কথায় আছে বলদের সাথে তর্ক করতে নেই । সেদিনে যাওয়ার কোন ইচ্ছেও নেই । সে ইচ্ছে থাকলে ঐ বলদের পোস্টে গিয়েই তর্ক করে আসতাম । সেই বলদের মতে নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করতেই নাকি এই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে ! যাদের মাথায় এমন চমৎকার কথা আসতে পারে তাদের সাথে কি তর্ক করা মানায় ! মানুষ কিভাবে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৫% জনগনের জন্য ৫৬% চাকরির কোটাকে সমর্থন করতে পারে ? কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ পারে না যদি না যেখানে অন্য কোন স্বার্থ না থাকে ।
যাই হোক আরেকটা কথা আছে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি । যে কোটা মুক্তিযুদ্ধাদের সন্তানদের দেওয়া হয়েছে তারা সেগুলো নিয়ে কি ভাবছে সেটাই আমার সবার আগে শোনা উচিৎ ! এমন দুজন কথাই এই পোস্টে তুলে ধরলাম । যদি সুস্থ মস্তিস্কে চিন্তা করার ক্ষমতা থাকে (যদিও বিশ্বাস সেটা তাদের নেই) তাহলে আশা করি বুঝতে পারবে ।
Zia Arefin Azad এর পোস্ট থেকে
চাকুরির কোটা প্রসঙ্গে
আমি সরকারি চাকুরি করি। আইনের বিধান অনুযায়ী সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারকে কোনো পরামর্শ দিতে হলে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা মেনে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে আমার পক্ষে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কোনো মতামত পৌঁছানো প্রায় অবাস্তব একটি বিষয়। সেই চেষ্টায় আমি যাব না। আমি শুধু নিজের কিছু দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে চাই।
আমার পিতা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক ছিলেন। তার ছ’টি সন্তান। ১৯৯৬ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৩০% কোটা তাদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করা হয় তখন আমার বড় ভায়ের বয়স ৩০ এবং সবচেয়ে ছোট বোনের বয়স ২২। অর্থাৎ আমাদের ছয় ভাইবোন-ই সেই সময়ে চাকরির বাজারে ঘোরাফেরা করছি বা প্রবেশের অপেক্ষায় আছি। পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে আমাদের সব ক’টি ভাইবোন ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছি। পিতার মুক্তিযোদ্ধার সনদের ব্যবহার হয় নি।
এই কোটাটি যখন চালু হয়, তার প্রেক্ষাপট আমার পরিস্কার মনে আছে। স্বাধীনতার পর সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০% কোটা বরাদ্দ করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ২৬ বছরে বহু সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। অধিকাংশ সময়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতাকারী শক্তি ক্ষমতায় ছিল। কোনো সরকারই এই ব্যবস্থা বাতিল করে নি। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্য দাবি উত্থাপন করেন- মুক্তিযুদ্ধের ২৬ বছর পর ৩২ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া অসম্ভব তাই এই কোটাটি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবর্তে তাদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করা হোক। প্রস্তাবনাটি সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়। ৮ম জাতীয় সংসদে চারদলীয় জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলেও এই ব্যবস্থাটি বহাল রাখা হয়। পিএসসি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিএসপি ড. সা’দত হোসাইন কোটা পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে কিছু আলোচনা শুরু করেছিলেন। তবে তার নিয়োগকর্তা ফখরউদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কোটার অনুপাতে কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি করা না হলেও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ কোটাটি তৃতীয় প্রজন্মের জন্য বর্ধিত করা হয়। এই ব্যবস্থাটি যৌক্তিকীকরণের জন্যই চাকুরিপ্রার্থী তরুণরা আন্দোলন করছে।
আমার একটা বিষয় খুব খারাপ লাগে, স্বাধীন দেশে কোনো একটি বিষয় নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করতে হবে কেন? কোটা ব্যবস্থা শুরুর সময় থেকে বিষয়টা নিয়ে আমি স্টাডি করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে মাননীয় সংসদ সদস্যগণ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করেন নি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ কোটা তাদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। দু’টো যে এক বিষয় না, এটা তারা বিস্মৃত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা সম্ভবত সবচেয়ে অভিশপ্ত একটি সম্প্রদায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশজুড়ে রাস্তাঘাট, ঘড়বাড়ি সমস্ত কিছু গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সচেতনভাবে তাজউদ্দিন আহমদের সরকারের অধীনে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাটা কিন্তু খুব বেশি ছিল না। অসংখ্য ভুয়া লোকজন তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা তিন লক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। যারা তালিকার বাইরে আছেন তাদের সকলে অন্তর্ভূক্ত হলে সংখ্যাটা ছয় লক্ষ অতিক্রম করবে না বলে আমার ধারণা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত মর্যাদার জন্য এই তালিকাটা নিষ্ঠার সাথে প্রণয়ন করার দরকার ছিল। সেই কাজটি হয় নি। ১৯৭৫ সালে প্রতিবিপ্লবীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধাদের নিগ্রহ করা হতে থাকে। জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হায়দার, কর্নেল তাহের, জেনারেল জিয়া, জেনারেল মঞ্জু- সামরিক বাহিনী হতে একে একে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকলকে নিশ্চিহ্ন করা হয়। অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি করা হয়। সিভিল চাকুরিতে যে ভাল পরিবেশ ছিল, তা নয়। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে মুক্তিযোদ্ধারা আবার আশান্বিত হয়ে উঠেন। আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি, ২০০০ সালে রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধাদের মহাসমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ লক্ষ বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা অকৃত্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চাকরি বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে তাদের কোনো দাবি ছিল না। তাদের একটাই প্রত্যাশা ছিল, তা হল, রক্ত দিয়ে স্বাধীন করা দেশকে প্রগতির পথে দেখা।
নিজে একজন সম্ভাব্য সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও শুরু থেকেই আমি সন্তানদের কোটা যৌক্তিকীকরণের পক্ষে ছিলাম। আমার বিবেচনায় এই কোটা ৫% হলেই যথেষ্ট। না থাকলেও কোনো ক্ষতি নেই। মুক্তিযুদ্ধ করার অপরাধে স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সকলেই কমবেশি নিগৃহিত হয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতির পর্যালোচনার অভাবে নাতির বয়সী চাকুরিপ্রার্থী তরুণদের কাছে এভাবে অসম্মানিত হওয়াটা তাদের মোটেই প্রাপ্য নয়। এই অনুপাতটা ৩০% রাখা হয়েছে কেন আমার মাথায় ঢোকে না। মুক্তিযোদ্ধারা এই সুবিধাটা ঠিকমত পাচ্ছেন না। আবার কোটার কারণে দুর্নীতির মাধ্যমে জাল সনদধারীরা রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রবেশ করছেন। সরকার বিষয়গুলোকে কতটা খতিয়ে দেখছে, আমার সন্দেহ আছে।
সরকারের মধ্যে কেউ কেউ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি ধারণা দেবার চেষ্টা করেছেন যে, কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকারবিরোধীদের মদদ রয়েছে। এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিষয়টাকে এভাবে না দেখে অন্যভাবেও দেখা যায়। আন্দোলনটির যৌক্তিকতা আছে এবং এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আছে বলেই হয়ত বিরোধীরা সুযোগ নিতে চাইছে। একটি দায়িত্বশীল সরকার অবশ্যই গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের সেই সুযোগ দিতে পারে না। আমি মনেপ্রাণে প্রত্যাশা করি, সরকার কোটা ব্যবস্থার ভাল-মন্দ সকল দিক নির্মোহভাবে পর্যালোচনা করবে এবং জনসাধারণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার কারণে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ফেসবুকের এই পরিসরে আলোচনা করতে চাই না। তবে আমি সব সময় চেয়েছি জাল সনদধারীদের ধরিয়ে দিতে। সেটা সম্ভব হয় নি। এ রকম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অধীন আমাকে চাকরি করতে হয়েছে। জনপ্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অসংখ্য ব্যক্তি জাঁকিয়ে বসে আছেন। রাজনৈতিক সরকারের উপরেও তাদের সম্মিলিত প্রভাব কম নয়। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বা নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিংবা সরকারের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছেন, জানি না। দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার বয়স হয় নি এমন ১ কোটি ১০ লক্ষ ভোটার এখন তালিকায় সংযোজিত হয়েছে। এই ভোটারেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অতীত কার্যক্রমের কিছুই দেখে নি। কিন্তু বিদ্যমান কোটা পদ্ধতিকে অবিকৃত রাখাকে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে না, সরকারকে এই বার্তাটি গ্রহণ করতে হবে। লিংক
এবং আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান Shamir Montazid এর পোস্ট থেকে
আমি একজন মু্ক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা ২ নং সেক্টর থেকে যুদ্ধ করেছিলেন। চাইলে প্রমাণ স্বরূপ কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানী সাহেবের সাইন করা সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের কাগজ পত্র সবই দেখাতে পারবো। যথারীতি মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে আমরা বেশ কিছু সুবিধা লাভ করি। প্রতিমাসে সরকার থেকে আমাদের পরিবারকে ভাতা দেয়া হয়; মাঝে মাঝে উৎসবের বোনাসও পাই। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে সম্মান কোনক্ষেত্র কম পেয়েছি বলে মনে হয় না। সবসময়ই মাথা উচুঁ করে বলতে পেরেছি আমি মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সন্তান।
.
