেলার, এখনো কিছু বিষয় সেই আদ্যি আমলের রয়ে গেছে-আপডেটেড হয়নি।
তারপরের ব্লগ এক অন্যরকম মজার যায়গা। একবার যে মজেছে, সে আর ছেড়ে যেতে পারে না- ঘুরে ফিরে আসেই। হাজার খানেক মানুষ প্রায় সবসময় চোখ রাখে কিন্তু এখনো ব্লগে।

অপুঃ আপনাকে যদি মডুর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে কোন একজন ব্লগারকে আপনি ব্লগ ছাড়া করবেন? (একজনকে ব্যান করতেই হবে এমন শর্তে আপনাকে মডুর ক্ষমতা দেওয়া হবে)
শেরজা তপনঃ যার কথা বলব তাঁর চিরশত্রু হয়ে যাব আমি। আমি এই টাইপের মানুষই না, এমনি ব্লগে ব্লগার খড়া চলছে তারপরে কেন আমি নতুন করে কাউকে ব্লগ ছাড়া করব?

অপুঃ আপনার কি মনে হয় এই সামু ব্লগকে আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনার মতে কী কী করতে হবে?
শেরজা তপনঃ এই নিয়ে ব্লগে আমি আপনি সহ অনেকেই বহুবার আলোচনা করেছি। এখানেও আগের কিছু প্রশ্নোত্তরে কিছু কথা বললাম। ব্লগ আপডেট করতে হবে, ব্লগে প্রবেশ,লেখালেখি আরো সহজতর করতে হবে, প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে, কিছু আয় রোজগারের ব্যাবস্থা করতে হবে। ব্লগারেরাই পারে ব্লগকে টিকিয়ে রাখতে। অনলাইন মিডিয়ায় এইটাই একমাত্র মাধ্যম যেখানে ইউজারেরা ইচ্ছে করলে মিডিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

অপুঃ ইদানীং সামুতে কম কম সময় দিচ্ছেন? কারণ কী বলেন দেখি?
শেরজা তপনঃ আমার ডেস্কস্টপ কম্পিউটার ছাড়া লেখালেখি করতে ভাল লাগে না। কখনো সময় হয় না, কখনো সময় থাকলে ইচ্ছে হয় না। মাঝে মধ্যে ব্যাবসা ও পরিবারে একটু বাড়তি সময় দিতে হয়। চোখের কিছু সমস্যা, বিশ্রী গরম ও দেশের সার্বিক অবস্থায় মেজাজ খিচড়ে থাকে সারাক্ষন- এজন্যই মনে হয় ব্লগে আসা হয় কম।

অপুঃ সামুকে ঠিক কতটা ভালবাসেন? জীবনের অন্যান্য ভালোবাসার জিনিসের সাথে একটা তুলনা দেন ! যে জিনিস বা যাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসেন (ধরেন আপনার সন্তানকে) সেটাকে ১০০% ধরে সামুর প্রতি ভালোবাসার একটা শতকরা নম্বর বলেন।
শেরজা তপনঃ আমার ছেলের জন্মের পরে আমি সামু ব্লগে লেখালেখি শুরু করি। তাঁর জন্ম আগষ্ট ২০০৮ সালে, আমি সামুতে লেখালেখি শুরু করি ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। সামু আছে একরকম না থাকলে হয়তো এই সময়টা আমি অন্যভাবে কাটাতাম, অন্যখানে দিতাম, অন্যকিছু করতাম। তবে লেখালেখি তেমন হত না সেটা নিশ্চিত। ধরুন আমার যদি সন্তান না হত?
আমার ছোট ভাই আমার পরের বছর বিয়ে করে, এখনো সে নিঃসন্তান। তারা একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছে। কদিন আগে কেউ একজন বলল,মেয়েটা নাকি উদাস হয়ে একদিকে তাকিয়ে থাকলে চোখটা ট্যারা মনে হয়! আমার ভাই আর তাঁর বউ সেই মেয়েকে নিয়ে পাগলের মত এখন এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে আরেক ডাক্তারের কাছে দৌড়াচ্ছে ( এর পেছনে একটা বিশেষ কারন আছে)। মানুষ কখনো গর্ভের সন্তান থেকে দত্তককে বেশী ভালবাসে।
সামুকে আমি শতভাগই ভালবাসি এখন। তবে সামু না থাকলে এর অভাবটাই তো উপলব্ধি করতাম না, তখন ভালবাসা যাচাই করার কোন ব্যাপারই থাকত না।
যে বধির সে জানেই না শব্দ কি জিনিস। সেজন্য সেটা নিয়ে তাঁর কোন আফসোস নেই। আফসোস আমাদের যারা যারা শব্দ শুনি তারা ভাবি; ও ভীষন হতভাগা!

