তখন আমি HSC ২য় বর্ষে পড়ি। বিকালে মাঠে খেলতে যেতাম। সাথে থাকত আমার কিছু বলদ বন্ধু আর কলেজের এক ছোট ভাই রিপন। আমাদের বাড়ি থেকে সামান্য কিছু দূরেই একটা খেলার মাঠ। আরও দুই চার এলাকার ছেলেপেলে এসে খেলত ওখানে। তারা সবাই ছিল স্কুল পড়ুয়া নয়তো স্কুলেই যেত না। মাঝে মাঝে আমাদের যেতে দেরি হলে খেলার যায়গা পেতাম না। তাই একটা বুদ্ধি করলাম। রিপনকে বললাম মাঠে যারা খেলছে তাদের মধ্যে দুর্বল দেখে একটা ছেলেকে ডেকে দুইটা চড় দে আর মাঠ থেকে চলে যাইতে বল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে সে চলে গেল এবং একটারে ধরে বসিয়ে দিল। মাঠে হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। এবার আমরা দ্রুত মাঠে গেলাম আর ওকে ব্যপক ঝারাঝারি করে মাঠ থেকে বের করে দিলাম। নিমিষেই ছেলেপেলেদের কাছে হিরো হয়ে গেলাম। তাদের একজন বলল ভাই আমাদের সাথে খেলেন। আরেকজন বলল ভাই আমাদের সাথে। আমি বিষয়টা উপভোগ করে বললাম, আজ না থাক। আমারা কাল খেলব। বলে চলে গেলাম। বাইরে এসে রিপনের সাথে দেখা করলাম। সবাই মিলে বাজারে গেলাম এবং সেখানে এক চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে লাগলাম। এমন সময় রিপন বলল ভাই ব্যাপক মজা পাইছি। থাপড়ানোর সেই আনন্দ। সেই। আমি বললাম হুম। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। তুই আর এখন থেকে আমাদের সাথে খেলতে পারবি না। তাইলে ওরা বিষয়টা বুঝে ফেলবে। সে মাথা নেড়ে বলল সমস্যা নাই ভাই। খেলতে আমার খুব একটা ভাল লাগে না। তার চেয়ে থাপড়ানোই মজা। আমি বললাম ঠিকাস। সমস্যা নাই। মাঝেমাঝে মাঠে যেয়ে এরকম হস্তচর্চা করে আসবি। এদিকে দিনকে দিন এলাকায় আমার ভক্ত সংখ্যা বাড়তে লাগল। ছোটরা মাঠের সমস্যা ছাড়াও অন্য সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আস্তে লাগল। সিনিয়ররাও আমাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করল। দিনকে দিন আমার খ্যাতি বাড়তে লাগল। অবশ্য কিছু ছেলেপেলে আমার বিরোধী হয়ে উঠতে লাগল। এদের মধ্যে রায়হান ছিল অগ্রগণ্য। তারা সাথে ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনা নিয়ে কম্পিটিশন চলে কে কার চেয়ে ভাল ছাত্র। তো এই রায়হান আর তার কিছু অনুসারীর কাছে আমি ছিলাম সবসময়ই চোখের বালি । এদিকে রিপনও তার পাওয়ার এলাকার অন্যান্য মাঠে প্রয়োগ করতে শুরু করে দিল। ফলে আমার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে লাগল। মাঝেমাঝে অবশ্য কোন কোন মাঠের ছেলেপেলেরা প্রতিবাদী হয়ে উঠত। সেগুলো আবার আমি স্বশরীরে মাঠে উপস্থিত হয়ে মিমাংসা করে দিতাম। অন্যদিকে রিপনকে সেফটির জন্য একটা ফোল্ডিং পাইপ দিয়েছিলাম। ওটা সে পকেটে রাখতে পারত। অবস্থা বেগতিক হলে ওটা বের করে কাপঝাপ শুরু করে দিত। অবস্থা এমন ছিল যে আমার অনুমতি ছাড়া এলাকা ছেলেপেলে প্রেমও করতে পারত না। সবকিছুতেই আমার দখলদারি ছিল বর্ণনাতীত। তবে একদিকে যেমন আমি প্রেম করার অনুমতি দিতাম অন্যদিকে আবার অন্য ছেলেদের দিয়ে A.L.O (Anti Love Organization) নামে সংগঠন খুবলিয়েছিলাম যার শ্লোগান ছিল ALOর পথে এস। দিন এভাবেই কাটছিল। কিন্তু হঠাত একদিন মাঠে খেলা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি বেধে গেল। পুরো মাঠের ছেলেরা ভাগ হয়ে একদল আরেক দলকে মারতে লাগল। রিপনও ঐ দিন মাঠে উপস্থিত ছিল মারামারির মধ্যে। খবর পেয়ে মাঠে ছুটে গেলাম। দেখলাম মাঠের ঐ পাশ আরেক দল ঢুকছে মারামারি থামানোর জন্য। তারা যেয়ে মারামারি থামানোর নামে যে স্থানে রিপন অবস্থান করছিল সেখানে সবাইকে ব্যপক পেটাতে লাগল। আর তাদের দলনেতা দূর হতে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। কিছুক্ষণ দেখার পর বুঝতে পারলাম। এরা এলাকার আমার ঐ বিরোধী পক্ষ রায়হানবাহিনী । আমার পাশে দাডানো একজনকে বললাম এলাকায় খবর দে মাঠে মাঠে ছোট্ট ঝামেলা লাগছে রায়হান মারামারি থামানোর নামে নিরীহ ছেলেদের বেদমহারে পেটাচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকুলে নয় তাই ওখানে দাড়িয়েই পরবর্তী চাল ভাবতে লাগলাম।
খবর : রাশিয়ার আঘাতে ওবামা আহত
বি.দ্র. ব্যাকরণগত ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন