দুজন সাদা এপ্রোন পরা মানুষ গভীর মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে রাখা একটা কাঁচের টিউবের দিকে ! কাঁচের টিউবের ভিতরে হলুদ রংয়ের কিছু পদার্থ দেখা যাচ্ছে ! টিউব থেকে বিভিন্ন রকমের হাজারও তার যুক্ত হয়েছে পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং কম্পিউটারের সাথে !
হঠাৎ দুজনের একজন বলে উঠলো
-কি মনে হচ্ছে ?
-বুঝতে পারছি না !
-আপনার মনে হয় সারভাইভ করবে ?
-আরও কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে দেখি !
-দেখুন ব্রেন টা কিভাবে গ্রো করছে ? দেখুন দেখুন !
-হুম ! এই তো কাজ হচ্ছে মনে হচ্ছে ! আমরা সফল হতে চলেছি !
-আমরা না ! ড. টমাস মিরিনসো ক্সাইলেন সফল হতে চলেছেন !
কিছু বছর পরে
২০৫০ সাল
দুপুরের খাওয়া শেষ প্রেসিডেন্ট একটু বিশ্রাম নেন । আজকে অনেক দিন পরে একটু অবসর পাওয়া গেছে ! মনে মনে ঠিক করে নিলেন আজকে সারা বিকাল তিনি তার মেয়ের সাথে কাটাবেন ! কাজের চাপে মেয়েকে একদম সময় দেওয়া হয় না ! আজকে সময়টা তিনি মেয়ের সাথেই কাটাবেন ! তিনি মেয়েকে ডাকতে যাবেন এমন সময় তার নিজস্ব সহকারী হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো ! চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে সাংঘাতিক কিছু হয়েছে !
-কি ব্যাপার ?
-স্যর, রাশিয়া আমাদের ওয়াশিংটন বরাবর নিউক্লিয়ার মিশাইল থ্রো করেছে !
প্রেসিডেন্টের মনে হল তিনি ভুল শুনলেন !
-কি বললে তুমি ?
এক
আমার বিস্তৃত হাসি দেখে তন্বীর মুখটা বিরক্তিতে ভরে গেল ! এমন একটা ভাব যেন আমি হেসে বড় অন্যায় করে ফেলেছি !
আরে বাবা একজন মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছি একটু হাসবো না ?
আদনান সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে আবারও বলল
-আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না !
আমি আর একটু হাসি বিস্তৃত করে বললাম
-আরে কোন ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই ! তন্বী তো আমার বন্ধু তাই না ?
-জি জি ! তা তো অবশ্যই ! আচ্ছা ! আমি আর বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না ! আপনারা পড়াশুনা করুন !
-কোন সমস্যা নেই !
-তন্বী আপনার কথা প্রায়ই বলে ! আপনি না থাকলে ওর গ্রেড নাকি একদম জিরোতে চলে যেত । জানেনই তো এখন গ্রেড পয়েন্ট টা কত জরুরী ! একটা ভাল জীবন, একটা ভাল লাইফ স্টাইল, ভাল সুযোগ সুবিধার জন্য একটা ভাল গ্রেড দরকার !
-জি ! তা তো অবশ্যই !
আমি তন্বীর দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আমি আদনান সাহেবের সাথে যতই কথা বলছিলাম তন্বী ততই বিরক্ত হয়ে উঠছিল ! আরে এই মেয়েটা কি ? একটু কথাও বলতে দিবে না দেখছি !
আদনান সাহেবের মনে হয় আরও কিছু বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু দেখলাম তন্বী তাক কথা বলার সুযোগ দিলো না ! বলল
-তোমার না অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে ?
-ও হ্যা ! যাচ্ছে তো !
-তাহলে এখানে কেন দাড়িয়ে আছো ? জানো না এখন টাইম টেবিলটা কত স্ট্রীক !
-ও হ্যা হ্যা ! আচ্ছা অপু সাহেব ! আপনার পড়াশুনা করুন ! আমি যাই !
আমি কথা না বলে আবার সেই বিস্তৃত হাসি দিলাম !
আদনান সাহেব চলে যাওয়ার পরে তন্বী আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার ? এতো ফাউ প্যাঁচালের দরকার কি ?
-আরে আশ্চর্য ! তোমার বয়ফ্রেন্ড ! একটু কথা বলবো না ?
তন্বী আবারও একটু বিরক্তি নিয়ে বলল
-ও আমার বয়ফ্রেন্ড না ! ফিওনসে !
-ও হ্যা ! তাই তো ! ও তোমার তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারবে না ! তোমার বয়ফ্রেন্ড তো আমি !
এই কথা বলেই আমি জোড়ে হেসে উঠলাম ! তন্বী আরও একটু বিরক্ত হয়ে উঠলো !
বিরক্ত নিয়েই বলল
-তুমি কি একটু সিরিয়াস হবে না ? দেখো বিয়ের দিন এগিয়ে আসতেছে ! গ্রেজুয়েশন শেষ হতে আর মাত্র মাস খানেক বাকি আর তারপরেই আদনানের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে ! তখন ? তখনই কি এই রকম ভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারবে ?