আমার বাবা নিশ্চয়ই যুদ্ধে যাবার সময় “তার ছেলে সহজে বিসিএস ক্যাডার হবে” এই কথা চিন্তা করেননি। সবাই যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে; বিনিময়ে তাদের কোন ব্যক্তিগত দাবীদাবা ছিলো না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সরকার আহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে সাহায্য করতে শুরু করে। এটা অবশ্যই দরকার ছিলো। দুই পা হারানো একটা লোকের পক্ষে সংসার চালানো তো কঠিন। যখনই এই ভাতার প্রচলন হলো, তখনই শুরু হলো হাজারো “নকল মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট” বানানোর ধান্ধা। একাত্তরের রাজাকারদের দলনেতাও স্বাধীন বাংলায় সরকার দলের পা-চাটা কুকুর হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছে। এই খবর এখন থেকে দশ বছর পুরোনো।
.
একসময় ব্যাপারটা অনেকটা এমন হয়ে দাড়ালো— “সরকার দলের সকল সাপোর্টারই মু্ক্তিযোদ্ধা”। এই পৃথিবীর যা কিছু আকর্ষণীয়, সবই তাদের অধিকারে যেতে হবে। মাছের মাথার পিছ থেকে শুরু করে বিসিএস এর চাকুরীর সিংহভাগ— সবই তাদের দরকার। বাংলাদেশের মানুষ অসম্ভব দেশপ্রেমিক ছিলো; এরপর এরা পরিণত হলো সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজে। ফলাফলস্বরূপ, দেশপ্রেমের প্রতীক “মুক্তিযোদ্ধা”দের নিয়ে শুরু হলো দুর্নীতি। আমার বিশ্বাস, আমার মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা এই ধরণের কোটা সুবিধার ধার ধারেন না।
.
দেশপ্রমিক মুক্তিযোদ্ধার পরিবারে বড় হয়ে থাকলে আপনার বোঝার কথা নিজের পায়ে দাড়াঁনোর কোন শর্টকাট নেই। আপনার পিতা মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে; আপনারও দায়িত্ব স্বাধীন বাংলায় নিজের জন্য সাধ্যমতো পরিশ্রম করা। আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সরকার থেকে সাহায্য পাওয়াটা অবশ্যই যুক্তিযুক্তি; কিন্তু সেটা অন্যের অধিকার খর্ব করে নয়।
.
আমি ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। সেটা “মুক্তিযোদ্ধা” কোটায় নয়; সেটার নাম “মেধা” কোটা। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ১০০-তে স্থান করে মাথা উচুঁ করে সম্মান ডিগ্রী অর্জন করেছি। মর্ত্যের ওপার থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাবা নিশ্চয়ই তা দেখে খুশি হয়েছেন— ছেলে মেধায় চান্স পেয়েছে, আমার সার্টিফিকেটের কোণা ধরে নয়।
.
আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধার হাজারো সন্তান পাবেন যারা এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার চায়। তাহলে কারা এই আন্দোলনের বিপক্ষে?
.
আন্দোলনের বিপক্ষে আছে সরকার দলের পাতি নেতা। মন্ত্রনালয়ে নিজের কমিটির নাম জাহির করে এদের অনেকেই একটা করে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দখল করেছেন। দেহের রক্তে এদের দেশপ্রেম নয়, দুর্নীতির জোশ। যদি কোটা বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অপেক্ষা এই “সকল দলীয় মুক্তিযোদ্ধা”র সন্তানদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কোটা বন্ধ হলে “মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট” বানানোর লাখ লাখ টাকার ব্যবসাও যাবে বন্ধ হয়ে। তাদের পু্চ্ছদেশে আগুন লাগার যথেষ্ট কারণ তো আছেই!
