বি শ্বের অন্যতম মুস্লিম জনবহুল দেশ মিসরে ড. মুহম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে উত্খাতের ১৮ মাসের মাথায় মুসলিম ব্রাদারহুডের এই নেতা সেদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৯৭৫ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর তি
নি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেন। নির্বাচিত হয়েই তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমি মিসরের মুসলিম, খ্রিস্টান, নারী, পুরুষ, তরুণদের প্রেসিডেন্ট। মর্যাদার সঙ্গে বসবাস, স্বাধীনতা ও সামাজিক বিচারের জন্য আজ মিসরে ঐক্যের বড় প্রয়োজন।’ ড. মুহম্মদ মুরসি’র এ ভাষণে ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-নির্বিশেষে নিরপেক্ষ থাকার মানসিকতা ফুটে উঠেছে। মুসলিম ব্রাদারহুড ইসলাম ধর্মের যে মর্মবাণী ধারণ করে গড়ে উঠেছে, মুরসি’র ঘোষণার মধ্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।
ড. মুহম্মদ মুরসি’র বিজয়ের মধ্য দিয়ে তদসম্পর্ক এবং মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথমে ব্যক্তি-মুরসি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। মিসরের নাইল ডেল্টা (নীল ব-দ্বীপ) প্রদেশের এক গ্রামে মুহম্মদ মুরসি জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে ব্যাপক জনসমর্থনে হোসনি মোবারকের পতনের পর গঠিত দল ‘ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’ পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। গত ১৬ ও ১৭ জুন ২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটে ৫৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তদপূর্বে মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা ভোটে ২৪ শতাংশ ভোট পান তিনি। বর্তমানে ৬০ বছর বয়সী ড. মুহম্মদ মুরসি ৪ সন্তানের জনক। ইতোপূর্বে তিনি মিসরের জাগজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০০ সালে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর হোসনি মোবারকের পতনের পর তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ৩০ জুন ড. মুহম্মদ মুরসি মিসরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
ইংরেজি ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ (Muslim Brotherhood) নামটি মিসরবাসী আরবিতে ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’ হিসেবেই উচ্চারণ করেন। এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ হাসানুল বান্না। ১৯২৯ সালের ১১ এপ্রিল তিনি এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল-আজহারের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন শহীদ হাসানুল বান্না। ১৯৪৮ সালে মিসরের বাদশাহ ফারুক প্রথমবার ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারও আগে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ সালে জালেম বাদশাহ ফারুকের আদেশে একদিন মসজিদে যাওয়ার সময় হাসানুল বান্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর মতো একজন আদর্শবাদী ঘাঁটি মানুষ, বাগ্মী ও সত্যপথের সংগঠক বর্তমান দুনিয়ার বুকে বিরল। ১৯৫৪ সালের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, মিসরে মুসলিম ব্রাদাদারহুডের সদস্যসংখ্যা ছিলো ৫০ লাখ। সে সময় ফিলিস্তিন, সিরিয়া ইরাক ও লেবাননে ব্রাদারহুডের ৩৫০টি শাখা ছিলো।
