অনলাইনে পরিচিত মানুষদের কাছে আমার সম্পর্কে একটা মিথ হচ্ছে, আমার বুঝি অনেক গুলো প্রেমিকা । এতো এতো প্রেমের গল্প লেখার জন্য এমনটা অনেকের মনে হয়েছে । অনেকে এখনও ভাবে নিশি নামের আমার প্রেমিকা ছিল । আগে গল্পে নিশি নামটা বেশি ব্যবহার করতাম । এই প্রেমিকা মিথটা আমি ইচ্ছে করেই খোলাসা করি নি । মানুষ ভাবতে পছন্দ করে আর বাঙালী তো এই সব বিষয় পেলে নিজের মত করে কত কিছু যুক্ত করে ভাবতে পছন্দ করে । ভাবুক, কল্পনা করে নিক নিজের মত । এতে যদি তারা আনন্দ পায়, পাক । যাই হোক নিজের প্রেম কাহিনী নিয়ে কয়েকটা পোস্ট লিখেছি । সেই ছোট্ট বেলার স্কুলে থাকা কালীন প্রেম কাহিনী । এমনই একটা পোস্টে একজন কমেন্ট করলেন যে ''আপনার এতো গুলো প্রেমিকা, কোন প্রেমিকার কথা বলছেন'' । এই কথা টুকু মনে হয় পরিস্কার করা দরকার । এই প্রেমিকা কথন সিরিজ নিয়ে যতগুলো পোস্ট লিখেছি তার সব গুলোই এখনও আমার একেবারে প্রথম জীবনের প্রথম প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা । যখন স্কুলে পড়তাম তখনকার গল্প । যাই হোক আজকের গল্প শুরু করা যাক ।
গত পোস্টে লিখেছিলাম আমার প্রথম ডেটিংয়ে যাওয়ার গল্প । আজকের পোস্ট টা হচ্ছে প্রেমিকার বাসায় দাওয়াত খাওয়ার গল্প । তাও স্বয়ং প্রেমিকার মায়ের দেওয়া দাওয়াত । আমাদের সময়ে তো আর এখনকার মত এতো মোবাইল ফেসবুক হোয়াটসএপ ছিল না । আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি । আমরাা দুজনেই একে অন্যকে অনেক চিঠি লিখতাম । চিঠির সব থেকে বড় সমস্যাটা ছিল তার কাছে চিঠি পৌছানো এবং হাতে পৌছানোর পরে চিঠি লুকিয়ে রাখা । প্রিয় মানুষের প্রতিটা চিঠিই কী আপন আর প্রিয় একট বস্তু সেটা বোধকরি কাউকে আলাদা ভাবে বলে দিতে হবে না । তাই সেগুলো নিজের কাছে রাখা, সংরক্ষণ করার একটা স্পৃহা সবার মাঝেই থাকতো । এখনকার দিনে যারা প্রেম ভালবাসা করে তারা এই টুকু বুঝতে পারবে যে ইনবক্সের সব কিছু মুছে ফেললেও প্রিয় মানুষের কাছ থেকে আসা মেসেজ গুলো ডিলিট করা যায় না । ঘুরে ফিরে বারবার সেগুলো পড়তে ইচ্ছে করে । চিঠির ব্যাপারটা তেমন ছিল বরং তার আবেদন ছিল আরও বেশি ।
নিজেদের চিঠি আমরা লুকিয়ে রাখতাম । তবে একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হত । সেই সময় চলেও এল । একদিন সে চিঠি দিয়ে জানালো যে তার চিঠি তার মায়ের হাতে পড়েছে । এখানে বলে রাখি যে তাদের বাসায় সে তার ছোট বোন আর মা থাকতো । তার বাবা থাকতো দেশের বাইরে । তাদের সাথে তাদের এক মামাও থাকতো । তার মা ই হচ্ছে সংসারের প্রধান । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে কিছু বলেছে কিনা । সে জানালো যে কিছুই বলেনি । এমন একটা ভাব করে আছে যেন কিছুই হয় নি । আমার ভয় ছিল যে হয়তো গায়ে হাত তুলবে । জানেনই তো সেই সময়ে প্রেম ভালোবাসা ছিল অমার্জনীয় অপরাধের সামিল । তবে তেমন কিছুই হল না । সপ্তাহখানেক পরেই সে খবর পাঠালো যে আমাকে তার আম্মাজান দেখা করতে বলেছে । স্কুলের পরে আমি যেন তাদের বাসায় গিয়ে হাজির হই । স্কুলে গিয়ে সুযোগ মত তার জিজ্ঞেস করে নিলাম যে বাসার পরিস্থিতি কেমন । সে জানালো যে ভয় না পেতে । আমার ব্যাপারে সে সব কিছু বলেছে । আমি কোথায় থাকি কি কেমন ছাত্র আমার বাসায় কোথায় এই সব আর । এবং তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে সে অখুশি নন । আমাকে সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে বলল তার মায়ের সাথে । ব্যস আর কিছু না । যতই বলুক ভয় না পেতে, সেই সময়ে বয়স আর কতই ছিল । প্রেমিকার বাসায় গিয়ে তার ফ্যামিলির সাথে কথা বলাটা খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিল না ।
স্কুলের কাছেই তাদের বাসা ছিল । স্কুল ছুটির পরে আস্তে ধীরে গিয়ে হাজির হলাম তাদের বাসায় । গেট সেই খুলে দিল । আমাকে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসালো । তারপর আমাকে একা রেখে ভেতরে চলে গেল । আমি চুপচাপ কিছু সময় বসে রইলাম । তারপরেই প্রেমিকার মা এসে হাজির হলেন । খুব ভদ্র ভাবে উঠে দাড়ালাম । এবং সালাম দিলাম । ইচ্ছে ছিল উঠে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি । তাতে হয়তো তার মন আরও একটু গলে যায় । তবে সেটা করলাম না । আমাকে বসতে বললেন তিনি । আমি আবার বসে পড়লাম । আমি খাটের উপরে বসেছিলাম । তিনি এসে বসলেন সোফার উপরে । আমার থেকে একটু দুরে ।
প্রথমে আমার খোজ খবর তিনি লাগলেন । কোথায় থাকি, আমরা কয় ভাইবোন এবং বাবা কী করে এই সব । আমার ক্লাস পরীক্ষার রেজাল্টের কথাও জানতে চাইলেন । এরপর আসলেন আসলো আসল কথা । তবে তিনি আমাদের বকলেন না কিংবা কোন তিরস্কারও করলেন না । জানালেন যে তার মেয়ের মন মানসিকতা ইদানীং একেবারে বদলে গেছে । একদম তার পড়ায় মন নেই । এমনটা হলে তিনি কিভাবে তার স্বামীর কাছে জবাব দিবেন, এই সব । তারপর বললেন যে আমরা যা করছি সেটা এখন আপাতত বন্ধ করে দিতে ভবিষ্যতে তিনি নিজে এই ব্যাপারটা দেখবেন । এখন যেন আমরা কেবল পড়াশুনা করি । আমি কেবল মাথা কাত করে সব কিছুতে সম্মতি দিয়ে গেলাম । আমার হাতের উপর তখন একটা মশা বসেছিলো । হুল ফুটিয়ে দিচ্ছিল । এই দৃশ্যটা আমার এখনও খুব ভাল করে মনে আছে । অন্য দিকে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । আমি না পাড়ছি মশাটাকে মারতে না পারছি কিছু করতে । মশা বাবাজি আরাম করে রক্ত খেয়ে চলেছে । আরেকটা ব্যাপারও মনে আছে যে তিনি এতো নরম আর আস্তে আস্তে কথা বলছিলেন যে খাটের উপরে বসে আমি আমি তার কয়েকটা কথা ঠিক মত যেন শুনতেই পাই নি। মনে মনে খুব ইচ্ছে করছিলো যে বলি আন্টি একটু জোরে কথা বলেন প্লিজ আমি আপনার কথা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছি না ।