অপুঃ সামুতে আপনার পছন্দের এবং অপছন্দের ব্লগারের নাম বলুন দেখি ! বেশি না একজন দুজনের নাম বললেই চলবে!
শেরজা তপনঃ এটা আরেকটা কঠিনতম প্রশ্ন। কিছু ব্লগার আছে যারা আমার পছন্দ অপছন্দের কোন তালিকাতেই পড়ে না। আমি সেইসব ব্লগারদের অপছন্দ করি; যারা নিয়মিত পোষ্ট দেয় কিন্তু কারো লেখা পড়ে না ও মন্তব্য করে না এমনকি অনেকে নিজের পোস্টের মন্তব্যের উত্তরও ঠিকমত দেয় না। মিথস্ক্রিয়া না হলে ব্লগ জমে না।
ব্লগার সোনাগাজী ও অর্ক, সাসুম একাধারে আমি পছন্দ অপছন্দ দুটোই করি। এদের সবাইকে ব্লগে প্রয়োজন আছে।

অপুঃ অনেক গুলো প্রশ্ন হয়ে গেল । আপাতত আজকে এখানেই শেষ করছি – তবে শেষ কেওটা প্রশ্ন; এই যে আন্দোলন হল, এটা আপনি কোন চোখে দেখেন?
শেরজা তপনঃ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে আমার মতামত আমি ব্লগে বেশ সরব ভাবে জানিয়েছি। ব্লগের সবাই জানে আমি যুবাদের পক্ষে। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ হয় নিশ্চিত কিন্ত সেই সাথে ধীরে ধীরে আত্মকেন্দ্রিক, ভিতু আর স্বার্থপর হতে থাকে।
তরুণেরা ভুল করবে- সেই ভুল থকেই শিখবে। আমি বিভিন্ন পোস্টে আমার অবস্থান পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছি। ধারনা করি এই নিয়ে কোন ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই। যদিও জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের ব্যাখ্যাটাই আমার কাছে মনে হয় ধোঁকাবাজি। ব্যক্তিগত, দলগত এবং জিও পলিটিক্সে স্বার্থসিদ্ধির জন্য এর থেকে চমৎকার তন্ত্র আর মানুষ উদ্ভাবন করতে পারেনি। আমি সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে একটা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি বলে এই সব কিছুর জন্য যখন তখন জান কোরবান করার কোন মানে হয় না। জীবনতো একটাই- এর থেকে আর মূল্যবান কি-ই বা আছে! পৃথিবীর যে কোন ভাষাভাষি জাতি ও ধর্মের যে কোন অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করলে সেটাকেই আমি এমন আপন মনে করতাম। সেজন্যই মাঝে মধ্যে দেশ জাতি ধর্ম ভাষা এইসব নিয়ে আন্দোলন ও জীবন বলিদান অনেক সময়ই আমার কাছে তুচ্ছ কারণে নিক্ষেপিত বর্জ্য মনে হয়। তারপরও জীবন চলছে তার নিজস্ব গতিতে- ভাল না লাগলেও অনেক সময় মেনে নিতে হয়, কখনো নিজের ভালোলাগা বা স্বার্থের প্রয়োজনেই দেশ জাতি ভাষা ও ধর্মকে আকড়ে পড়ে থাকি। ধন্যবাদ

অপুঃ ইন্টারভিউয়ে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ । পাঠকরা কিছু প্রশ্ন করবেন আশা করি । সুময় সুযোগ মত সেগুলোর উত্তর দিবেন !
শেরজা তপনঃ হ্যা কিছুটা সময় থাকবো ব্লগে । পরে এসেও উত্তর দেওয়া যাবে ।

আজকের ইন্টারভিউ তাহলে এখানেই শেষ হল । প্রিয় ব্লগারগন, শেরজা তপন ভাইয়ের কাছে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন করার থাকে তাহলে করতে পারেন । সময় সুযোগ মত তিনি আশা করি উত্তর দিবেন ।


আগের পর্বগুলো
জুল ভার্ন
সাড়ে চুয়াত্তর
কাল্পনিক_ভালোবাসা
ভুয়া মফিজ
শায়মা

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৫
৪৫টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সন্তোষ

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮

সন্তোষ
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

বিরান ভূমি, কোনো মানুষ নেই
এখানে বেড়ে ওঠছে এক পুরুষ
সে দেখে নাই কোনো নারী
পায়নি রমণীর ছোঁয়া, মায়া
পায়নি প্রেম, ভালোবাসা
হঠাৎ একদিন তার বয়ঃসন্ধি
ঘুমের ঘোরে এলো এক সুন্দরী
দেখতে ঠিক যেন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যসন্ত্রাস

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩



জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান যেমন আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাগুলো উন্মোচিত করেছে, তেমনি এটি ভারতের বাংলাদেশ সংক্রান্ত কূটকৌশল, সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং এর ষড়যন্ত্রগুলোকে সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে এনেছে। শত্রু যখন তার চেহারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাত্রিজাগর রজনীগন্ধা, করবী রূপসীর অলকানন্দা.....

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬



আমাদের দেশে নানান ধরনের ও রং এর অলকানন্দা দেখা যায়। এরা আমাদের দেশীয় ফুল না। তবে বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ 'Allamanda'-র সাথে মিল রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নামকরণ করেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধ হোক এই ফ্যসিবাদী ব্যক্তিপুজার রেওয়াজ

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেওয়াজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবেন না।

লিখেছেন জাদিদ, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১১

সাম্প্রতিক সময়ে শিবির নিয়ে অনেক মিথ্যাচার হচ্ছে। ইসলাম রক্ষা এবং দ্বীনের প্রচারে যে দায়িত্ব শিবির পালন করে যাচ্ছে সেটা অতুলনীয়। অতীতেও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লগ্নে ইসলামী ছাত্র সংঘ তথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×