ক্রিকেট নিয়ে আমাদের উন্মাদনা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।অনেক পাওয়া না পাওয়ার জায়গায় কিংবা সীমাবদ্ধতায় ক্রিকেট মাঝে মাঝে জাতির সব শ্রেণীকে একত্রিত করে মরুভূমির বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টির ফোঁটার মত আমাদেরকে আন্দোলিত করে সুখী বানিয়ে দেয়।তাই তীর্থের কাকের মত ক্রিকেটের শেষ বলটিতে তাকিয়ে থাকি এটা আমাদের অন্যায় না।
তবে দিন যাচ্ছে,আমরাও আর সম্মানজনক শব্দের ধারাপাতে নাই।বড় মঞ্চে চোখে চোখ রাখার যে বাস্তবতা তার খেই হঠাত হঠাতই আমরা হারিয়ে ফেলি।জা আমাদেরকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে।বিশেষ করে টি টুয়েন্টি ও টেস্টে আমাদের অবস্থান জীর্ণ শীর্ণ কিংবা মৃত প্রায় অবস্থা।তাই বিশ্ব দরবারে এখন পর্যন্ত আমাদেরকে বারবার প্রমাণ দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে যেখানে আফগানিস্তান এর মত দল কে অনেক বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার মার্ক্স দিতে কার্পণ্য করে না।
এর আসলে কারণ কি? আমরা সমর্থকরা বেশী প্রত্যাশা করি নাকি খেলোয়াড়রা শুধু খেলোয়াড় পরিচয়টাকে ধরে রাখতেই খেলে যায়?
ওয়ানডে তে এভারেজ একটি ভালো দল হলেও টেস্টে যাচ্ছেতাই একটা দল বাংলাদেশ বললে ভুল হবে না এবং টি টুয়েন্টিতে এখনো ফিডার খাওয়া শিশু পরিচয়কে ছাপিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ।
এর দায় কার?
সন্দেহ নেই যে এর বড় দায় হল খেলোয়াড়দের যারা মাঠে খেলতে যেয়ে খেলাকে পাড়ার খেলার মত মনে করে। অথচ পেশাদার খেলার অন্যতম বড় বিষয় হল পরিবেশ পরিস্থিতি কে আমলে নিয়ে খেলাকে সচল রাখা।এবি ডি ভিলিয়ার্সের মত ধুমধাড়াক্কা খেলোয়াড় যখন ২৯৭ বল খেলতে পারে অনলি ৪৩ রান করার জন্য যাতে টেস্ট ম্যাচ সেইভ করা যায় সেখানে বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড় নিশ্চয়ই তার মানের না তারপরও টেস্টে গিয়ে তাদের এতো তাড়াহুড়া কেন এবং শটস খেলার জন্য এতো উন্মুখ কেন সেটা আজো একটা কোটি টাকার প্রশ্ন।কে কার আগে চার ছক্কা হাঁকাবে তার প্রতিযোগিতা টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশকে বিরক্তকর একটা প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে।আত্মবিশ্বাস কে অতিবিশ্বাস এর জঘন্য রূপান্তর। কয়েকদিন আগে জিম্বাবুয়ে তাদের কাম ব্যাক ২ টেস্ট সিরিজে উদ্ভোদনি ব্যাটসম্যানরা যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে তাও একটা দারুণ সুন্দর বিষয়। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে টেস্ট মানেই টি টুয়েন্টি আর টি টুয়েন্টি মানেই টেস্ট এর যে রেষ তা নিতান্তই লজ্জাকর।
শুধুমাত্র খেলোয়াড় দের দোষ দিয়েই এখানে শেষ করলে নাটকের স্ক্রিপ্টের লেখকদের পক্ষপাতমূলক আচরণ কিংবা তাদের বিমাতাসুলভ আচরনের দরুন একটা সম্ভাবনাময় দলের কিভাবে ধ্বংস হচ্ছে তা অজানা থেকে যাবে।
মাহমুদুল্লাহ নিঃসন্দেহে খুবই ভালো এবং ট্যালেন্ট একজন খেলোয়াড় তবে টেস্টের জন্য সে ফিট খেলোয়াড় নয়।এটা আবেগের বিষয় নয় বরং তার পরিসংখ্যান বারবার এটার প্রমাণ দিচ্ছে অথচ নাইম ইসলামের মত পরিক্ষিত খেলোয়াড়কে বারবার উপেক্ষা করা একটা হাস্যকর বিষয় ছাড়া কিছুই নয়।ফুটওয়ার্ক এর দিক থেকে সে একজন কমপ্লিট খেলোয়াড়।আবার মোহাম্মদ মিথুন কে খেলানোর যৌক্তিকতা কি?তারচেয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ খুব ঠাণ্ডা মাথার ব্যালেন্সড খেলোয়াড়।সবসময় ৭/৮ এ নামিয়ে তার খুনে ব্যাটিংকে ধ্বংস করা হয়েছে প্রতিনিয়ত।এতো অবিশ্বাস কেন?
কোন যৌক্তিকতায় রুবেলকে টেস্ট ম্যাচে রাখা হয়েছে?ফাস্ট বোলার ৩ জন রাখতে হবে বলেই রুবেলকে রাখতে হবে? তাহলে সেখানে হাসান মাহমুদকে রেখে বিলাসিতা দেখালে তেমন ক্ষতি কোথায় ছিল?রুবেলের অতীত রেকর্ড যেমন তাকে বোলার স্বীকৃতি দেয় না তেমনই লাস্ট বিসিএল এও তার পারফরমেন্সও তার পক্ষে আয় দেয় না।তাহলে এমন সিলেকশন কোন যৌক্তিকতায়?
আমাদের ফাস্ট বোলাররা যদি উইকেট নেয়ার ক্ষমতা নাইই রাখে তবে একজন বা দুইজন ফাস্ট বোলার নিয়ে স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার নিলে ব্যাটিং তো অন্তত একটু শক্তি পায়!দিনশেষে প্রতিপক্ষ ডিক্লেয়ার করবে কিংবা ৪০০/৫০০ করবেই যখন!
২০০১ সালের টেস্ট স্ট্যাটাসের পর থেকে টেস্ট এ উন্নতির জন্য বোর্ডের এখন পর্যন্ত কার্যক্রম কোথায়?কোথায় তৈরি করা হয়েছে বোলিং একাডেমী এবং গ্রিন পীচ?কোথায় লেগ ব্রেকার তৈরির জন্য ৮/১০ বছরের ছেলেদের বাছাই করে স্পেশাল ট্রেনিং দেয়ার ব্যাবস্থা? প্রতিদিন নানা বড় বড় কথা শুনলেও বাস্তবায়ন যেন অমবস্যার চাঁদ!
আকবর আলীদের দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যায় তবে দিন শেষে তা মাকাল ফল ই হয়ে যাবে।গাছ ভরা মুকুল দেখে আম বিক্রি করে দেয়া যায় না।যত্ন আর পরিচর্যার মাধ্যমে তাকে বাঁচানোর পরই কেবল গাছ ভরা আম ঝুলতে থাকে।নতুবা মুকুল ঝরে অকূল পাথারে ভেসে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১২