এরপর শেষ কথা হিসাবে সে বলল যে আমাদের মাঝে যে চিঠি আদান প্রদান হয়েছে সেটা যেন আমি তাকে ফেরৎ দিয়ে যাই । এসব প্রমান যদি বাইরে প্রকাশ পায় তাহলে তার মেয়ের বদনাম হবে । আমার চিঠি গুলোও চাইলে আমি ফেরৎ নিয়ে যেতে পারি । ঠিক হল যে আমি যেন আবারও আসি তাদের বাসায় চিঠি গুলো নিয়ে । এরপর সে আমাকে বসতে বলে উঠে চলে গেল ।
একটু পরে দেখি প্রেমিকা ট্রে হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো । সেখানে কয়েকটা বিস্কিট চানাচুর আর এক ধরনের পিঠা ছিল । পিঠা মুখে দিয়ে দেখি মিষ্টি কম হয়েছে । কম মিষ্টির কোন কিছু আমার ঠিক পছন্দ না । তবুও প্রেমিকার বাড়ির জিনিস বসে কথা । সে আমার সামনেই বসে রইলো । টুকটাক কথা বলছিল । তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অনুভব করলাম যে সে বেশ আনন্দিত । তার চোখে মুখে কোন ভয়ের ছাপ ছিল না ।
পরদিন প্রাইভেট টিউশনীতে গিয়ে সে সবার আগে আমাকে পাকড়াও করলো এবং কি কি তার মা জানতে চেয়েছে সেটা খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে জানতে চাইলো । আমি বললাম সব । আমাকে বলল যে আমি যেন তার দেওয়া কিছু চিঠি নিয়ে আসি । তবে কয়েকটা চিঠির কথা স্পেসিফিক ভাবে ভাবে জানিয়ে দিল যে ঐ গুলো যেন কোন ভাবেই না দেই । আমি এমনিতেও দিতাম না সেগুলো । সবার শেষে আমি বললাম যে কালকে যে পিঠা খেতে দিয়েছিলে সেটাতে মিষ্টি হয় নি একদম । সে কেবল হাসলো এই কথা শুনে ।
এর দুদিন পরে শুক্রবার ছিল । আমি কিছু চিঠি পত্র নিয়ে আবারও হাজির হলাম প্রেমিকার বসায় । আজকেও প্রেমিকাই দরজা খুলে দিল । ঘরে বসার কিছু সময় পরেই প্রেমিকার মা এলেন । অল্প কয়েকটা কথা বললেন । তারপর আমার কাছ থেকে চিঠি গুলো নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন । এরপর সে এল আবারও হাতে ট্রে নিয়ে । এবার ট্রের উপরে জিনিস পত্র গুলো দেখে বেশ খুশিই হলাম । সেখানে সেদিন চার রকমের মিষ্টি ছিল । আরও নানান খাবার । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সব খেয়ে তারপর যাবা ।
চিঠি গুলো হাত ছাড়া হওয়ার কারণে একটু মন খারাপ লাগছিলো বটে তবে আনন্দও লাগছিলো । আমার বাসাতে আগে থেকেই জানতো । এখন তার বাসায় জেনে গেল । এবং পরিস্থিতি পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিলো যে সামনে আর খুব একটা সমস্যা হবে না । এরপর প্রেমিকার সাহস বেশ বেড়ে গিয়েছিলো । আগের মত আর এতো লুকোছাপা ছিল না আমাদের মাঝে । সেটা অন্য কোন দিন বলবো । আজ এই পর্যন্তই ....
এই সিরিজের আরও কিছু ঘটনা পড়তে চাইলে ..
আমার প্রথম ডেটিং এর গল্প
কোন মেয়ের কাছ থেকে প্রথম প্রেমপত্র পাওয়ার গল্প
জন্মদিনের স্মৃতিঃ প্রেমিকার দেওয়া প্রথম উপহার
স্পেশাল পহেলা বৈশাখ, আমার প্রথম প্রেম যেভাবে শুরু হয়েছিলো
ভ্যালেন্টাইনসঃ আমার দুঃখ ভর্তি প্রেমের সত্যি গল্প
Photo by photo nic on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৪