-ও ! বেইবি ! রিল্যাক্স ! কোন চিন্তা কর না !
আমি যদিও ওকে রিলাক্স হতে বললাম তবে ও খুব একটা রিলাক্স হল বলে মনে হল না ! কিছু একটা করতে না পরলে আসলেই আদনানের সাথে তন্বীর বিয়ে হয়ে যাবে ! আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো ! কদিন পরে আমাকে বিয়ে করতে হবে টমিক্সের পছন্দ মত মেয়েকে !
মাঝে মাঝে এমন রাগ লাগে এই মুল কন্ট্রোলার টমিক্সের উপরে ! বেটা দুনিয়ার সব কিছু তুই নিয়ন্ত্রণ করিস এতে তোর মন ভরে না ? আমি কাকে বিয়ে করবো সেইটাও তোর ঠিক করে দেওয়া লাগবে ?
থাপড়ায়া কান গরম করে দেওয়া উচিৎ !
কান কিভাবে গরম করবো ? বেটার তো কানই নাই !
যাক কান না থাকলে কি হবে, বেটার কিছু একটা গরম আমি ঠিকই করে দিবো ! বেটা ঘুঘুর ফাঁদ দেখেছে ঘুঘু দেখে নাই !
২২ শতকের শেষ সময়ে এসেই টমিক্স পুরো পৃথিবীকে চালায় ! ২০৫০ সালে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে পৃথিবীর প্রায় সব গুলো দেশ একে অন্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে ! ফলাফল স্বরূপ প্রচুর লোক মারা যায়, বলতে গেলে প্রায় সব মানুষই মারা যায় ! পৃথিবীর লোক সংখ্যা ৭০০ বিলিয়ন থেকে মাত্র ৭০ হাজারে নেমে আসে !
যুদ্ধ চলে প্রায় ১১ বছর ধরে ! যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন পৃথিবীর আর কিছুই বাকি ছিল না ! একটা বিল্ডিংও মাথা উচু করে দাড়িয়ে ছিল না ! ২০৬১ সালের আবার সব নতুন করে সব কিছু শুরু হয় ! নিউক্লিয়ার আর পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায়ই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে ! কিছু নিরাপদ জায়গা বেছে মানুষ বসবাস শুরু করে ! এবং আশ্চার্য ভাবে লক্ষ্য করা গেল মাত্র কয়েক বছরেই নতুন পৃথিবীটা জ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন এক পথে অগ্রসর হয়ে পড়লো !
কিন্তু কি সেই আশ্চার্য ব্যপার সেইটা এখনও সবার কাছে অজানা !
বিগত শতাব্দী গুলোতে মানুষ যা করতে পারে নি এই শতকে মাত্র ৪০ বছরে সব কিছু একেবারে আধুনিক হয়ে গেল ! পৃথিবীর মাঝখানে এক নতুন কম্পিউটার স্থাপন করা হল যার নাম টমিক্স ! খাদ্য উৎপাদ থেকে শুরু করে বন্টণ সহ সব ধরনের কাজ কর্ম নিয়ন্ত্রিত হতে লাগলো টমিক্স দ্বারা !
মোটামুটি এই টুকুই আমি জানি ইতিহাস । পাবলিক লাইব্রেরিতে আজকাল আর কেউ যায় না, আমি মাঝে মধ্যে গিয়ে নতুন মানব সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করি ! খুব তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না ! তবে আমার কেন জানি মনে হয় কেউ একজন খুব চরুরতার সাথে সেই সব তথ্য গুলো সরিয়ে ফেলেছে । নতুবা এতো শত বই কিন্তু ২০৫০ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত ইতিহাস একেবারে দায়শারা ভাবে লেখা হয়েছে । কিছু একটা লুকিয়ে রাখা হয়েছে !
যাক সেইটা এখন সমস্যা না ! সমস্যা হচ্ছে হাতে মাত্র মাস দুয়েক সময় আছে । এর ভিতর কিছু একটা করতে হবে ! নতুন তন্বী ফুরুৎ হয়ে যাবে ।
পুরানো দিনের ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি আগে ছেলে মেয়েরা নাকি নিজের ইচ্ছে মত বিয়ে করতে পারতো, কেবল দুজন দুজন কে পছন্দ করলেই হত ! কিংবা পরিবারের পছন্দ !
এখনকার দিনে সেটা কল্পনাই করা যায় না ! জন্মের পর থেকেই টমিক্স ঠিক করে দেয় ছেলে কিংবা মেয়ে কোন স্কুলে যাবে কি নিয়ে পড়া শুনা করবে ! তার সাথে ডিএনএ গঠন পর্যবেক্ষন করে টমিক্সই ঠিক করে দেয় মেয়েটা বড় হয়ে কোন ছেলের সাথে বিয়ে করবে !
এইটা কিছু হইলো !
আদনান সাহেব ঠিক এই ভাবেই তন্বীর ভাবী বর !
