তিলা আমার উপর রাগ করে চলে গেল কেন আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । সব কিছু ভালই চলছিলো । মাঝে মাঝেই ও আমার ঘরে এসে আমার সাথে গল্প করতো । বিছানার উপর বসে পা নাচাতো আর কথা বলতো । আমি পিসি টেবিলের সামনে বসে ওর চটপটে কথা গুলো শুনতাম । সত্যি বলতে কি আমার খারাপ লাগতো না । বরং একটু বেশি ভাল লাগতো ।
এই চিলেকোঠায় আমি এসেছি প্রায় ছয়মাস । এই বাসাতেই ভাড়া থাকে ওরা । প্রথম থেকেই ও আমার সাথে বেশ ফ্রি ছিল । অন্য মেয়েগুলোর মত না । আমিও ভাল ভাবেই মিশতাম । বাবা মাকে ছেড়ে এই এতো দুরে একা একা থাকাটা আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল । সেদিক দিয়ে তিলার সাথে সময় বেশ ভাল কাটতো । কিন্তু ঐ দিনের পর কি হল তিলা আর ছাদেও আসে না আমার সাথে কথাও বলে না । কয়েকবার চেষ্টা করেও আমি এর অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম না ।
মনে মনে খারাপই লাগা শুরু করলো । মেয়েটাকে আমি পছন্দ করতে শুরু করেছিলাম । আর আমার কেন জানি মনে হত যে মেয়েটাও আমাকে ঠিক ঠিক পছন্দ করতে শুরু করেছে । তাহলে মাঝখান দিয়ে সমস্যাটা কোথা থেকে হল কে জানে ।
দিন সাতেক পরে তিলা যখন আবার ছাদে আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম কথাটা । প্রথমে এমন একটা ভাব করলো যে ও কিছু জানে না এবং আমাকে সে ঠিকমত চিনে না । কিন্তু পরে যখন আমি বললাম এই কদিনে ওর সাথে কথা না বলতে পেরে আমি অনেক কষ্টে থেকেছি তখন দেখলাম ওর মনটা একটু নমনীয় হয়ে এল । বলল
-আমারও খারাপ লেগেছে আপনার সাথে কথা না বলতে পেরে ।
-তাহলে কেন আসো নি বলবা ? আমি তো বুঝতেই পারছি না যে আমি করলাম না কি এমন ?
-আপনি খুব খারাপ !
-বুঝলাম খারাপ কিন্তু কি কারনে খারাপ বলছো সেটা তো বলবা ?
-আপনার কাছে ঐটা ছিল ।
-কোন টা ?
-আমি মুখে বলতে পারবো না ।
-মানে কি ? এই তুমি বলছো আমার কাছে ঐটা ছিল আবার বলছো মুখে বলতে পারবা না । এটা কেমন কথা বলতো ?
তিলা অনেক টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনার বালিশের কাছে ঐদিন আমি কনডমের প্যাকেট দেখেছি !
লাইন টা বলেই অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে ফেলল । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তিলার দিকে ।
কি বলে এই মেয়ে !
কনডমের প্যাকেট !
এই মেয়ের মাথা ঠিক আছে তো ?
আমি প্রথমে কয়েক মুহুর্ত কোন কথাই বলতে পারলাম না । আসলে তিলার মুখ থেকে এমন কথা শুনতে পাবো কিংবা ও আমার নামে এমন কথা বলতে পারে এটা আমার ধারনার বাইরে ছিল ।
-কি বলছো যা তা ! মোটেই না !
আমি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম
-আমি দেখেছি ।
আমার থেকেও বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল তিলা !
-হতেই পারে না । তুমি এসো আমার সাথে ।
-আহা আপনি নিজে এখন সরিয়ে ফেলেছেন কি না আমি কিভাবে জানবো !
-তবুও তুমি এসো ।
এক প্রকার জোর করাই শুরু করলাম । তিলা আস্তে আস্তে আমার রুমের ভেতরে এল । সোজা চলে গেল আমার বালিশের কাছে । আমার মনে তখন হঠাৎ খানিকটা সন্দেহ জাগলো । কদিন আগে রাফি এসেছিলো আমার কাছে । ব্যাটার স্বভাব আবার ঐ দিকে একটু আছে । মানিব্যাগে সব সময় এই জিনিস রাখে । ওর কাছ থেকে কি পরলো । যদি পরেই থাকে তাহলে মনে হয় তিলার সাথে সম্পর্কটা এবার পুরোপুরি যাবে ।
তিলা আমার বিছানার কাছে যেতেই চিৎকার করে উঠলো ।
আমি মনে মনে বললাম, গেছে । সব গেল । আমার প্রেম টা শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল ।
তিলা হাতের ইশারা বালিশের দিকে দিয়ে বলল
-এই যে !
-কোথায় ?
কোথায় বললাম কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বের হল না । কেমন যেন দুর্বল লাগলো নিজের কাছে ।
শালার বেটা রাফি ! তোকে আমি খুন করবো !! সত্যি খুন করবো ।
আমি তিলাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম বিছানার বালিশের কাছে ।
এই তো !
দেখা যাচ্ছে প্যাকেট টা।
ওহ না !
ধূসর রংয়ের !
সত্যিই দেখা যাচ্ছে !
রাফি তোকে আমি সত্যি সত্যিই খুন করে ফেলবো । আমার হাত থেকে তোকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না !
আমি কাঁপা হাতে প্যাকেট টা হাতে নিলাম । অনুভব করলাম আমার মাথাটা যেন কেমন করে ঘুরছে । একটু একটু আবছায়া দেখছি ! আর ভাবতে পারছি না । তিলা যে রাগ করেছে সেটার পেছনে যুক্তি-সংগত কারন আছে এবং এটার প্রমানও এখন ওর হাতে ।
না ওর হাতে না আমার হাতে । কোন ভাবে যদি আমি জাদু জানতাম ......।
আরে দাড়াও এটা কি ???
আরে এটা তো ......
ততক্ষনে তাকিয়ে দেখি তিলা নিজেও চিনতে পেরেছে ।
আরে এটা তো ম্যাগি নুডুলসের মশলার প্যাকেট !
রাতের বেলা আমি প্রায়ই নুডুলস রান্না করি । সেটার কোন একটা রয়ে গেছে ।
আমি আমার নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মনে হচ্ছিলো আমার ফাঁসির আদেশ হয়ে গেছিলো আমাকে ঝুলাবে ঠিক তখনই রায় আসলো যে আমি নির্দোষ । আমি মুক্ত !
তাকিখে দেখি তিলা আমার দিকে কেমন লজ্জিত চোখে তাকিয়ে আছে ! নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ।
-সরি ! আসলে আমি দুর থেকে চিনতে পারি নি । কিছু মনে করবেন না ।
-না না ঠিক আছে । ভুল মানুষেরই হতে পারে ।
আমার গলায় তখনও কেন জানি জোর নেই । কেমন যেন লাগছে ।
তিলা আর একটুও না দাড়িয়ে সোজা দৌড়ে বেরিয়ে গেল । লজ্জা পেয়েছে তবে আমি ঠিক ঠিক জানি ও আবার ফিরে আসবে । এবং এখন অবস্থা আমার অনুকুলে !
ও চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আমার চোখে মুখে কেমন অন্ধকার নেমে এল । আমি বিছানায় এলিয়ে পড়লাম । আসলে এতো বড় শক তার উপর সেই শক থেকে বেঁচে যাওয়ার শখ, এই দুইটা বিপরীত ধর্মী শক আমার শরীরের উপর দিয়ে গেছে । পরপর ঘটনা ঘটার কারনে আমার শরীর সেটা সহ্য করতে পারে নি ।
যখন জ্ঞান ফেরে, তাকিয়ে দেখি তিলা আমার মাথায় পানি ঢালছে । আর একটু একটু যেন চোখ মুছছে । আমি আবারও চোখ বন্ধ করলাম ।
যাক, ম্যাগি নুডুলসের মশলার প্যাকেটটার কল্যানে আমার প্রেমটা হয়েই গেল মনে হচ্ছে !!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৫