ইসলামের মৌলিক আদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম ব্রাদারহুড আজীবন লড়াই করেছে। ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত মুসলিম ব্রাদারহুডের মৌলিক সূত্র (Radical Aphorism) নামক এক গ্রন্থে তাদের আদর্শ সম্পর্কে যে সব তথ্য রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ছিলো ১। কোরআনের বিশ্লেষণ ও আজকের বৈজ্ঞানিক জগতে তার প্রয়োগ, ২। ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইসলামি আইন-কানুনসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা নিরূপণের জন্য ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, ৩। সামাজিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সামাজিক শ্রেণিসমূহের পুনর্বিন্যাস, ৪। বিশ্ব মুসলিম জীবনমান উন্নত করার জন্য দারিদ্র্য, অস্বাস্থ্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এবং ৫। বিদেশি প্রভুত্ব বা শোষণ থেকে মুসলিম দেশগুলোকে মুক্ত করা এবং পৃথিবীর সর্বত্র মুসলমান সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করা।
১৯৫৪ সালে মিসরের ডিক্টেটর প্রধানমন্ত্রী কর্নেল জামাল আবদুন নাসের মুসলিম ব্রাদারহুডকে পুনরায় বেআইনি ঘোষণা করেন। সেবছর ৮ অক্টোবর ব্রাদারহুডের শীর্ষনেতা ড. হাসানুল হোদায়বীকে গ্রেফতার করা হয়। হোদায়বী ছিলেন ড. হাসানুল বান্নার যোগ্য উত্তরসুরি। কর্নেল নাসের ব্রাদারহুডের কেন্দ্রীয় অফিসসহ ৪০০ শাখা অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন। ব্রাদারহুড কর্তৃক পরিচালিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও কোঅপারেটিভ প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়।
শুধু হোদায়বী নয়, তার সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডের আরও ৬ জন বিপ্লবী নেতা মাহমুদ আবদুল লতিফ, ইউসুফ তালাত, আবদুল কাদের ওদা, হিন্দওয়ে দিওয়ার, ইব্রাহিম আল তৈয়ব ও মুহম্মদ ফারাগ আলীকে গ্রেফতার করে তথাকথিত সামরিক আইনে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। কর্নেল জামাল আবদুন নাসেরের সরকার উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ এনে এসব নেতৃবৃন্দকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো।
কর্নেল নাসেরের এহেন অপতত্পরতায় সমগ্র মুসলিম জাহান কেঁপে ওঠে। মুসলিম বিশ্বের চাপের মুখে ড. হাসানুল হোদায়বীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করতে বিরত থাকলেও বাকি ৬ জনকে ৭ ডিসেম্বর ১৯৫৪ তারিখ সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে আধাঘণ্টা পরপর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়। সে সময় সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, সুদান পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় সব মুসলিম রাষ্ট্র ব্রাদারহুড নেতাদের মুক্তির দাবিতে মিসরের সরকারের কাছে তারবার্তা পাঠিয়েছিলো। কিন্তু কোন অনুরোধই নাসেরের মন গলাতে পারেনি।
ড. হাসানুল হোদায়বী ব্রাদারহুডে যোগদানের আগে মিসর হাইকোর্টের একজন বিচারপতি ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগদান করেন। শহীদ আবদুল কাদের ওদা শুধু মিসরের নয়, সমগ্র মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদদের একজন ছিলেন। তিনি ছিলেন মিসরের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি। ১৯৫০ সালে তিনি বিচারপতি পদে ইস্তাফা দিয়ে ব্রাদারহুডে যোগদান করেন। শহীদ ইউসুফ তালাত একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। আল কোরআনের আলোতে আলোকিত এই সিংহপুরুষকে বর্বর নাসের সরকার জেলখানার ভেতরে নির্যাতন করে তার একটি চক্ষু নষ্ট করে দিয়েছিলো। তারপরও ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিলেন, “ইহা আল্লাহ, যারা আমার প্রতি অন্যায় করলো, তাদেরকে তুমি ক্ষমা করে দিও।”