অবশ্য আমার জন্যও ঠিক করা আছে । মেয়েটার সাথে আমার বেশ কয়েকবার দেখাও হয়েছে । পাশের শহরে থাকে । নাম ইমি ! মাঝে মাঝেই আসে এখানে ! খারাপ না মেয়েটো !
কিন্তু মেয়েটা কে আমি ভালবাসি না ! তন্বীকে ভালবাসি ! আর আমি কাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসাবে বেছে নিবো এটা একটা মাথা মোটা কম্পিউটার কিছুতেই ঠিক করে দিবে না ! বেটাকে থাপড়িয়ে পাগল বানিয়ে দিবো !
দুই
প্রোফসর মালিক জামান আমার দিকে অনেক্ষন একভাবে তাকিয়ে রয়েছেন । আমি ভদ্রলোকে খুব ভাল করে চিনি এই কথা বলা যাবে না ! তবে উনার কয়েকটা ক্লাস করেছি ! বেশ ভাল পড়ায় ! পুরানো দিনের ইতিহাস সম্পর্ক বেশ ভাল জ্ঞান রাখে বোঝা যায় ! আজকে হঠাৎ আমাকে কেন ডাক দিয়ে নিজের কেবিনে বসালেন ঠিক বুঝতে পারছি না ! আমার মত ক্ষুদ্র মানুষকে এমন একজন মানুষ কেন ডাক দিবে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না !
অনেকক্ষন চুপ করে থেকে হঠাৎ তিনি বললেন
-তুমি কি জানো তোমাকে আমি বেশ কয়েক দিন থেকে লক্ষ্য করছি !
আমি একটু চমকালাম !
আমাকে কেন লক্ষ্য করবে এই ভদ্রলোক ? আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না !
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে জামান মালিক বলল
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি কদিনের ভিতরেই কিছু একটা অন্যায় করতে যাচ্ছ ?
এইবার আমি সত্যি সত্যিই বেশ চমকালাম ! লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে !
আসলে লোকটা কি করতে চায় কিংবা কি বলতে ঠিক বুঝতে পারছি না !
জামান মালিক বলল
-তুমি ঐ মেয়েটাকে ভালবাসো তাই না ?
খাইছে ! এ লোকটা কে ?
টমিক্সের কেউ ?
না । তা তো মনে হচ্ছে না ! কারন এই লোক যদি টমিক্সের কেউ হত তাহলে আমাকে এতোক্ষনে গ্রাউন্ড সাবটারফেজে নেওয়া হত ! তারপর মেমরী রিপ্লেমেন্ট প্লান্টের ভিতর ঢুকিয়ে দিতো ! এখনও যেহেতু সেটা করা হয় তাই মনে হচ্ছে ভদ্রলোকের মতলব অন্য খানে !
আমি এবারও কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে রইলাম !
জামান মালিক বলল
-আমি যতদূর জানি নিজের সিলেক্টেড পার্সোনের বাইরে কাউকে ভালবাসা অন্যায় ! এর জন্য তোমাকে গ্রাউন্ড সাবটারফেজে যেতে হতে পারে এটা জানো ?
-জি জানি ?
-তো কি ইচ্ছা ?
-আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ! যদি একটু পরিষ্কার করে বলতেন !
-বলবো ! তার আগে আমি নিশ্চিত হতে চাই যে তুমি নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য কি না !
জামান মালিক আরও কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কি বলতে মনে মনে ঠিক করে নিল ।
তারপর বলল
-তুমি কি ট্রেসলেস রেভুলেশনের কথা শুনেছ ?
আমি একটু ভুরু কুচকে তাকালাম লোকটার দিকে ! লোকটা আমাকে কি বলতে চায় ? বেটা কি বিদ্রোহী নাকি ? আমাকেও দলে ভেড়াতে চায় ?
আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম !
লোকটা আবার বলল
-আমি জানি তুমি জানো ! অনেকেই জানে ! কিন্তু কেউ এটা মুখে স্বীকার করে না !
ট্রেসলেস রেভুলেশনের কথা আসলেই অনেকেই জানে তবে স্বীকার করে না মুখে ! আমরা মানুষ হয়ে কেন একটা মেশিনের কথা মত চলবো এবং তার নির্ধারিত পথে আমাদের হাটতে হবে এই প্রশ্ন তুলে অনেকে টমিক্সে সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের প্রত্যেকের দেহে একটা করে ট্র্যাকিং ডিভাইস সেট করা আছে যেটা দিয়ে টমিক্স আমাদের উপর নজর রাখে । আরও ভাল করে বললে সেটা আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড ! এটা দিয়ে টমিক্স আমাদের যোগাযোগ রাখে ! আমাদের শরীরের ডিএনএর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ডিভাইস কাজ করে !
এই বিদ্রোহী গুলো নিজেদের দেহ থেকে সেই ট্র্যাকিং ডিভাইস বের করে ফেলেছে ! অন্য ভাবে বলতে গেলে তাদের এখন আর কোন বৈধ ন্যাশনাল আইডিকার্ড নেই ! তারা এই পৃথিবীর অবৈধ অধিবাসী !
