এডমিশান টেস্ট সময়কালীন কথা.......
আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে কোন প্রকার আত্মীয়-সজন না থাকায় আশ্রয় নিতে হয় সুদুর গাজীপুরস্থ এক দুর.....দুর........ দুর ..............সম্পর্র চাচার বাসায়।
সময়টা নভেম্বরের শুরুর দিকে.....বাংলার বুকে শীত নামু নামু করছে.....শীতটা তীব্র না হলেও সকালবেলার রোদটা ভারী মিস্টি......
তো.... ভর্ পরীক্ষার ঠিক আগের দিন মিস্টি রোদের সকালে পুবদিকের জানালা খুলে শুয়ে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছি আরে বুকের উপর খাড়া করে ধরে এ্যাডমিশান টেস্ট এইডিং গাইড পাঠ করছি......
মনোযোগ চরমে.......
পড়ছি তো পড়ছিই......
পড়ছি আর মাঝে মাঝে বয়স-সঙ্গত কিছু দুষ্টি-মিষ্টি ভাবনা ভাবছি.......
কিছুক্ষণ পর দেখি আমার ভাবনা ৯৭% সত্যি হতে যাচ্ছে........
জানালার পাশে সরু রাস্তায় ঠিক মাঝখানে এক পাতলা ছিম-ছিমে মেয়ে নাদুস-নুদুস এক পিচ্ছিকে ঘেসে তার পিছনে দাড়িয়ে দুই কাঘের উপর হাত রেখে তাকে আলতো-আলতো ঠেলছে আর ভাইয়....ভাইয় বলে ডাকছে....
আমি আামার ভাবনা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনার তীব্রতায় গিল্টু খেয়ে বইটা নামিয়ে সেদিকে তাকাই......
বালিকার চোখে চোখ পড়তেই তিনি এমন হাসি হাসলেন, যে তিনি যেন আমার শতজনমের অতিচেনা আপনজন.....
আমি ভেবলুর মত তাকিয়ে আছি.......
তিনি বল্লেন, আগামীকাল আপনার এক্সাম আছে?
আমি তো আরোও মুরগী.....
থতমত খেয়ে পেট ভরে গেল এবং ভূত-ভবিষ্যৎ সব অন্ধকার ঠেকল আর সেজন্যই আমি বল্লামঃ কি...কি....কিসের এক্সাম?
তিনি বলেনঃ কিসের আবার? এ্যাডমিশান টেস্ট.....!
ততক্ষণে কিছুটা ভূত মাথায় এল এবং মনে পড়ল যে আমি এ্যডমিশাণ এ্যাপ্লিকান্ট।
মনে পড়লে কি হবে আমি তো দ্বিতীয় রাউন্ড চিকেন হয়ে জিজ্ঞাস করলাম, আমার এ্যাডমিশান টেস্ট আপনি জানলেন কি করে.....??
তিনি বলেনঃ আপনি যে খাড়া করে ধরে ধরে বইটা পাঠ করছেন তার মলাটের উপরের লেখা দেখলেই বোঝা যায়, এটার জন্য এক্সট্রা সেন্সরি পাওয়ার লাগে না।
তৃতীয় রাউন্ড মুরগী হওয়া থেকে নিজকে খুব কষ্ট করে বাচিঁয়ে নিয়ে বল্লামঃ ও আচ্ছা, তাইতো.....
বালিকার ঢং-কেচ্ছা এরকম কি যে তিনি যে একজন অচেনা ছেলেমানুষের সাথে কথা বলছেন, তার মাঝে সেরকম কোন লক্ষণই নাই। নাই কোন জড়তা, নাই কোন সংকোচ.....
বালিকা জিগায়ঃ এটা কি আপনাদের বাড়ি?
আমি বলিঃ না, এটা আমার আত্মীয়ের বাড়ি। আমার বাড়ি গ্রামে। আপনিও কি এ্যাডমিশান টেস্ট দিচ্ছেন?
তিনি বলেনঃ নারে......আমি এখনো অনেক গ্যান্দা, অত বড় হইনাই।
আমি বলিঃ ও আচ্ছা।
তিনি বলেনঃ আমকে তুমি করে বলেন আর আমি বোধহয় ডিস্টার্ব
করছি, আমি যাই আপনি পড়েন।
আমি বলিঃ আচ্ছা। কিন্ত বলতে পারি না যে এরকম ডিস্টার্বইতো আামি সারা দিন-রাত চাই। তুমি আরো ডিস্টার্ব করনা কেন, বালিকে....।
তিনি চলে যান আর আমি বই রেখে দেই। তিনার সাথে আর কোন সম্ভাবনা নেই জেনেও ভিতরে কেমন যেন একটা আনন্দ-আনন্দ বোধ করতে থাকি।
.
