somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমিক নজরুলের সাতকাহন~প্রমীলা পর্ব:-১

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(নার্গিস পর্ব পড়বার জন্য এখানে দেখুন)

নজরুলের জীবনে প্রমীলা পর্ব শুরু হয় নার্গিস পর্ব শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। আগেই নার্গিস পর্বে বলা হয়েছে আলী আকবর খান নজরুলকে নিয়ে কুমিল্লায় তার বন্ধু বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের (বীরেন) বাসায় উঠেন। বীরেনের বড় চাচা বসন্তকুমার সেনগুপ্তের বিধবা স্ত্রী গিরিবালা সেনগুপ্ত তার একমাত্র মেয়ে প্রমীলা সেনগুপ্ত ওরফে দোলনসহ কুমিল্লায় বীরেনদের সাথে থাকতেন। তবে প্রথমেই নজরুল ও প্রমীলার কোন অনুরাগ গড়ে উঠেনি।

বিয়ের রাতেই নার্গিসকে দৌলতপুরে ফেলে নজরুল বীরেনকে সাথে নিয়ে দীর্ঘপথ পায়ে হেটে কুমিল্লায় বীরেনদের ঘরে উঠেন। পরদিনই বীরেনের মা শ্রীমতি বিরজা সুন্দরী দেবী যিনি সপরিবারে (প্রমীলাসহ) দৌলতপুরে নার্গিস-নজরুল বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছিলেন, নৌকা যোগে ফিরে আসেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পরিশ্রম ও মানসিক কষ্টে নজরুল খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেন পরিবারের সবাই কবিকে সেবাযত্ন করে সারিয়ে তুলতে নেমে পড়েন। বাড়ির ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রমীলাই ছিলেন সবার বড় এবং নজরুলের সেবা যত্নের জন্য বিরজা সুন্দরী সব সময় তাকেই পাশে রাখতেন। কিশোরী দোলন ও তরূণ কবি নজরুলের প্রণয়ের সম্পর্ক তখনই গড়ে উঠে।

নজরুল দৌলতপুর হতে কুমিলার কান্দিরপাড়ে পৌছেন ১৯২১ সালের ১৮ জুন। ৬ জুলাই কমরেড মোজাফফর আহমেদ কুমিল্লা পৌছুলে নজরুল তাকে ২০/২২টি কবিতা তুলে দেন। মজার ব্যাপার নার্গিসের সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে তাকে ফেলে চলে আসা পর্যন্ত সময়ে নজরুল কোন কবিতাই লেখেননি। মোজাফফর আহমেদের হাতে তুলে দেওয়া সবগুলো কবিতাই ১৮ জুন থেকে ৬ জুলাই মাঝে লেখা। ৮ জুলাই কমরেড মোজাফফর আহমেদ কবিকে নিয়ে কলকাতা ফিরে আসেন। একই বছর নভেম্বর মাসে কবি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেন কুমিল্লাতে এবং প্রায় একমাস ছিলেন।

দ্বিতীয় বার কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফিরে এসেই কবি তার বিখ্যাত দুটি কবিতা লেখেন, বিদ্রোহী ও ভাঙার গান। এই বিদ্রোহী কবিতাই কবি নজরুল ইসলামকে দেশ জোড়া খ্যাতি এনে দেয়। নজরুল গবেষক ড. আবুল আজাদ লেখেন, “দুই অসামান্য রচনা ‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান” – নজরুল ইসলামের অন্তরের গভীর মর্মপীড়ার ফসল। কে এর প্রেরণার উৎস – নার্গিস না প্রমীলা? নজরুল ইসলামের তাবৎ সাহিত্য কর্মে এই দুই নারীর অপরিসীম প্রভাব মুল্যায়ন করতে গেলে দেখা যাবে প্রেমের জগতে অন্তরের গভীর প্রাধান্য পেয়েছিল নার্গিস………. পক্ষান্তরে প্রমীলাকে নিয়ে কবি জড়িয়েছেন জীবন জগতে বাস্তবে”।