এখন চাইলেও টমিক্ক্স তাদের কি ট্রেস করতে পারবে না ! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডিভাইস বের করে ফেলার সাথে সাথে তারা এই পৃথিবীর কেউ না হিসাবে গন্য হবে ! এখানকার কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা তারা আর পাবে না ! এখন তারা সবাই হয়ে গেছে ট্রেসলেস ! কিন্তু শরীর থেকে ট্র্যাকিং ডিভাইস বের করে ফেলা লেভেল ফোর অপরাধ ! যার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড !
এদের কে ট্রেস করা না গেলেও টমিক্স এদের কে ধরার জন্য নতুন একটা পদ্ধতি বের করেছে ! প্রত্যেকটা শহর প্রত্যেকটা এলাকাতেই একটি বিশেষ ট্র্যাকিং যন্ত্র সেট করা ! অনেক টা মোবাইলে টাওয়ারের মত । এর কাজটাই হচ্ছে আসে পাশের মানুষ গুলোকে স্কেন করে এর ভিতর ট্রেসিং ডিভাইস আছে নাকি সেইটা বের করা ! যদি কোন মানুষের ভিতর ডিভাইসটা থাকে কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি এই যন্ত্রে আওয়াতায় কোন ট্রেসিং ডিভাইস বিহীন মানুষ চলে আসে তাহলে সঙ্গ সঙ্গে এলার্ম বেজে উঠে । ছুটে আসে নিরাপত্তা রোবোট ! অন্য অপরাধের ক্ষেত্রে তো আগে তাকে স্টেশনে নেওয়া হয় এই অপরাধের জন্য কোন স্টেশনের নেওয়া নেওনি নেই ! শুট অন সাইট !
আমি উঠে পড়তে পড়তে বললাম
-সরি স্যার ! আপনি কি বলছেন আম বুঝতে পারছি না ! আরও ভাল করে বললে আমি এসব বুঝতে চাচ্ছি না !
প্রফেসর আমার কাছ থেকে ঠিক এমই একটা উত্তর আশা করেছিলেন যেন ! অদ্ভুদ ভাবে হাসলেন তিনি ! হাসি মুখ রেখেই বললেন
-অপু হাসান ! তোমাকে একটা কথা বলি ! তুমি যেটা করতে যাচ্ছ সেখানে তোমার সাহায্য লাগবেই ! একা কিছুতেই তুমি পেরে উঠবে না !
-সেটা স্যার আমার সমস্যা ! আমি দেখবো !
আমি আর দাড়াবো না বলে ঠিক করলাম !
আমি যখন উঠে পড়তে যাবো তখন জামান মালিক বলল
-অপু এটা কিন্তু ক্যাম্পাসের কম্পিউটারের ডাটা চেঞ্জের বিষয় না ! মনে রেখো !
আমার শিরদাড় দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল !
লোকটা কি বলল ?
তার থেকে বড় প্রশ্ন লোকটা কিভাবে জানলো ?
কারও তো জানার কথা না ! তাহলে ?
যেখানে টমিক্স জানে না এই লোক কিভাবে জানে ?
মাস দুয়েক আগের কথা ! একটা ঝামেলার কারনে আমার একটা ল্যাব টেস্ট বেশ খারাপ হয় ! আমি জানতাম আমার রেজাল্ট কেমন হবে ! একটু চিন্তার বিষয় কারন গ্রেড খারাপ আসলে আমার সিটিজেন অপরোটুনিটি স্কোর কমে যাবে ! ফলে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা হাত ছাড়া হয়ে যাবে ! এই চিন্তায় অস্থির ছিলাম ! তাই ঠিক করলাম ক্যাম্পাসের রেজাল্টের ডাটা পাল্টে দেবো !
যদিও আমাদের পরীক্ষা গুলো সরাসরি টমিক্সের অধিনেই দিতে হয় কিন্তু এই ল্যাব পরীক্ষা গুলো স্যারেরা নেন ! তারা ডাকা ক্যাম্পাসের মেইন কম্পিউটারে স্থান্তর করেন ! সবার শেষে সেটা সোজা টমিক্সের কাছে যায় ! সুতরাং এটা করা অবশ্য খুব একটা সমস্যার কথা না ! সমস্যা টা হল আমার ভিতরে থাকা ট্র্যাকিং ডিভাইসটা ! আমি যেখানেই যাই না কেন এটা মেইন কম্পিউটারে রিডিং উঠবে ! আর আমার যেখানে থাকার কথা না সিগনালে যদি সেখানে ধরা পড়ে তাহলে সেখানে নিরাপত্তা কর্মীদের পৌছাতে খুব বেশি সময় লাগবে না !
কিন্তু আমি ঠিকই উতরে গেলাম ! সেটা অবশ্য আমি ছাড়া আর কেউ জানে না !