পরেরদিন সকালে এ্যাডমিশান টেস্টে বেশ ভাল পারফর্ করে মনের আননন্দে প্রায় নাচতে নাচতে পত্যাবর্তন পথে অগ্রসরমান।
মনে তখন একটাই ভাবনা ”একটি বেনসন এ্যান্ড হেজেস ও কয়েকটি সুখটান”
বাস ধরতে যেহেতু রাস্তার উপার যেতে হবে, কাজেই ভাবলাম সুখটান ওভারব্রীজ পার হয়েই হোক।
ওভার ব্রীজে উঠছি, আমি সেইফ......
ওভার ব্রীজ হাটছি, আমি সেইফ........
নামার সময় বিপদ.....
কেউ একজন পিছন থেকে খপ করে আমার চোখ চেপে ধরল..... আমি স্পিকার.......
কয়েকে সেকেন্ড হয়ে গেল, চোখ ছাড়ছে না। ওভার ব্রীজ দিয়ে এত মানূষ উঠা-নামা করছে, তাও চোখ আমার মুক্তি পাচ্ছে না.....
স্পিকারি এখানেই শেষ নয়।
কয়েক সেকেন্ড পর টের পেলাম, হাত দুটো খুব নরম........
তারও কিছুক্ষণ পর টের পেলাম ফিমেল পারফিউম.....
তিন সেকেন্ডে আত্নসমালোচনা করে দেখলাম, এখানে কোন ফিমেল কর্তৃক এভাবে চোখ চেপে ধরা সম্ভব নয়। কাজেই আমার হাত-পা কাপা শুরু এবং শরীরে ঘাম।
চোখ জোড়া মুক্তি পেল, কিন্ত মুক্ত চোখে যা দেখলাম তাতে আবার ভুত ভবিষ্যৎ গেল।
পিছন ফিরে দেঝি জানালার সেই তিনি.....
লিপিস্টিক পড়া ঠোটে জাদুকরী হাসি...
হাসির অবসরে জিগাইলেন, এক্সাম কেমন হল?
আমি কোনমতে বল্লামঃ ভালই।
আমি কিছুক্ষণ স্পীকার থেকে পরে আবার বল্লামঃ আপনি এখানে কি করেন?
তিনি বল্লেনঃ আরে আগে ব্রীজ থেকে নামেন, কত মানুষ উঠা নামা করছে.....
আমি ও হ্যা, তাইতো... বলে তিনাকে সামনে দিয়ে তিনার পিছু পিছু হাটতে থাকলাম।
ওভারব্রীজের গোড়া থেকে একটু দূরে গিয়ে তিনি আচমকা ঘুরে দাড়িয়ে আমাকে বল্লেনঃ আমি এখানে কি করি মানে?? এ্যাডমিশান টেস্ট কি আপনি কিনে নিয়েছেন নাকি? আরি কেউ দিতে পারবেনা??
আেইম আমতা আমতা করে বল্লামঃ না, মানে কালকে যে বল্লেন আপনি এখেনোও গেন্দা.....
তিনি বলেনঃ তো কি হয়েছে, এ্যডমিশান টেস্ট দিচ্ছি বলে আপনাকে আগে-বলতে হবে নাকি.......
কি ধারালো কথা-বার্তা রে, মাইরি..আমি তো কুচি কুজি হচ্ছি।
তিনিই আবার বলেনঃ ওই বাসায় ফিরবেন, নাকি অন্য কোথাও যাবেন?
আমি বলিঃ না, ওই বাসাতেই যাবো।
তিনি বলেনঃ চলুন, এককাপ করে চা খেয়ে একসাথে যাই। আমি একাই আসছি। আপনার সাথে কেউ আছে?
আমি বলি না, আমিও একাই। চলুন।
....অতো মানুষের ভীড়ে লাফানো গেল না তো, তাই পাঁচ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে লাফাচ্ছি কল্পনা করে মনে মনে বলিঃ ও মাই গড, সব কিছু এমন ফেভারে কেন গো.....
এর পর “একটি বেনসন এ্যান্ড হেজেস ও কয়েকটি সুখটান” চেতনা বিসর্জন দিয়ে দুইজনে এককাপ করে চা......আনন্দসুপারে পাশা-পাশি যাত্রা এবং কিছু সীমাহীন ভাবনা......
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৮