২০০৫/০৬ সালের দিকে যখন আমরা প্রথম প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করি তখন প্রতিমিনিট ফোন কলের মুল্য টাকা ছিল সঠিক ভাবে মনে করতে পারছি না। মুল্য কি রকম ছিল সেটা মনে করতে না পারলেও মুল্যটা যে আমাদের কাছে খুবই ভারী ছিল সেটা ভাল মতই মনে করতে পারি।
.
দিনে শ’খানিকবার মোবাইলের ব্যালান্স চেক করা ছিল বাধ্যতামূলক দায়িত্বের কাতারে। কোন কারণে একটা টাকার এদিক-সেদিক হলে মাথায় যেন আগুন লেগে যেত। পকেট থেকে ৩০/৪০ টাকা নেমে গেলেও কিছু মনে হত না, কিন্তু মোবাইলের ব্যালান্স থেকে কোন কারণে ১ টাকা কাটা পড়লে তুল ভীষণ মন খারাপ হত… বাটুন টিপে টিপে দিনে শ’খানেকবার মোবাইলের ব্যালান্স চেক করা, ভাবা যায় কততো আদরের ছিল সেই ব্যালান্স…!
.
*-৫-৬-৬-# সবার মোবাইল সেটেরই এই ক’টা বাটুনের ছাল উঠে যেত সবার আগে। নিরতিশয় কোন প্রয়োজন ছাড়া কাউকে সাধরানতঃ ফোন দেয়া হত না।
.
কল করার প্রয়োজন গুলো যেভাবে মিটানো হত মিসকলের মাধ্যমে তার কিছু নমুনাঃ
.
১. বাসায় পৌছে মিসকল দিস
.
২. দোস্ত, আমরা বিড়ি টানতে গেলাম, অমুক স্যারের ক্লাস হলে মিস দিস
.
৩. ভাই, আমি খাইতে বইসা মিসদিমু, তুমি চইলা আইসো, একসাথে খামু।
.
মিসকল ছাড়াও সেই সময়ে আরেকটা স্পেশাল অফারছিল ৬-৭ টাকায় ৫০০ এস এম এস পাওয়া যেত, যার মেয়াদ থাকতো মাত্র সাত দিন। {অনেক সময় ফ্রিতেও ৭ দিনে ৫০০ এস এম এস পাওয়া যেত}।
.
এত অল্প সময়ে এত গুলো এস এম এস কার্যকর যোগা-যোগ সাধনের মাধ্যমে নিঃশেষ করা কোনমতেই সম্ভবপর ছিল না। ফলে জনগন কিছু বেহুদা ক্ষুদেবার্তার অবতারণা ঘটান। সবচেয়ে বেহুদা এবং বহুল প্রচলিত কিছু বার্তা ছিল এরকমঃ
.
১. এস এম এস যখন দিয়েছি, এস এম এম আরও দিব, তবু সাত দিনে ৫০০ এস এম এস শেষ করে ছাড়ব ইনশা’আল্লাহ !
.
২. গাজা দেশ ও সমাজের জন্য অভিশাপ, এই অভিশাপকে দেশ ও সমাজ থেকে দুর করা তোমার আমার দায়িত্ব। আমরাই পারি এই অভিশাপকে দেশ ও সমাজ থেকে দুর করতে। এখনই সময়। চল আমি এক পুটলা শেষ করি, তুমি এক পুটলা শেষ কর।
.
৩. একবার এক হাতির সাথে পিপড়ে-রাজকন্যার প্রেম হল। পিপড়ে-রাজ জানতে পেরে তার মেয়েকে শাসিয়ে বললঃ তোর এত বড় সাহস! তুই আমার মেয়ে হয়ে সামান্য হাতির সাথে প্রেম করিস? খবরদার, তুই হাতির বাচ্চাকে ভুলে যা!
পিপড়ে-রাজকন্যা কেদে কেদে বলল, না বাবা, তা সম্ভব নয়!
পিপড়ে রাজা বলল, কেন সম্ভব নয় রে হারামজাদী?
পিপড়ে-রাজকন্যা বলল, সম্ভব নয়, কারণ আমার পেটে হাতির বাচ্চা!
.
৪. এক প্রবাসী ছেলে তার মায়ের কাছে পত্র লিখলঃ মা গো, আমার এইডস ধরা পড়েছে, আমি আর বেশীদিন বাঁচব না মা। আমি দেশে চলে আসব।
তার মা উত্তর দিলঃ শোন বাবা, তুই এইডস নিয়ে দেশে আসলে আমাদের কাজের বুয়ারও এইডস হবে। কাজের বুয়ার হলে তোর বাবার হবে, তোর বাবার হলে আমার হবে, আমার হলে তোর চাচার হবে, তোর চাচার হলে তোর চাচীরও হবে। আর তোর চাচীর হলে সারা গায়ের মানুষের হবে। তুই বাপ বিদেশেই মর, তোর দেশে আসার দরকার নাই।
.
৫. কিছুদিন থেকে খুবই মনঃপীড়াময় দিন যাচ্ছে। কুলিয়ে উঠতে না পেরে অবশেষে এক দরবেশ বাবার কাছে গেলাম। সমস্যা খুলে বললাম। বাবা আমাকে পরামর্শ দিল, কোন এক কঠিন গুনাগার কে একটা এস এম এস কর, শান্তি পাবি। শোনার পর তোমাকে এস এম এস করলাম। এখন বেশ শান্তি পাচ্ছি।
.
এরুপ আরও কিছু আকাইম্মা এস এস এস সে সময় চলাচল করত, যেগুলা অতিমাত্রায় আঠারো প্লাস হওয়ায় উল্লেখ করা সম্ভবপর নয়।
.
বিঃ দ্রঃ এই সকল এস এম এস যে কার বা কাদের ঘিলুৎসরিত তার কোন সঠিক সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৮