somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ যাত্রার সময়

১১ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সোমবার বড় মামা মারা গেলেন। মিডফোর্ড হাসপাতালে ছিলেন ১৭ দিন। এক পর্যায়ে ডাক্তাররা বললেন যে তাদের আর কিছুই করার নেই। শেষ সময়ে আমরা যেন তাকে আপন মানুষের কাছে নিয়ে যাই। মামাতো বোন থাকে মগবাজারে। আরও কিছু আত্মীয়স্বজন আছে এদিক ওদিক। ঠিক হলো বাসাতেই নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনটার দিকে এম্বুলেন্সে করে রওয়ানা দিলেন বাসার উদ্দেশ্যে। তবে বাসায় আর জীবিত পৌঁছাতে পারলেন না। আমার বড় মামার এক ছেলে, এক মেয়ে। মামাতো বোনটা মগবাজারে থাকে। আর মামাতো ভাই অনেক দিন ধরেই মালেশিয়াতে। মামা যখন মারা যান তখন এম্বুলেন্সের ভেতরে মামী ছিলেন। মামার দুজন আত্মীয়ও ছিলেন সাথে।

দূরের কেউ মারা গেলে আমার কিছু মনে হয় না, কিন্তু যখন কাছের পরিচিত কেউ মারা যায় তখন মনের ভিতরে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা এসে ভর করে। এতদিনের পরিচিত একজন মানুষ, আর তার সাথে কথা হবে না। মৃত্যুর মতো সত্য ব্যাপার আর কিছু নেই, তারপরেও এই ব্যাপারটা আমার এখনও কেন জানি বড় অস্বাভাবিক মনে হয়। একবার মারা গেলেই সব শেষ!

মৃত্যু থেকে আমি সব সময় দূরে থাকি। কোথাও কারো মৃত্যু হলেই আমি সেই জায়গার ধারে কাছে যাই না। কিন্তু আমি জানি, কোনো না কোনো দিন এই মৃত্যু ঠিকই আমার সামনে হাজির হবে। ‘আর কত পালাবে! আমি চলে এসেছি।’ যতই বয়স বাড়ছে, নিজের মৃত্যুর থেকে পরিবারের মানুষের মৃত্যুর ভয় আমার ভেতরে জেগে বসছে। নিজে মরে গেলে তো গেলামই। ঝামেলা শেষ হলো, কিন্তু যখন কাছের মানুষ মারা যাবে তখন?

আমার মামাতো ভাইটার মনের অবস্থা কেমন এখন আমি জানি না। যখন সে জানতে পারল যে তার বাবা আর বেঁচে নেই তখন প্রথম কোন কথাটা মনে হয়েছিল! এতদিন ধরে সে দেশের বাইরে। এই বছর শীতে তার দেশে আসার কথা ছিল। তার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। হয়তো চলেও আসবে। সব কিছু আগের মতোই হবে কিন্তু কিছু একটা পার্থক্য ঠিকই রয়ে যাবে! আগের মতো থাকলেও আর কিছুই যেন আগের মতো থাকবে না।

আমার ছোট মামা ঠিক তার আগের দিনই ভারতে গেলেন। সারা জীবন দুই ভাই থেকে এসেছেন পাশাপাশি। অথচ এই মৃত্যুর শেষ সময়ে দুইজন দুই দিকে। সে জানেও না তার ভাই মারা গেছে। যখন দেশে আসবে, তখন যখন জানতে পারবে যে তার বড় ভাই আর নেই, তখন তার মনের অবস্থা কেমন হবে? এই অনুভূতিগুলো আমাদের কারোরই বোঝার কোনো উপায় নেই, কোনো ক্ষমতা নেই। এটা কেবলমাত্র যখন আমরা নিজ থেকে অনুভব করি তখনই কেবল বুঝতে পারি।

এখন এমন একটা বয়সে এসে পৌঁছিয়েছি যে এই মৃত্যুর খবর প্রায়ই শুনতে পাই। পরিচিত মানুষগুলো সবাই আস্তে ধীরে চিরদিনের মতো চলে যাচ্ছে। বয়স এমন একটা নিয়ন্ত্রনহীন ঘড়ি যা চলছেই কেবল। কোনো কিছু দিয়েই তাকে আর থামিয়ে রাখা যায় না। সবাই বলে মৃত্যু আছে বলেই জীবন এত মূল্যবান। যদি মৃত্যু না আসত তাহলে জীবন এত সুন্দর, এত মূল্যবান মনে হত না। এই কথাগুলো হয়তো কাব্যিক ভাষায় পড়তে কিংবা বলতে ভাল শোনায়। এমনকি নিজের বেলাতেও হয়তো সত্য মনে হতে পারে, কিন্তু যখন কাছের মানুষ মারা যায় তখন এই কাব্যিক সত্যকে আর সুন্দর মনে হয় না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তখন মনে হয় যে সে বেঁচে থাকুক। আর কটা দিন নিঃশ্বাস নিক।











Image by Aberrant Realities from Pixabay
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×