জামান মালিক বলল
-দেখো, যারা একবার ট্রেসিং ডিভাইসটা বের করে ফেলে তারা সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে তার উপরে এখন কি পরিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু হয়েছে তুমি তো জানো ! আবার ট্রেসিং ডিভাইস শরীরের রেখে বিদ্রোহ করা সম্ভব না তুমি ভাল করে জানো ! এক মাত্র তুমি জানো ! তুমি কিভাবে নিজের শরীরের ভিতর ট্র্যাকিং ডিভাইসটা থাকা সত্ত্বেই কাজ টা করতে পেরেছিলে ? কিভাবে মেইন কম্পিউটারকে ফাঁকি দিতে পেরেছিলে এই টা আমাদের দরকার ! আমাদের জানা দরকার !
আমি আবার বসে পড়লাম চেয়ারটাতে ! কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না ! আমার ব্যাপারে লোকটা বেশ ভাল খোজ খরব নিয়েছে বোঝা যাচ্ছে ! এখন আমি কি করবো ?
লোকটা যদি আমার নামে যে কোন স্টেশনে রিপোর্ট করে তাহলে আমাকে সোজা জেলে চলে যেতে হবে ! সেখানে যদিও আমার অপরাধ প্রমান করতে পারবে না কেউ তবে আমার উপর নজর বাড়বে ! তখন ?
তখন তো বেশ বিপদে পড়ে যাবো ?
আমার সাথে সাথে তন্বীও বিপদে পড়বে !
আমি বললাম
-আমি যদিও বলেই দেই তাতে তো খুব একটা লাভ হবে না ! টমিক্সকে কিছুতে হ্যাক করা সম্ভব না ! প্রফেসর একটু হাসলো ! বলল
-আমি জানি টমিক্সকে হ্যাক করা সম্ভব না ! আমরা ওটাকে হ্যাক করবো না !
-তাহলে ?
-ধ্বংস করবো ।
আমি কেবল একরাশ বিশ্ময় ভরা চোখ নিয়ে প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে রইলাম ! এটাও কি সম্ভব ?
কিন্তু প্রোফেসরের হাসি মাখা মুখের নিচে একটা দঢ় মনভাব দেখে মনে হল ভদ্রলোক সফল হলেও হতে পারে !
তিন
-মুড অফ কেন ?
-এমনি !
-কেন কেন ? আমার বাবুটার মুড এমনি কেন অফ থাকবে ?
-দেখো ! সব সমসয় ইয়ার্কী ভাললাগে না ! আজকে আমাদের গ্রাজুয়েশন ডে মনে নেই তোমার ?
-ও আচ্ছা ! এই জন্য তোমার মন খারাপ !
-এই জন্য না ! আর মাত্র কটা দিন ! তারপর ....
-তারপর ? কি তারপর ?
-আরে গাধা জানো না ! তারপর ঐ গাধাটাকে আমার বিয়ে করতে হবে !
-খারাপ কি ? এক গাধাকে রেখে আরেক গাধাকে বিয়ে করবা !
-অপু ! বলেছি না সব সময় ফাজলামো করবা না !
চার
-তুমি কি জানো টমিক্সে কে কেন হ্যাক করা যায় না ?
-মোটামুটি ?
-জানো ? সত্যি !
কথা হচ্ছিল প্রোফেসরের বাসায় বসে ! সেখানে আমার সাথে আর কিছু মানুষ রয়েছে ! এরা সবাই ট্রেসলেস রেভুলেশনের সাথে যুক্ত !
আমি বললাম
-টমিক্সে কে হ্যাক করা যায় না কারন হ্যাক করা যায় কোন কম্পিউটার কিংবা কম্পিউটার প্রোগ্রাম কে ? কোন মানুষ কে নয় !
জামান মালিক আমার দিকে অবাক বিশ্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! বুঝতে পারছিলাম রুমের অন্যান্য চোখ গুলোও আমার দিকে নিবদ্ধ ! যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না আমার কথা !
-তুমি কিভাবে বুঝলে যে টমিক্স মানুষ ?
-ঠিক মানুষ বললে ভুল হবে ! টমিক্স আসলে একটা বিশাল কম্পিউটার উইথ এ হিউম্যান ব্রেন !
জামান মালিক আমার দিকে তাকিয়েই রইলো কেবল !
আমি বলেই গেলাম
-মানুষ চরিত্রের একটা বড় বৈশিষ্ট কিংবা দুর্বলতা কি বলতে পারেন ? মনে করেন আপনি মনযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন এই সময়ে আপনার বাড়ির সামনে একটা বড় বিস্ফোড়ন হল ! তখন কি হবে জানেন ? আপনার সকল মনযোগ চলে যাবে ঐ বিষ্ফোরনের দিকে । টিভিতে কি হচ্ছে আপনি লক্ষও করবেনও না !
জামান মালিক চুপ চাপ শুনে গেলেন !
