-এই যে শুনন !
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি নিহিন ছাদের দরজার পাশ দাড়িয়ে আছে । মুখটা একটু যেন বেজার । আমি মুখে ফিরে তাকালেও কিছু বললাম না । বাড়িওয়ালার এই মেয়েটাকে এখন আমি খানিকটা এড়িয়ে চলি । প্রথম প্রথম মেয়েটার সাথে একটু লাইন মারার চেষ্টা করতাম কিন্তু সোজা বাসায় রিপোর্ট চলে আসার পরেই আমি চুপ করে গেছি । তারপর থেকে এই মেয়ের সামনে দিয়ে গেলেও খুব একটা পাত্তা দিতাম না । নিজের ঈগো বলে একটা কথা তো আছে ।
নিহিন আমার কাছেই এগিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনাকে ডাকলাম, শুনেন না ?
-শুনবো না কেন ? কিন্তু সবার ডাকে সাড়া দিতেই বা হবে কেন ? কি বলতে চাও বলে ফেল ।
নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে একটু যেন রাগ দেখানোর চেষ্টা করলো কিন্তু আমি সেদিকে খুব একটা মনযোগ দিলাম না । নিহিন বলল
-আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে ?
-মানে ?
-মানে বোঝেন না ? আমি কি ইংরেজিতে বলছি ? আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে ?
-কেন তোমার নাই ?
নিহিনের মুখটা একটু কালো হয়ে গেল । তার মানে, নেই । আমি খানিকটা হেসে বললাম
-তাহলে তো দেখি তুমি বাংলাদেশের নাগরিকই না ! তুমি তো অন্য দেশী !
-দেখুন ফাজলামো করবেন না । যা জানতে চেয়েছি বলেন ! আছে ?
-আছে ! কেন ?
-আমার একটা কাজ করে দিতে হবে । আমার সিম টা নিবন্ধন করে দিতে হবে !
আচ্ছা আমি বুঝতে পারলাম কেন আমার কাছে আসা । কিন্তু ওর বাবা মা থাকতে হঠাৎ আমার কাছে সাহায্য চাচ্ছে কেন ? আমি বললাম
-তোমার আইডি কার্ড নেই বুঝলাম কিন্তু তোমার বাবা মায়ের তো আছে । তাদের টা নিয়ে কর ।
এই কথা শুনে নিহিনের মুখটা আরও একটু কালো হয়ে গেল । বলল
-আসলে ......
-কি আসলে ?
-আসলে আমার বাবা জানে না যে আমি মোবাইলে সিম ব্যবহার করি । এমন কি মাও জানে না ।
-তাহলে তোমাকে মোবাইল কিনে দিয়েছে কেন ?
-ওটাতে সিম ভরার অনুমুতি নেই । জানতে পারলে বাবা ঠিক ঠিক মোবাইলটা নিবে । বাবার কথা হচ্ছে ভার্সিটিতে না ওঠার আগে কোন মোবাইল নয় ।
-ঠিকই বলেছেন তোমার বাবা । পিচ্চি পাচ্চা মেয়েদের হাতে মোবাইল দেওয়াই ঠিক না !
নিহিন কে দেখলাম ক্রুদ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে কিছুটা সময় তবে সেটা শান্ত হয়ে এল কিছু সময় পরেই । আমি জানি এমন টা হবে । এবার এসেছে উঠ পাহাড়ে নিচে । আমি বললাম
-তা আমি এই রিস্ক কেন নেব ?
-রিস্ক মানে ?
-মানে ধর, আমি সিমটা নিবন্ধন করে দিলাম তারপর তুমি এই সিম দিয়ে কাউকে হুমকি দিলে কিংবা কারো কাছে চাঁদা চাইলে তখন ? আমি তো ফেঁসে যাবো, তাই না !
নিহিনের মুখটা এবার সত্যি সত্যিই লাল হয়ে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার মনে হয় যে আমি চাঁদা বাজ ? আমি কাউকে হুকমকি দেব ?
-দেও নাই ?
-কি বলতে চান আপনি ?
-বলতে চাই যে তুমি কি আমার নামে আমার বাবা মাকে হুমকি দাও নাই ? বলোনি এবার এমন কিছু করলে আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে !
-ওটা আমি বলি নি । বাবা বলেছে !
-বাবাকে তো তুমি বলেছো নাকি ?
-না । আমি বলি নি । আপনি সেদিন আমার সাথে কথা বলছিলেন বাবা দেখে ফেলেছিল ! তাই আমি বলেছিলাম যে আপনি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন !
-বাহ । নিজে বাঁচার জন্য অন্যকে বিপদে ফেলা !
-দেখুন, ওটার জন্য আমি সরি । আমি সরি বলতে চেয়েছি পরে কিন্তু আপনি আমার সামনেই আর আসেন নি ।
কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না । একটু পরে নিহিন নিজেই বলল
-দিবেন না ?
-আমার কি লাভ তাতে !
-সব কিছুতে লাভ কেন খুজেন ? দিবেন কি না বলেন ! যদি না দেন তাহলে ঐ মোড়ের যে কাউকে বললেই ওরা দৌড়ে এসে আমার কাজটা করে দিবে !
-তাহলে তাদের কাছে যাচ্ছো না কনে ?
-বুঝেন না ক্যা............
কথাটা বলতে গিয়েও নিহিন থেমে গেল । আমার দিকে আহত চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে তারপর বলল
-থাক, আপনার কিছু করতে হবে না ! আমি যাই ।
এই বলে নিহিন ছাদের দরজার দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত ধরলাম । ভেবেছিলাম ও হয়তো ছাড়ানোর চেষ্টা করবে কিন্তু সেটা করলো না। দাড়িয়ে রইলো কিছুটা সময় । আমি ওর হাত ধরে চটেনে এনে নিজের কাছে নিয়ে এলাম । মেয়েটা তখনও অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম
-তোমার কাজ টা করে দিতে পারি তবে একটা শর্ত আছে !
-কি শর্ত ?
-আমাকে চটপটি খাওয়াতে হবে ।
-আচ্ছা খাওয়াবো !
-আর .....
-আর কি ?
-না মানে রাতে তোমার বাবা মা কখন ঘুমায় ?
-কেন ?
-না মানে তোমার বাবা মা জেগে থাকলে তো আর তোমাকে ফোন করতে পারবো না তাই না ?
-আপনি কেন আমাকে ফোন করবেন শুনি ?
-বারে, নিজের নামের নিবন্ধন করা সিম কার্ডে যদি ফোনই না করতে পারলাম তাহলে লাভ কি নিবন্ধন করে, তাও আবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা !
এবার নিহিন হেসে ফেলল ! তারপর মোবাইল থেকে সিম কার্ডটা বের করে দিয়ে আমার দিয়ে বলল
-আপনি আসলেই দুষ্ট অনেক !
-তাই ?
-তবে মেয়েরা দুষ্ট ছেলেদের পছন্দ করে !
নিহিন আর দাড়ালো না । আমার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দিল ছাদএর ডরজার দিকে । দরজার কাছে একটু থেমে আমার দিকে একবার তাকালো । তারপর আড়াল হয়ে গেল ।
যাক, বায়োমেট্রিকের কারনে একটা লাভ তো হল । আমার বায়োমেট্রিক ভালবাসা শুরু হয়ে গেল !