শহীদ মুহাম্মদ ফারাগ আলী ছিলেন শহীদ হাসানুল বান্নার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। ইতোপূর্বে প্রথম যখন ব্রাদারহুডকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছিলো, তখনও তিনি ‘শান্তি ভঙ্গকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত হন এবং পরে বেকসুর খালাস পান। ১৯৫০ সালে মিসরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় ফারাগ আলী গেরিলা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মনোনীত হয়েছিলেন। সেই ব্যাঘ্রপুরুষকে নাসের সরকার যখন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারতে উদ্যত হলো তখন ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “বড় সুখের বিষয় যে, আমি আজ শাহাদাত্ লাভ করতে যাচ্ছি।”
শহীদ ইব্রাহিম আল-তৈয়ব ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের এক তরুণ নেতা। শাহাদাত্ বরণকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো মাত্র ৩২ বছর। তিনি আইন বিষয়ে পাস করেছিলেন এবং ব্রাদারহুডের হেড অফিসে আইন বিভাগে কাজ করতেন। আধুনিক সমাজকাঠামোতে ইসলামি আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে গবেষণারত ছিলেন এই যুবনেতা। রাজা ফারুকের শাসনামলে তিনি ১৯৪৯ সালে ৯ মাস কারাবরণ করেন এবং ১৯৫৪ সালে কর্নেল নাসের তাকে ২ মাস কারাগারে অবরুদ্ধ রেখে নির্যাতন করেছিল। ফাঁসির মঞ্চে ইব্রাহিম আল-দৈয়বের শেষবাণী ছিলো, “আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া যে, আমি শাহাদাত্ বরণ করছি।” অপরদিকে শহীদ মাহমুদ আবদুল লতিফ ও হিন্দওয়ে দিওয়ার শাহাদাতের সময় অম্লান বদনে বলে গেছেন, “আমরা আল্লাহর নিকট থেকে এসেছি এবং আল্লাহর নিকট ফিরে যাচ্ছি।”
ব্রাদারহুডের নেতৃবর্গের ফাঁসির পেছনে সুয়েজ খালে ইংরেজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সম্পর্ক জড়িত ছিলো। কারণ ব্রাদারহুড সুয়েজ খাল সম্পর্কে ইংরেজ ও মিসরের সংলাপের ঘোর বিরোধী ছিলো। তারা সুয়েজ খাল থেকে ইংরেজদের শর্তহীন প্রস্থানের দাবিদার ছিলো এবং এ খালকে আন্তর্জাতিক নৌপথ হিসেবে স্বীকৃতি এবং সেটিকে ইংরেজদের হাতে সমর্পণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। ২৮ মার্চ ১৯৫৪ তারিখে জামাল আবদুন নাসের মিসরের সামরিক সরকার হিসেবে ক্ষমতায় বসে সুয়েজ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তিতে ইংরেজদের সাথে স্বাক্ষর করেন (১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪)। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের এক মাসের মাথায় জামাল আবদুন নাসেরের প্রাণনাশের চেষ্টা হয় এবং এ জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডকে দায়ী করে তাদের আন্দোলনকে বে-আইনি ঘোষণা করা হয়। ৬ জনকে ফাঁসি দেয়া হলেও ৩০০ জন ব্রাদারহুড নেতাকে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড এবং ১০ হাজারেরও অধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি দেয়া হয়। এভাবে ইংরেজদের পদলেহনকারী নাসের সরকার ব্রাদারহুডকে নিঃশেষ করে দেয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন করে। কিন্তু আদর্শবাদী সংগঠনের মৃত্যু এতো সহজ নয়। সেই ঘটনার ৫৮ বছর পর ২০১২ সালে ব্রাদারহুড মিসরের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলো।
মিসরের রাজা ফারুক আর কর্নেল নাসেরের মধ্যে আদর্শগত কোন পার্থক্য ছিলো না। তারা ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে যে নির্যাতন করেছিলো, সভ্য জগতে তার দৃষ্টান্ত বিরল। কারারুদ্ধ এসব খাঁটি মুসলমানকে মাসের পর মাস অনাহারে, অর্ধাহারে রেখে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মারতে মারতে নাকমুখে রক্ত বের করে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেহুঁশ অবস্থায় রাখার পর চোখ খুললেই বলা হতো, “এবার বল, তোমরা ব্রাদারহুডে আর কাজ করবে কি-না?” গরম লোহার চিমটা দিয়ে হাতের আঙ্গুল থেকে একেকটি নখ টেনে টেনে বের করা হতো আর একেকটি টানের পর কিছুক্ষণ থেকে আবার জিজ্ঞাসা করা হতো, “এবার বল, তোমরা ব্রাদারহুড ছাড়তে রাজি আছে কি-না?” শরীর আর অন্তরের সমস্ত জ্বালা দু’ঠোটে চেপে শান্ত অথচ দৃঢ়কণ্ঠে তারা সকলেই জবাব দিতেন, “আল্লাহু আকবার, লিল্লাহিল হামদ” অর্থাত্ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এ হ’ল ব্রাদারহুডের মূল আওয়াজ। এভাবে বাদ্রারহুডের নেতারা জীবনত্যাগ করলেও আদর্শচ্যুত হননি। যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো তারা ব্যতীত হাজার হাজার ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীকে বছরের পর বছর কারাগারে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে।