-এই ব্যাপার টা আপনারা লক্ষ্য করেছেন কি না আমি জানি না, তবে আমি করেছি ! মনে আছে আপনারা বেশ কিছুদিন আগে একটা টিভি স্টেশন উড়িয়ে দিয়েছিলেন ! তখনও ট্রেসলস রেবেলদের ধরার জন্য যন্ত্র আবস্কার হয় নি ! সেই সময় আমরা কয়েকজন পরীক্ষা দিচ্ছিলাম ! কয়েক মিনিটের জন্য আমাদের সিস্টেম একদম চুপ হয়ে গিয়েছিল ! এমন একটা ভাব যেন আমি একজন কে একটা কথা বলছি কিন্তু তার মনযোগ অন্য দিকে সে শুনছে না ! সেদিন থেকে আমার মনে খানিকটা সন্দেহ হয় ! এমন কেন হবে ? একটা প্রোগ্রাম তো কখনই এমন ভাবে আচরন করবে না !
আপনি নিশ্চই জানেন আমাদের পরীক্ষা গুলো সরাসরি টমিক্সের অধীনে দিতে হয় ! এই বিষয়ে সে বেশ সতর্ক ! এখান থেকেই সে তার নিজের কাজ কর্মের জন্য লক নিয়োগ দেয় !
আরেকটা বিষয়, সেটা হল রাতের কিংবা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের যেমন বিশ্রাম নিতে হয় ঠিক তেমনি টমিক্সকেও নিতে হয় ! আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেন নি রাত দুইটা টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আমাদের পুরো সিস্টেম কেমন একটা নির্জীব হয়ে পরে ! তখন কেবল মাত্র টমিক্সের রোব দিকটা পুরো সিস্টেম কে দেখাশুনা করে ! অনেকটা অটো সিস্টেম বলতে পারেন ! আমি এই সুযোগটাই নিয়েছিলাম !
আমার কথা গুলো শুনে জামান মালিক চুপ করে বসে রইলেন বেশ কিছুটা সময় ! তারপর বললেন
-তোমার ধারনা ঠিক ! আসলেই টমিক্স কেবল কম্পিউটার নয় ! একজন মানুষ ! বলতে পারো একটা হিউম্যান ব্রেন ! ২০০৯ সালের দিকে টমাস মিরিনসো ক্সাইলেন নামের এক পাগলাটে কিন্তু অসম্ভব মেধাবী একজন বিজ্ঞানীর জন্ম হয় পৃথিবীতে ! মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই তার মৃত্যু হয় বলে অনেকেই জানতো ! কিন্তু আসল কথা হল তিনি বেঁচে ছিলেন ! অতি বিশ্বাসী কিছু কর্মী নিয়ে তিন বেঁচে ছিলেন তৃতীয় বিশ্বের এক ছোট্ট দেশে !
তুমি বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের নাম জানো, যদিও এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই !
-সুন্দরবন ?
-বাহ ! বেশ কিচুই জানো দেখছি ! হুম সুন্দরবন ! ড. টমাস মিরিনসো ক্সাইলেনের ল্যাব ছিল এই বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের ভিতরে ! তিনি সেই সময়েই আধুনিক রোবো নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন ! কিন্তু যেহেতু রোবো কিংবা কম্পিউটার মানবের একটা বড় দুর্বলতা ছিল যে তারা আবেক কিংবা ইমোশন বুঝতো না ! তাই তার একটা চেষ্টা ছিল কিভাবে মানুষের ইমোশন টা তিনি রোবোর ভিতর সেট করবেন !
সেই নিয়ে তার বেশ কিছু সেমিনারও লেকচারও ছিল কিন্তু তখন কারমানুষ এটাকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছিল ! বলতে গেলে এক প্রকার অপমান করা হয়েছিল তাকে ! সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি নিজ থেকে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিল !
হুম ! এতো কিছু আমার জানা ছিল না ! এই ভদ্রলোক জানলো কিভাবে কে জানে !
জামান মালিক বলল
-তারপর তিনি আসলেই সফল হলেন, নিজের ব্রেন কে কম্পিউটারের মাঝে স্থাপন করতে ! একটু রিস্ক ছিল ! তবে সে টা তিনি নিয়ে ছিলেন এবং সফল হয়েও ছিলেন !
-তারপর ?
-তারপর একটা সময় তিনি আবিস্কার করলেন তিনি আসলেই বেশ ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ! তখন তো ইন্টারনেটের যুগ ! পৃথিবীর প্রত্যেকটা কম্পিউটারই পরস্পরের সাথে যুক্ত ! তিনি নিজের হিউম্যান কম্পিউটার ব্রেন দিয়ে এটা আবিস্কার করে ফেললেন যে তিনি সব কিছু নিজের ইচ্ছা মত নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন ! পৃথিবির প্রত্যেকটা কম্পিউটার তার কথা মত চলছে ! পরীক্ষা মূলক ভাবে তিনি তৎকালীন এক পরা শক্তির উপর অন্য এক পরাশক্তি মিসাইল নিক্ষেপ করিয়ে দিলেন ! এমনিই ! ফলাফল স্বরূপ বেঁধে গেল ৩য় বিশ্বযুদ্ধ !
-হুম ! তারপরের ইতিহাস আমি জানি !
-ঠিক ! যুদ্ধ হয়তো থেমে যেত কিন্তু ড. টমাস মিরিনসো ক্সাইলেন ইচ্ছে করে তা থামতে দেয় নি ! ইচ্ছে করে মানুষ মেরেছে ! তখন তার মাথায় ছিল ভিন্ন পরিকল্পনা !