.
মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সাহায্য করাটা অবশ্যই যুক্তিযুক্তি; তবে সেটা করতে গিয়ে যোগ্য লোকের ভাত মারলে আপনার দেশটাই রসাতলে যাবে। যাবে না বলে ইতোমধ্যে চলে গেছে বলাটাই ভালো। মুক্তিযোদ্ধার ছেলের পর এখন নাতিকে পর্যন্ত সুবিধা দিতে হবে! কেন? এইটা তো রাজতন্ত্র না যে বাবার পর ছেলে, এরপর তার ছেলে রাজা হবে। আর মনে রাইখেন, রাজতন্ত্র যখন চলেছিলো তখন অধিকাংশ অযোগ্য লোক বংশ পরম্পরায় রাজা হতো; এখন যেমন বিসিএস ক্যাডার হয়।
.
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সবাইকে বলি, সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে যাবেন না। গর্ব করে বলতে পারছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনটার শুরু হয়েছে। সেইটা আজকে প্রথম না। সেই ৫২-৬২-৬৯-৭১ ও এখানেই শুরু হয়েছিলো। কিন্তু, দেশটা শুধু ঢাবির ছাত্রদের না; দেশটা আমাদের সবারই। ইতোমধ্যেই বুয়েটে-জাবি-চবি সহ অনেক জায়গায় ক্লাস বর্জন শুরু হয়েছে। আমার মতো হাজারো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও আপনাদের এই আন্দোলনের সমর্থক। আর সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যারা রামদা-তলোয়ার নিয়ে আপনাদের কোপাতে এসেছে তাদের দেখে ভয় পাবেন না। ১৯৭১ সালে আমার বাবারা ইয়াহিয়ার বন্দুকের গুলির তোয়াক্কা করলে আজকে আমি এই স্ট্যাটাসটা বাংলায় না লিখে উর্দুতে লিখতাম।
.
জয় বাংলা। লিংক
এঈ পোস্টের কিছু অংশ কোট করে দেওয়া আছে স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য যে ঐ সব বলদ কেন এমনটা চাচ্ছে ।
যাই হোক পোস্ট এখানেই শেষ । আরেকটা কথা, সেই দুই বলদের কোন কমন্টের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না । বলদের সাথে তর্কে যাই না ।
সংযুক্তিঃ এবার একজন মুক্তিযোদ্ধার কথাও জুড়ে দিলাম পোস্টের সাথে
মুক্তিযোদ্ধা কোটা
-Mohiuddin Ahmad
কোটা নিয়ে দেশ এখন তোলপাড়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২৫ মার্চ রাতে তাড়া খেয়ে এবং পরে আগরতলা, কলকাতা কিংবা মেঘালয়ের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করা মুক্তিযোদ্ধা নই আমি। আমি দেশের ভেতরে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমি আমাকে এবং আমার সন্তানদের মেধাহীন মনে করি না। এজন্য কোটা চাই না। ১৯৯৬ সালের আগে এদেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা ছাড়াই মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শত হাত তফাতে ছিল, তারা অনেকেই এখন মুক্তিযুদ্ধ কোটা নিয়ে নাকি কান্না কাঁদছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতায় টিকবে না এবং এ জন্য তাঁদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে হবে, এটা যারা ভাবেন, তারা আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করছেন। যেহেতু তাঁদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, ওই সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেছেন, পরীক্ষা দিয়েছেন, হলে থেকেছেন, তারা এটা ভাবতেই পারেন। একটা বিষয় ভাবুন। যুদ্ধের সময় যে কৃষক আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, ভাত রেঁধে খাইয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান কলকাতার রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করা কিংবা ওই সময় ক্লাস করা বা পরীক্ষা দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে কি কম?।তার সন্তান তো কোটার সুবিধা পায় না? দেশ যদি সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধারা চালাতেন, তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। দেশ তো চালায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা। কিছু কিছু ধান্দাবাজের মুখে শুনি, মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা না কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করা। বাড়ি, চাকরি, পদোন্নতি, এসবের জন্য কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? তখন কে বলেছিলেন -
একটি চাকরি পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করি!
দু'বছর সিনিয়রিটির জন্য যুদ্ধ করি!
মাসোহারা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করি!
পরিত্যাক্ত একটি বাড়ি পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করি!
আমি তো এ রকম ভাবিনি? সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধারা এ রকম ভাবতে পারেন না। link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:১৩