সর্বশেষে ২০১১ সালে ব্রাদারহুড মিসরের সাধারণ মানুষের নেতৃত্বের সামনে চলে আসে। ফলশ্রুতিতে গণবিক্ষোভের মুখে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের বিদায়ের পর মিসরের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিষদ (স্কাপ) ১৮ মাস সে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানামুখী কাজ করে। এসব কাজের মধ্যে ছিলো হোসনি মোবারক ও তার সহযোগীদের বিচার, বিভিন্ন অনিয়ম ও অবিচার সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনা এবং সর্বোপরি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে ব্রাদারহুড নেতা উ. মুহম্মদ মুরসি ক্ষমতায় এলেও তিনি এমন এক পরিস্থিতিতে হাল ধরেছেন যখন দেশে কোন পার্লামেন্ট নেই, স্থায়ী কোন সংবিধান নেই, বিধিসংগত ব্যবস্থা নেই। এমতাবস্থায় স্কাপের নিয়মনীতি অনুসরণ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তাকে এগোতে হবে। ড. মুরসি যে আদর্শে বিশ্বাসী সেই আদর্শকে রাষ্ট্রীয় জীবনে কতটা পরস্ফুিট করতে পারবেন সে ব্যাপারেও রয়েছে নানা মত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম ব্রাদারহুডকে কোনদিনই ভলো চোখে দেখেনি, তাই মার্কিন প্রশাসনের নিকট মুরসি’র গ্রহণযোগ্যতা কতটা হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
তবে মুরসি পন্ডিত ও বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব। সামরিক পরিষদের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে লাখো জনতার সমর্থন নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে সমর্থ হবেন বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেছেন। মন্ত্রিসভা গঠনের আগে সমাজের সর্ব অংশের সাথে পরামর্শ করার মধ্যে তার দূরদর্শিতার ছাপ ফুটে উঠেছে। তার স্ত্রী নাগলা আলী মাহমুদের বয়স ৫০ বছর। তার বড় ছেলের নাম আহমদ। তাই ‘উম আহমদ’ বা আহমদের মা হিসেবে তিনি পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। বোরকা পরিহিত এই রমণী ‘ফাস্ট লেডি’ হিসেবে পরিচয় দেয়ার ঘোর বিরোধী।
এখানে প্রসঙ্গত আর একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মানবতার সেবায় মুসলিম ব্রাদারহুড সর্বমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। মানবতার সেবার জন্য ব্রাদারহুডের একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগ থেকে গরীব ও অভাবী লোকদের সাহায্য প্রদান, স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ, বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিত্সার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য রক্ষার পদ্ধতিসমূহ প্রচার করা হয়। তাছাড়া ব্রাদারহুডের প্রতিটি পেশার বিশেষজ্ঞ শ্রেণী রয়েছেন যারা নিজ নিজ পেশায় কর্মরত পেশাজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ প্রদান করে থাকে। এতকিছু সত্ত্বেও ক্ষমতায় আসার পর সামরিক বাহিনীর প্রভাববলয় থেকে ব্রাদারহুড মুক্ত হওয়া এবং ড. মুহম্মদ মুরসিকে সামরিক শাসনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি তীব্রভাবে দ্বিধাবিভক্ত, আতংকিত ও ক্ষুব্ধ মিসরীয়দের নেতৃত্ব দেয়া দুরূহ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ফেসবুক থেকে সংকলিত......
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৪৬