আমাদের সারাজীবনের শিক্ষাই দ্বিমুখী,দ্বিচারিতা পূর্ণ। তাই আমরা যখন শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড বলি কিংবা মূর্খ শিক্ষিতদের পার্থক্য করতে গিয়ে শিক্ষিতদের দাম দিয়ে পরক্ষনেই তাকিয়ে দেখি তার মধ্যে সুনীতি কিংবা মানবিক কিংবা বৈষম্যহীন ভালো চরিতের কোন বালাই-ই নাই তখন কনফিউজড হয়ে যাই তাহলে শিক্ষাকে কিভাবে সেরা বলি !
আমাদের কিছু মিথ তৈরি করা আছে।অনার্স,মাস্টার্স কিংবা কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে বা কোন প্রতিষ্ঠানে তার উপর দিয়ে আমরা শিক্ষা বিচার করি।
এগুলো নিতান্তই পুঁথিগত শিক্ষা যা মানুষের মানুষ হওয়ার সাথে এর সম্পর্ক খুব বেশী নেই।তবে একদমই যে নেই তা ও না।ক্ষেত্র বিশেষ এই শিক্ষা মানুষকে কিছু শক্তিশালী ধারনা দেয়।
আমাদের মুল শিক্ষা হল পরিবার এবং সমাজ।সেখানেই মুল গলদ লুকিয়ে আছে।
পরিবার বা সমাজ কি কখনো খারাপ শিক্ষা দেয়?
তর্কের শুরুতে জাস্ট গণিতের মনে করি "ক" বা "খ" এর মত ধরে নিলাম নিন্মবিত্ত কিংবা বস্তির মানুষের পরিবারে খারাপ শিক্ষা কিছুটা হয়েই যায় কিংবা সেই সমাজ সচেতন না বলে খারাপ শিক্ষা ছোট থেকেই একটা বাচ্চা পায়। (বস্তুত সকল সময় এরকম না)
এখন আসি উচ্চবিত্ত পরিবারে।বাবা-মা শেষ বয়সে এসে বা বখে যাওয়া ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে যে কোন বয়সে এসে কাঁদে আর বলতে থাকে এতো টাকা খরচ করলাম,এতো ভালো স্কুলে পড়ালাম,সমাজের সেরা মানুষদের মধ্যে রাখলাম এতো ভালো ভালো শিক্ষক দিলাম তারপরও কেমনে খারাপ হল!!
এটা একটা কমন প্রশ্ন।আর এটাই আমাদের গলদের জায়গা যা আমরা বুঝতে পারি না।
বস্তি বলেন আর আলিশান বাড়ি বলেন,সবাই সন্তানদেরকে সত্য কথা বলতে শিখায়,সৎ পথে চলতে বলে,ধনী-গরীবে কোন বৈষম্য নাই এমন ভালো ভালো কথাই শিখায়।বই ও এমনই শিখায়।তবে কেন মানুষ এগুলো শিখে না? কেন মানুষ খারাপ হয়ে যায় ?
বাবা-মা যখন বাসায় শিখায়,
" সকল মানুষ সমান,মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নাই,সবার রক্ত এক,আফ্রিকান কালোরাও মানুষ"- সন্তান এই উপলব্ধি নিতে নিতে হঠাত কাজের বুয়ার ছোট্ট ছেলেটা সেখানে এসে বসলে ভদ্র লোকেরা তাকে তাড়িয়ে দিয়ে বাচ্চাকে বলবে, " বাবা ওদের সাথে মিশো না,ওরা ভালো না,খবরদার ওদের সাথে খেলবা না,ওরা গরীব" - ঠিক এই জায়গা টা থেকেই বাচ্চাটা শিখে আসে,"ওই কাজের বুয়ারা মানুষ না,রিকশাওয়ালারা মানুষ না,আপনার অধিনস্ত শ্রমিকেরা মানুষ না,বস্তির ওই গুলো মানুষ না,অর্থবিত্তহীন চারপাশের কেউই মানুষ না"
এখানেই অনার্স মাস্টার্স ব্যার্থ হয়ে যায় একটা মানুষ তৈরি করতে,এখানেই শিক্ষা ব্যার্থ হয়ে যায়।
এরকম নানা উদাহরণ দেয়া যায়,সদা সত্য কথা বলার শিক্ষা দিয়ে সন্তানকে দিয়ে যখন কাউকে বলিয়ে দেয় যে গিয়ে বল বাবা বাসায় নেই,তখন সন্তান শিখে নেয় "অবশ্যই সদা সত্য কথা বলতে হবে,তবে নিজের পক্ষে গেলেই তবে"
আর এরকম শিক্ষাই আজকাল পরিবার ও সমাজে চলছে।বাবা মায়ের ভয়ঙ্কর ঝগড়া দেখে বড় হওয়া সন্তানকে যখন শিখানো হয় " ঝগড়া করা ভালো না,এঁকে অপরকে সম্মান করতে হয়" তখন সন্তান বড় হলে খুনি হতেও দ্বিধা করে না কারণ সে জানে সম্মান তাকেই করতে হয় যার সাথে তুমি পারবে না আর বাকীদের দমিয়ে রাখতে হয় ক্ষমতা আর জোর দিয়ে,সবসময় ঝগড়া বা কাউন্টার মুডে থাকতে হয়,না হলে মানুষ দুর্বল ভাববে কিংবা কাউকে ছেড়ে কথা বলার কোন সুযোগ নাই।সে গালি দিলে আমাকেও দিতেই হবে,না দিলেও দিতেই হবে তাকে আগেই আটকে ফেলার জন্য।
এরকম হাজারো দ্বিচারিতা পূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ আজ পুঁথিগত বিদ্যায় কোথাও ৭০ শতাংশ কিংবা ১০০ শতাংশ কিন্তু মানুষ হিসেবে তাদের মাঝে পাওয়া যায় কয়জন ?
ধর্মীয় দুনিয়া থেকে পাশ্চাত্য ভোগ বিলাসের দুনিয়া।সব জায়গায় একই রূপ বিচরণ করছে।নবিজীর ক্ষমার বয়ান কান্নার সুরে করতে করতে কল্লা ফালাও এর আওয়াজ উঠে,উমরের ভৃত্যকে নিয়ে উঠের রশি টানার গল্প বলতে বলতে হেলিকপ্টারের জোরালো আবদার কানে বেজে উঠে।
আপন বাবা মাকে দুরে ঠেলে শ্বশুর শাশুড়িকে বুকে টেনে সন্তানকে বাবা মায়ের প্রতি সবচেয়ে দরদী হতে বলার শিক্ষাই চলছে।
সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সন্ত্রাস দমনের কঠিন হুশিয়ারি দিয়ে পেটোয়া বাহিনী লাগিয়ে দেয়,নকলের মত অসদ উপায় কে ঘৃণ্য বলে প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিয়ে দেয়ার শিক্ষাই আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
সমস্যা গোঁড়ায়,পুঁথিগত বিদ্যার জোরকে শিক্ষিত না ধরে গোঁড়ার বাস্তবিক চর্চাময় শিক্ষায় যেদিন শিক্ষিত ধরা হবে তখন তার সঠিক শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষাই জাতির সত্যিকার মেরুদণ্ডের ভূমিকায় আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৩