-আমরা ! তাই তো ?
-হুম ! একটা মানব জাতি যার পূর্ন নেতৃত্ব কিংবা কর্তৃত্ব থাকবে তার হাতে !
-তো আপনারা কি চান আমার কাছে ?
-আমরা টমিক্স কে ধ্বংশ করতে চাই ! আমরা চাই আমাদের নেতৃত্ব আমাদের ভিতরে থাকুক ! কারো হাতের পুতুল যেন আমরা না হয়ে যাই !
আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরা নিতে পারি ! তুমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ যে দিন দিন আমাদের লোক সংখ্যা কমছে !
আসলেই এটা একটা আতংকের বিষয় ! আগে আমাদের লোক সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের কাছাকাছি এখন সেটা ৫০ হাজারে পৌসেছে ! না জানি কি হয় সামনে !
জামান মালিক বলল
-টমিক্সকে এখনই থামানো দরকার ! নয়তো একদিন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না !
পাঁচ
তন্বী কিছুক্ষন আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলো ! আমার কথা যেন কিছুতেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না !
হঠাৎ করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-না ! তোমার এসব করা লাগবে না ! তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি করতে যাচ্ছো ?
-আরে পাগলী ! আমি এই কাজ আগেও করেছি ! সমস্যা নেই তো !
-আগেও করেছো ? মানে কি ?
-মনে আছে একবার আমার একটা ল্যাব টেস্ট বেশ খারাপ হয়েছিল তোমাকে বলেছিলাম ?
-হুম ! কিন্তু সেটাতে তো তোমার বেশ ভাল নাম্বার এসেছিল !
-আসলে আসে নি ! আমি খানিকটা ....।
আমি কথা শেষ করলাম না ! তন্বী আমার দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে ! আজকে আমাকে যেন তার অন্য রকম লাগছে ! বলল
-কিভাবে ?
-দেখো, তুমি নিশ্চই জানো আমাদের সবার শরীরে একটা করে চীপ লাগালো আছে ! বলতে পারো একটা ট্র্যাকিং ডিভাইস, যেটার সাহায্যে টমিক্স আমাদের অবস্থান আমাদের কাজ কর্ম সম্পর্কে জানতে পারে !
-হুম !
-আসলে এই ডিভাইসটা থেকে একটা ফ্রিকোয়েন্সি সব সময় মেইন কম্পিউটারে গিয়ে পৌছায় !
-বুঝলাম ! তো ?
-আরে এখানেই তো খেলা ! অনেক কাল আগে আমাদের এই পৃথিবীতে মোবাইল নামক একটা যন্ত্র ছিল, এখন যেমন কমিউনিকেশন মডিউল ঠিক তেমন ! মোবাইলের কাজ চলতো তরঙ্গ কিংবা ফ্রিকোয়েন্সি মাধ্যমে!
-আসল কথা বল !
-আসল কথা হল সেই তরঙ্গ ডাইভার্ট করা যেত ! মনে কর তুমি এক নাম্বারে ফোন করেছ কিন্তু সেই নাম্বারটা অন্য এক নাম্বারে ডাইভার্ট করা ! তখন সেই তরঙ্গটা ঘুরে অন্য কোথাও চলে যেত ! আমিও ঠিক একই পদ্ধতি বের করেছি ! আমি কেবল আমার ভিতরকার তরঙ্গটা ডাইভার্ট করে দিয়েছি ! আমার যেখানেই থাকি না কেন আমার ফ্রিকোয়েন্সি আমার বাসা ঘুরেই টমিক্সের কাছে পৌছাবে !
তন্বী কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়েই রইলো ! কিছু যেন বোঝার চেষ্টা করছে । অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা নিরাপদ তো ?
-নিরাপদ ! হাহাহাহা ! তুমি দেখতেই পাচ্ছ !! পাচ্ছ না ? আমি এখন তোমার সামনেই আছি !!
ছয়
আজকে আমাদের অভিজান শুরু হবে ! আমাদের মুল লক্ষ্য হবে সম্পূর্ন সিস্টেম থেকে মূল টমিক্স কে আলাদা করে ফেলা ! যাতে কোন প্রকার নির্দেশ সে কাউকে দিতে না পারে !
আমাদের শহর টা মোট আট টা অংশে বিভক্ত হয়ে আছে ! আট টা অংশে মোট আটটা বড় স্টেশন রয়েছে যেখান দিয়ে পুরো ঐ অংশ টুকু নিয়ন্ত্রন হয় ! এই আট টা অংশ রিপোর্ট করে আরো দুইটি মেইন সাব ডিভিশনে ! এবং এই দুইটি সাব ডিভিশন আবার মেউ টমিক্সের সাথে সংযুক্ত !
