হাসপাতাল আমার পছন্দ নয় একদমই, হোক তা যতই পরিপাটি, অভিজাত ও বৃষলী নার্সদের সেন্টে সড়োগড়ো। তার বিছানার হিম নীরবতা জুড়ে থাকে— কয়েকলক্ষ জোনাকের মৃত্যু, মোহ্যমান গাছেদের দূরাগত ফিচেল ফুঁৎকার। সেই সব সেবিকারা কী করে জানেন, রোগীদের অতসব দুরূহ প্রশ্নের এত সহজ উত্তর? আমি তো চেয়েছিলাম— নিরুদ্দিষ্ট অন্ধকারে ধাবমান কোনও এক ঘোড়ার জীবন; যার মৃত্যু অকস্মাৎ আগুন-গহ্বরে। পুনর্জন্ম— অগ্নিমুখ বাড়ব শরীরে।
অথচ আমিও আজ পড়ে আছি এমনতরো হাসপাতালের বারান্দার বেঞ্চিতে; যেখানে নেই আভিজাত্য ,পরিপাটি নয়, নিরুত্তাপ , সেবিকা-বর্জিত। উপরন্তু, কোলাহল বদগন্ধ, দেয়ালে মেঝেতে রক্ত, সংক্রামক কফ— সমস্ত বিচ্ছিরি চিরে উঠে আসছে মেয়েটি: পরমাকৃতি যেন; নিস্তন লিকলিকে খাটো, হাঞ্চবেক, চোখে পুরু চশমা, শাদা এপ্রন পরনে। যেরকম মুখোমুখি দু’টি আয়না অসীমে বিস্তৃত। শুধু তার জ্বলজ্বল হাত আমার হৃদয় স্পর্শ করতেই কী এক সহজ বোধ, মনে হলো— দেহাতীত! মনে হলো— দিগন্তবিস্তারী ওর এপ্রন ডানায় শুয়ে, আমি চিরকাল থেকে সমুদ্রের দিকেই ছুটছি।
মা, আমায় বাড়ব শরীরে জন্ম দাও। মুহুর্মুহু বমনে বমনে হোক ভস্মীভূত অবয়বী তাবৎ সুন্দর! যে সৌন্দর্য পুড়তে জানে না,ভস্মশয্যা ছেড়ে পুনরুত্থিত হয় না, সে আবার কেমন সুন্দর?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