একবার একজন ব্যক্তি মনে মনে ঠিক করে নিলেন যে বাসায় যে কুকুরটা প্রতিদিন এসে ঘেউ ঘেউ করে তার লেজটা তিনি সোজা করবেন । ছোট বেলা থেকেই তিনি শুনে এসেছেন যে কুকুরের লেজ কখনই সোজা হয় না । সবাইকে ভুল প্রমান করে দেওয়াই হচ্ছে তার লক্ষ্য । যেই ভাবনা সেই কাজ । পরের দিন যখনই কুকুরটা তার বাসায় এসে হাজির হল তখনই তিনি কুকুরটাকে আদর করে খেতে দিলেন । বাসার মানুষ সহ আশে পাশের অনেক মানুষই তার মনের এই অভিসন্ধির কথা জানতে পেরে তাকে বারবার বলতে লাগলো যে সে কেবলই বৃথা পন্ড শ্রম করছে । এই লেজ কখনই সোজা হবে না । কিন্তু সে মানতে নারাজ । তার কাছে মানুষ চেষ্টা করলে কিনা পারে !
প্রথমেই ঠিক হল লেজটা একটা সোজা লাঠির সাথে বেঁধে রাখ হবে বেশ কিছু দিন । আশা যায় যার সেটা সোজা হবে । তাই করা হল । লেজটার সাথে একটা লাঠি বেঁধে দেওয়া হল । বেশ কিছুদিন এভাবে রইলো লেজটা । কিন্তু যখনই লাঠিটা খুলে দেওয়া হল দেখা গেল যেই লাউ সেই কদু । লেজ হয়ে গেছে বাঁকা । এবার লেজটাকে বেশ কিছু সময় তেল মালিশ করা হল । তেল মালিশের পর লেজটাকে এবার ভরা হল সোজা একটা পাইপের ভেতরে । তারপর সেখানে রেখে দেওয়া হল বেশ কিছু দিন । আশা করা হল যে এবার হয়তো লেজটা সোজা হবে । কিন্তু দেখা গেল পাইপটা খুলার সাথে সাথেই লেজটা আবারও আগের স্থানে চলে গেল । কোন লাভই হল না । এরপর সে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করলো । কথিত আছে যে লেজের উপর মণকে মণ ঘি ঢালকে নাকি লেজ সোজা হয় । সেই ব্যক্তি আসলে তাই করলেন । বাজার থেকে মণকে মণ ঘি কিনে আনা হল । আশে পাশের মানুষ তারই পাগলামী দেখে হাসলো কেউ বা বিরক্ত হল । কিন্তু সে নাছড়বান্দা । লেজ সে সোজা করে ছাড়বেই । কিন্তু কয়েক মণ ঘি ঢালার পরেও দেখা গেল লেজের কোন উন্নতি হয় নি । লেজ সেই বাঁকাই রয়ে গেছে।
কোন কাজ হল না । এবার সেই ব্যক্তি অন্য পথ ধরলেন । বাইরে থেকে যেহেতু কাজ হল না তাই এবার ঠিক যে ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে হবে । কুকুরের লেজটা আসলে কক্কিজিয়াল বা পুচ্ছ দেশীয় কশেরুকা দিয়ে তৈরি । ২১/২৩টা পুচ্ছ দেশীয় কশেরুকা দিয়ে কুকুরের লেজ তৈরি হয়ে থাকে । এবং প্রতিটি কশেরুকা অতিনমনীয় অস্থি সন্ধির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে । এই কারণেই কুকুর অতি সহজেই এই লেজ নাড়াতে পারে আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে । ঠিক হল যে এই লেজের ভেততে অতি শক্ত দণ্ড প্রবেশ করানো হবে যাতে করে সেটা সোজা থাকতে পারে । পশু ডাক্তার ডাকা হল । অপারেশ সম্পন্ন করা হল কিন্তু যখন কুকুরকে আবার স্বাভবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হল দেখা গেল প্রবল বেজে কুকুর নিজের লেজ ঠিক আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো । অল্প কয়েকদিন সোজা রইলো বটে কিন্তু প্রবল বাকা করার চেষ্টা ফলে এক সময় সেই সুক্ষ দণ্ডের কার্যকরীতা নষ্ট হয়ে গিয়ে লেজ আগের মতই বাঁকা হয়ে গেল !
অবশেষে সেই ব্যক্তিটি শেষ আরেকবার চেষ্টা করলেন । কুকুরের সেই লেজটা সে এক কোপে কেটে নিলেন । কুকুরটি অবশ্য খুব চিৎকার চেঁচামিচি করলো । পরে এক সময় শান্ত হয়ে গেল । এরপর সেই ব্যক্তিটি কুকুরের সেই লেজটা একটা নির্দিষ্ট সেই আকারের ভেতরে রেখে দিলো লম্বা সময় । তারপর যখন যখন লেজটা বের করে আনলো তখন দেখা গেল .....
কী দেখা গেল বলে মনে হয়?
লেজটা কি সোজা হয়েছিলো নাকি চিরায়িত স্বভাবের কারণে সেই আগের মত বাঁকাই হয়ে গেল ?
সংযুক্তিঃ কয়েকজন ব্লগারের মন্তব্য থেকে সংযুক্তিটা যুক্ত করে দিলাম । দয়া করে অন্য কোন কিছু সাথে এই পোস্টের কোন সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করিবেন না কেউ । ইহা কেবলই লেজ বাঁকা দিয়ে করা পোস্ট । সংযোগ করলে তার জন্য লেখক কোন ভাবেই দায়ী থাকবে না ।