১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবি তৃতীয়বার কুমিল্লায় পৌছেন। এবারো তিনি বিরজা সুন্দরী দেবীর আশ্রয়ে উঠেন। তিনটি ভ্রমনেই, কুমিল্লার যুব সমাজ কবিকে কাছে পেয়ে আপন করে নেয়। এদের মাঝে অন্যতম ছিলেন সুলতান মাহমুদ মজুমদার। তৃতীয়বার কবি প্রায় পাঁচ মাস কুমিল্লা ছিলেন।

সুলতান মাহমুদ মজুমদার লিখেছেন, “নজরুল কুমিল্লা থাকাকালে সন্দেহাতীত ভাবে বুঝতে পারলাম যে নজরুলের সঙ্গে তার ভাবী পত্নী কুমারী প্রমীলা সেনগুপ্তের পূর্বরাগ চলছে। নজরুল আমাকে নিতান্ত ছেলে মানুষ মনে করতেন। একদিন মার্চ মাসের প্রথম ভাগে আমার হোস্টেলে এসে কবিতা লিখতে বসলেন। আর কোনদিন তিনি হোস্টেলে বসে কবিতা লিখেন নি। আমি নিকটে গেলে বললেন – প্রেমপত্র নয়, -কবিতা। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে কবি আমাকে ডাকলেন ও কবিতাটি যে কাগজে লিখেছিলেন সে কাগজটা ভাঁজ করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, আমি যেন সেটা তখনই দুলীর (প্রমীলা) হাতে পৌছে দিয়ে আসি। আমি বললাম, কবিতা পড়তে পারি? তিনি বললেন, ‘খুউব পড়তে পার’। ততক্ষণে চা এসে গেল। তিনি চায়ে চুমুক দিলেন, আমি মনে মনে কবিতাটি পড়লাম। কবিতাটির নাম ‘বিজয়িনী’ -----

হে মোর রানী ! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।

আমার সমর-জয়ী অমর তরবারী
দিনে দিনে ক্লান্তি আনে, হ’য়ে উঠে ভারী,
এখন এ ভার আমার তোমায় দিয়ে হারি
এই হার-মানা-হার পরাই তোমার কেশে।।

ওগো জীবন – দেবী!
আমায় দেখে কখন তুমি ফেল্‌লে চোখের জল,
আজ বিশ্ব –জয়ীর বিপুল দেউল তাইতে টলমল!

আজ বিদ্রোহীর এই রক্ত রথের চূড়ে,
বিজয়ীনি! নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে,
যত তুণ আমার আজ তোমার মালায় পুরে,
আমি বিজয়ী আজ নয়ন জলে ভেসে’।



নার্গিসকে উদ্দেশ্য করে কবি লিখেছিলেন, ‘হার-মানা-হার’। অবশেষে সেই হার-মানা-হার পড়ালেন দুলীর কেশে।


(তথ্য সূত্র: নজরুলের জীবনে নারী ও প্রেম; ড. আবুল আজাদ)





(প্রমীলা পর্ব-২ এর জন্য ক্লিক করুন)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৭
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এক ঝাঁক শূন্যতা=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩


আপনজনেরা অপেক্ষার প্রহর গুনে
কার্ডিয়াক হাসপাতালের চেয়ারে বসে,
সব থেকেও যেন কী নেই
এক ঝাঁক শূন্যতা বুকে মানুষগুলো কী উদাস।

কেউ বা সিসিইউতে, কেউ আইসিইউয়ে
হাতে গাঁথা সেলাইনের মালা,
সাদা চাদর গায়ে শুয়ে অপেক্ষায় অনন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ার মুখ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৮


ষড়ঋপু: হিংসা পর্ব

খুলনার আকাশে তখন সন্ধ্যার ছায়া নামে। রূপসা নদীর তীরে বসে থাকা আর্য অনিরুদ্ধের চোখে এক অদ্ভুত ধরণির হাহাকার। সে স্থির, অথচ ভিতরে উথালপাথাল এক দ্বন্দ্বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ নববর্ষ। শুভ কামনা সব সময়।

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫০
×