সাধারনত এই স্টেশন গুলোর কাছে কেউ আসলেই সেই লোকটার ফ্রিকোয়েন্সি মেইন কম্পিউটারে চলে যায় ! সেখানেই তাকে থামতে বলা হয় কিন্তু যদি কোন প্রানী কিংবা মানুষ যাদের শরীরে কোন প্রকার ট্রেসিং ডিভাইস নেই যদি এই স্টেশন গুলোর কাছে পৌছায় তাহলে সেন্সরের ধরা পরা মাত্র সেগুলোকে ধ্বংশ করা হয় !
মালিক জামান বলল
-তাহলে আমরাও তো সেন্সসরে ধরা পরবো !
-হুম পরবেন ?
-মানে কি ?
-মানে আছে ? আপনি জানেন নিয়ম অনুযায়ী দেশের কোন নাগরিকের উপর লেজার বীম চালাননোর নিয়ম নেই, যদি না সেই লোক পরপর দুইবার টমিক্সের কোন নির্দেশ অমান্য করে ! এখানে একটা কিন্তু আছে ! আপনারা যখন সেন্সসরে ধরা পরবেন তখনই একটা অটোমেটিক স্কেনিংয়ে আপনাদের দেহের ট্রেসিং ডিভাইস ধরা পড়বে এবং সেই তথ্য চলে যাবে সোজা মেইন কম্পিউটারে । কিন্তু মেইন কম্পিউটারে আপনাদের অবস্থান বলবে অন্য কোন খানে ! এইখানে টমিক্স কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বে ! আর তার উপরে এটা যেহেতু তার বিশ্রামের সময় সে সিদ্ধান্ত নিতে আরও দেরি করবে !
-কতক্ষন ?
-সেটা বলতে পারবো না ! যদি আমরা সবাই একসাথে একই সময় কাজটা করতে পারি তাহলে সময় টা আমরা বেশি পাবো এবং এই সময়ের ভিতরেই আমাদের বিস্ফোরক গুলো সঠিক জায়গা মত রাখতে হবে !
-কথাটা কি বোঝা গেছে ! এবং অবশ্যই বিস্ফোরক মোটা প্লাস্টিকের মুড়িয়ে নিতে হবে যাতে এর স্কেনিংয়ের সময় তা ধরা না পড়ে !
এর পরেই আমাদের মুল টার্গেট হবে টমিক্স ! তবে এই গুলো যদি ধ্বংস করা যায় তাহলে টমিক্স এর আঘাত সহ্য করতে পারবে না, যেহেতু পুরো সিস্টেমটা ওর মস্তিস্কের সাথে সংযুক্ত ! তবুও আমরা কোন প্রকার ঝুকি নিবো না ! আমাদের অন্য টিপ রেডি থাকবে ! ঠিক আছে !
আমি ভেবেছিলাম আমাকে ওরা সাথে নিবে । কিন্তু আমাকে কিছুতেই নিতে রাজি হল না ! তাদের একই বক্তব্য এই কাজের জন্য আমি মোটেই নাকি প্রস্তুত নই ! তার উপর আমার জন্য তন্বী অপেক্ষা করছে ! আমার কিছু হয়ে গেলে তারা তন্বীকে কি জবাব দিবে ?
আমাকে রেখেই ওরা রওনা দিয়ে দিল !
যখন বাসায় এলাম দেখি ঘড়িতে সাড়ে তিনটা বাজে ! আরও পনেরো মিনিট পরে অভিজান শুরু হবে ! কে জানে কি হবে ?
পরিশিষ্টঃ
-এই উঠো !
-কেন ? আরেকটু ঘুমাতে দাও !
-অফিস যাবে না ?
-আরে রাখো তোমার অফিস ! নিজের বউকে জড়িয়ে একটু ঘুমাতেও পারবো না ? এমন অফিসের গুল্লি মারি !
-হুম ! বোঝা গেছে ! আসলে টমিক্স থাকলেই ভাল হত ! তোমাদের মত আলসেদের সব সময় দৌড়ের উপর রাখতো !
-তাই না ? টমি মিয়া থাকলে আপনি কি এখানে থাকতেন ?
তন্বী আমার কথার জবাব না দিয়ে আমার বুকে নিজের নাক ডুবিয়ে উজ্ঞতা নিল !! তারপর আদুরে গলায় বলল
-আসলেই এখনও যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরি ঠিক বিশ্বাস হয় না ! আমার জন্য এতো বড় একটা ঝুকি তুমি কিভাবে নিলে ! যদি সফল না হতে !
-কি হত চলে যেতাম সাবটারফেজে !!
-চুপ !
তন্বী আমাকে আর কিছু বলতে দিল না !
আমার কথাঃ
কয়েকদিন আগে এটার প্রথম পর্ব লিখেছিলাম ! আজকে বাদবাকিটা দিয়ে দিলাম ! তবে গত পর্বের কিছু বর্ণনা একটু বদল করেছি ! জানি না কেমন হয়েছে !
গল্প লিখতে লিখতে একটু আটকে গিয়েছিলাম ! শান্তির দেবদূত ভাই সাহায্য করেছে ! তাকে অশেষ ধন্যবাদ ! ইনফ্যাক্ট গল্পের নামটাও তার কাছ থেকেই নেওয়া !